টকজাতীয় ফল এর উপকারিতা

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

টকজাতীয় ফলের গুনাবলী বা উপকারিতা :(Benefits of lemon)


ভারতের  টকজাতীয় ফল এর মধ্যে লেবু(lemon) হল অন্যতম জনপ্রিয় ফল। আমাদের দেশে যে ধরনের লেবু পাওয়া যায় তার  মধ্যে কাগজি  
 কমলা লেবু,এলাচিলেবু,মোসাম্বি লেবু কাগজি লেবু উল্লেখযোগ্য।এই  সব লেবুতে প্রচুর পরিমাণে রস থাকে।এই  লেবুর গুলির রস নানা গুণে সমৃদ্ধ। লেবুর রস একটি স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিগুণে ভরা একপ্রকার পানীয়। মানবদেহ নানা রোগ থেকে রক্ষা করার  ক্ষমতা আছে এই লেবুর রসে।
খাবারে যদি অম্লজাতীয় খাবার এর পরিমাণ কম থাকে তাহলে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়। লেবুর শরবত দেহের মেদ এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। সুস্থ সুন্দর দেহ গঠনে যেসব খাদ্য উপাদান এর প্রয়োজন তা লেবুর রসে উপস্থিত। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় লেবু রাখা উচিত। ভাত খাওয়ার সময় লেবুর রস মিশ্রিত করে খেলে খাবারের যেমন স্বাদ বাড়ে তেমনি খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। নিয়মিত লেবুর রস পান করলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে নানা রোগের কবল থেকে দেহ রক্ষা পায় ও সুস্থ ও সবল থাকে। আর এই লেবু সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়।


লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক উপাদান থাকে,যেমন---

রাসায়নিক উপাদানঃ লেবু (lemon)জাতীয় ফল অর্থাৎ  টক স্বাদের গন্ধযুক্ত ফল এর  রসের মধ্যে ভিটামিন-C,ভিটামিন-A,B এবং অন্যান্য আরো  উপাদান থাকে।

লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে,যেমন---

পুষ্টি উপাদানঃ পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম যেকোনো খাদ্য উপযোগীলেবুতে  পুষ্টি উপাদান এর পরিমাণ হল--------


কাগজি লেবুঃ(Benefits of lemon)
কাগজি লেবুর জলীয় অংশ হল ৮৪.৬ গ্রাম, প্রোটিন এর পরিমাণ ২.৪ গ্রাম, চর্বি ২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ এর পরিমাণ ০.৭ গ্রাম, আঁশ এর পরিমাণ ১.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার এর পরিমাণ ১০.৯ গ্রাম, শর্করা এর পরিমাণ১০.৪ গ্রাম, ভিটামিন ৬৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ ৯০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস এর পরিমাণ২০ মিলিগ্রাম, লোহা এর পরিমাণ ২.৩ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরি।



এলাচি লেবুঃ
এলাচি লেবুর জলীয় অংশ ৮৫ গ্রাম, প্রোটিন এর পরিমাণ ২ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ এর পরিমাণ ০.৩ গ্রাম, আঁশ ১.৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার এর পরিমাণ ১১.১ গ্রাম, ভিটামিন-সি এর পরিমাণ ৪০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ ৭০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস এর পরিমাণ ১০ মিলিগ্রাম, লোহা এর পরিমাণ২.৩ মিলি গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরি।



লেবুর ঔষধি গুনাবলী:(Medicinal properties of lemon


ওষুধি গুণাগুণঃ খাদ্য পরিপাকে লেবু খুবই কার্যকর। হজম হওয়ার পর লেবুর রস অ্যালকালাইন রি অ্যাকশন তৈরি করে পাকস্থলির খাদ্য হজমে সাহায্য করে। যারা গ্যাস্ট্রিক রোগে ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে খান সপ্তাহ খানেক। সমস্যা কমে আসবে। লেবুতে সাইট্রিক এসিড থাকায় দেহ থেকে ক্যালসিয়াম নির্গমন কমিয়ে দিয়ে পাথুরে রোগ প্রতিহত করে।  যদি কোনো কারনে শরীরে কোনো অংশ কেটে যায় তাহলে লেবুর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন-C মানবদেহের  রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেয় এবং অতি দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ তৈরি করে এর ফলে দেহের কাটা স্থান  বা ক্ষত স্থান শুকিয়ে যায়। আর কারোর যদি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ  থাকে অর্থাৎ পায়খানা শক্ত হয় বা এক দিন বা দুই দিন  পর পর হয় তাহলে সে ই সব রোগী   সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি  একটা বা অর্ধেকটা লেবুর রস 1 গ্লাস পানিতে মিশিয়ে (চিনি বা লবণ ছাড়া) পান করলে এবং রাতে ঘুমানোর আগে লেবুর রসের শরবত খায় তাহলে তারা এই কোষ্ঠকাঠিন্য  সমস্যা থেকে অনেক টা মুক্তি পারেন।


 লেবুর(lemon) খোসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বায়ো ফ্লাভোনয়েড থাকে যা দেহে ক্যানসার কোষ তৈরিতে বাধা প্রদান করে। লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকায় দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বা শক্তিশালী হয় এবং শিরা ধমনীর স্থিতিস্থাপকতার অবস্থা ও দৃঢ়তা বজায় থাকে ফলে রক্ত সঞ্চালনের পথ সুগম হয়ে যায় এর ফলে  হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। লেবুর খোসায় সালভাস্টোল ৪০ কিউ এবং লিমোনিন থাকে। যা দেহে ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেবুর খোসাতে থাকে পলিফেনল ফ্লাভনয়েড, যা দেহে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এবং দেহে ভালো কোলেস্টরলে তৈরি করে।যে সব  ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেসার আছে তারা নিয়মিত লবণ ছাড়া লেবুর শরবত খেলে ভালো উপকার পাবেন। লেবুর রস অম্লীয়। তাই লেবুর রস শরীরে প্রবেশে করার পর অম্লীয় বা এসিড থেকে ক্ষারীয় হয়ে রক্তের মধ্যে মিশে যায়। ফলে শরীরের মধ্যে অম্লতা ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং PH এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লেবুর শরবত লিবার বা যকৃত বা কলিজাকে শুদ্ধ করে এবং শরীরের উৎপন্ন টক্সিন বের করে দেয়। ফলে হজমশক্তি ভালো থাকে, শরীর সুস্থ সবল থাকে। লেবুর মধ্যে উপস্থিত পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে মানবদেহের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় করে রাখে। লেবুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট  ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে ভালো উপকার করে।



 আমাদের চোখের চার পাশের কালো দাগ দূর করে। চামড়ার নতুন নতুন কোলাজেন কোষ তৈরি করে। ফলে চামড়ার উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। যাদের মুখে দুর্গন্ধ হয় তারা লেবুর রস দিয়ে শরবত খান এবং সম্ভব হলে খোসা বা চামড়া চিবিয়ে খান। দুর্গন্ধ থাকবে না। এতে দাঁতের ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়, দাঁতের প্লাক জমার কারণে যে দাগ পড়ে তাও কমে আসবে।যদি কোনো ব্যক্তি প্রচন্ড মানসিক চাপে ভুগেন তাহলে তার শরীরে ভিটামিনসির নামক এক প্রকার পদার্থের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে মানসিক চাপ আরো বেড়ে যায় । তাই ব্যাক্তি  মানসিক চাপে ভোগেন তারা সকাল বিকাল লেবুর শরবত পান করলে অনেকটা উপকারিতা পাবেন।

মানসিক চাপ কমবে। যাদের শরীরের ওজন বয়সের তুলনায় বেশি তারা (চিনি বা লবণ ছাড়া) লেবুর শরবত খান ওজন কমে আসবে। কারণ লেবুর ফ্যাট বানিং এনজাইম শ্বেতসার সুগার শোষণ করে ওজন কমিয়ে দেয়। যদি সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীরে অলস অলস ভাব ও শরীরে খুব ব্যথা  ভাব মনে হলে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে নিলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। লেবু রসের উপাদান হাড়ের জোড়া জোড়া হতে ইউরিক এসিড দূর করতে সাহায্য করে।



সর্তকতাঃ লেবু কেটার পর  সরাসরি কামড়িয়ে খাবেন না। এতে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। যাদের কিডনি বা গলব্লাডারের সমস্যা আছে তারা লেবুর খোসা খাবেন না। যে সব ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস আছে তারা লেবুর রসের সাথে লবণ এবং চিনি মিশিয়ে খাবেন না। যাদের শরীরে স্বাস্থ্য বেশি তারা লেবুর শরবতে চিনি মিশাবেন না।  কোনো অবস্থাতেই শুধু লেবুর রস খাবেন না বা শরীরে কোনো অংশে লাগাবেন না। বেশি সময় ধরেৎলেবু কেটে রাখবেন না।খাওয়া আগে লেবু কেটে খাবেন। লেবু কাটার পর তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url