ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে কি কি করা উচিত?

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ডায়াবেটিস( Diabetes) এর করনীয় বা ডায়াবেটিস( Diabetes) থেকে মুক্তি পেতে কি কি করা উচিত?

ডায়াবেটিস( Diabetes) থেকে মুক্তি পেতে কি কি করা উচিত?
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়


 ডায়াবেটিস (Diabetes) আসলে কি?


১.শরীরের ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতায় রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হয়। সময় থাকতেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। এতে আগে থেকেই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়।


২. খাবারের পরিমাণ কমান


মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এ কারণে খাবারের পরিমাণ কমানো উচিত আগেভাগেই। খাবার খাওয়া কমানোর জন্য ছোট ছোট প্লেটে অল্প করে খাবার নিতে পারেন। এছাড়া খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেও তাতে খাবারের পরিমাণ কমতে পারে।


৩. শারীরিক অনুশীলন করুন


আপনি যদি নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করেন তাহলে তা নানাভাবে আপনার স্বাস্থ্যের উপকার করবে। বিশেষ করে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন রোগ দূরে রাখায় এর ভূমিকা রয়েছে। এতে ডায়াবেটিসের মতো রোগও দূরে থাকবে।


৪. ওজন কমান


শরীরের ওজন যদি বেশি বেড়ে যায় তাহলে তা ডায়াবেটিসকে ডেকে আনতে পারে। তাই দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


৫. লাল আটার খাবার


ধবধবে সাদা আটা-ময়দা বাদ দিয়ে লাল আটার তৈরি রুটি ও অন্যান্য খাবার খান। এটি আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে।


৬. সকালের নাস্তা গুরুত্ব দিন


সকালের নাস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এটি কখনোই বাদ দেওয়া ঠিক নয়। সকালের নাস্তায় প্রোটিন যুক্ত করলে তা সারাদিনের ক্ষুধা কমায়। এতে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমন ডায়াবেটিসও দূরে থাকে।


৭. ফ্যাটযুক্ত খাবার বাদ দিন


ফাস্ট ফুড দোকানের জাংক খাবার ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা আপনার রক্তে ক্ষতিকর কোলস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি রক্তের শর্করার মাত্রাও বাড়ায়। তাই এসব খাবার বাদ দিতে হবে।


৮. মিষ্টি পানীয় বাদ দিন


তেষ্টা পেলেই মিষ্টি পানীয় বা কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস বাদ দিন। মূলত যে কোনো মিষ্টি পানীয়ই ক্ষতিকর। তাই এসব পানীয় সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন।


৯. স্বাস্থ্যকর খাবার খান


আপনি যদি বিকালের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য অস্বাস্থ্যকর পিজা বা ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে তাজা ফলমূল কিংবা সালাদ খেতে পারেন তাহলে তা ডায়াবেটিস থেকে আপনাকে রক্ষায় সহায়তা করবে।


১০. শাকসবজি খান


অনেকেই সবজি খেতে মোটেই আগ্রহী থাকেন না। যদিও সবজি আপনার বহু উপকার করতে পারে। তাই প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত সবজি।


১১. মানসিক চাপমুক্ত থাকুন


মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ কারণে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে ইয়োগা, মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন।



১২. ভালোভাবে ঘুমান


রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। এতে আপনার দেহের ওপর চাপ কমবে এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ দূরে থাকবে। ঘুমের অভাবে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতি হয়।


১৩. আঁশযুক্ত খাবার খান


যেসব শাক-সবজি ও খাবারে প্রচুর আঁশ রয়েছে সেসব খাবার খান। এতে আপনার টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম করে আঁশযুক্ত খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। এতে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।


১৪. প্রচুর পানি পান করুন


প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।পানি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম চালানো সহজ করে দেবে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে দেহের নানা সমস্যা হতে পারে।


১৫. স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন


অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো নীরবেই থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা তা বুঝতে পারেন না। ফলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


১৬. সূর্যতাপ গ্রহণ করুন


ভিটামিন ডি দেহের ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। আর সূর্যতাপ ভিটামিন ডি গ্রহণের অন্যতম উপায়। তাই নিয়সিক সূর্যতাপ গ্রহণে ডায়াবেটিস দূরে থাকে।


১৭. মসলাসমৃদ্ধ খাবার খান


জার্মান গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনিসমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সহায়তা করে। তাই খাবারে দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলা ব্যবহার করুন।




১৮. সয়ার খাবার খান

সয়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। তাই সয়াযুক্ত খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে।

১৯. গ্রিন টি পান করুন


নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যা রক্তের শর্করা কমাতে ভূমিকা রাখে।


২০. ধূমপান বর্জন করুন

ধূমপানে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর কারণ হলো দেহের হরমোনজনিত পরিবর্তন। এ কারণে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে ধূমপান বর্জন করা উচিত।




ডায়াবেটিস শনাক্ত: ( Diabetes identification)




ডায়াবেটিস ( Diabetes ) শনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে সঠিক ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা ওজিটিটি। এই পদ্ধতিতে রোগীকে সকালে খালি পেটে একবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হয়, তারপর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ শরবত পানের দুই ঘণ্টা পর আরেকবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়।




কিন্তু পরীক্ষা করতে অনেকে প্রায়ই ঝামেলার মধ্যে পড়েন। কেননা, কমপক্ষে আট ঘণ্টা না খেয়ে সকালে রক্তের নমুনা দিতে হবে, দুইবার রক্ত দিতে হবে এবং মাঝে দুই ঘণ্টা সময় বিশ্রামে বা ল্যাবে বসে থাকতে হবে। তার ওপর মিষ্টি দ্রবণ অনেকেই পান করতে চান না। বিজ্ঞানীরা তাই আরও সহজ কোনো পদ্ধতি খুঁজছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় তাই ডায়াবেটিস শনাক্তকরণের জন্য এইচবিএ১সি নামের পরীক্ষা করা হয়। এটি রক্তে শর্করার কয়েক মাসের গড় নির্দেশ করে। এই পরীক্ষা দিনের যেকোনো সময় করা যায় এবং রক্তের নমুনা একবারই দিতে হয়।



আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুযায়ী এইচবিএ১সির মান ৫.৭-এর নিচে থাকলে তাকে স্বাভাবিক ধরা যায়। এটি ৬.৫-এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে ধরা হবে। এই মান ৫.৭ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে থাকলে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।



তবে এইচবিএ১সি পরীক্ষা ভালো মানের ল্যাবরেটরিতে নির্দেশিত পদ্ধতিতে করতে হবে। কারও বংশগত রক্তরোগ থাকলে বা রক্ত ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থাকলে এই পরীক্ষা সঠিক ফল না-ও দিতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ে এই পরীক্ষার ব্যবহার করা হয় না।

৪০ বছর বয়সের পর ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস ও অন্যান্য ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং করা উচিত। এই উদ্দেশ্যে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা এইচবিএ১সি পরীক্ষা করা যেতে পারে।





অতিরিক্ত ক্ষুধা বা তৃষ্ণা, ওজন কমা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস প্রভৃতি উপসর্গ সাধারণত ডায়াবেটিসের লক্ষণ। কিন্তু লক্ষণগুলো সব সময় না-ও থাকতে পারে। প্রতি ২ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ১ জন জানেন না যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত। অনেক ক্ষেত্রে চোখের জটিলতা, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতা, পায়ে পচন, খোস-পাঁচড়া প্রভৃতি জটিলতা নিয়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ না থাকলেও যাঁরা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাঁদের নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো উচিত।











Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url