খাদ্যে ভেজাল দেওয়া কারনে মানবদেহের কি কি ক্ষতি হয়?
WhatsAp Group
Join Now
Telegram Group
Join Now
ভেজাল খাদ্য কি? খাদ্যে ভেজাল দেওয়া কারনে মানবদেহের কি কি ক্ষতি হয়?বিভিন্ন খাদ্যে ভেজাল ও তার ক্ষতিকর প্রভাব :
ভেজাল শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। বর্তমান পৃথিবীতে খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে ভেজাল এর পরিমান দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই ভেজাল যুক্ত খাদ্য দ্রব্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।এই ভেজাল যুক্ত খাদ্য দ্রব্য খাওয়ার ফলে মানুষের আয়ু দিনকে দিন কমছে।কম বয়সে বড়ো বড়ো রোগের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।আজ আমি এই পোস্টে আপনাদের জানাবো যে ভেজাল কি?কেন ভেজাল দেওয়া হয়,এর ক্ষতিকারক প্রভাব কি? চলুন জেনে নেয়া যাক।
ভেজাল বলতে সঠিক ভাবে কি বোঝায়?
কোনাে খাদ্যের নিজস্ব উপাদানের পরিবর্তন ঘটিয়ে বা খাদ্যের মধ্যে কিছু অখাদ্য যুক্ত করে খাদ্যের প্রকৃত গুণমান বা বৈশিষ্ট্য বা খাদ্যমূল্য হ্রাস করাকে খাদ্যে ভেজাল বলা হয় ।খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কারণ :
বর্তমান পৃথিবীতে খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে ভেজাল এর পরিমান দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই ভেজাল যুক্ত খাদ্য দ্রব্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে কোনো ভেজাল দেওয়া হয়? খাদ্যে ভেজাল দুইভাবে যুক্ত হতে পারে —
অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ ভেজাল হিসেবে মিশিয়ে থাকে । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় , অসাধু ব্যবসায়ীরা বিশেষ মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দ্রব্য , কৃত্রিম পদার্থ বা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেয় ।
) আবার উদ্দেশ্যহীনভাবেও অনেকসময় , অজ্ঞানতা অথবা অসতর্কতার জন্য খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে বিভিন্ন বস্তু ভেজাল হিসেবে যুক্ত হয়ে যায় ।যেমন কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক পদার্থ, আর্সেনিকযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করলে অনেক সময় ওই রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যশস্যের সঙ্গে মিশে ভেজাল হিসেবে যুক্ত হয় ।
পলিথিন বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে খাদ্যদ্রব্য রাখলে , তার থেকে অনেক সময়ই বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ যুক্ত হয়ে খাদ্যের গুণাগুণ বা ক্যালােরিমূল্য কমে যায় । ফলে খাদ্য ভেজালযুক্ত হয়ে পড়ে ।
অনেক সময় টিনের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য রাখলে টিনের কিছু অংশ খাদ্যের মধ্যে চলে আসে । এক্ষেত্রেও উদ্দেশ্যহীনভাবে খাদ্যে ভেজাল যুক্ত হয়ে যায় ।
বিভিন্ন খাদ্যে ভেজাল ও তার ক্ষতিকর প্রভাব :
এবার জেনে নেওয়া যাক যে কোন কোন খাদ্যে কি কি ভেজাল দ্রব্য মেশানো হয় এবং তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব কি!দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ব্যবহৃত বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলক বা উদ্দেশ্যহীনভাবে ভেজালযুক্ত হয়ে যেতে পারে ।
1 , আটা , ময়দা ,
- ভেজাল দ্রব্য:- সুজি স্বল্পমূল্যের বিভিন্ন ধরনের স্টার্চ - জাতীয় পদার্থ — যেমন অ্যারারুট । এ ছাড়া , চকের গুঁড়াে , তুষ ইত্যাদি ।
- ক্ষতিকর প্রভাব:-
বদহজম ও পেটের গােলযােগ দেখা দেয় ।
2 . ডাল , বেসন
ভেজাল দ্রব্য:-
খেসারির ডাল , বিভিন্ন ধরনেরস্টার্চ , মেটানিল , ইয়েলাে - জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ।
ক্ষতিকর প্রভাব:-
ল্যাথিরিজম বা পক্ষাঘাত দেখা দেয় অনেক সময় হাঁটু ও গােড়ালিশক্ত হয়ে অবশ হয়ে যায় ।
3 . লঙ্কা গুঁড়াে
ভেজাল দ্রব্য:-
স্টার্চ , রেড লেড ইত্যাদি
ক্ষতিকর প্রভাব:-
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে অবশ হয় , রক্তাল্পতা দেখা দেয় , মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয় ।
4 , গুড়
ভেজাল দ্রব্য:-
একধরনের হলদে রং , বালি , মাটি ইত্যাদি
ক্ষতিকর প্রভাব
পেটের রােগও যকৃতের গােলযােগ দেখা দেয় ।
5 . চিনি
ভেজাল দ্রব্য:-
মিহি ও সাদা বালি , অনেক সময় কাচের দাঁত ও গুঁড়াে ইত্যাদি
ক্ষতিকর প্রভাব:-
মাড়ির ক্ষতি হয় এবং পেটের গণ্ডগােল দেখা দেয় ।
6 . চা
ভেজাল দ্রব্য:-
কাঠের গুঁড়াে , ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত চামড়া ,
ক্ষতিকর প্রভাব:-
পেটের গণ্ডগােল দেখা দেয় । বিষাক্ত রং , শুকনাে পাতা , তেঁতুল বীজের গুড়াে , ব্যবহৃত চায়ের পাতা ইত্যাদি ।
7 . ভােজ্য তেল
ভেজাল দ্রব্য:-শিয়ালকাঁটার বীজের তেল , ট্রাইক্ৰিসাইল ফসফেট ( TCP ) , বিষাক্ত রং , খনিজ তেল ,স্বল্পমূল্যের তেল , পুরােনাে রেপসিড তেল ইত্যাদি।
ক্ষতিকর প্রভাব:- দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয় । পেটের গােলযােগ দেখা দেয় । হাত - পা ফোলে , দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হয় , অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসার রােগ দেখা দেয় । ।
8 . ঘি - মাখন
ভেজাল দ্রব্য:- বনস্পতি , নানান ধরনের বিষাক্ত রং , জীবজন্তুর চর্বি , পাকা কলা , সুজি ইত্যাদি ।
ক্ষতিকর প্রভাব:-বদহজম দেখা দেয় , অম্বল , গ্যাস , বুকজ্বালা , নানান ধরনের পেটের গণ্ডগােল দেখা দেয়
9 . বনম্পতি
ভেজাল দ্রব্য:-মূলত জীবজন্তুর চর্বি ।
ক্ষতিকর প্রভাব:-পেটের গণ্ডগােল ও বদহজম দেখা দেয় ।
10 . চাল
ভেজাল দ্রব্য:-
ছােটো - ছােটো পাথরের টুকরাে , কাকর , তুষ ,কুঁড়াে , খুদ , নিম্নমানের চাল
ক্ষতিকর প্রভাব:-পাথরের টুকরাে ও কাকর থেকে দাঁত ও । মাড়ির খুবই ক্ষতি হয় ।
11 . দুধ
ভেজাল দ্রব্য:-নানান প্রকারের স্টার্চ , যেমন — অ্যারারুট , চিনি , বাতাসা , ময়দা , মাখন তােলা দুধ , জল ইত্যাদি।
ক্ষতিকর প্রভাব:-ভেজাল দুধ থেকে মানবদেহে অ্যাভিটামিনােসিস রােগ হয় । ইত্যাদি ।
12 হলুদ গুঁড়াে
ভেজাল দ্রব্য:-
মেটানিল ইয়েলাে , লেড় ক্রোমেট , হলদে রঙের মাটি , স্টার্চ ইত্যাদি
ক্ষতিকর প্রভাব:-অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হতে থাকে , রক্তাল্পতা দেখা দেয় , প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।
NOTE: আর্জিন তেল : আর্জির্মন বীজ কালাে বর্ণের হয় এবং এই বীজের আকৃতি সরষে বীজের মতাে হয় । সেই কারণে , সরষে বীজের সঙ্গে আর্জির্মন বীজ সহজেই ভেজাল হিসেবে মেশানাে যায় । আজিমন তেল শিয়ালকাটা বীজের তেল নামে পরিচিত । একটা গবেষণাই জানা গেছে , 0 . 1 % আর্জিমন মিশ্রিত দুষিত ভােজ্য তেল 1 থেকে 3 মাস নিয়মিত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে মানবদেহে ড্রপসি ( dropsy ) রােগ হয় । ড্রপসি হল এমন একটি রােগ যার প্রভাবে হাত - পা ফুলে যায় বা শােথ দেখা যায় । এ ছাড়া , পরিপাক যন্ত্রের ব্যাধি , লিভারের বৃদ্ধি , হৃদ্যন্ত্রের গােলযােগ , এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ’ ও দেখা দেয় । যদি ভেজাল তেল গ্রহণ বন্ধ না করা হয় , তাহলে চোখের রােগ গ্লকোমা দেখা দেয় । শুধু তাই নয় , অনেক সময় মানুষ অন্ধও হয়ে যায় । লিভারের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে ।
NOTE :-ট্রাইক্ৰিসাইল ফসফেট ( TCP ) ; এটি প্রকৃতপক্ষে বর্ণহীন , গন্ধহীন , অনুদ্বায়ী এবং স্থায়ী তরল । এটি জলে অদ্রাব্য , কিন্তু উদ্ভিজ্জ তেলে খুব সহজেই দ্রবীভূত হয় । এই দ্রব্যটিও ভেজাল হিসেবে সরষের তেলের সঙ্গে । মেশানো হয় । এই mon গানাে হয় । এই TCP - যুক্ত তেল পরপর 20 দিন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে , মানবদেহে পক্ষাঘাত ( floppy Paralysis ) - জাতীয় রােগ হয় । ফসফরাসযুক্ত কীটনাশক প্যারাথিয়নের মতাে TCP - ও মানবদেহে স্নায়ু ও পেশির এ ব্যবস্থাকে অকেজো করে দেয় । শুধু তাই নয় , এটি হাত - পা অসাড় করে দেয় এবং চিরদিনের মতাে মানুষকে পঙ্গু করে তােলে ।
NOTE: বিটা - অলিল আমিনাে অ্যালানিন ( B0AA ) ; এই বিষাক্ত পদার্থটি খেসারির ডালে পাওয়া পদার্থটি অতিরিক্ত মাত্রায় আমাদের দেহে প্রবেশ করলে , ধীরে ধীরে পক্ষাঘাত ঘটায় , যার ফলে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পঙ্গুত্বপ্রাপ্ত হয় । এই রােগ সহজে সারে না , সারাজীবন ধরে কষ্ট দেয় ।