জন্ডিস ও ভাইরাল হেপাটাইটিস কি?কেন হয় এবং প্রতিকারের উপায়

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

জন্ডিস ও ভাইরাল হেপাটাইটিস কি?কেন হয় এবং প্রতিকারের উপায় (Jaundice and Viral hepatitis ) 



জন্ডিস প্রকৃতপক্ষে কোনাে একটি রােগ নয় । অনেকগুলি রােগের ক্ষেত্রে প্রকাশিত লিভারের সমস্যা । লিভারের সমস্যা তথা জন্ডিস দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক এবং শ্লেম্মা ঝিল্লি হলদে বর্ণ ধারণ করে । এ ছাড়া রক্তে বিলিরুবিন ( এক প্রকার পিত্তরঙ্গক ) - এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায় ।



জন্ডিসের প্রকারভেদ (Types of jaundice) : 


জন্ডিস বিভিন্ন প্রকারের হয় , যথা — 

হিমােলাইটিক জন্ডিস : পীতজ্বর এবং পানিশিয়াস অ্যানিমিয়ার ফলে বা অন্য কোনাে কারণে লােহিত রক্তকণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে , যে ধরনের জন্ডিস দেখা দেয় , তাকে হিমােলাইটিক জন্ডিস বলে ।

অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস : মানবদেহের   পিত্তনালীতে বা পিত্তথলিতে যদি পাথর কিংবা টিউমার হয় অথবা পিত্তনালীতে সংক্রমণের ফলে স্ফীতি দেখা দেয় , তাহলে যে জন্ডিস হয় , তাকে অ্যাবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস বলে । হিমােলাইটিক অবস্ট্রাকটিভ হেপাটোসেলুলার জন্ডিস জন্ডিস 

হেপাটোসেলুলার জন্ডিস : ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বা কোনাে প্রকার ড্রাগ অথবা খাদ্যদ্রব্যের । ভাইরাল হেপাটাইটিস টক্সিক জন্ডিস । বিষক্রিয়ার ফলে যে জন্ডিস দেখা দেয় , তাকে হেপাটোসেলুলার জন্ডিস বলে ।এইপ্রকার জন্ডিসকে  প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় , যথা — 

হেপাটাইটিস : এটি হল ভাইরাস সংক্রমণজনিত যকৃতের অসুখ । বিভিন্ন প্রকার হেপাটাইটিসের মধ্যে হেপাটাইটিস A , হেপাটাইটিস B উল্লেখযােগ্য । হেপাটাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করলে ওই সুস্থ ব্যক্তিও হেপাটাইটিস রােগে আক্রান্ত হয় ।

টক্সিক জন্ডিস ; প্রােটোজোয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে হেপাটাইটিস হলে অথবা কিছু ওষুধ বা অন কোনাে প্রকার খাদ্যদ্রব্যের বিষক্রিয়ার ফলে টক্সিক জন্ডিস রােগ দেখা দেয় । 




জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির পথ্যতালিকা প্রস্তুতির মূলনীতি ( Principles of preparation of diet chart for jaundiced patient ) :


জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির পথ্যতালিকা প্রস্তুতির মূলনীতি নিম্নরূপ


প্রিকোমা বা কোমা অবস্থায় 60kg ওজনের জন্ডিস লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে দৈনিক প্রায় 1000 kcal শক্তি প্রদানের প্রয়ােজন হয় । তবে মাঝারি বা তীব্র ধরনের জন্ডিসের ক্ষেত্রে দৈনিক গৃহীত ক্যালােরির পরিমাণ হওয়া উচিত প্রায় 2000 kcal । 


 প্রিকোমা বা কোমা অবস্থায় রােগীকে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণের জন্য গ্লুকোজ দেওয়া  দরকার  অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণের জন্য মিষ্টিজাতীয় খাবার , সুজি , ফলের রস ইত্যাদি দেওয়া উচিত । দৈনিক প্রায় 300g কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা দরকার । 

প্রিকোমা বা কোমা অবস্থায় রােগীকে প্রােটিনজাতীয় খাদ্য দেওয়া যায় না । তবে তীব্র আকারের জন্ডিসের ক্ষেত্রে ( যদি সিরাম বিলিরুবিনের মাত্রা প্রতি 100 ml - এ 15 mg - এর অধিক হয় ) দৈনিক 40g প্রােটিন দেওয়া দরকার । জন্ডিসের তীব্রতা কমে এলে রােগীকে দৈনিক 60 - 80g প্রােটিন দেওয়া যেতে পারে । 

প্রিকোমা বা কোমা অবস্থাতে রােগীকে ফ্যাট দেওয়া যায় না । সাধারণ জন্ডিসের ক্ষেত্রে দৈনিক 30g | ফ্যাট দেওয়া যায় । মাঝারি বা তার থেকেও কম জন্ডিসের ক্ষেত্রে দৈনিক 50 - 60g ফ্যাট দেওয়া যায় । 


ভিটামিন C , A ও B কমপ্লেক্স - এর চাহিদা পূরণের জন্য শাকসবজি , ফল এবং প্রতিদিন একটি করে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়ােজন । 

সিরামে সােডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য সাধারণ মাত্রায় লবণ খাওয়া উচিত । 

জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় এবং বর্জনীয় খাদ্যসমূহ ( Allowed and avoided foods for jaundiced patient ) :


 জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির যে সব খাদ্য খাওয়া উচিত এবং যে সব খাদ্য খাওয়া উচিত নয় তা হল-
 গ্রহণীয় খাদ্যসামগ্রী  : ( i ) রুটি , পাউরুটি , ভাত , কর্নফ্লেক্স , চিড়ে , বিস্কুট , ওটস । ( ii ) পাতলা ডাল । ( iii ) চর্বিবিহীন মাংস , সেদ্ধ বা অর্ধসেদ্ধ ডিম , ছােটো মাছ । । ( iv ) পাতলা স্যুপ , তেলমশলা ছাড়া তরকারি , আলু , মিষ্টি আলু । ( v ) মাখন তােলা দুধ ও দুধের তৈরি খাবার , হালকা কাস্টার্ড , বাড়িতে তৈরি মিষ্টি । ( vi ) চিনি , গুড় , মধু , জ্যাম , জেলি । ( vii ) ফল , ফলের রস , শরবত , ঘােল ও প্রচুর পরিমাণে জল ।


বর্জনীয় খাদ্যসামগ্রী : ( i ) ভাজা খাবার , ঘন স্যুপ , বাদাম , শুকনাে ফল , কাচা স্যালাড । ( ii ) পাঁপড় , চাটনি , আচার , ঝালমশলা । ( iii ) রাস্তায় তৈরি ফলের রস , দোকানের ঘি মিশ্রিত খাবার । ( iv ) দই , আইসক্রিম । ( v ) দোক্তা , খৈনি , গুটখা ।

   ''নিজে সুস্থ থাকুন এবং সকলকে সুস্থ রাখুন''
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url