ম্যালেরিয়া-রোগের-কারণ-লক্ষণ-রোগ-নির্ণয়-চিকিৎসা-ও-প্রতিরোধের-উপায়-malaria
WhatsAp Group
Join Now
Telegram Group
Join Now
ম্যালেরিয়া-রোগের-কারণ-লক্ষণ-রোগ-নির্ণয়-চিকিৎসা-ও-প্রতিরোধের-উপায় |
ম্যালেরিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ,রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়।
ম্যালেরিয়া হল Anopheles মশকী বাহিত ও বিশেষ ধরনের পরী । আদ্যপ্রাণী দ্বারা সৃষ্ট মানবরােগ । ম্যালেরিয়া রােগের ক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে ও কয়েক ঘণ্টা পরে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায় । প্রিহ । আকারে বৃদ্ধি পায় ও রক্তাল্পতা দেখা দেয় । ইতালীয় ভাষায় mala = bad বা দূষিত ও aria = air বা বায়ু । অথাৎ malaria শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল দূষিত বায় ।Dr . Laveran ( 1880 ) সর্বপ্রথম মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়া পরজীবীর উপস্থিতি লক্ষ করেন । Patric Manson ( 1894 ) উল্লেখ করেন যে , মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রােগের বিস্তার ঘটে ।- মানবদেহে ম্যালেরিয়া রােগ সৃষ্টি হয় Plasmodium গণের অন্তর্গত চারটি প্রজাতি ( species)এর পরজীবী আদ্যপ্রাণীর সংক্রমণের ফলে ।
রোগের লক্ষণ ( Symptoms of disease ) :
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
- প্রচণ্ড মাথাব্যথা এবং হাত ও পায়ে মারাত্মক বেদনা হয় ।
- অত্যন্ত ঠান্ডার অনুভূতি সহযােগে কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে ।
- ও প্লিহা আকারে বৃদ্ধি পায় , এই লক্ষণকে স্পিনােমেগালি বলে ।
- রােগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহে অধিক সংখ্যায় RBC বিদীর্ণ হওয়ায় হিমােলাইটিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয় ।
- মাঝে মাঝে ঘাম হয় ।
- ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় ।
ফেব্রাইল পারঅক্সিজম ( Febrile paroxysm ) :
ম্যালেরিয়া জ্বরের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা দেখা যায় — এদের একত্রে ফেব্রাইল পারক্সিজম বলে
[ i ] শীতাবস্থা : ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব করে ও পরে তার কাপনি দিয়ে জ্বর আসতে শুর আসে । এইসময় দেহের তাপমাত্রা সাধারণত 39 - 40°C হয় । সেইসঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয় । এই অবস্থাকেই শীতাবস্থা বলে । এই অবস্থা সাধারণত 20 মিনিট থেকে 1 ঘণ্টা স্থায়ী হয় । ।
[ 2 ] উত্তাপ অবস্থা ও শীতাবস্থার পরে ম্যালেরিয়া রােগীর দেহের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে সাধারণত 41 . 5°C বা তার বেশি হয় । এই সময়কালকে উত্তাপ অবস্থা বলে । এই অবস্থায় মাথাব্যথা ও বমি বমিভাব দেখা দেয় । এই অবস্থাটি সাধারণত 1 - 4 ঘণ্টা স্থায়ী হয় ।
[ 3 ] ঘর্ম অবস্থা; উত্তাপ অবস্থার পরে ম্যালেরিয়া রােগীর প্রচণ্ড ঘাম হয় এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায় । একে ঘর্মাবথা বলে । এই অবস্থা 2 - 3 ঘণ্টা স্থায়ী হয় ।
ইনকিউবেশন পিরিয়ড : Plasmodium - এর স্পােরােজয়েট কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করার কয়েকদিন পরে ম্যালেরিয়া রােগের এর লক্ষণ প্রকাশ পায় । এই সময়কালকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে ।
রােগ সংক্রমণ ( Transmission of disease )
ম্যালেরিয়া রোগের সংক্রমণ
Plasmodium মানুষ ( গৌণ পােষক ) ও Anopheles মশকী ( মূখ্যপােষক ) - র মাধ্যমে জীবনচক্র সম্পন্ন করে । এই জীবনচক্র সম্পাদনের সময় এরা মানবদেহে ম্যালেরিয়া রােগের সংক্রমণ ঘটায় । চারটি ভিন্ন প্রজাতির Plasmodium গণের পরজীবী আদ্যপ্রাণীর সংক্রমণের ফলে মানবদেহে চার ধরনের ম্যালেরিয়া দেখা দেয় । এগুলির জীবনচক্র মূলত একরকম হলেও কিছুকিছু পার্থক্যও লক্ষ করা যায় ।
বিস্তার পদ্ধতি ( Process of transmission )
ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার পদ্ধতি
ম্যালেরিয়া রােগ কোনাে রােগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে প্রধানত নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতিতে কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে বিস্তার লাভ করতে পারে ।
জৈবিক বাহকের মাধ্যমে বিস্তার : প্রধানত স্ত্রী Anopheles মশা ম্যালেরিয়ার জৈবিক বাহক হিসেবে কাজ করে । এরা ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে রােগের বিস্তার করে ।
রক্তসঞ্চারণের সময় বিস্তার : ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত কোনাে ব্যক্তির দেহ থেকে কোনাে সুস্থ ব্যক্তির দেহে রক্তসঞ্চারণ করা হলে ম্যালেরিয়ার পরজীবী সরাসরি সুস্থ ব্যক্তির দেহে বিস্তার লাভ করে ।
জন্মগত বিস্তার : গর্ভাবস্থায় মা ম্যালেরিয়া রােগে আক্রান্ত হলে , মায়ের রক্ত থেকে Plasmodium অমরার মধ্যে দিয়ে গর্ভস্থ ভ্রুণের দেহে প্রবেশ করে । সেক্ষেত্রে শিশুর দেহে রােগবিস্তার ঘটে ।
রােগ প্রতিকারের পদ্ধতি ( Prophylaxis of disease
ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিকার |
ম্যালেরিয়া রােগ প্রতিরোধ: ম্যালেরিয়া রােগের প্রতিরােধের কয়েকটি উপায় হল নিম্নরূপ ।
- মশার নিয়ন্ত্রণ : মশার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি নীচে আলােচিত হল ।
- মশার প্রজননক্ষেত্র দুরীকরণ : মশার আদর্শ প্রজননক্ষেত্র হল খানা , ডােবা , নালা - নর্দমা ইত্যাদি বদ্ধ জলাশয় । এ ছাড়াও বর্ষাকালে বাড়ির আনাচে - কানাচে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্র বা কৌটো এবং গর্তের মধ্যে জমে থাকা জলে মশকী ডিম পাড়ে । তাই এই সমস্ত বদ্ধ । জায়গায় যাতে জল না জমে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে ।
- রাসায়নিক দমন : যে সমস্ত জলাশয়ে মশকী সচরাচর ডিম পাড়ে । সেখানে মাঝে মাঝে কেরােসিন , পেট্রোলিয়াম , মবিল ইত্যাদি প্রয়ােগ করতে হবে । এতে জলের ওপর আস্তরণ তৈরি হয়ে মশার লাভা ও পিউপা ধ্বংস করা যায় ।
- পানামা লার্ভিসাইড ও প্যারিস গ্রিন হল তীব্র লার্ভানাশক পদার্থ এগুলি প্রয়ােগ করে মশার লার্ভা ও তাদের খাদ্য ধ্বংস করা যায় ।
- মশার আবাসস্থলে বিভিন্ন কীটনাশক পদার্থ । যেমন — DDT ( dichloro - diphenyl - trichlor - 0ethane ) , BHC ( benzene hexachloride ) ইত্যাদি স্প্রে করা হলে পরিণত মশা ধ্বংস হয় । ও S02 ধোঁয়া প্রয়ােগ করেও একসঙ্গে অনেক মশা মেরে ফেলা যায় ।
2.জৈবিক দমন :
- কিছুকিছু মাছ [ যেমন — গান্থসিয়া ( Gambusia affinis ) , গােল্ডফিশ ( Carassius aratus aratus ) , গাপ্পি । ( Lebistes reticultus ) ইত্যাদি মশার লার্ভা ও পিউপাকে দ্রুত ভক্ষণ করে । এদের লার্ভাভক বা লার্ভিসাইডাল মাছ বলে । জলাশয়ে এইসব । মাছ চাষ করা হলে মশার বংশবিস্তার রােধ করা যাবে ।
- হাইড্রা - ( Hydra sp . ) নামক অমেরুদণ্ডী প্রাণী মশার লার্ভা ও পিউপা ভক্ষণ করে তাদের ধ্বংস করে । mosquito repellent যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । এই যন্ত্র থেকে নির্গত আন্ট্রাসােনিক শব্দ মশাকে প্রায় 3m দূরে রাখে ।
3. জিনগত নিয়ন্ত্রণ : সুপ্রজননবিদ্যা ( genetics ) র অগ্রগতি মশা দমনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে । ভারতবর্ষের কিছুকিছু অঞ্চলে WHO এবং ICMR ( Indian Council of _ Medical IResearch ) - এর যৌথ উদ্যোগে মশার নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরুষ মশাকে ধরে রাসায়নিক পদার্থ বা রশ্মি প্রয়ােগ করে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে । দেওয়া হয় । এরপর এদের ছেড়ে দেওয়া হয় ।
4.ব্যক্তিগত সুরক্ষা : প্রধানত স্ত্রী Anopheles মশার দংশনের মাধ্যমেই এই রােগ হয় । তাই মশার দংশন থেকে ব্যক্তিগতভাবে রক্ষা পাওয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা উচিত ।
- দিনের বেলায় ঘরের আসবাবপত্রের পিছনে , পােশাক - পরিচ্ছদে ও অন্ধকার স্থানে মশা । লুকিয়ে থাকে । তাই ঘরের অন্ধকার স্থান আলােকিত ও পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার
- ঘরের দরজা - জানালায় সক্ষা তারের জাল লাগিয়ে মশাকে বিতাড়িত করা যেতে পারে ।
- যে সমস্ত অঞ্চলে মশার প্রাদুর্ভাব বেশি , সেখানে বিশেষত সন্ধ্যার দিকে দেহের অধিকাংশ অংশ পােশাক - পরিচ্ছদ দ্বারা আবৃত রাখা উচিত । লাগানাে উচিত ।
- ঘরে বিভিন্ন মশা বিতাড়ক ধূপ ও স্প্রে ব্যবহার । করেও মশার দংশন থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ।
রােগ নির্ণয় :
ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় |
কোনো ব্যক্তির কয়েকদিন ধরে জ্বর না সারলে বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে , ওই ব্যক্তির রক্তপরীক্ষা করতে হবে । পরীক্ষায় । ম্যালেরিয়ার পরজীবী পাওয়া গেলে বােঝা যাবে যে , ওই ব্যক্তি ম্যালেরিয়া রােগাক্রান্ত হয়েছে । এ ছাড়াও ফ্লুওরােসেন্স মাইক্রোস্কোপিক টেস্ট ও ইমিউনােক্রোমাটোগ্রাফিক টেস্ট - এর মাধ্যমেও কোনাে ব্যক্তি ম্যালেরিয়া । রােগাক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায় ।
চিকিৎসা পদ্ধতি :
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি |
পূর্বে ম্যালেরিয়া রােগের চিকিৎসায় সিঙ্কোনা গাছের কাণ্ডের ছাল থেকে প্রাপ্ত কুইনাইন নামক উপক্ষার ( alkaloid ) ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হত । এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় বর্তমানে ম্যালেরিয়া রােগের চিকিৎসায় ক্লোরােকুইন , কেমােকুইন , প্লাসমােকুইন , পেন্টাকুইন ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।