পেপটিক আলসার :কারন,উপসর্গ ,চিকিৎসা গ্রহণীয় খাদ্য ও প্রতিরোধের উপায়
WhatsAp Group
Join Now
Telegram Group
Join Now
পেপটিক আলসার - Peptic Ulcer in Bengali
পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগ
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটির সাথে পরিচিত নন এমন লোক খুঁজে বের করা হয়তো খুব কঠিন হবে। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বুঝিয়ে থাকেন আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলি পেপটিক আলসার।
পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার কি? What is Peptic Ulcer in Bengali
পেপটিক আলসার হওয়ার স্থান:পেপটিক আলসার প্রধানত গ্রাসনালীর নিম্নাংশে ঘটে/এই আলসার পাকস্থলীতে দেখা দিলে তাকে গ্যাসট্রিক আলসার (gastric ulcer)বলে এবং ডিওডেনাম অংশে দেখা দিলে, তাকে ডিওডেনাল আলসার (duodenal ulcer) বলে।
পেপটিক আলসার |
পেপটিক আলসারের কারণ:
পেপটিক আলসার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।কয়েকটি গুরুত্বপূন কারণ এখানে উল্লেখ করা হল—
1.পেপটিক আলসারের প্রধান কারণ হল hurry (যে-কোনাে কাজে অত্যধিক তাড়াহুড়াে করা),worry (কোনাে বিষয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা করা) এবং curry(অত্যধিক ঝালমশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা)। সেই কারণে অনেকে এই রােগকে Adisease due to hurry, worry and curry' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
2. গ্যাসট্রিক আলসারের মূল কারণ হল,পাকস্থলী থেকে অল্প মাত্রায় মিউকাস (শ্লেম্মা) ক্ষরণ। মিউকাস বা শ্লেম্মা পাকস্থলীর অন্তঃস্থ গাত্রে এমনভাবে আবরণ রচনা করে যে, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে না।
3. ডিওডেনাল আলসারের প্রধান কারণ হল, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ পাকরসের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষরণ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের নাভীয় উদ্দীপনা যেমন আবেগ, ভয়, চিন্তা ইত্যাদি ভেগাস নার্ভকে অধিক ক্রিয়াশীল করে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও পেপসিন নামক উৎসেচকের ক্ষরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে আলসার সৃষ্টি করে।
4.অধিক পরিমাণ চা, কফি, মদ পান করলে, নিয়মিত ধূমপান করলে বা তামাক সেবন করলে অথবা ব্যাথা কমানাের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করতে থাকলে আলসার রােগ দেখা দেয়।
5.দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত প্রােটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ না
করলেও পাকস্থলীতে আলসার দেখা দেয়।
পেপটিক আলসারের লক্ষণ বা পেপটিক আলসার এর উপসর্গ - Symptoms of Peptic Ulcer in Bengali
পেপটিক আলসারের বিভিন্ন লক্ষণগুলি হল—
1)পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খাদ্য গ্রহণের দু-তিন ঘণ্টা পরেই খিদে অনুভব করেন।
2)পেটে অসহ্য ব্যথা হয় এবং জ্বালা অনুভূত হয়।
3)দীর্ঘদিন আলসারে ভুগতে থাকলে, ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত বের হয় এবং ওই রক্তপরিপাকনালীতে এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যে,রােগীর মলের রং কালাে আলকাতরার মতাে দেখায়।
4)অনেক ক্ষেত্রে রােগীর রক্তবমি ঘটে।
5) রােগীর দেহের ওজন হ্রাস পেতে থাকে।
6) লৌহঘটিত অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য নির্বাচনের জন্য যেটি সবার আগে করতে হবে তা হল উত্তেজক পানীয় ও অতিরিক্ত এসিড ক্ষরণ হয় এমন খাবার না খাওয়া। ডুবো তেলে ভাজা খাবার একেবারেই পরিহার করা উচিত।
পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তির গ্রহণীয় ও বর্জনীয় খাদ্য নিম্নরূপ-
1. গ্রহণীয় খাদ্য উপাদান ;মিলে ছাঁটা পরিষ্কার চাল, ময়দা, সুজি, চিড়ে, মুড়ি, পাউরুটি, সাবু। খােসাছাড়ানাে বিভিন্ন ধরনের ডাল। সেদ্ধ বা অর্ধসেদ্ধ ডিম, সেদ্ধ মাছ, অল্প পরিমাণ চর্বিহীন মাংস। ঠান্ডা দুধ, মাখন। সবুজ শাকসবজি। তন্তুহীন সুমিষ্ট ফল বা ফলের রস।চিনি, মিষ্টি। তিল, সরিষা বা সূর্যমুখীর তেল এবং অল্প পরিমাণ ফ্যাটসমৃদ্ধ খাদ্য।2. ৰজনীয় খাদ্য উপাদান; গােটা দানাশস্য বা তন্তুসমৃদ্ধ দানাশস্য, আটার রুটি,খােসা সমেত ডাল, বাদাম, বিন। লঙ্কা, মশলাযুক্ত খাবার, কাচা পেয়াজ, রসুন, বেশি মাত্রায় তন্তযুক্ত সবজি, মুলাে, শশা,আচার, ছিবড়েযুক্ত কঁচা ফল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, ভাজা খাবার, কেক, পেস্ট্রি, হালুয়া, বরফি, চকোলেট, পান, তামাক, টকজাতীয় খাবার,মদ, নরম পানীয়, চা, কফি, কার্বোনেটেড পানীয় এবং খুব বেশি গরম বা খুব বেশি ঠান্ডা খাবার।