জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার কৌশলসমূহ-Strategies to maintain reproductive health

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now
মানুষের শারিরীক ও মানসিক সুস্থ অবস্থাই স্বাস্থ্য বা সুস্বাস্থ্য হিসেবে পরিচিত । বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন অসুস্থতার প্রতিকারের সাথে সাথেই জননগত স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । পুরুষ ও মহিলাদের জননসংক্রান্ত শারীরিক অবস্থা অর্থাৎ , জনন অঙ্গের স্বাভাবিক গঠন , কার্যাবলি বজায় রাখা ও জনন অঙ্গের রােগ প্রতিরােধ করা ইত্যাদিকে সামগ্রিকভাবে জননগত স্বাস্থ্য বলে ।
জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার কৌশলসমূহ (Strategies to maintain reproductive health )
জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার কৌশল


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO ) - এর মতে , জননগত স্বাস্থ্য হল জননের সকল দিক অর্থাৎ দৈহিক , মানসিক , আচরণগত ও সামাজিক দিক থেকে এক সামগ্রিক সুস্থ অবস্থা।

জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার কৌশলসমূহ (Strategies to maintain reproductive health ) 


ভারত বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র , যেখানে 1951 সাল থেকে জাতীয় স্তরে জননগত স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে বিভিন্ন কার্যকর পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে । 1997 সাল থেকে জননগত বিভিন্ন বিষয় , সমস্যা ও সমাধান কর্মসূচি নিয়ে আরও বেশি কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে , যা জননগত ও শিশুর স্বাস্থ্য ( reproductive and child health or RCH ) কর্মসূচি নামে পরিচিত । এই কর্মসূচির তিনটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল —a) জনন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তােলা , b)শিশুদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা , c ) জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা ।

জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার উপায় গুলি সম্পর্কে নীচে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হল । 

1) পরিবার পরিকল্পনা : পরিবার পরিকল্পনা ( family planning ) কর্মসূচি 1951 সালে চালু হয় । এই কর্মসূচির মূল বক্তব্য ছিল ছােটো পরিবার , সুখী পরিবার ( small family , happy family ) । এর প্রতীক হিসেবে উলটানাে লাল ত্রিভুজ ( inverted red triangle ) ব্যবহার করা হয় । পরবর্তীকালেও এই কর্মসূচি রূপায়ণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে । সরকারি প্রচেষ্টা ছাড়াও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ( NGO ) - ও এই কর্মসূচি সফল করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে । 

2) জনসচেতনতা : সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা জনগণকে জনন - সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করা ও সচেতনতা গড়ে তােলার দায়িত্ব পালন করে । বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ( যেমন — টেলিভিশন , রেডিয়াে , খবরের কাগজ , বিজ্ঞাপন পত্রিকা , হাের্ডিং ) দ্বারা এই সচেতনতা গড়ে তােলা হয় ।

3) বড়ােদের ভূমিকা : পিতা - মাতা , নিকট আত্মীয় , শিক্ষক - শিক্ষিকা , বন্ধুবান্ধবদের একান্ত কর্তব্য ছােটোদের জনন - সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জানানাে । এভাবেই সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ছােটোরা স্বাভাবিক জনগত স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হবে ।

4)যৌন  শিক্ষা : যৌন বা সেক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন ভুল ধারণা ভাঙার জন্য , স্কুলে যৌন শিক্ষা চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন দৈহিক পরিবর্তন ঘটে । সঠিকভাবে জনন সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা গড়ে তােলা , নিজেদেরকে ক্ষতিকর অবস্থায় পড়তে না দেওয়া ,STD সংক্রমণ ( বিশেষত AIDS ) রােধ করা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে যৌন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া বিশেষ জরুরি ।

 5 ) বিবাহের বয়স : সমাজে স্বাভাবিক জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে মেয়েদের কম বয়সে বিবাহ বন্ধ করতে হবে । ভারতে বাল্যবিবাহ আইনগতভাবে বন্ধ করা হয়েছে । মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহযােগ্য ন্যূনতম বয়স 18 বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে 21 বছর ঠিক করা হয়েছে ।

6 ) বিবাহিত ও বিবাহযোগ্যদের শিক্ষাদান : সদ্যবিবাহিত স্বামী - স্ত্রী এবং বিবাহযােগ্য বয়সের যুবক - যুবতীদের বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে । গর্ভবতী মায়েদের যত্ন , প্রসবের পরে মা ও শিশুদের যত্ন , মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব , পুত্রসন্তান ও কন্যাসন্তানের সমান সুযােগ ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে ।

7) পরিকাঠামো : জননগত স্বাস্থ্য তােলার উদ্দেশ্যে পরিকাঠামােগত সুযােগ , বিশেষজ্ঞের সাহায্য এবং প্রয়ােজনীয় বস্তুসমূহ , সংশ্লিষ্ট স্ত্রী ও পুরুষদের পৌঁছে দেওয়া দরকার ।

8) উন্নত প্রযুক্তি : জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মা ও শিশুর সঠিক যত্ন বা পরিচর্যার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন উন্নত আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয় । যেমন— CT স্ক্যান ( computed tomographic scanning ) , MRI ( magnetic resonance imaging ) , USG ( ultrasonography ) ইত্যাদি.

9) লিঙ্গ নির্ধারণ ; বর্তমানে USG এবং অ্যামনিওসেনটেসিস - এর মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর মধ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ।

10)গবেষণা : সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় জনন - সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে । এর উদ্দেশ্য হল নতুন পদ্ধতি অথবা বর্তমান পদ্ধতির চেয়ে আরও উন্নত পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া । যেমন — সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ( Central Drug Research Institute বা CDRI ) - লক্ষ্ণৌ , গর্ভনিরােধক বড়ি হিসেবে । সাহেলি ( saheli ) প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছে ।







Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url