ভাইরাসvirusesকি এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভাইরাস কি?এর বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, সজীব বৈশিষ্ট্য,জড় বৈশিষ্ট্য ও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য কি?
ভাইরাস (viruses)কি?এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি
ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য


সূচনা ( Introduction of viruses ) :

ভাইরাস ( virus ) একটি ল্যাটিন শব্দ , যার অর্থ বিষ ( poison ) । ভাইরাস একপ্রকার জীবকণা যা কেবল সজীব কোশেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে । সজীব কোশের বাইরে এরা জড়ের মতাে আচরণ করে । তাই এদের জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয় । ভাইরাসের একককে ভিরিয়ন ( virion ) বলে । ভাইরাস এত ক্ষুদ্র যে কেবলমাত্র 2A রেজলুশন ( resolution ) ক্ষমতা সম্পন্ন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এরা দৃশ্যমান ।

1892 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি এ . আইভানােস্কি ( Dmitri A. Iwanovski ) তামাক পাতার মােজাইক রােগের কারণ হিসেবে এমন এক সংক্রমণ বস্তুর কথা উল্লেখ করেছিলেন যা ব্যাকটেরিয়ার থেকেও ছােটো এবং ব্যাকটেরিয়া - ফিলটার দ্বারা ছাঁকা তরল পদার্থের মধ্যে থেকেও ওই রােগ সৃষ্টি করতে সক্ষম । 1898 খ্রিস্টাব্দে ডাচ বিজ্ঞানী বেইজেরিঙ্ক ( M.W. Beijerinck ) প্রথম ভাইরাস নামটি প্রবর্তন করেন ।



ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of Viruses ):

 ( i ) ভাইরাস অতি সূক্ষ্ম , রােগসৃষ্টিকারী , বাধ্যতামূলক পরজীবী ।
( ii ) ভাইরাস জীব ও জড়ের উভয় বৈশিষ্ট্য বহনকারী অকোশীয় জীব ।
( iii ) এরা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট পােষক কোশে প্রজননক্ষম , পােষক কোশের বাইরে জড়ের মতাে আচরণ করে ।
( iv ) ভাইরাস প্রােটিন নির্মিত বহিরাবরণ ( ক্যাপসিড ) ও কেন্দ্রস্থ নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে গঠিত ।
( v ) ভাইরাস দেহে DNA অথবা RNA যে - কোনাে একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে ।
( vi ) ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া - ফিলটারে পরিস্রাব্য এবং কেবলমাত্র ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় । ( vii ) নিউক্লিয় প্রােটিন নির্মিত ভাইরাস কণাকে কেলাসিত করা সম্ভব ।
( viii ) এদের দেহে শ্বসন ও বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । ( ix ) ভাইরাসের দেহ উৎসেচকবিহীন অথবা স্বল্প কয়েকটি উৎসেচক থাকে ।
( x ) প্রাণী ভাইরাসের দেহে ক্যাপসিডের বাইরে শর্করা - প্রােটিন ও লিপিড নির্মিত বহিরাবরণ ( এভেলপ ) থাকে ।
( xi ) অভিযােজন ও পরিব্যক্তি ক্ষমতা এদের সজীবতার অন্যতম লক্ষণ ।
( xii ) এরা অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে এবং পােষক কোশে প্রবেশ করে অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সাহায্য করে । ( xiii ) ভাইরাসের বৃদ্ধি হয় না , নিজস্ব বিভাজন ক্ষমতা নেই । ( xiv ) কৃত্রিম মাধ্যমে এদের বৃদ্ধি ঘটে না , পরীক্ষাগারে পােষক কোশ পালন করে এদের সংরক্ষণ করা যেতে পারে । ( xv ) এরা উদ্ভিদ , প্রাণী ও মানুষের রােগ সৃষ্টি করে ।
( xvi ) এদের তাপ সহনশীলতা অধিক , সূর্যালোেক কোনাে ক্ষতি করতে পারে না ।
( xvii ) অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের অধিক তারতম্য সহ্য করতে পারে । অ্যান্টিবায়ােটিক এদের ধ্বংস করতে পারে না ।


 ভাইরাসের সংজ্ঞা ( Definition of Viruses ):

নিউক্লিয় প্রােটিন নির্মিত , অতি ক্ষুদ্র , অকোশীয় , রােগসৃষ্টিকারী , বাধ্যতামূলক পরজীবী , কেবলমাত্র পােষককোশে প্রজননক্ষম , ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান জীব ও জড়ের  মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তুকে ভাইরাস বলে ।


ভাইরাস (viruses)কি?এর বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি

ভাইরাসের প্রকৃতি (Nature of Viruses): 

( i ) ভাইরাসের জীবনচক্রে দুটি দশা প্রধান — অন্তঃকোশীয় ( Intracellular ) ও বহিঃকোশীয় ( Extracellular ) । অন্তঃকোশীয় দশায় সজীব বস্তুর মতাে আচরণ করে । বহিঃকোশীয় দশায় সংক্রমণযােগ্য নিষ্ক্রিয় জড় বস্তুর মতাে আচরণ করে ।
( ii ) বহিঃকোশীয় দশায় প্রতিটি ভিরিয়ন কণার সংক্রমণ ক্ষমতা বিদ্যমান ।
( iii ) ভাইরাসের দেহে যে - কোনাে একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে । ভাইরাসের ক্ষেত্রে DNA দ্বিতন্ত্রী বা একতন্ত্রী হতে পারে , আবার RNA একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী হতে পারে ।
( iv ) ভাইরাস পােষক কোশে প্রবেশের পর নিউক্লিক অ্যাসিডের সাহায্যে নিজেদের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ।
( v ) ভাইরাস পােষক কোশ ছাড়া বংশবিস্তার করতে পারে না , তাই ভাইরাসকে বাধ্যতামূলক পরজীবী ( Obligatory Parasite ) বলে ।
( vi ) ভাইরাসে সাইটোপ্লাজম , রাইবােজোম এবং প্রােটিন সংশ্লেষ , বিপাকক্রিয়া অনুপস্থিত ।
( vii ) ভাইরাসের মধ্যে স্বল্প দু - একটি উৎসেচকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ।
( viii ) ভাইরাসের আয়তন বৃদ্ধি ঘটে না , উত্তেজনায় সাড়া দেয় না , চলন ক্ষমতা নেই ।
( ix ) বিশুদ্ধ ভাইরাস কণাকে কেলাসিত করা যায় ।
( x ) বহু বছর সংরক্ষণ করার পরেও ভাইরাসের সক্রিয়তা বজায় থাকে ।


ভাইরাসের সজীব বৈশিষ্ট্য ( Living characters of Viruses ):

( i ) ভাইরাস সজীব পােষক কোশে বংশবিস্তারে সক্ষম ।
( ii ) ভাইরাসে DNA অথবা RNA বর্তমান ।
( iii ) নিউক্লিক অ্যাসিডের পরিবর্তন বা পরিব্যক্তি ও বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ।
( iv ) এরা সম্পূর্ণ পরজীবী এবং সংক্রমণযােগ্য।
( v ) এরা উদ্ভিদ , প্রাণী ও মানুষের রােগ সৃষ্টি করে । রােগ সৃষ্টি করা সজীব কোশের বৈশিষ্ট্য ।
( vi ) ভাইরাস পােষক কোশের রাইবােজোমকে ব্যবহার করে প্রােটিন সংশ্লেষ করতে পারে । এ ছাড়া ভাইরাস লাইসােজাইম ( LysoZyme ) ও আরও কয়েকটি উৎসেচক সংশ্লেষ করতে পারে।


ভাইরাসের জড় বৈশিষ্ট্য ( Non - living characters Virus ):

( i ) বিশুদ্ধ ভাইরাস কণাকে কেলাসিত করা যায় । বিজ্ঞানী স্টানলি ( Stanley ) TMV ভাইরাসকে কেলাসরূপে পরিশ্রুত করেছিলেন ।
( ii ) কোশীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য ন্যূনতম 5000A স্থান প্রয়ােজন কিন্তু ভাইরাসের দৈর্ঘ্য 100-200A- এর বেশি হয় না।
( iii ) ভাইরাস কোশীয় সংগঠনবিহীন ।
( iv ) ভাইরাস দেহে বিপাকক্রিয়া পরিচালনাকারী সমস্ত কোশীয় অঙ্গাণু অনুপস্থিত।
( v ) ভাইরাসের মধ্যে শ্বসন , রেচন ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া লক্ষ করা যায় না ।
( vi ) বহিঃপরিবেশে জনন ও সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে না।
( vii ) কোনাে বহিঃস্থ উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না ।
( viii ) কৃত্রিম মাধ্যমে এদের বৃদ্ধি ঘটে না ।


ভাইরাসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ( Proterties of Viruses of their own ):

বিজ্ঞানী লউফ ও টউরনিয়ার ( Lwoff and Toournier , 1971 ) ভাইরাসের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করেন । সেগুলি হল—
( i ) ভাইরাসের দেহে DNA অথবা RNA যে - কোনাে একটি নিউক্লিক অ্যাসিড বর্তমান ।
( ii ) প্রতিটি ভাইরাসে একটিমাত্র নিউক্লিক অ্যাসিডের অণু । উপস্থিত
( iii ) ভাইরাস পােষক কোশের বাইরে জড়ের মতাে আচরণ করে ।
( iv ) ভাইরাসের প্রজননে শুধুমাত্র জেনেটিক পদার্থটিই ব্যবহৃত হয় এবং পােষক কোশের অঙ্গাণু ও রাসায়নিক যৌগগুলিকে ব্যবহার করে প্রজনন সম্পন্ন হয় ।
( v ) ভাইরাস দেহে রাইবােজোম ও শ্বসনতন্ত্র অনুপস্থিত ।
( vi ) সমস্ত ভাইরাসই বাধ্যতামূলক পরজীবী ।

এই কারণেই ভাইরাস সম্পূর্ণ এক পৃথক সত্তা এবং অন্য কোনাে জীবের সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য নেই । বিজ্ঞানী লউফ ( Lwoff ) -এর ভাষায় " Viruses are viruses because they are viruses . "

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url