জননগত স্বাস্থ্য কী,জননগত স্বাস্থ্যের প্রয়ােজনীয়তা, what is reproductive health
WhatsAp Group
Join Now
Telegram Group
Join Now
জননগত স্বাস্থ্য(Reproductive health),জননগত স্বাস্থ্যের প্রয়ােজনীয়তাও জননগত স্বাস্থ্যের সমস্যাসমূহ:
জননগত স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য |
মানুষের শারিরীক ও মানসিক সুস্থ অবস্থাই স্বাস্থ্য বা সুস্বাস্থ্য হিসেবে পরিচিত । বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন অসুস্থতার প্রতিকারের সাথে সাথেই জননগত স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । পুরুষ ও মহিলাদের জননসংক্রান্ত শারীরিক অবস্থা অর্থাৎ , জনন অঙ্গের স্বাভাবিক গঠন , কার্যাবলি বজায় রাখা ও জনন অঙ্গের রােগ প্রতিরােধ করা ইত্যাদিকে সামগ্রিকভাবে জননগত স্বাস্থ্য বলে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO ) - এর মতে , জননগত স্বাস্থ্য হল জননের সকল দিক অর্থাৎ দৈহিক , মানসিক , আচরণগত ও সামাজিক দিক থেকে এক সামগ্রিক সুস্থ অবস্থা।
জননগত স্বাস্থ্য বলতে সম্মিলিতভাবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে বােঝায় ।
1 ) বয়ঃসন্ধিকালে ও পরবর্তী যৌনজীবনে প্রাথমিক জনন অঙ্গ ( পুরুষের শুক্রাশয় ও নারীর ডিম্বাশয় ) , আনুষঙ্গিক জনন অঙ্গ ও বিভিন্ন গ্রন্থির বৃদ্ধি , বিকাশ এবং তাদের কার্যকারিতা অক্ষুন্ন থাকা ।
2) পরিণত পুরুষদের শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপাদন এবং টেস্টোস্টেরন - এর সংশ্লেষ , নিঃসরণ এবং তাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যাদি স্বাভাবিক থাকা ।
3)পরিণত মহিলাদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপাদন ( oogenesis ) , ডিম্বাণু নিঃসরণ ( ovulation ) , ডিম্বাশয় থেকে উপযুক্তমাত্রায় ইস্ট্রোজেন , প্রােজেস্টেরন ইত্যাদি হরমােন সংশ্লেষ , নিঃসরণ এবং তাদের শারীরবৃত্তীয় কার্যাদি স্বাভাবিক থাকা ।
4) বয়ঃসন্ধিকাল থেকে বার্ধক্যকাল পর্যন্ত মহিলাদের রজঃচক্র ( menstrual cycle ) স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হওয়া ।
5)পরিণত মহিলা ও পুরুষদের যৌন জীবনকালে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতা বজায় থাকা ।
6)পরিণত স্ত্রীদেহে নিষিক্তকরণ , নিষিক্ত ডিম্বাণু বা জাইগােট থেকে সূর্ণ সৃষ্টি , জ্বণের বৃদ্ধি ও বিকাশ স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হওয়া ।
7)গর্ভাবস্থার শেষে সুস্থ , সবল ও নীরােগ সন্তানের জন্মদান ।
৪ ) বিভিন্ন যৌন সংসর্গে সংক্রামিত রােগ ( sexually transmitted diseases or STD ) থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সচেতন হওয়া ।
9)জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা । প্রজনন বয়সের মহিলারা(women of reproductive age) জননগত স্বাস্থ্য , দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে সম্পর্কিত , অর্থাৎ এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জননগত স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে । ফলে অনেকক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতা ব্যাহত হয় । কিছুক্ষেত্রে রােগগ্রস্ত শিশু জন্ম নেবে , যা পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে কল্যাণকর হবে না ।
জননগতভাবে একটি সুস্থ সমাজ সকলেরই কাম্য । সমাজ জননগতভাবে সুস্থ হবে যদি সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি তাদের জননাঙ্গগুলির বৃদ্ধি , বিকাশ ও শারীরবৃত্তীয় কার্যাদি স্বাভাবিক রাখতে পারে । তাই এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । এই সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে বিভিন্ন কল্যাণকর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ।
জননগত স্বাস্থ্যের গুরুত্ব( Significance of reproductive health )
জননগত দিক থেকে সুস্থ সমাজ গড়ে তােলার জন্য জননগত স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক । এই সম্পর্কে সরকারি , বেসরকারি প্রচেষ্টা ছাড়া ব্যক্তিগত সচেতনতাও একান্তভাবে প্রয়ােজন । জননগত স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বলতে এর প্রয়ােজনীয়তা বােঝায় । এ ছাড়াও এই অংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , যেমন — জননগত স্বাস্থ্যের সমস্যা ও জননগত স্বাস্থ্য বজায় রাখার কৌশল নিয়ে আলােচনা করা হল ।
জননগত স্বাস্থ্যের প্রয়ােজনীয়তা ( Need for reproductive health )
জননগত স্বাস্থ্যের প্রয়ােজনীয়তাগুলি নিম্নরূপ-
1)পুরুষ ও মহিলার আনন্দদায়ক ও সন্তোষজনক যৌন জীবন্যাপন ।
2)যৌন সংসর্গে সংক্রামিত রােগসমূহ ( যেমন — সিফিলিস , গনােরিয়া প্রভৃতি ) থেকে নিজেদের রক্ষা করা ।
3)জননগত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা ।
4)জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভনিরােধক ব্যবস্থার সঠিক প্রয়ােগ
5)গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়া ।
6) প্রজননিক বয়সে বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের প্রক্রিয়াসমূহের প্রয়ােগ ।
7) জনন - সংক্রান্ত অস্বাভাবিকতার দ্রুত চিকিৎসা ।
8)শিশুর সঠিক পরিচর্যা এবং টিকাকরণের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে সতর্ক থাকা ।
জননগত স্বাস্থ্যের সমস্যাসমূহ(Problems of reproductive health )
জননগত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি নীচে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হল ।
(a)শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব : শিক্ষার অভাব ও রক্ষণশীলতার কারণে আমাদের দেশে ‘ জননগত বিষয় সম্বন্ধে আলাপ - আলােচনা বা শিক্ষাদান প্রসারলাভ করেনি । পরিবারের বড়ােরা , অল্পবয়স্কদের বিশেষত বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের জননগত স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট নন । শিক্ষিত সমাজেও এই বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা গড়ে ওঠেনি ।
(b)অল্পবয়সে বিবাহ : আমাদের দেশে বিশেষত মেয়েদের , 18 বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় । অর্থাৎ , বাল্যবিবাহের ফলে অপরিণত বয়সেই অনেকে গর্ভবতী হয়ে পড়ে । ফলে এইসব মায়েরা সন্তানের সঠিক পরিচর্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকে না । এ ছাড়া , অপরিণত বয়সে মাতৃত্বলাভের ফলে এরা নিজেরা এবং এদের সন্তানেরাও দুর্বল হয় ।
(c) জন্ম নিয়ন্ত্রণ : জননগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা না থাকার কারণে ও উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে অনেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাদি গ্রহণ করে না ।
(d) মহিলাদের স্বাস্থ্য : আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামাঞলে , মহিলাদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না । এর ফলে তারা দুর্বল হয় এবং সহজেই বিভিন্ন রােগে আক্রান্ত হয় । এরপর এইসব মায়েরা সন্তান প্রসব করলে , সন্তানরাও দুর্বল হয় ও সহজে রােগাক্রান্ত হয় ।
(e) যৌন সংসর্গে সংক্রামিত রোগের বিস্তার : জননগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার ফলে আমাদের দেশে যৌন সংসর্গে সংক্রামিত রােগের ( বিশেষত AIDS- এর ) বিস্তার দ্রুত ঘটছে ।