বায়ুমণ্ডল। বায়ুমণ্ডলে শ্রেনীবিভাগ।Atmosphere in Bengali
বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)
>> বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ?
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিলােমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (atmosphere) বলে।
শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মতাে বায়ুমণ্ডল পার্থিব পরিবেশের অবিভাজ্য অংশ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে এই গ্যাসীয় আবরণ সংযুক্ত হয়ে রয়েছে।
বায়ুমণ্ডল কাকে বলে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করো |
>>বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী ?
বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত।
জীবজগতের পক্ষে দূষিত পদার্থ যেমন, সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন
ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসও বায়ুমণ্ডলের অঙ্গ।
বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের পরিমাণ অনুসারে নাইট্রোজেন প্রথম (৭৮.০৮%) ও অক্সিজেন দ্বিতীয় (২০-৯৪%) স্থানের অধিকারী। সম্মিলিতভাবে এই দুটি গ্যাস বাতাসের প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ জুড়ে রয়েছে। বিশদভাবে বলতে গেলে এরকম দাঁড়ায়- (১) নাইট্রোজেন (N,) ৭৮.০৮%, (২) অক্সিজেন (O) ২০.৯৪%, (৩) আর্গন (Ar) ০.৯৩%, (৪) কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO,)০.০৩%, (৫) অন্যান্য গ্যাস (যেমন- নিয়ন (Ne) + হিলিয়াম (He) + ওজোন (O) +হাইড্রোজেন(HQ) + ক্রিপ্টন (Kr) + জেনন (Xe) + মিথেন (CH4) ০.০২%, (৬) জলীয় বাষ্প।
>> বায়ুমণ্ডল পরিবেশকে কীভাবে প্রভাবিত করে ?
(১) বায়ুমণ্ডল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
(২) বায়ুমণ্ডল জল, বাতাস ইত্যাদি পুনর্ভব শক্তির (renewable energy) জোগান দেয়।
(৩) বায়ুমণ্ডল প্রাণীজগতকে অক্সিজেন ও উদ্ভিদ জগতকে কার্বন ডাইঅক্সাইড দেয়।
(৪) বায়ুমণ্ডল অবলােহিত রশ্মি (infra-red ray) এবং অতিবেগুনি রশ্মির (ultra-violet ray)
ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জীবজগতকে রক্ষা করে।
(৫) বায়ুমণ্ডল প্রাণীজগতের শারীরবৃত্তীয় (physiological) প্রয়ােজন মেটায়।
(৬) বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি ছাড়া জলচক্র (hydrological cycle) অস্তিত্বহীন।
(৭) বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।
(৮) অক্সিজেন গ্যাস শ্বাসকার্যে সাহায্য করে ও প্রাণীদেহে শক্তি ও উত্তাপ জোগায়।
(৯) অক্সিজেন দহনকার্যে সহায়তা করে।
(১০) কার্বন ডাইঅক্সাইড তাপ শােষণ করে।
(১১) নাইট্রোজেন প্রােটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করার কাজে লাগে।
(১২) জলীয় বাষ্প বৃষ্টিপাত, মেঘ, তুষারপাত, কুয়াশা ইত্যাদি সৃষ্টি করে।
(১৩) ধূলিকণা বায়ুমণ্ডলের তাপ শােষণে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত ধূলিকণার জন্য
ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি তাপ বৃদ্ধি পায়।
(১৪) ধূলিকণা ঘনীভবনে (condensation) সহায়তা করে।
(১৫) ওজোন অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে।
(১৬) বায়ুমণ্ডল উল্কার আঘাত থেকে ভূ-পৃষ্ঠকে রক্ষা করে।
(১৭) বাতাসের শক্তি উপযুক্ত পরিবেশে মানুষের শ্রম লাঘব করে। বায়ুশক্তির সাহায্যে দানাশস্য পেষাই, জলসেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি নানা কাজ করা যায়। অর্থাৎ পুনর্ভব সম্পদ হিসেবে বাতশক্তি অপুনর্ভব চিরাচরিত শক্তির উত্তম বিকল্প।
>> বায়ুমণ্ডলের প্রধান অংশগুলি কেমন ?
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মােটামুটি ৬ কিমি উচ্চতার মধ্যে বায়ুমণ্ডলের নব্বই শতাংশ অবস্থিত।ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মহাশূন্যের দিকে গ্যাসের অনুপাত অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত করা যায়, যেমন- (১) সমমণ্ডল বা হােমােস্ফিয়ার (Homosphere) এবং (২) বিসমমণ্ডল বা হেটারােস্ফিয়ার (Heterosphere)।
>> সমমণ্ডল কী ?
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরটিকে সমমণ্ডল বা হােমােস্ফিয়ার (Homosphere) বলে। এই স্তরের মধ্যে গ্যাসীয় উপাদানগুলির অনুপাত প্রায় সমান।
বায়ুমণ্ডলের এই সর্বনিম্ন বলয়টি জল, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস।
>> সমমণ্ডলের মধ্যে কোন্ কোন্ স্তর আছে?
সমমণ্ডলকে উষ্ণতা ও উচ্চতা অনুসারে তিনটি অসমান উপস্তরে বিভক্ত করা যায়—
(১) ঘনমণ্ডল বা ক্ষুব্ধমণ্ডল বা ট্রোপােস্ফিয়ার (Troposphere), (২) শান্তমণ্ডল বা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere), (৩) মেসােস্ফিয়ার (Mesosphere)।
>>বিসমমণ্ডল কী ?
ভূ-পৃষ্ঠের ৯০-১০০ কিমি উচ্চতার মধ্যে বিসমমণ্ডল শুরু হয়। এই মণ্ডলের উর্ধ্বসীমা প্রায় ১০,০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাতাসের গ্যাসীয় উপাদানগুলির পরিমাণ এখানে সমান নয়। সে কারণে এই বলয়টি বিসমমণ্ডল বা হেটারােস্ফিয়ার (Heterosphere) নামে পরিচিত।
>>বিসমমণ্ডলের অন্তর্গত স্তরগুলি কী কী?
∆বিসমমণ্ডলের উপস্তরগুলিকে দুভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন-
(ক) মৌলিক পদার্থগুলির পরিমাণের তারতম্য অনুসারে ও (খ) আয়নিত মাত্রা ও অন্যান্য
বৈশিষ্ট্য অনুসারে।
∆(ক) মৌলিক পদার্থগুলির পরিমাণের তারতম্য অনুসারে বিসমমণ্ডলের মধ্যে চারটি উপস্তর
লক্ষ করা যায়, যেমন-
(i) পারমাণবিক নাইট্রোজেন স্তর (Layer of atomic nitrogen) : উচ্চতা ১০০-২০০ কিমি।
(i) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (Layer of atomic oxygen) : উচ্চতা ২০০-১,০০০ কিমি।
(i) হিলিয়াম স্তর (Helium layer) : উচ্চতা ১,০০০-৩,৫০০ কিমি।
(iv) হাইড্রোজেন স্তর (Hydrogen Layer) : উচ্চতা ৩,৫০০-১০,০০০ কিমি।।
∆(খ) আয়নিত মাত্রা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিসমমণ্ডল তিন ভাগে বিভক্ত, যেমন—
(i) আয়নমণ্ডল (lonosphere) : উচ্চতা ১০০-৩০০ কিমি।
(i) বহির্মণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) : উচ্চতা ৩০০ থেকে আনুমানিক ১,০০০ কিমি।
(i) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) : উচ্চতা আনুমানিক ১,০০০ কিমি থেকে শুরু, ঊর্ধ্বসীমা অনির্দিষ্ট। বিসমমণ্ডলের ওপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ