ইনসিটু সংরক্ষণ ও এক্স-সিটু সংরক্ষণ উদ্দেশ্য গুরুত্ব উদাহরন| In-situ conservation Ex-situ conservation in-bengali
ইনসিটু সংরক্ষণ (In-situ conservation)
সংজ্ঞা :জীবগােষ্ঠীকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করার পদ্ধতির নাম ইন-সিটু সংরক্ষণ।
উদ্দেশ্য ;
ইন সিটু সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হল 'On-site conservation' অর্থাৎ, কোনাে বিপদগ্রস্ত লুপ্তপ্রায় প্রাণী বা উদ্ভিদকে তার নিজ প্রাকৃতিক পরিবেশে রেখে সেই পরিবেশ সংরক্ষণের দ্বারা বা বিপদ অপসারণের দ্বারা সংরক্ষণ করা যাতে জীবটি নিজ পরিবেশে পুনরায় সঞ্জীবিত হতে পারে।
বিপন্ন জীববৈচিত্র্যকে মানুষের অনুপ্রবেশ ও ক্ষতিসাধন থেকে বাঁচাননাও এই সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য।
গুরুত্ব:
ইন-সিটু সংরক্ষণের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল—
নানারকম সংরক্ষিত এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও তার বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করা হয়।
কৃষি জীববৈচিত্র্য ও গৃহপালিত প্রজাতির সংরক্ষণ করা হয়।
প্রজাতি পুনরুদ্ধার করাও এর একটি বিশেষ দিক।এই সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশের পুনঃস্থাপন করা সম্ভব।
উদাহরন
: জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়ােস্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদি ইন-সিটু সংরক্ষণের বিবিধ পথ। ভারতের মূল ভূখণ্ডের প্রায় 4.89% (160,901 বর্গ কিমি) অল বর্তমানে সংরক্ষিত অঞলের আওতাধীন। বিপন্ন জীবকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে রেখে মানুষের অনুপ্রবেশ ও ক্ষতিসাধন থেকে বাঁচানােই এই সংরক্ষণের উদ্দেশ্য।
এক্স-সিটু সংরক্ষণ (Ex-situ conservation)
সংজ্ঞা : জীববৈচিত্র্যকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে নমুনা (sample) হিসেবে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।
বিভিন্ন প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় এবং বিভিন্ন উদ্ভিদকে বােটানিকাল গার্ডেনের কৃত্রিম পরিবেশে রেখে সংরক্ষণ করা,
যেমন— রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দরবন থেকে নমুনা হিসেবে চিড়িয়াখানায় রেখে সংরক্ষণ করা হয়।
অনেক বিরল প্রজাতির উদ্ভিদকে তার বিপজ্জনক প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করে কৃত্রিম ব্যবস্থায় বােটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করা হয়।
সংরক্ষণের পরতি (Processes of ex-situ conservations):
প্রধানত জিনগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণই এক্সসিটু সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য। জীব বৈচিত্র্যকে এখানে নানাভাবে সংরক্ষণ
করা হয়। পদ্ধতিগুলি হল-
জিন ব্যাংক বা জিন আধারের মাধ্যমে:
জিন আধার বা জিন ব্যাংক বলতে বীজ আধার (seed bank), শুক্রাণু আধার (sperm bank),
ডিম্বাণু আধার (ova bank) ইত্যাদিকে বােঝায়।
জিন ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্ভিদের বীজ,
পরাগরেণু, প্রাণীর জার্মপ্লাজম (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু),
উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভূণ, জীবাণুর কালচার নিম্ন উষ্মতায় সংরক্ষণ
চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামের মাধ্যমে: চিড়িয়াখানা এবং কৃত্রিম জলাধার বা aquarium-এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থলজ ও জলজ প্রাণীকেসংরক্ষিত করা হয়। এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বংশবৃদ্ধি ও প্রয়ােজনে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করা হয়।
বােটানিক্যাল গার্ডেন ও আরবােরেটামের মাধ্যমে: বােটানিক্যাল গার্ডেন ও আরবােরেটামের মাধ্যমে বিভিন্ন বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ বা ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা হয় এবং তাদের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থাও করা হয়।
» ক্রায়ােপ্রিজারভেশনের মাধ্যমে প্রায় -196°C উন্নতায় তরল নাইট্রোজেনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে ক্রায়ােপ্রিজারভেশন বলে। এর মাধ্যমে ভূণ, কাণ্ডের অগ্রভাগ, বিভিন্ন উদ্ভিদঅঙ্গ সংরক্ষণ করা হয়।
এক্স সিটু সংরক্ষণের গুরুত্ব (inportance of its conservation):
কৃষিবিজ্ঞানের দিক থেকে এই সংরক্ষণের গুরত্ব অত্যন্ত জরুরী। ফসল উৎপাদনকারী বীজ বা বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি যাদের পক্ষে নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বা প্রকৃতিতে যাদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন, তাদের এক্সসিটু সংরক্ষণ প্রয়ােজন।
জীববৈচিত্র্য গবেষণায় এই সংরক্ষণ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জিনঘটিত বিভিন্ন দুরারােগ্য ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে
বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে এই সংরক্ষণ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ।
সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ চিড়িয়াখানা, বােটানিক্যাল গার্ডেন, আরবােরেটাম, অ্যাকোয়ারিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন
স্থানে যান। বিভিন্ন প্রজাতি ও তাদের জীববৈচিত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ওয়াকিবহাল করে তুলতে এর থেকে সুবন্দোবস্ত আর নেই।