অপপুষ্টি বা ম্যালনিউট্রিশন কাকে বলে |অপপুষ্টির প্রকারভেদ |Malnutrition| একাদশ শ্রেণী পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

অপপুষ্টি বা ম্যালনিউট্রিশন  কাকে  বলে |অপপুষ্টির  প্রকারভেদ |Malnutrition| একাদশ শ্রেণী পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর


অপপুষ্টি (Malnutrition)

সংজ্ঞা: খাদ্যে এক বা একাধিক পরিপােষক না থাকলে, বেশি থাকলে অথবা অন্য পরিপােষকের সঙ্গে সঠিক অনুপাতে না থাকলে, পুষ্টি ত্রুটিপূর্ণ হয়। এই ত্রুটিপূর্ণ পুষ্টিকে অপপুষ্টি বা ম্যালনিউট্রিশন বলে।


প্রকারভেদ

অপপুষ্টির প্রধান তিনটি প্রকার হল

1. প্রয়ােজনের তুলনায় আহার্যে খাদ্যোপাদানের আধিক্যহেতু অতিপুষ্টি,(Overnutrition)

2.আহার্যে খাদ্যোপাদানের অধিক ঘাটতির ফলে উনপুষ্টি (Undernutrition)

3.খাদ্যের নানান উপাদানের মধ্যে অসামঞ্জস্যতাহেতু অসমপুষ্টি।(Nutritional imbalance)



A.অতিপুষ্টি (Overnutrition)

সংজ্ঞা: এক বা একাধিক দেহপরিপােষক খাদ্য উপাদানের গ্রহণ দেহের চাহিদার তুলনায় অত্যধিক হলে, সেই অবস্থাজনিত অসুস্থতাকে অতিপুষ্টি বা ওভারনিউট্রিশন বলে। খাদ্যে ক্যালােরি, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের

পরিমাণ বেশি হলে অতিপুষ্টি দেখা দেয়।


[∆] কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যোপাদানের আধিক্যজনিত বা অতিপুষ্টিজনিত ত্রুটি


  • ক্যালশিয়াম -টিটানি, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামে পরিবর্তন



ঊনপুষ্টি(Undernutrition)

সংজ্ঞা; কোনাে আহার্যে কোনাে নির্দিষ্ট পরিপােষকের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকলে তার ফলে মানবদেহে পুষ্টির অভাবজনিত যে রােগ হয়, তাকে ঊনপুষ্টি বা আন্ডারনিউট্রিশন বলে।


উনপুষ্টির প্রকারভেদ:

1.প্রাথমিক বা মুখ্য আহার্যে এক বা একাধিক উপাদানের অভাবে যে অপুষ্টি ঘটে, তাকে প্রাথমিক বা  মুখ্য উনপুষ্টি বলে।

2. গৌণ উনপুষ্টি আহার্যে কোনাে উপাদানের অভাব ছাড়াই কোনাে অসুস্থতার জন্য বা বিপাক ক্রিয়ায় কোনাে প্রকার বিঘ্ন ঘটলে যে অপুষ্টি ঘটে, তাকে গৌণ ঊনপুষ্টি বলে।



ঊনপুষ্টি কারণ:

1. আমাদের দেশে উনপুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, জনগণের মধ্যে খাদ্য বিষয়ে অজ্ঞতা। জীবনের বিভিন্ন দশায় যেমন শৈশবে, কৈশােরে, গর্ভাবস্থায় এবং প্রসূতি অবস্থায় যে বিশেষ ধরনের খাদ্য প্রয়ােজন সে বিষয়ে অনেকেই অজ্ঞ। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রীর পুষ্টিমূল্য এবং রান্না করার সময়ে খাদ্যের পুষ্টিমূল্য বজায় রাখার বিষয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।


2. আমাদের দেশের বহু মানুষ আর্থিক দিক থেকেও অস্বচ্ছল। ফলে দুই বেলা প্রয়ােজন মতাে  খাদ্যই জোগাড় করতে পারে না। দরিদ্র বাড়ির শিশুদের দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা দেয়।

(i) উপযুক্ত তােলা খাবারের বন্দোবস্ত করেই, অনেক মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানাে বন্ধ করে দেয়।

(ii) বুকের দুধের বদলে যে দুধের ব্যবস্থা করা হয়, তা অত্যন্ত পাতলা করে শিশুকে দেওয়া হয়। ফলে শিশু পেটের রােগে ভােগে এবং পেটের রােগের সময়ে উপযুক্ত পরিমাণ পথ্য না পাওয়ায় বহু শিশুর ক্ষেত্রে অপুষ্টিজনিত রােগ দেখা দেয়।

3, কয়েক সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় কুসংস্কারের দ্বারা পরিচালিত হয়ে বিশেষ কয়েকটি খাদ্য বর্জন। করে। অথচ ওই খাদ্যগুলি স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। যেমন কয়েকটি সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি খাদ্যগ্রহণ করে না। ফলে দেহে অ্যামিনাে অ্যাসিডের অভাবজনিত ঊনপুষ্টি দেখা দেয়।


4.সব মানুষের খাদ্যাভ্যাস সমান নয়। বিভিন্ন প্রকার প্রথা, প্রচলিত কুসংস্কার মানুষের। খাদ্যাভ্যাসের ওপর প্রভাব ফেলে। বহু মানুষ বিশেষ বিশেষ কুসংস্কারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনাে বিশেষ প্রকার খাদ্যগ্রহণ করে না। ফলে ওই খাদ্যের অভাবে দেহে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিগত চাহিদা দেখা দেয়। চাহিদা পূরণ না হলে উনপুষ্টি দেখা দেয়।


5. রােগ দেহে রােগ সংক্রমণ ঘটলে অনেক সময়ে দেহের অসুস্থ অবস্থার জন্য উপযুক্ত আত্তীকরণ সংক্রমণ হয় না। ফলে ঊনপুষ্টি দেখা দেয়


ঊনপুষ্টিপুষ্টিজনিত রােগ:

ঊনপুষ্টি বা অপুষ্টির কারণে মানুষের দেহে নানান রােগব্যাধি দেখা দেয়------

1. শিশুর খাদ্যে নিয়মিতভাবে প্রােটিন ও ক্যালােরির অভাব হলে

ম্যারাসমাস ও কোয়াশিওরকর রােগ দেখা দেয়।

2.ভিটামিন A-এর ঘাটতির ফলে জেরথ্যালমিয়া, কেরাটোম্যালেশিয়া, রাতকানা, অন্ধত্ব প্রভৃতি রােগ সৃষ্টি হয়।

3. ভিটামিনের C-এর ঘাটতি হলে স্কার্ভি রােগ দেখা দেয়।

4. ভিটামিন D-এর ঘাটতি থেকে বড়ােদের অস্টিওম্যালেশিয়া এবং শিশুদের রিকেট রােগ দেখা দেয়।

5. গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন B কমপ্লেক্সের এবং কয়েকটি খনিজ পদার্থের ঘাটতির ফলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।


C.অসম পুষ্টি বা অসামঞ্জস্যতাজনিত অপপুষ্টি (Malnutrition due to Nutritional Imbalance)


সংজ্ঞা; খাদ্যে বিভিন্ন উপাদানের অসামঞ্জস্যতার কারণে যে ধরনের অপপুষ্টি ঘটে, তাকে অসমপুষ্টি বা অসামঞ্জস্যতাজনিত অপপুষ্টি বলে।


  • অ্যামিনাে অ্যাসিড-দেহ গঠনের কাজ ব্যাহত হয়।

  • সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড-হৃদরােগ ও চর্মরােগ দেখা দেয়।

  • খনিজ লবণ (ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস)-অস্থিগঠন ও পেশিসংকোচনে ব্যাঘাত ঘটে।

  • শর্করা, আমিষ ও স্নেহপদার্থের অসামঞ্জস্যতা- অতিপুষ্টি বা উনপুষ্টি দেখা দেয়।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url