পুষ্টি কি |পুষ্টির পর্যায় |পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা |দ্বাদশ শ্রেণীর পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর।Class 12 Nutrition question answer in bengali
পুষ্টি কাকে বলে |পুষ্টির পর্যায় |পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা |দ্বাদশ শ্রেণীর পুষ্টিবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর।Class 12 Nutrition question answer in bengali
ANS:- যে পদ্ধতিতে জীব খাদ্যবস্তু গ্রহণ, পরিপাক, শােষণ, আত্তীকরণ ও বহিষ্করণের মাধ্যমে দেহের বৃদ্ধি ঘটায়,ক্ষয়পূরণ করে এবং খাদ্যমধ্যস্থ স্থিতিশক্তিকে ব্যবহারযােগ্য শক্তিতে পরিণত করে জীবনের ধর্মগুলি পালন করে,তাকে পুষ্টি বা পরিপােষণ বলে।
পুষ্টি প্রক্রিয়া
১. এই প্রক্রিয়াটি দেহের বৃদ্ধি, শারীরবৃত্তীয় কাজ ও শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।
২.এই প্রক্রিয়ায় বাইরে থেকে গৃহীত খাদ্যের বড়াে বড়াে আকারের অংশগুলি যান্ত্রিক ও ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভেঙে অত্যন্ত
ক্ষুদ্রাকার অণুতে পরিণত হয়।
৩.এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উৎসেচক অংশগ্রহণ করে। পরে ক্ষুদ্রাকার অণু ক্ষুদ্রান্ত্রের এপিথেলীয় কলার মাধ্যমে শােষিত হয়ে রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশের কোশে প্রবেশ করে এবং প্রােটোপ্লাজমীয় পদার্থে রূপান্তরিত হয়।
৪.খাদ্যের অপাচ্য অংশ বিশেষ উপায়ে দেহ থেকে বহিষ্কৃত হয়।
৫.প্রােটোপ্লাজমীয় পদার্থ বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফলে দেহে আবশ্যকীয় শক্তির চাহিদা পূরণ হয়। দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজগুলিও অক্ষুন্ন থাকে।
পৃষ্টির পর্যায় (Phases of Nutrition)
মানুষের পুষ্টির পাঁচটি পর্যায় লক্ষ করা যায়। এগুলি নীচে আলােচনা করা হল।
প্রথম:খাদ্যগ্রহণ এই পর্যায়ে বাহ্য কোনাে উৎস থেকে খাদ্যবস্তু মুখগহূর, দাঁত এবং জিহ্বার সহায়তায় গৃহীত হয়।
দ্বিতীয়: পরিপাক:
এই পর্যায়ে গৃহীত খাদ্যবস্তু মুখগহুর, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে উৎসেচকের প্রভাবে কোশে প্রবেশ
করার উপযােগী সরল উপাদানে পরিণত হয়।
তৃতীয় -শােষণ:
এই পর্যায়ে পাচিত খাদ্যরস ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই অংশের মাধ্যমে শােষিত হয়ে রক্তের দ্বারাপরিবাহিত হয়ে কোশের মধ্যে প্রবেশ করে।
চতুর্থ -আত্তীকরণ:এই পর্যায়ে শােষিত খাদ্যরস সকল প্রকার দেহকোশের প্রােটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত হয়।
পঞ্চম-বহিষ্করণ: এই পর্যায়ে অপাচ্য খাদ্যবস্তু বৃহদন্ত্র, মলাশয় এবং পায়ুছিদ্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে পরিত্যক্ত হয়
পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য (Necessity and Significance of Nutrition)
জীবের জীবনধারণের জন্য পুষ্টি একান্তভাবে অপরিহার্য। জীবদেহে পুষ্টির প্রয়ােজনীয়তা ও তাৎপর্যগুলি হল------
ANS:-
১.পুষ্টির মাধ্যমে দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ার জন্য শক্তি সংগৃহীত হয়।
২.পুষ্টির মাধ্যমে জীবনে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য, যেমন—চলন, গমন, রেচন, জনন প্রভৃতির জন্য শক্তি অর্জিত হয়।
৩.পুষ্টির মাধ্যমে জীবের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
৪.দেহের তাপ উৎপাদনে ও সংরক্ষণে পুষ্টির বিশেষ ভূমি রয়েছে।
৫.পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য (গ্লাইকোজেন ও মেদরূপে) সঞ্চিত থাকে এবং প্রয়ােত খাদ্যের অভাব ঘটলে ওই খাদ্য থেকে জীব তার প্রয়ােজনীয় শক্তি আহরণ করতে পারে।
পুষ্টির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক দিক (Social Cultural, Psychological and Economic aspects of Nutrition)
A.সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক: পুষ্টি সর্বদাই কতকগুলি শর্তের দ্বারা প্রভাবিত।
এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—খাদ্যাভ্যাসের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক। সামাজিক ও সাংস কারণে বহু মানুষ কতগুলি খাদ্যসামগ্রীকে এড়িয়ে চলে। ধর্মীয় কারণে বৈয়ব সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাছ, মাংস প্রভৃতি এড়িয়ে চলে। ব্যক্তিগত রুচি-অরুচির নিরিখে এবং বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক কারণে খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর খাদ্যকে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে পুষ্টি ব্যাহত হয়।
B.অর্থনৈতিক দিক: পুষ্টির অর্থনৈতিক দিকটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু মানুষ অর্থনৈতিক কারণে উপমাত্রায় পুষ্টি উপাদানসম্পন্ন খাদ্যবস্তু সংগ্রহ করতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে দানাশস্যের অভাব নেই।অসম বণ্টনের ফলে এবং অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে বহু মানুষ তা থেকে বঞ্চিত। পুষ্টিবিজ্ঞানের জ্ঞান আহর মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যের মূল বিভাগ অনুযায়ী স্বল্পমূল্যের খাদ্যসামগ্রী
খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করলে জনসাধারণের পুষ্টির মান বজায় রাখা সম্ভব।