একাদশ শ্রেণি বাংলা মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক উত্তরপত্র।Class Xi model activity task answer pdf
একাদশ শ্রেণি বাংলা মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক উত্তরপত্র।Class Xi model activity task answer pdf
পর্ব:- 1
১. "দেশের লােক ভারি নিশ্চিন্ত হল।”—কখন এবং কেন ‘দেশের লােক’ নিশ্চিন্ত হয়েছিল ?
উঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'লিপিকা' গল্পগ্রন্থের 'কর্তার ভূত' গল্পটি থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
বুড়ো কর্তার মরন কালে দেশের সকল মানুষ খুবই চিন্তিত ছিল। তাদের চিন্তার কারণ হলো- বুড়ো কর্তা মারা গেলে দেশের মানুষকে ঠান্ডা রাখবে কে? সেই সময়ে বুড়ো কর্তার ভূত হয়ে থাকার কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন। এই সময়ে দেশের লোক নিশ্চিন্ত হয়েছিল।
দেশের লোকের নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ হল, ভূতগ্রস্ত দেশের লোকেরা ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে ভীতু। তাই তারা নিজেদের মতো করে ভবিষ্যৎ ভাবনা ভাবতে অক্ষম। তারা অন্যের প্রতি নির্ভরশীল। এখানে কবি এই দেশের লোকেদের উদ্দেশ্যে বলছেন- ভূতকে মানলে কোন ভাবনা নেই । কারণ মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু হয় না। তাই ভূতগ্রস্ত দেশের পরনির্ভরশীল মানুষেরা ভবিষ্যৎ ভাবনা ভীত নয়। কারণ তারা জানে তাদেরকে ভবিষ্যৎ বুড়ো কর্তার ভূত ঠিক করে দেবে। তাই ভূতগ্রস্ত দেশের লোকেরা বুড়ো কর্তার ভূতকে মেনে নিয়ে আরামে চোখ বুজে চলতে পারেবে ।
২. "কেবল অতি সামান্য একটা কারণে একটু মুশকিল বাঁধল।"- কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই মুশকিল বেঁধেছিল এবং তার কারণ কী ছিল?
উঃ বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কর্তার ভূত নামক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
ভূতগ্রস্ত দেশের লোকেরা প্রায় সকলেই ভূত শাসনতন্ত্রকে মেনে নিয়েছিল। এই শাসনতন্ত্র নিয়ে তাদের মনে কোন প্রশ্ন ছিল না। বরং তাদের এই শাসনতন্ত্র নিয়ে গর্ব ছিল। আর এই সময়ে শুধুমাত্র একটু কারণে ভূতগ্রস্ত লোকেদের মুশকিল হয়েছিল।
ভূতগ্রস্ত দেশের লোকেদের মুশকিল হলো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষরা জ্ঞানী, বুদ্ধিমন, সংস্কারি ও বৈজ্ঞানিক মনোভাবাপন্ন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ গুলি ভুতের শাসনতন্ত্রকে মেনে নেয়নি। তারা ভূতকে প্রশ্রয় দেয়নি। তাদের দেশে ঘানি থেকে উৎপন্ন তেল দিয়ে তারা ভবিষ্যতের রথচক্রটা কে সচল করে রাখে। যাতে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়। অন্যদিকে ভূতগ্রস্ত দেশের লোকেরা বুকের রক্ত পিষে ভূতের খর্পরে ঢালে। অন্য দেশের লোকেরা নিজেদেরকে কুসংস্কার ও ভূতের খপ্পোর থেকে দূরে রাখে। তারা সব সময় ভয়ঙ্কর সজাগ থাকে পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে চলে।
৩. ‘সেই খানেই তাে ভূত।'— বক্তা কে? কখন তিনি মন্তব্যটি করেছেন এবং এর তাৎপর্য কী?
এজ উদ্ধৃতাংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'লিপিকা' গল্পগ্রন্থের 'কর্তার ভূত' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
উপরিক্ত উক্তিটির বক্তা হলেন কর্তামশাই অর্থাৎ বুড়ো কর্তা।
গল্পের শেষের দিকে ভূতগ্রস্ত দেশের কিছু স্বাধীন মনোভাবপন্ন, কুসংস্কার বিরোধী, যুক্তিবাদী মানুষ এরা দিনের বেলায় শাসকশ্রেণীর ভয়ে কথা বলে না। তারা রাতের বেলায় চুপি চুপি বুড়ো কর্তার কাছে গিয়ে জানতে চাই যে কর্তামশাইয়ের এখনো কি ছাড়ার সময় হয়নি। তখন কর্তামশাই তাদের অবোধ সম্মোধন করে উত্তর দেয়- "আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।" এর উত্তরে সেই মানুষগুলো বলে ভয়ের কথা বলে। তখন কর্তামশাই উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
লেখক এখানে স্বাধীন মানসিকতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সমাজের প্রত্যেক মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। আমাদের পুরানো রীতিনীতি মধ্যে কুসংস্কার বর্জন করার কথা বলেছেন। তিনি গল্পের শেষাংশে মানুষকে যুক্তিবাদী হয়ে উঠতে বলেছেন। তিনি মানুষের মধ্যে স্বাধীন যুক্তিবাদ ভাবনার প্রসার করার জন্যে 'কর্তার ভূত' গল্পটি কে 'লিপিকা' গল্পগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সর্বশেষ তিনি ভারতবাসীকে ভয়কে জয় করে নতুনভাবে বিচার করতে শেখার মন্ত্রণা দিয়েছেন।
8. ‘কি লজ্জা! দুঃখের কথা হায় কব/কারে?’– কে, কেন একথা বলেছেন? বক্তার মনােভাব আলােচনা করাে।
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'বীরাঙ্গনা' পত্রকাব্যের 'নীলধ্বজের প্রতি জনা' পত্র থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে বক্তা হলেন পুত্র শোকে কাতর জননী জনা। তার এরূপ কথা বলার কারণ হলো অর্জুন, তার একমাত্র পুত্র প্রবীর কে হত্যা করেছে। অথচ তার স্বামী নীলধ্বজ পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে। অর্জুনের সঙ্গে মিত্রতা জ্ঞানে আলাপন করেছে। স্বামীর এই আচরণ দেখে জনা অবাক হয়েছে। তাই সে স্বামীর প্রতি ক্ষোভে ও অভিমানী উক্ত মন্তব্য করেছে।
কবিতাংশটির মধ্য দিয়ে একজন পুত্রহারা মায়ের স্বামীর প্রতি ক্ষোভ ও অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। অর্জুনের সঙ্গে স্বামীর বন্ধুত্ব পূর্ণ মেলামেশা জনাকে খুবই আঘাত করেছে। পুত্রের হত্যাকারীকে নীলধ্বজ কোন সাজানা না দিয়ে, তার সঙ্গে মেলামেশাকে জনা কাপড় কাপুরুষতার পরিচয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। এভাবে স্বামীকে বোঝানো ও কুকথা বলার পরও, সে স্বামীকে সম্বোধন করেছেন 'গুরুজন' বলে। এর মধ্য দিয়েই জনার স্বামীর প্রতি ক্ষোভে, অভিমান, ভালোবাসা ও সম্মানও প্রকাশ পেয়েছে। প্রবীরের মৃত্যুর পর তার একমাত্র ভরসা স্বামী। কিন্তু নীলধ্বজ তাঁকে হতাশ করেছে। তাই জনা শেষপর্যন্ত নীলধ্বজের কাছ থেকে চিরবিদায় প্রার্থনা করেছেন।
৫. ‘মিথ্যা কথা, নাথ।'- বক্তা কোন কথাকে ‘মিথ্যা বলেছেন? কীভাবে তিনি নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা 'বীরাঙ্গনা' কাব্যে 'নীলধ্বজের প্রতি জনা' কবিতা থেকে উপরুক্ত পঙক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে জনা তার স্বামীকে 'নাথ' সম্বোধন করে অর্জুনের বীরত্বের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বললেন লোকে পার্থ অর্থাৎ অর্জুনকে বীর যোদ্ধা বলে মনে করেন এবং তার স্বামীও সেইভাবে। কিন্তু এটা যে সত্য নয়। জনা স্বামীকে এটা মিথ্যা কথা বলেছেন।
জনা নিজের বক্তব্য কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অর্জুনের কাপুরুষতার একাধিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। যথা-
i) অর্জুনের বংশ পরিচয় নিয়ে বলতে গিয়ে জনা বলেছেন পার্থ, কুন্তীর গর্ভে পরপুরুষ ইন্দ্রের ঔরসে জন্ম হয়েছে অর্জুনের।
ii) এরপর জনা ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে ঋষি দ্বৈপায়নের উপর। যিনি সতত পান্ডবকীর্তন গান করেন। তিনি বলেন দ্বৈপায়ন এমন ধর্মীক যে, সে ভাতৃবধূকে নিয়ে সন্তানোৎপাদন কাজে ব্যবহার করেছেন। এইরকম খারাপ ব্যক্তি অর্জুনের সুনাম করে।
iii) এরপর জনার ক্ষোভ অর্জুনের স্ত্রীর ওপর। জনা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দ্রৌপদীর সতীত্ব নিয়ে। তিনি বলেছেন এক নারীর কী ভাবে পাঁচ স্বামী হয়।
iv) এছাড়াও অর্জুন ছদ্মবেশে ছলনা করে দ্রৌপদীর বরমাল্য লাভ করেন। দুষ্ট কৃষ্ণের সহয়তায় খান্ডব বন অর্জুন দহন করেন। এছাড়াও বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্মকে শিখন্ডীর সাহায্যে হত্যা করেন।
সুতরাং এই ধরনের ছলনাময়, কাপুরুষ যে আসল যোদ্ধা হতে পারেনা, সে কথায় জনা তার স্বামীকে জানিয়েছেন।