১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের কারণ| রাজনৈতিক কারণ|সামাজিক কারণ| Mahabidrohara karana

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণ

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন—

ভূমিকা:

[1] স্বত্ববিলােপ নীতি: লর্ড ডালহৌসি তাঁর স্বত্ববিলােপনীতির দ্বারা একে একে ঝাসি, সাতারা, নাগপুর, সম্বলপুর-সহ বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য দখল করেন। ফলে ওইসব রাজ্যের শাসকরা ব্রিটিশদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।


[2] রাজপ্রাসাদ লুণ্ঠন: ব্রিটিশরা কুশাসনের অজুহাতে অযােধ্যা ও নাগপুরের রাজপ্রাসাদ লুণ্ঠন করে। এর ফলে এসব রাজ্যের শাসকরা ক্ষুদ্ধ হয়।


[3] ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের অত্যাচার; উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ রাজকর্মচারীরা তাদের অধস্তন ভারতীয় কর্মচারীদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা করত। ভারতীয় কর্মচারীরা কারণে-অকারণে ব্রিটিশ কর্মচারীদের কাছে হেনস্থার শিকার হত।অত্যাচারিত এই ভারতীয়দের মনে এভাবে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।


১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণগুলি কী ছিল?

ভূমিকা: ১৮৫৭-এর বিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণ: ড. এ আর দেশাই বলেছেন যে, “১৮৫৭র বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনে নির্যাতিত বিভিন্ন শ্রেণির অসন্তোষের ফল।”এই বিদ্রোহের প্রধান অর্থনৈতিক কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-


[1] অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অর্থ ও সম্পদ একনাগাড়ে লুণ্ঠন করলে দেশীয় রাজ্যগুলির রাজকোশ শূন্য হয়ে পড়ে। দেশের আর্থিক দুর্দশা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।


[2] অবশিল্পায়ন: ব্রিটিশ কোম্পানির শােষণমূলক শিল্প ও বাণিজ্যনীতির ফলে ভারতে অবশিল্পায়ন ঘটে। ব্রিটিশ শিল্পজাত পণ্য বিনাশুল্কে ভারতে ঢুকলে দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[3] বেকারত্ব: ভারতের বস্ত্রশিল্পসহ বিভিন্ন কুটিরশিল্প ধ্বংস হলে এসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ও কারিগরদের একটি বড়াে অংশ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে আবার ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট ক্ষতির শিকার হয়।


[4] রাজস্ব বৃদ্ধি; ব্রিটিশরা ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার প্রজাদের ওপর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব চাপিয়ে দেয়।


[5] ব্রিটিশ সহযােগীদের শােষণ: ব্রিটিশ কোম্পানির সহযােগী দেশীয় জমিদার, মহাজন প্রমুখও প্রজাদের ওপর নানাভাবে শােষণ চালায়। ফলে প্রজাদের ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়তে থাকে।


১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণগুলি কী ছিল?


১৮৫৭-এর বিদ্রোহের সামাজিক কারণ

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসন ভারতীয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি করলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের শুরু হয়। এই বিদ্রোহের সামাজিক কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-

[1] শাসক-শাসিত সম্পর্ক: ইংরেজ ভারতীয়, শাসক, ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধান ও বৈষম্য ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং ভারতীয়রা নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে পড়ে।


[2] ভারতীয়দের ঘৃণা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সর্বত্র ইংরেজরা ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখত। বহু ইউরােপীয় ক্লাবের দরজায় লেখা থাকত কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।ওয়ারেন হেস্টিংস বলেছেন,“কয়েক বছর আগে পর্যন্ত অধিকাংশ ইংরেজ ভারতীয়দের প্রায় বর্বর মনে করত।”


[3] রক্ষণশীল মনােভাব: ভারতীয়রা এদেশে বিদেশি শ্বেতাঙ্গ শাসন কখনই মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। মােগল শাসনের পতন ঘটানাের জন্য মুসলিমরা ব্রিটিশদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আবার সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ,বিধবাবিবাহ প্রচলন প্রভৃতির জন্য রক্ষণশীল হিন্দুরা ব্রিটিশদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।


[4] ব্রিটিশ কর্মচারীদের অত্যাচার: ব্রিটিশ প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের অত্যাচার ব্যভিচার ভারতীয়দের জীবন দুর্বিষহ করে তােলে। কোল, ভিল, সাঁওতাল, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি চরম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়। এর ফলে ভারতবাসী প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হয়।




১৮৫৭খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর

মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

ভূমিকা: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ সারা দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করলেও শেষপর্যন্ত এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—4 বিদ্রোহের বিচ্ছিন্নতা: ভারতের সর্বত্র একযােগে বিদ্রোহ হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্রোহ পরিচালিত হয়। ফলে ইংরেজ শাসকগােষ্ঠীর পক্ষে বিদ্রোহ দমন সহজ হয়।


[2] শিখ-গােখাদের সহযােগিতা: বিদ্রোহের সময় শিখ,গােখা প্রভৃতি সৈন্যরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সমর্থন জানায় এবং বিদ্রোহ দমনে সরকারকে যথেষ্ট সহায়তা করে। নেতৃত্বের অভাব: বিদ্রোহ পরিচালনা করার মতাে কোনাে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ছিল না। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ বা পরিকল্পনা নিয়ে বিদ্রোহ পরিচালনা করলে বিদ্রোহ তার গতি হারিয়ে ফেলে।


[4] দেশীয় রাজ্যের সহযােগিতা: কাশ্মীর, রামপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলি বিদ্রোহের সময় ইংরেজদের সহযােগিতা করে। সিন্ধিয়া ও রাজপুত রাজারা বিদ্রোহীদের সহযােগিতা না করে নিরপেক্ষ নীতি নেয়। ফলে বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সুবিধা হয়। 


 [5) শিক্ষিত শ্রেণির অসহযােগিতা: পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ ১৮৫৭-এর বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন না জানিয়ে বিদ্রোহ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে এবং ইংরেজদের প্রতি অনুরাগ দেখায়। ফলে বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সুবিধা হয়।


[6] সেনানায়ক: বিদ্রোহীদের মধ্যে যােগ্য সেনানায়কের যথেষ্ট অভাব ছিল। অন্যদিকে ইংরেজ

বাহিনীতে হ্যাভেলক, নীল, আউট্রাম প্রমুখ সুদক্ষ সেনাপতিগণ ছিলেন।


[7] ব্রিটিশ শক্তি : সিপাহিদের তুলনায় ব্রিটিশবাহিনী অস্ত্রশক্তি ও নৌশক্তি ছিল। অনেক বেশি। ব্রিটিশরা ইংল্যান্ড, পারস্য ও মালয় থেকে বহু সৈন্য ও অস্ত্র এনে ইংরেজদের শক্তিবৃদ্ধি করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url