বিজ্ঞানসাধনায় বাঙালি প্রবন্ধ রচনা PDF |Bijnanasadhanaya bangali prabandha racana pdf
প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞানসাধনায় বাঙালি PDF |Bijnanasadhanaya bangali prabandha racana pdf
ভূমিকা: বিজ্ঞানের যে বিপুল অগ্রগতি একুশ শতকের মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে সেখানে বাঙালির অবদান উপেক্ষণীয় নয়। যে বাংলা রবীন্দ্রনাথের মতাে বিশ্বজয়ী প্রতিভার জন্ম দিয়েছে কিংবা অমর্ত্য সেনের মতাে অর্থনীতিবিদ বা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের মতাে চলচ্চিত্রকার তৈরি করেছে, সেই বাংলা বিজ্ঞানসাধনাতেও তার নজির রেখে আদায় করে নিয়েছে গােটা পৃথিবীর সম্ভ্রম।ইতিহাসের পথ ধরে। চৈনিক পরিব্রাজক উয়াং চোয়াং-এর বিবরণ প্রাচীন বৌদ্ধবিহারগুলিতে বিজ্ঞানচর্চার বর্ণনা দিয়েছে। চক্রপাণি দত্তের চরক ও সুনুতের ওপরে লেখা বই ‘আয়ুর্বেদ দীপিকা' এবং ‘ভানুমতি', শূরপালের বৃক্ষায়ুর্বেদ' এবং লৌহপদ্ধতি বাঙালির প্রাচীন বিজ্ঞানসাধনার নিদর্শন।নৌবিজ্ঞান এবং সাধনার হাত ধরে বাঙালির শারীরবিদ্যাচর্চাও বিস্তারলাভ করেছিল প্রাচীন যুগে | উনিশ শতকে
বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা: পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার উনিশ শতকে বাঙালির মননচর্চা এবং বিজ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রকে খুলে দেয়। ১৭৮৪-তে এশিয়াটিক সােসাইটির প্রতিষ্ঠা বাঙালির বিজ্ঞানচর্চাকে অনুপ্রাণিত করে।কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা এই ধারায় আরএকটিমাত্রা নিয়ে আসে |আর ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অ সায়েন্স' বাঙালির বিজ্ঞানসাধনাকে প্রথম সংহত রূপ দেয়। আধুনিক কালে বাঙালির বিল্লানচর্চা, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিনা তারে| বিদ্যুত্তরঙ্গ প্রেরণ করে বেতারবার্তা আবিষ্কার করেন। ক্রেস্কোগ্রাফ' যন্ত্রের সাহায্যে জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও অনুভূতি ক্ষমতাকে প্রমাণ করেন।১৯১৭-তে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করে জগদীশচন্দ্র বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘মারকিউরাস নাইট্রেট' নামক যৌগ আবিষ্কার করেন। তাঁর ‘হিন্দু রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাস' এ দেশের বিজ্ঞানসাধনার এক তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস | তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস'-এর প্রতিষ্ঠাতা। প্রফুলচন্দ্রের বিশিষ্ট ছাত্র মগন মুখােপাধ্যায় কলােয়েড রসায়নের আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া নীলরতন ধর, প্রিয়দারন মুখােপাধ্যায়, রসিকলাল দত্ত, পুলিনবিহারী সরকার প্রমুখ প্রফুল্লচন্দ্রের ছাত্রবৃন্দ বিজ্ঞানসাধনায় বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আবিষ্কার ‘বােস সাংখ্যায়ন তত্ত্ব আলােড়ন ফেলেছিল পৃথিবীজুড়ে, মেঘনাদ সাহার তাপীয় সমীকরণ সূত্র পরমাণু গবেষণায় নতুন মাত্রা আনে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স' পরমাণু বিষয়ক গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে || উপযুক্ত বিজ্ঞানীরা ছাড়া পরিসংখ্যানবিদ্যায় প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এক স্মরণীয় নাম। তার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট পরিসংখ্যানবিদ্যা বিষয়ক চর্চার পীঠস্থান। অঙ্কশাস্ত্রে রাধানাথ শিকদার, পদার্থবিদ্যায় শিশিরকুমার মিত্র, নৃতত্ত্ববিজ্ঞানে নির্মলকুমার বসু এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নামও বাঙালির বিজ্ঞানসাধনায় উল্লেখযােগ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছিলেন। ড. সহায়রাম বসু, ড. মহেন্দ্রলাল সরকার, ড. রাধাগােবিন্দ কর প্রমুখের নামও চিকিৎসাবিজ্ঞানে উল্লেখযােগ্য। সাম্প্রতিক কালে ড. মণি ভৌমিক, অসীমা চট্টোপাধ্যায়, জীববিজ্ঞানে ড. আনন্দমােহন চক্রবর্তী কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ড. সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের নাম বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। বসু বিজ্ঞান মন্দির, সাহা ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ইন্ডিয়ান কালটিভেশন অব সায়েন্স ইত্যাদি গবেষণাক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে বাঙালি আজও নিরলস বিজ্ঞানসাধনায়।
উপসংহার: উন্নত পরিকাঠামাে এবং উপযুক্ত সুযােগ বাঙালি গবেষকের জন্য বেশি দরকার। গােটা ভারতের মতাে এ রাজ্যের কৃতী ছাত্ররাও উন্নত গবেষণার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন। বাঙালির গর্ব আর অহংকার এভাবেই অধিকৃত হয়ে যায়। মেধার পরিচর্যা তাই আমাদের সকলেরই আকাঙ্ক্ষিত বিষয়,তাহলেই সম্ভব হবে বাঙালির বিজ্ঞানসাধনার ঐতিহ্যকে ধরে রাখা।
অনুসরণে লেখা যায়
বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা