দ্বীপান্তরের বন্দিনী |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর|একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী প্রশ্ন উত্তর

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

দ্বীপান্তরের বন্দিনী একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 11 Bengali Kobita question in bengali pdf

দ্বীপান্তরের বন্দিনী |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর|একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী প্রশ্ন উত্তর


আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী প্রশ্ন উত্তর PDFclass 11 Bengali Kobita question Pdf | WB Class nine Bengali question pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।


তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class xi Bengali Kobita Question Pdf  ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।


‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।


দ্বীপান্তরের বন্দিনী mcq প্রশ্ন

1.



একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতা 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]

একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা দ্বীপান্তরের বন্দিনী 1 নং প্রশ্ন উত্তর

অনধিক কুড়িটি শব্দে শীতের প্রখুলির দাও ।

1.‘ভাৱত-ভাৱতী’ কীসের প্রতীক?

ভারত-ভারতী’ আন্দামানে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক।


2.‘মা’ৱ কতদিন দ্বীপান্তর?—দ্বীপান্তৱেৱ মেয়াদ কত দিনের?

মায়ের দ্বীপান্তরের মেয়াদ দেড়শাে বছরের।


3.দ্বীপান্তৱেৱ আন্দামান কত দূরে অবস্থিত?

উত্তর : দ্বীপান্তরের আন্দামান ‘সপ্ত সিন্ধু তেরাে নদীর পারে অবস্থিত।


4. ‘শস্ত্র-পাণির অস্ত্র-ঘায় কী হয়েছে?

উত্তর : ‘শস্ত্র-পাণির অস্ত্রের আঘাতে ভারত-ভারতী শতদল শতধা ভিন্ন হয়েছে।


5.হায় শৌখিন পূজারি, বৃথাই/ দেবীৱ শঙ্খে দিতেছে ফু’—‘বৃথাই বলা হয়েছে কেন?

উত্তর : ‘বৃথাই বলা হয়েছে, কারণ দেবীর আরাধনা উপলক্ষে শঙ্খধ্বনি করা হচ্ছে, কিন্তু দেবী বেদীতে নেই, তিনি তাে আন্দামানে বন্দিনী।


6.‘পূজাৱি, কাহাৱে দাও অঞ্জলি’?- পূজার কাকে অঞ্জলি দিচ্ছেন?

পূজারির অঞ্জলি দান বৃথা, কারণ ভারত-ভারতী নন, আন্দামানে বন্দিনী—ভারতে তাঁর উপস্থিতি নেই।


7.দ্বীপান্তরের ঘানিতে কী লেগেছে ?

দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে।


উত্তর : পূজার বেদিতে দেবী নেই, অথচ শাঁখে ফু দিয়ে, ঘণ্টা নেড়ে আরতি করে, অঞ্জলি দিয়ে পুজোর অনুষ্ঠানের বৃথা প্রয়াস, শৌখিন পুজোর কাজ। সেই অর্থে পূজক হলেন শৌখিন পূজারি।


প্রশ্ন ২.১৮ বন্দিনী বাণীকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তর: বন্দিনী বাণীকে কবি নজরুল ইসলাম অশােক বনে বন্দিনী রামজায়া সীতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।


প্রশ্ন ২.১৯)

দ্বীপান্তরের অন্দামান’-আন্দামান প্রসঙা কেন এসেছে?

উত্তর : দ্বীপান্তরের বন্দিনী বাগদেবী হলেন আন্দামান দ্বীপে স্বাধীনতাকামী বন্দিদের প্রতীক। তাঁদের কথা বলতে গিয়ে আন্দামানের প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কবিতায় এসেছে।


প্রশ্ন ২,২০ ‘পূজাৱি, কাহাৱে দাও অঞ্জলি?'—কবির এই প্রশ্নের কারণ কী?

উত্তর : কবি নিশ্চিতভাবে জানেন পুজোর বেদিতে আরাধ্যা বাগদেবী নেই। কাজেই পূজারি যার উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দিচ্ছেন, সে-অঞ্জলি দান নিরর্থক। সেজন্য কবির এই প্রশ্ন।


প্রশ্ন ২.২১ ‘ঢাক’ অঞ্জলি,/বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ।-কেন শাঁখ বাজাবে?

উত্তর : কবি নজরুলের বক্তব্য হল পুজোর বেদিতে অঞ্জলি দান বন্ধ রেখে শ্রীকৃয়ের পাঞজন্য শঙ্খ-বাদন করা হােক। ওই শঙ্খ-বাদনের দ্বারা অশুভ শক্তি ইংরেজের বিরুদ্ধে সংগ্রামের শুভ সূচনা হবে।


প্রশ্ন ২,২২ বাণীৱ মুক্ত শতদল যথা/আখ্যা লভিল বিদ্রোহী’–এর অর্থ কী?

উত্তর : শাসকের অন্যায়-অবিচারে সরস্বতীর মুক্ত শতদলরূপী স্বাধীনতা যােদ্ধা যাঁরা, তাঁরা ইংরেজ সরকার কর্তৃক বিদ্রোহী এই মিথ্যা আখ্যা পেয়েছেন।


প্রশ্ন ২২৩ ‘ বাণীৱ মুক্ত শতদল’ কী?

উত্তর : বাণী হলেন মা সরস্বতী। তাঁর অধিষ্ঠান পদ্মে। পদ্ম হল শতদল। মুক্ত শতদল হল স্বাধীনতাকামী শত সহস্র ভারতীয় স্বাধীনতা যােদ্ধার প্রতীক।


প্রিল, ২৪ দ্বীপান্তৱেৱ বন্দিনী’ কবিতায় কবি আশাবাদী কী জন্য?

উত্তর : ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এইজন্য আশাবাদী যে, দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক।


প্রশ্ন ২.২৫ ‘শতদল শতধ্য ভিন্ন হয়েছে কেন?

উত্তর : আঘাতে আঘাতে মা সরস্বতীর পদ্মের পাপড়িগুলি হয়েছে শতচ্ছিন্ন। মায়ের শতদল হল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক। শতচ্ছিন্ন ও দলিত পাপড়ির মতাে অত্যাচারিত ও নিষ্পেষিত স্বাধীনতা যােদ্ধারা।


প্রয় ২,২৬ যক্ষপুৱীৱ ৱৌপ্য পঙ্কে/ফুটিল কি তবে রূপ-কমল?—কীৱ কারণে কবিৱ এই কথা?

উত্তর : ইংরেজ সরকারের শােষণে-শাসনে ভারতভূমি যেন রক্ষপুরী হয়ে উঠেছে। কবির প্রশ্ন হল সেই রক্ষপুরী কি যক্ষপুরী হয়েছে ? যেখানকার রুপাের পাঁকে মা সরস্বতীর সােনার কমল রূপময় হয়ে ফুটে উঠবে।


প্রশ্ন ২২০ ‘পদ্ম (রখেছে চরণ-পদ্ম/যুগান্তরের ধর্মরাজ?—এৱ অর্থ কী?

উত্তর : নতুন যুগের যুগনায়ক হলেন যুগান্তরের ধর্মরাজ কবির আশা সেই ধর্মরাজের আবির্ভাব আসন্ন। তিনি মা সরস্বতীর পদ্মে চরণপদ্ম স্থাপন করে আবির্ভূত হবেন।


প্রশ্ন ২.২৮‘পুণ্য (বদিৱ শূন্য (ভদিয়/ ক্রন্দন উঠিতেছে শুধু।—কেন এই ক্রন্দন? (নমুনা প্রশ্ন, '১৪]

উত্তর: এ ক্রন্দন আন্দামানের দ্বীপান্তরে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য, যাঁরা সশ্রম কারাদণ্ডের নিষ্ঠুর পীড়নে ও নির্যাতনে মরণাপন্ন।


প্রশ্ন ২২৯) “আসে নাই ফিৱে ভাৱত-ভাৱতী ?/মা’ৱ কতদিন দ্বীপান্তর?”—মা’-কে দ্বীপান্তৱিতা বলা হয়েছে কন?| একাদশ, '১৪)

উত্তর : মা ভারত-ভারতী স্বাধীনতা আন্দোলনে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদি, যাঁদের দ্বীপান্তর হত, তাঁদের প্রতীকসেই অর্থে তাঁকে ‘দ্বীপান্তরিতা’ বলা হয়েছে।


২ প্রশ্ন ২.৩O “হায় শৌখিন পূজাৱি,...........”—শৌখিন পূজাৱি কে?[ একাদশ, '১৫ |

উত্তর : সরস্বতীর শূন্য বেদিতে পুজো করার জন্য যে পূজক হাজির, কবি তাঁকেই বলেছেন শৌখিন পূজারি।

১। "সহিছে বিচার চেড়ীর মার"-'চেড়ী' কারা?

উত্তর) লঙ্কারাজ রাবণের এক বিশেষ নারী-প্রহরী বাহিনী।

। ২। “উঠেছে বাণীর শিশ-মহল" 'শিশ-মহল'

উত্তর 'শিশ-মহল' কাচের তৈরি ঘর।

৩। যুগান্তরের ধর্মরাজ'-ধর্মরাজ কাকে বলা হয়েছে?

উত্তর যুগ পরিবর্তনকারী যমরাজকে।

8। “কিসের তরে এ শঙ্খারাব?” –‘শঙ্গারাব’ কী জাতীয় শব্দ ?

উত্তর এটি একটি মিশ্রাশব্দ।

৫। “দ্বীপান্তরের আন্দামান"- আন্দামান কোথায় অবস্থিত?

উত্তর ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত।

॥ ৬। “ঘানি টানে নিশিদিন"-কে ঘানি টানে?

উত্তর 'বাণী' ঘানি টানে নিশিদিন।

৭। 'শস্ত্ৰ-পাণি' কথাটির অর্থ কী?

উত্তর কথাটির অর্থ হল হাতে ধরা অস্ত্র।

৮। 'সীতা' কোথায় বন্দিনী হয়েছিলেন?

উত্তর রাবণের ‘লঙ্কা’ রাজ্যে অবস্থিত অশোককাননে।

৯। “কামান গোলার সীসা-স্তূপে” ‘সিসা-স্তূপ’ কী?

উত্তর সিসা দ্বারা কামানের গোলা নির্মিত হয়। কামান চালানোয় তা থেকে নির্গত সিসার দ্বারা গড়ে ওঠা

স্তূপই হল ‘সীসা-স্তূপ’। “সিংহেরে ভয়ে রাখে পিঞ্জরে”—এখানে ‘সিংহ ও ‘পিঞ্জর’ কাকে বলা হয়েছে?

উত্তর ভারত এবং স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরাই ‘সিংহ’ এবং আন্দামানের সেলুলার জেল হল পিঞ্জর।

৷৷ ১১। “শতদল যেথা শতধা ভিন্ন”—‘যেথা’ বলতে কোন্ স্থান? 

উত্তর এখানে ‘যেথা’ বলতে আন্দামানের কথা বোঝানো   হয়েছে।

৷৷ ১২। “মা’র কতদিন দ্বীপান্তর”—কাকে ‘মা’ সম্বোধন করা হয়েছে? 

কবি তাঁর স্বদেশভূমি ভারতবর্ষকেই ‘মা’ সম্বোধন করেছেন।

৷৷ ১৩। “সেখান হ’তে কি বেতার-সেতারে” – এখানে ‘বেতার’ কী?

উত্তর এখানে বেতার শব্দের অর্থ হল ‘তন্ত্রীহীন’।

।। ১৪। ‘জীবন-চুয়ানো বাক্যবন্ধটির দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর শ্রমসাধ্য জীবন থেকে পড়া ফোঁটা ফোঁটা জল।

ID ১৫। ভারত-ভারতীর কত বছরের দ্বীপান্তর?

উত্তর দেড়শ বছরের।

৷৷ ১৬। “বীণা’ কে?

উত্তর চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বিপ্লবিনী, বীণা রায়।


দ্বীপান্তরের বন্দিনী 3 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতাদ্বীপান্তরের বন্দিনী 3 নং প্রশ্ন উত্তর

নাকরণ

উপস্থাপনা : কবিতার ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ নামকরণ কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেওয়া। কবিতার ভাববস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখে কবিতার নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে কি না, তা বিচার্য বিষয়।

সংক্ষিপ্ত আলােচনা : ব্রিটিশ শাসিত ভারতে দীর্ঘমেয়াদি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদিদের দ্বীপান্তর হত। আন্দামান দ্বীপে তাঁরা নির্বাসিত হতেন। সেখানকার বন্দিজীবন ছিল দুর্বিষহ। ওই নির্মম বন্দিজীবনের প্রতীক হিসেবে কবি কাজী নজরুল ইসলাম‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ভারতমাতা বাকদেবী সরস্বতীর বন্দিদশার কথা বলেছেন। মায়ের দ্বীপান্তরের মেয়াদ দেড়শাে বছরের। দেড়শাে বছরের বন্দিদশার দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন কবি। সেইসঙ্গে শাসকের নির্মম অত্যাচার, সত্যভাষণ ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অন্যায়-অবিচারের লেখচিত্রও এঁকেছেন কবি। সবশেষে আশার কথাও শুনিয়েছেন যে, যুগান্তরের ধর্মরাজের উত্থান হয়েছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। যথাযথ ও সার্থক নামকরণ ; ওপরের আলােচনা থেকে দেখা গেল, কবিতার বিষয় হল আন্দামানে বন্দিনী বারতীর বন্দিদশা। আন্দামানে বন্দি কয়েদিদের বন্দিজীবনের প্রতীক হিসেবে তা বর্ণিত হলেও দ্বীপান্তরের বন্দিজীবনের কথাই হল কবিতার কেন্দ্রীয় ভাববস্তু। ভাববস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখেই কবিতার“দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ নামকরণ হয়েছে। কাজেই নামকরণ হয়েছে যথাযথ ও সার্থক।


দ্বীপান্তরের বন্দিনী বড় প্রশ্ন উত্তর,

একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা  5 নং প্রশ্ন উত্তর

অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে মাছের প্রশ্নপুরি উত্তর দাও :


প্রশ্ন ৩.১) কাজী নজরুল ইসলামেৱ ৱচিত ‘দ্বীপান্তৱেৱ বন্দিনী’ কবিতার উৎস নির্ণয় করে কবিতাৱ ‘দ্বীপান্তৱেৱ বন্দিনী’ নামকরণ কতখানি সংগত ও সার্থক হয়েছে তা বিশ্লেষণ করাে।[S+8]

উত্তর : উৎস কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এগারাে সংখ্যক কাব্যগ্রন্থ হল ‘ফণি-মনসা'। কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশকাল ২৯ জুলাই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ। “দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটি প্রথম সংস্করণের সূচি অনুযায়ী ‘ফণি-মনসা' কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয়। কবিতা। কবিতাটি লেখা হয়েছিল ১৩৩১ বঙ্গাব্দে, হুগলিতে।

কবি তখন সেখানে থাকতেন। ‘বিজলী’ পত্রিকায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বন্দিনী’ শিরােনামে। ফণি-মনসা' কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বয়ং কবিতাটির নাম দিয়েছেন ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী'। কবিতার ভাববস্তুর সঙ্গে সংগতি রেখে নামকরণ সংগত ও সার্থক হয়েছে কি না তা বিচার্য বিষয়। নামকরণ সংগত ও সার্থক। তখন ব্রিটিশ আমল। দীর্ঘমেয়াদি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদিদের দ্বীপান্তর হত। তাঁরা নির্বাসিত হতেন আন্দামান দ্বীপে। সেখানকার বন্দিজীবন ছিল দুর্বিষহ। ওই নির্মম বন্দিজীবনের প্রতীক হিসেবে কবি ভারতমাতা বাকদেবী সরস্বতীর বন্দিদশার কথা বলেছেন। মায়ের দ্বীপান্তরের মেয়াদ দেড়শাে বছরের। দেড়শাে বছরের বন্দিদশার দুর্বিষহ জীবনযন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন কবি। সেই সঙ্গে শাসকের নির্মম অত্যাচার, সত্যভাষণ ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অন্যায়-অবিচারের লেখচিত্রও এঁকেছেন কবি। সবশেষেআশার কথাও শুনিয়েছেন যে, যুগান্তরের ধর্মরাজের উত্থান হয়েছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। যাই হােক, দ্বীপান্তরের বন্দিজীবনের কথাই হল কবিতার কেন্দ্রীয়ভাববস্তু। তার সঙ্গে সংগতি রেখেই কবিতার নামকরণ হয়েছে বলে তা সংগত ও সার্থক।



9, ৭‘ দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবি কাকে দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ বলেছেন? তাঁর বন্দিদশাৱ বর্ণনাসহ নতুন যুগের আগমনের আভাস লিপিবদ্ধ করা।7>+8)বন্দিদশাৱ বর্ণনা দ্বীপান্তরের বন্দিনী’

কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ হলেন ভারত-ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী নতুন যুগের আগমনের আভাস : ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী। তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্য বেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে। রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপের কমল বিবর্ণ। অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তাঁর পদ্ম শতচ্ছিন্ন। রূপের কমল রূপার কাঠির/কঠিন স্পর্শে যেখানে ম্লান,/শতদল যেথা শতধা ভিন্ন/শস্ত্র-পাণির অস্ত্র- ঘায়। যন্ত্ৰী রক্ষী বসিয়ে বীণার তার কাটছে। বন্দিনী বাকদেবীর বাণী মুক্ত নয়। দ্বীপান্তরে আন্দামানে বাকভারতী ঘানি টানছে। ঘানি থেকে জীবন-চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে। দ্বীপান্তরের অত্যাচারিত হলেও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। বন্দিনী সীতাকে যেমন চেড়িদের হাতে মার খেতে হয়েছিল, তেমনি সত্যভাষীকে অন্যায়-অবিচারের মার খেতে হচ্ছে। সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়। অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে। ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যােদ্ধাকে লক্ষ করে অগ্নি -শেল হানা হয়েছে। বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ। বাণীর কমল জেল খাটছে। কে জানিত কাল বীণা খাবে গুলি,/বাণীর কমল খাটিবে জেল! যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন। যদি তাই হয়, তাহলে পাঞ্চজন্য

শঙ্খধ্বনি করে মায়ের অঞ্জলি দানের ব্যবস্থা থােক। আশার কথা, দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে/যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।



 ৩.২৩ তবে তাই হােক।'—এ ব্যাপারে কবির মনস্কামনা কী?(নমুনা প্রশ্ন, '১৪] [৫/

|

উত্তর : ভারত তখন ব্রিটিশ রাজশক্তির অধীন। পরাধীন ভারতবাসী ও শাসিত-শােষিত, অত্যাচারিত-নিপীড়িত। সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়। সত্য বলিলে বন্দি হই। পরাধীন ভারতবাসীর বাকস্বাধীনতা নেই। অত্যাচারের কথা বললে অত্যাচারিত হতে হয়। আর স্বাধিকারের স্বপক্ষে কিছু বললেই সেই বক্তার কপালে জোটে বিদ্রোহী আখ্যা। স্বাধীনতাকামী ও দেশপ্রেমিক বীর যােদ্ধাদের নির্মমভাবে কারারুদ্ধ করে শাসকশক্তি। কখনও বা কামানগােলা ছুড়ে ব্যাঘ্ৰসম স্বদেশি যােদ্ধাদের দমিয়ে রাখে। পরাধীন ভারতে অত্যাচারী শাসকশক্তির এই ছিল নিত্যদিনের অত্যাচারের চিত্র। বিদেশি সরকারের খুনখারাপি, শােষণ-শাসন, নিপীড়ন ও অন্যায়- অবিচারের চিত্রাঙ্কনের মধ্যে হতাশা-নিরাশা থাকলেও কবি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে আশাবাদী। নতুন যুগের স্বপ্ন ছিল তাঁর দু-চোখে। কবি এখানে নতুন যুগ ও যুগচেতনার কথা শুনিয়েছেন। শুনিয়েছেন নতুন যুগস্রষ্টা ধর্মরাজের উপস্থিতির কথা। সরস্বতীর বীণার তারে বিধাতার বেতারবার্তা অনুরণিত হয়েছে। তাতে এ কথাই আভাসিত হয়েছে যে, যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ-পদ্ম রেখেছেন।ধর্মরাজের উপস্থিতিতে নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। ভারতের স্বাধীনতা- সূর্যের নবােদয় আসন্ন। আশা করা হচ্ছে দ্বীপান্তরের অবসান হয়ে বন্দিদশা ও নিষ্ঠুর শ্রম থেকে মুক্ত হবে বন্দিরা। চির স্বাধীনতাকামী কবি নজরুল তাই যুগান্তরের ধর্মরাজের উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার সানন্দ স্বীকৃতি : ‘তবে তাই হােক!


৩.২৪‘জীবন-চুয়ানো সেই ঘানি হতে আৱতিৱ তেল এনেছ কি?'—উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

[@]

অথবা, ‘জীবন-চুয়ানাে সেই ঘানি হ’তে/আৱতিৱ তেল এনেছ কি?’– রূপকার্থাটি বুঝিয়ে দাও।(একাদশ, 


উত্তর : কোন্ ‘ঘনি’ : কলুরা কাঠের ঘানিতে তিল, সরষে প্রভৃতি তৈলবীজ মাড়াই করে তেল নিষ্কাশন করত। ঘানির কাঠের দণ্ড ঘােরানাে হত গােরু দিয়ে। আন্দামানের সশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের দিয়ে ঘানির কাষ্ঠদণ্ড ঘােরানাে হত গােরুর পরিবর্তে। এমনি পশুতুল্য অমানবিক পরিশ্রম করানাে হত দ্বীপান্তরিত কয়েদিদের। এখানে। তৈলবীজ মাড়ানাে সেই ‘ঘানি’-র কথা বলা হয়েছে। “জীবন-চুয়ানাে’ বলার কারণ : ঘানি টানা কঠোর শ্রমের ফলে ঘানিতে মাড়া তেলই কেবল নিষ্কাশিত হত না, কয়েদির জীবন-নিংড়ানাে ঘাম ও রক্তের ধারা ঝরে পড়ত। ওই দুর্বিষহ শ্রম ও পীড়ন ছিল বড়ােই মর্মন্তুদ। এভাবে কয়েদির সমস্ত শক্তি নিংড়ানাে হয়ে তা যেন মাড়াই করা আখের ছিবড়েতে পরিণত হত। এই কারণে কবি বলেছেন,“জীবন-চুয়ানাে।


‘আৱতিৱ তেল’ কথাটির রূপকাৰ্থ : মা সরস্বতীর পুণ্য বেদিতে পুরােহিত পুজোর আয়ােজন করেছেন। মা স্বয়ং দ্বীপান্তরে বন্দিনী। তা সত্ত্বেও পুজোর আয়ােজন। আরতির। পঞ্চপ্রদীপ প্রস্তুত। কিন্তু প্রদীপের সলতে জ্বালানাের জন্য তেল বা ঘি দরকার। তা কি সংগৃহীত হয়েছে ? তা কি এসেছে ?দ্বীপান্তরের কয়েদিদের ঘানি নিঃসৃত জীবন-চুয়ানাে তেল।বস্তুত ‘আরতির তেল’ রূপকার্থে এখানে ব্যবহৃত। বাণী অর্চনার

যে আয়ােজন হয়েছে বাকদেবীর শূন্য বেদিতে, তা যেমন ব্যর্থ প্রয়াস, তেমনি পুজো আয়ােজনের অঙ্গ হিসেবে মায়ের আরতির ব্যবস্থাও আর-এক নিষ্ফলতার দৃষ্টান্ত। পুরােহিতের এইসব অর্থহীন শৌখিন বিলাসে কবি বেদনাহত। কারণ মায়ের সন্তানেরা ঘানি টানার কঠিন পরিশ্রমে, নিষ্ঠুর পীড়নে, পেষণে

জীবনের রস-রক্ত-চর্বি নিষ্কাশিত করে মৃতপ্রায়। মায়ের মুক্তি বা স্বাধীনতার জন্যই তাে তাঁদের এই ত্যাগ-তিতিক্ষা, জীবনােসর্গ।


প্রশ্ন ৩,2 দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কে? ‘বান্দিনী’কে মুক্ত করার জন্য কবির যে আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা

কবিতা অবলম্বনে লেখাে। [ একাদশ, '১৬][১+৪]

অথবা, ‘ভীপান্তৱেৱ বন্দিনী’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।


‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী হলেন ভারত-ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী। তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক। বন্দিনী ভারত-ভারতীর মুক্তির জন্য কবি নজরুলের ব্যথিত হৃদয়ের ব্যাকুলতার অবধি নেই। কবিতার প্রতি ছত্রে তাঁর দরদি চিত্তের আকুলতা প্রকাশিত। ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী। তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্য বেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে। রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপাের কমল বিবর্ণ। অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তার পদ্ম শতচ্ছিন্ন। এই অন্যায়-অত্যাচার আর অবিচারের ঘটনায় কবি-হৃদয় বেদনাহত। তিনি মায়ের মুক্তির জন্য সতত ব্যাকুল। তাঁর ব্যাকুলতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যখন শুনছেন দ্বীপান্তরে বাকভারতী ঘানি টানছেন। ঘানি থেকে জীবন-চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে। সেখানে অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সত্যভাষীকে অন্যায়-অত্যাচারের মার খেতে হচ্ছে। সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে। ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যযাদ্ধাকে লক্ষ্য করে অগ্নি-শেল হানা হয়েছে। বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ। বাণীর কমল জেল খাটছে। ব্যাকুল চিত্ত কবিমনের একটু আশা যে, মায়ের মুক্তির পূর্বাভাস সূচিত হয়েছে। কারণ যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে/যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।


১। 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা অবলম্বনে নজরুলের স্বদেশ প্রেমের পরিচয় দাও।

উত্তর নজরুল স্বাধীনচেতা মানুষ। তাঁর লেখার বিষয় সমকালের সমাজ ও মানুষজন। তিনি অনেকবারই অভিযুক্ত হয়েছেন সমালোচকদের দ্বারা। তার কারণ এই যে, তাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথের

মতো চিরকেলে বাণী নেই, তিনি যুগের কবি। সমালোচকদের কথার জবাবে নজরুল বলেছেন, তাঁকে যুগের বা হুজুগের—যে কবির আখ্যায় আখ্যায়িত করা হোক না কেন, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না, তিনি পাঠকের মনে শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকার ইচ্ছাও পোষণ করেন না। তাই সমকালই তাঁর বিষয়। তিনি দেখছেন দেশমাতা পরাধীন। তাঁকে মুক্ত করাই প্রথম কর্তব্য। কিন্তু আবেদন নিবেদন নয়, সশস্ত্র সংগ্রামই পারে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ রাজশক্তিকে ভারতের বুক থেকে উৎখাত করতে। নজরুল লক্ষ করলেন, দেশমাতৃকার সন্তানেরা বৃথাই মায়ের আরতি করছে, মায়ের পুণ্যবেদী আজ শূন্য, ‘ভারত ভারতী’দ্বীপান্তরে বন্দিনী দশা কাটাচ্ছে : কবি দুঃখের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করলেন, ‘ভারত-ভারতী’ তথা

দেবী সরস্বতী দেড়শো বছর বন্দিনী হয়ে আছেন, শুধু বন্দিনী হয়ে আছেন তাই নয়, তাঁর ওপর চলছে দমন-পীড়ন ও নির্মম অত্যাচার। শুধু দেশমাতৃকা নয় মাতৃভক্ত সন্তানদেরও নির্মম  আক্রমণ সহ্য করতে হচ্ছে।  আজ স্বদেশভূমি যক্ষপুরীতে পরিণত হয়েছে। দেশে কোনো বীরসন্তান সত্য কথা বললেই তার ওপর নেমে আসে সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কু-দৃষ্টি, তার কপালে জোটে কারাগারের

বন্দিত্ব দশা : দেশকে ভালোবাসা কবির ক্ষেত্রেও হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যায়। ‘বাণী’ মুক্তির কথা উচ্চারণ করায়, গ্রন্থে মুদ্রিত আকারে প্রকাশ করায় কবিকে পড়তে হয়েছে রাজরোষে, পেতে হয়েছে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা, যেতে হয়েছে তাঁকে কারাগারে। যে-কোনো মুক্তি আন্দোলনকারীরই একমাত্র প্রাপ্তি বেয়োনেটের গুঁতো, বন্দুকের গুলি। তাই দেশপ্রেমিক কবি দুঃখের সঙ্গে দেখেছেন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক চরিত্র মাস্টারদা সূর্যসেনের সহযোগী বীণা রায়ের অকাল মৃত্যু- “কে জানিত কাল বীণা খাবে গুলি

বাণীর কমল খাটিবে জেল!” কিন্তু কবি আশাবাদী। তিনি জানেন ব্রিটিশ সরকার বেশি দিন দমন-পীড়ন চালিয়ে যেতে পারবে না, মুক্তির বাণী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে, ‘ভারত-ভারতীর’ মুক্তি ঘটবে—

“তবে কি বিধির বেতার-মন্ত্র

বেজেছে বাণীর সেতারে আজ,

পদ্মে রেখেছে চরণ-পদ্ম যুগান্তরের ধর্মরাজ?”

এভাবে আমরা দেখি, নজরুলের স্বদেশ প্রেম সমগ্র কবিতাটিতে ছড়িয়ে আছে।



১। 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা নামকরণ 

সাহিত্যক্ষেত্রে নামকরণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এক ব্যাপার। কোনো কবি বা সাহিত্যিক যখন কোনো রচনার নামকরণ করেন। তখন তিনি অত্যন্ত ভেবেচিন্তেই তা করে থাকেন। ই ভাবনাচিন্তার কারণ হল, সাহিত্যে নামকরণ এক সোপান বা সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে একজন রসিক পাঠক কোনো বিশেষ এক শিল্পকর্মের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান, সেই শিল্পকর্মটির মূল বিষয় সম্পর্কে তিনি আগাম ধারণা করে নেওয়ার সুযোগ পান বিপরীতক্রমে নামকরণ যদি যথোপযুক্ত না হয়, রচনা কর্মের বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়—তাহলে তা রসিকপাঠকের পক্ষে সুখকর হয় না, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি আগাম ধারণা করার সুযোগ হারান। তাই এ কথা কোনোভাবেই বলা যায়। না যে, নামে কী যায় আসে? নামকরণ কবি বা লেখক নানাভাবে, নানা চিন্তাভাবনা করে। বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। তাঁরা কখনও প্রধান চরিত্রের নামে তাঁদের রচনার নামকরণ করেন, কখনও মূল ঘটনা অনুসারে নামকরণ করেন, কখনও ব্যাখ্যাধর্মী, আবার কখনও ব্যঞ্জনধর্মী নামকরণ করে থাকেন। আমরা আলোচনা করে দেখতে চাই কবিতার নাম 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ সার্থক ও সংগতকিনা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় উপনিবেশ স্থাপনকারী শক্তি ইংরেজদের দমন-পীড়ন অপশাসনের ফলে ভারতমাতার দীর্ঘ দেড়শত বৎসরের বন্দি দশা ও দেশমাতার সন্তানদের কারান্তরালে অত্যাচার করা, সত্যের কণ্ঠরোধ করা এবং সত্যসন্ধানীকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে কবি এই আশাবাদও পোষণ করেছেন যে, ‘পাঞ্চজন্য’ শোনা গেছে, ‘যুগান্তরের ধর্মরাজ’ পরিবর্তন ঘটাবেনই। তাই ‘ফণি-মনসা’ কাব্যের ‘সব্যসাচী’ কবিতায় তিনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে তর্জনী তুলে প্রশ্ন রেখেছেন—“ভাবিয়াছ, কেহ শুধিবে না এই উৎপীড়নের দেনা?” আমাদের ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী'—কবিতার এই শীর্ষ নামের প্রথমেই ‘দ্বীপান্তরের কথা রয়েছে। ইংরেজ আমলে যারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সংগ্রাম করত, তাদের মধ্যে যারা তদানীন্তন সরকারের অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত হত—তাদের অনেকেরই সাজা হিসেবে 'দ্বীপান্তর’ হত। অর্থাৎ মূল ভারত ভূখণ্ড থেকে এক দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এই ‘দ্বীপ’টি হল সুদূর ‘আন্দামান’। আন্দামানের সেলুলার নামক কুখ্যাত কারাগারটিতে বিপ্লবীদের বন্দি করে রাখা হতএবং তাদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো হত,অর্থাৎ অকথ্য অত্যাচার করা হত। কবিকল্পনার চমৎকারিত্বে আমরা একথা শুনতে পেলাম—

“আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী?

মা’র কতদিন দ্বীপান্তর?

পুণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল ক্রন্দন—‘দেড় শত বছর!’ শীর্ষ নামের দ্বিতীয় অংশে ‘বন্দিনী’র কথা বলা হয়েছে। এই বন্দিনী হলেন কবি-ভাষায় (Poetic diction) ‘ভারত-ভারতী’,অর্থাৎ দেশমাতা, দেড়শত বছর ‘ভারত-ভারতী’ বন্দিনী হয়ে আছেন দ্বীপান্তরের কারাগারে। প্রকৃত প্রস্তাবে ইনি হলেন বাণীরদেবী, কথার দেবী, সত্যের দেবী, ন্যায়ের দেবী সরস্বতী। যেসবমানুষ ন্যায়ের কথা বলতে চান, সত্যের কথা বলতে চান, ইংরেজ সরকার তাদেরই কণ্ঠরোধ করেন, রাষ্ট্রদ্রোহী বলে মনে করেন—

“আইন যেখানে ন্যায়ের শাসক,

সত্য বলিলে বন্দী হই,...।” সত্য কথা, দেশের মুক্তির কথা যারা বলেন, তারা “আখ্যা লভিল বিদ্রোহী” তাই ‘ভারত-ভারতী’ আজও ‘বন্দিনী’, তাই, আলোচনার ছেদবিন্দুতে এসে বলা যায় যে, কবিতার নাম

‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ সার্থক, সঙ্গত, সুন্দর এবং এই নামকরণটি ব্যাখ্যাধর্মী।



১। 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা সারকথার পরিচয় দাও।


বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলাম প্রথম বিপ্লবী মন্ত্র উচ্চারণ করেন অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায়। পরাধীনতার জ্বালা তাঁকে কুরে কুরে খেয়েছিল, তাই তিনি সোচ্চারে স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণ

করেছেন। দেশমাতৃকার প্রতি এই ধরনের ভালোবাসার কথা গ্রন্থে লেখার কারণে তাঁর গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাঁকে কারান্তরালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু নজরুলকে দমিয়ে দিতে পারেনি। তাই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বার বার বলতে চেয়েছেন—“কারার ঐ লৌহ কপাট/ ভেঙে ফেল কররে লোপাট।” তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশমাতার সন্তানেরা “আঁধার রাতে বাধার পথে যাত্রা নাঙ্গা

পায়।” এগিয়ে এসেছে এবং “তাজা খুনে লাল” করেছে “সরস্বতীর শ্বেতকমল।” কবি ভারতবর্ষকে দেখেছেন সরস্বতীর রূপে। ভারতরূপিণী মা সরস্বতী আজ সংকটাপন্ন, দীর্ঘ দেড়শত বৎসর ধরে ‘মা’ বন্দিনী হয়ে আছেন, সহ্য করছেন সাম্রাজ্যবাদীশক্তি ইংরেজের দমন-পীড়ন, অত্যাচার। ইংরেজ রাজশক্তি শুধু স্বদেশভূমিতে অত্যাচার করছে না, তারা আমাদের ‘ভারত-ভারতী’কে সুদূর আন্দামানের সেলুলার জেলে

পাঠিয়েছেন, ‘ভারত-ভারতী’ হয়েছেন দ্বীপান্তরের বন্দিনী।দেশমাতৃকার সন্তানদের অনেককেই ব্রিটিশ রাজশক্তির দমন-পীড়নের মুখে পড়ে দ্বীপান্তরে যেতে হয়েছে। বন্দিনী মায়ের বেদী আজ শূন্য পড়ে আছে। বিদেশিরাজশক্তি মায়ের বীণার তার কেটে দিয়েছে, তাই মুক্তিকামীর কণ্ঠ আজ রুদ্ধ। মুক্তিকামী দেশমাতৃকার পূজারিরা আজ সান্ত্রী দ্বারা বেষ্টিত, ‘শস্ত্র-পাণি’র ‘কামান গোলার সীসা’য় মুক্তির বাণীকে নীরব করে দিয়েছে, সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ আজিকে। দ্বীপান্তরের সেলুলার কারাবাসে মা ও তাঁর সন্তানেরা অকথ্য নির্যাতন সহ্য করছেন। রাবণ যেমন অশোকবনে বন্দিনী সীতাদেবীকে চেড়ী নামক নারীবাহিনীর সাহায্যে নির্যাতন চালাতেন, ঠিক তেমনি ‘চেড়ীর মার’ দ্বীপান্তরের কারাবাসে প্রবর্তন করেছেন ব্রিটিশ রাজশক্তি। যাদুকরের হাতে দুটি কাঠি থাকে–(১) সোনার, (২) রুপার। সোনার কাঠির স্পর্শে জীবন মধুময় হয় এবং রুপার কাঠির স্পর্শে জীবন রক্তাক্ত ও বিষময় হয়। এখন রুপার কাঠির স্পর্শে মুক্তিকামী ‘ভারত-ভারতী’ ও তাঁর সন্তানেরা রক্তাক্ত। যদি কোনো মুক্তিকামী মুক্তির বাণী গেয়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর



২। 'দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘বাণী'র কথা বারবার এসেছে। এই 'বাণী'র কী পরিচয় ? কবিতায় ‘বীণা’ কথাটির তাৎপর্য কী?

উত্তর ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী' কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম ‘ভারত-ভারতী’র কথা বলেছেন। এই ‘ভারত-ভারতী তথা কবির জন্মভূমি মা, কবির জন্মভূমির মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ কয়েকশো মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপ আন্দামানের সেলুলার কয়েদখানায় বন্দি জীবনযাপন করছেন বলে কবি মনে করেছেন। কবি আসলে ‘ভারত-ভারতী’কে দেবী সরস্বতী রূপে কল্পনা করেছেন।

কবি-সাহিত্যিকরা 'বাণী'র সাধনা করেন, সেই ‘বাণী’র অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন সরস্বতী। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার কবি-সাহিত্যিকদের বাণীকে কেড়ে নিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত করেছেন, বন্দিনী করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অছিলায়, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অজুহাতে। বাণীকে সাধারণ মানুষেরকাছে কবি-সাহিত্যিকেরা যাতে পৌঁছে দিতে না পারেন, সেইজন্য ‘বাণী’কে দ্বীপান্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে এবং বন্দিনী করা হয়েছে, ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে বীণার তন্ত্রীর যাবতীয় তার। আসলে যুগে যুগে এভাবেই ‘বাণী’র ওপর আঘাত নেমে এসেছে, কারণ রাজশক্তি ভালো করেই জানেন কখনো কখনো Pen' is mightier than soard. তাই দেখি যে, কখনো রাজনৈতিক কারণে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ', শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’, কখনও ধর্মীয় কারণে সলমন রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বা মকবুল ফিদা হুসেনের ‘সরস্বতী’, কখনও অশ্লীলতার দায়ে সমরেশ বসুর ‘বিবর’ ও ‘প্রজাপতি’, কখনও বা নিজেদের লজ্জা ঢাকতে সরকার তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’দের ব্যান করতে, বাজেয়াপ্ত করতে, নিষেধাজ্ঞা জারি করতে উঠে পড়ে লাগেন। এভাবে সত্যের বাণীকে প্রায়ই ‘নীরবে নিভৃতে’ কাঁদতে হয়। ‘বাণী’ নিয়ে নজরুল বারবার লিখবেন এটা তো স্বতঃসিদ্ধ, কেননা ‘বাণী’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বিত হতে হয়েছে তাঁকেই, ভোগ করতে হয়েছে কারাবাস। তাঁর ‘বিষের বাঁশি’, ‘ভাঙার গান’, ‘যুগবাণী', ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘প্রলয়শিখা’ প্রভৃতি ‘বাণী’ সংগ্রহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই কবি সেই ‘বাণী'র কথা বলেছেন, যার উৎস দেবী সরস্বতী। কবি তাঁর কবিতার 'কথা'কে বাণী বলেছেন, যে বাণী সরকারি রোষানলে পড়ে বন্দিনী। সেজন্য কবি ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’তে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ‘বাণী’র কথা বারবার বলেছেন। তিনি কখনও বলেছেন-


৩। ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা অবলম্বনে নজরুলের বিদ্রোহীসত্তার পরিচয় লিপিবদ্ধ করো।

উত্তর কবি নজরুল চিরবিপ্লবী, কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী। নজরুলের এমন কবিতার সংখ্যা প্রচুর যেখানে তার বিদ্রোহী সত্তার পরিচয় পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। কবি দেশমাতৃকার পরাধীনতার গ্লানি মোচনের জন্য তাঁর কবি-কথায় ক্ষুরধার বিদ্রোহ সংযোজন করেছেন। তাই তিনি স্বরাজ্য আন্দোলনকে

মেকি দেশপ্রেম আখ্যা দিয়েছেন, কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের নীতিকেও সমর্থন করতে পারেননি। তিনি জানতেন ইটের বদলে পাটকেল হল যুতসই জবাব, তাই সশস্ত্র সংগ্রামেরপ্রতিই ছিল পক্ষপাত। যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে 


৪। “যথা বন্দিনী সীতাসম বাণী/সহিছে বিচার-চেড়ীর মার”—‘যথা’ বলতে এখানে কোনে স্থানের কথা বলা হয়েছে? ‘বন্দিনী’ কে? ‘চেড়ী’ কারা? এখানে ‘সীতা’ ও ‘চেড়ী’র কোন বিষয়টির তুলনা টানা হয়েছে?

উত্তর এখানে ‘যথা' বলতে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে, অর্থাৎ ভারত স্থল ভূখণ্ড থেকে বেশ কয়েকশো নৌ-মাইল দূরে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের বুকে বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দ্বীপভূমি আন্দামানকে এবং সেই আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলকে বোঝানো হয়েছে। এখানে ‘বন্দিনী’ বলতে সমগ্র অর্থে কবির স্বদেশ পরাধীন ভারতবর্ষকে বোঝালেও প্রকৃতপ্রস্তাবে ‘বন্দিনী’ বলতে ‘ভারতভারতী' তথা বাণীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীকে বোঝানো হয়েছে। ‘চেড়ী’ হল লঙ্কার অধিপতি রাক্ষসকুলতিলক রাজা

রাবণের তৈরি এক বিশেষ ‘প্রমীলা প্রহরী’ বাহিনী। সুদূর লঙ্কা থেকে মারীচকে সঙ্গে নিয়ে রাক্ষসরাজা রাবণ গোদাবরী তীরস্থ রামচন্দ্রের কুটিরে আসেন। কুটিরে একাকী থাকা সীতাকে লক্ষ্মণ-গণ্ডির বাইরে কৌশলে বের করে আনেন ভিখারির বেশে থাকা রাবণ। তিনি সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে আসেন ও অশোকবনে ‘বন্দিনী’ করে রাখেন। এই অশোকবনে রাবণের নারীপ্রহরী বাহিনী ‘চেড়ী’রা সীতাকেঅসম্ভব অত্যাচার করত। ঠিক তেমনি ভারতের বহিরাগত ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীর দল ‘ভারত-ভারতী'কে তথা বাণীকে দ্বীপান্তরে বন্দিনী করে রাখে এবং অকথ্য নির্যাতন চালায়। এখানে ‘সীতা’ হলেন বাণী বা সরস্বতী দেবী এবং ‘চেড়ী’ হল নির্মম প্রশাসক ইংরেজ।


৫। “পুণ্যবেদীর শূন্যে ধ্বনিল/ক্রন্দন- ‘দেড়শত বছর’—কোন্ কবিতার অংশ? মূল কাব্যগ্রন্থের

নাম কী? ‘পুণ্যবেদী’ শূন্য কেন? ‘দেড়শত বছর’ বাক্যাংশটি ব্যবহার করা হয়েছে কেন? 

উত্তর। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার অংশ। মূল কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘ফণি-মনসা’। ইংরেজ সরকার ‘ভারত ভারতী’ দেবী সরস্বতীকে বন্দিনীকরে রেখেছে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার দ্বীপভূমি আন্দামানের সেলুলার জেলে। তাই দেবী সরস্বতীর ‘পুণ্যবেদী’

শূন্য। ভারত-ভারতী দ্বীপান্তরে বন্দিনী দশা কাটাচ্ছেন। ভারতবর্ষেরবুকে নিজেদের শাসন ক্ষমতা কায়েম করেছে যে সাম্রাজ্যলোলুপ ইংরেজ, তারা বাণীর দেবী সরস্বতীকে দ্বীপান্তরে দীর্ঘদিন বন্দিনী করে রেখেছে। বন্দী করে রেখেছে দেবীর আপন সন্তানদের, তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে ইংরেজি কালাকানুন। সত্যকথা বললে বন্দিত্বদশায় ভুগতে হবে সত্যবাণী প্রচার করলে বিদ্রোহী আখ্যা পেতে হবে। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘকাল ধরে, প্রায় দেড়শত বছর, ভারত ভারতীর দীর্ঘকালীন বিদেশি শক্তির পরাধীনথাকাকেই এখানে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে।


৷৬৷ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় দুর্দশাগ্রস্ত পরাধীন ভারতবর্ষের যে রূপ তুলে ধরা হয়েছে, তা বর্ণনা করো। 

উত্তর ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতার প্রেক্ষাপট পরাধীন ভারতবর্ষ। স্বদেশপ্রেমিক বিদ্রোহী কবি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছেন যে, দেশমাতা পরাধীনা, তাঁর সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত। কবি এই কবিতায় দেশমাতাকে ‘ভারতী’ তথা দেবী সরস্বতীর সঙ্গে এক করেই ভেবেছেন। ভারতবর্ষ জুড়ে চলছে অন্যায় আর অবিচার। দেশবাসী, যারা দেশমাতৃকার পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য উচ্চকণ্ঠ, সাম্রাজ্যবাদী ন্যায়-বিসর্জিত শাসক সঙ্গে সঙ্গেই তার কণ্ঠরোধ করে। সত্য কথা বলবার উপায় নেই, স্বাধীনভাবে ‘বাণী’ উচ্চারণের অধিকার নেই ভারতবাসীর। কবি দেখছেন অপশাসক ইংরেজ ভারতবাসীকে

শুধু দমন-পীড়ন আর বর্বরোচিত আক্রমণ করছে না, শুধুমাত্রভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা কারাগুলিতে কারাবাসে পাঠাচ্ছে না। তারা কৌশলে নতুন সাজা উদ্ভাবন করেছে। তারা দেবী সরস্বতীকে এবং দেশ মুক্তির সাধকদের ভারত ভূখণ্ড থেকে কয়েকশো মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত আন্দামানে ‘দ্বীপান্তর’-এ পাঠাচ্ছে। এখানে কুখ্যাত সেলুলার জেলে বন্দি করে রাখছে। কবি চান দেশের পরাধীনতামুক্তি তথা বাণীমুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলতে। কিন্তু চারিদিকে যে পরিবেশ-পরিস্থিতি লক্ষ করছেন, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। ‘মা’-র কতদিন দ্বীপান্তর? কবি নিজেকেই এ প্রশ্ন করে উত্তর পেয়েছেন এরকম- “পুণ্য বেদীর শূন্যে-ধ্বনিল ক্রন্দন—‘দেড় শত বছর!’



[TAG]:   একাদশ শ্রেণি দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতা pdf,দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতা mcq,দ্বীপান্তরের বন্দিনী বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণি,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা 3 নং প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা  বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা 1 প্রশ্ন উত্তর,Class 11 Bengali Kobita question in bengali,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url