একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা |Ekati bhramanera abhijnata prabandha racana
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা PDF
ভূমিকা: মানুষ সুদূরের পিয়াসি। উষর মরু পেরিয়ে, দুর্গম হিমালয় জয় করে, কৃয়বর্ণ অরণ্যে মশাল জ্বেলে পথ খুঁজে আজীবন সে বেড়াতে ভালােবাসে। মনুষ্যজন্মে আমি নিজের রক্তেও অনুভব করেছি সেই বেড়ানাের নেশা। ছােটোবেলা থেকেই অনেকবার পাহাড় দেখেছি, জঙ্গল দেখেছি কিন্তু সমুদ্রের কাছাকাছি যেতে পারিনি। প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে বহুবার সমুদ্র দর্শনের।: বর্ণনা শুনেছি | বইয়ে এবং টিভি-সিনেমায় সমুদ্রদৃশ্য দেখেছি। নিজের চোখে সত্যিকারের সমুদ্রকে কখনও দেখা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু, হঠাৎই বাবা যেদিন বললেন, 'এবারে পুজোর ছুটিতে আমরা পুরী যাচ্ছি', আনন্দে আমার মন নেচে উঠল। পুরী মানেই তাে সমুদ্র, শুরু হল দিনগােনা।
যাত্রা শুরু: অক্টোবরের তেইশ তারিখ আমরা রওনা দিলাম। পুরী এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ার কথা রাত দশটার পরে। অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম স্টেশনে। সময় যেন আর কাটতে চায় না। তারপর একসময় ট্রেন নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে ঢুকল এবং আমাদের নিয়ে যথাসময়ে ছেড়েও দিল | সমুদ্র দেখার উত্তেজনায় কিছুতেই চোখে ঘুম এল না। সকাল হতে না হতেই জানলার ধারে গিয়ে বসলাম। বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে সকাল নটার আগেই পৌঁছে গেলাম পুরী।
প্রথম সমুদ্র দর্শন: সমুদ্রের ধারের এক হােটেলে আগে থেকেই আমাদের ঘর বুক করা ছিল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রিকশায় উঠে আমরা হােটেলের দিকে রওনা হলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরেই কানে এল সমুদ্রের গর্জন| আরও কিছুটা এগােতেই বাঁদিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম আমার বন্ধু কাক্ষিত, আমার স্বপ্নের সমুদ্র| চোখে পড়ল অন্তহীন নীলের বিস্তার| সাদা ফেনা বুকে নিয়ে ছুটে আসছে ঢেউয়ের পরে ঢেউ। যতদূর দেখা যায়, শুধু জল আর জল || পুরীর সমুদ্রতীরে হােটেলে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই চলে এলাম সমুদ্রতীরে। সেখানে লােকজনের ছড়াছড়ি। কেউ বালিতে বসে আছে, কেউ স্নান করছে, কেউ ঝিনুক খুঁজছে, কেউ বা ছবি তােলায় ব্যস্ত আমি মুধ বিস্ময়ে দু-চোখ ভরে দেখতে লাগলাম সমুদ্রকে বড়াে বড়াে ঢেউ গর্জন করে আছড়ে পড়ছে বেলাভূমিতে। আমার মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন- “হে আদি জননী সিধু, বসুন্ধরা সন্তান তােমার, একমাত্র কন্যা তব কোলে। তাই তন্দ্রা নাহি ত্রার চক্ষে তব, তাই বক্ষ জুড়ি সদা শঙ্কা, সদা আশা, সদা আন্দোলন। হঠাৎ দেখি একটি ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিয়েছে আমার পা আমি অঞ্জলি ভরে তুলে নিলাম সেই ঢেউয়ের জল। সমুদ্রে স্নান করে দেহ-মন ভরে গেল এক অদ্ভুত আনন্দে। স্নান শেষে হােটেলে। ফিরে দুপুরের আহার ও বিশ্রাম। বিকেলে আবার গিয়ে বসলাম সমুদ্রের তীরে| অনন্ত জলরাশির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় অন্ধকার নেমে এল | আকাশে অসংখ্য তারা অার নীচে উত্তাল সমুদ্র। রাতের সমুদ্রও বড়াে অপরূপ, বড়ােই মনােহর।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন; পরদিন খুব সকালে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আশপাশের জায়গাগুলি দেখতে। দেখলাম ধবলগিরি, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, নন্দনকানন এবং কোনারক৷ কোনারকের সূর্যমন্দির আমাকে বিস্ময়ে অভিভূত করল। বহুকাল আগে তৈরি এই মন্দিরের অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ তবু যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও অতি চমৎকার। নাম-না- জানা যেসব শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছিল এই শিল্পশােভা তাদের উদ্দেশে নমস্কার জানিয়ে ফিরে এলাম | বিদায়ের আগের দিন। পরদিন দেখলাম সূর্যোদয় সমুদ্রে মিশে থাকা দিগন্ত ক্রমশ লাল হয়ে উঠতে লাগল। তারপর ধীরে ধীরে সমুদ্রগর্ভ থেকেই যেন উঠে আসতে লাগল সূর্য। তার জবাকুসুমের মতাে রং ক্রমশ হয়ে উঠল সােনা : রঙের। বিকেলে গেলাম জগন্নাথদেবের মন্দিরে। জগন্নাথদেবের বিগ্রহ দেখলাম। সন্ধ্যা পেরােলে কিছু কেনাকাটা করে হােটেলে ফিরলাম।
উপসংহার: পরদিন আমাদের ফেরার টিকিট। সেদিন সকাল থেকে অধিকাংশ সময় কাটিয়েছি আমি সমুদ্রের ধারে। দিন গড়িয়ে সন্ধে নামল | যে পথ দিয়ে এসেছিলাম সেই পথ দিয়েই আবার ফিরে যাওয়া। রিকশায় যেতে যেতে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ সমুদ্রের দিকেই তাকিয়েছিলাম। তারপর তাকে আর দেখতে পেলাম না। শুধু একটা বড়াে ঢেউ ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। সেই শব্দে বিচ্ছেদের কান্না ছিল, আর ছিল আবার ফিরে আসার আমন্ত্রণ।
অনুসরণে লেখা নাম
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা|আমার পুরী ভ্রমণ ॥ একটি স্মরণীয় ভ্রমণ॥ তােমার প্রথম সমুদ্র দর্শনের অভিজ্ঞতা
.