মানব জীবনে পরিবেশের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা PDF|Manaba jibane paribesera bhumika prabandha racana
মানব জীবনে পরিবেশের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা PDF
ভূমিকা: যে পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটে মানুষের তথা জীবজগতের বিকাশ সম্ভব হয় তাই হল তার পরিবেশ পরিবেশ যদি শিশুর সুস্থ সবলভাবে বেঁচে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, স্মরণীয় হয়ে থাকার মতাে কোনাে জীবন গঠন করা তার পক্ষে সম্ভবপর হবে না | তাই মানবজীবনে পরিবেশের প্রত্যক্ষ ওপরােক্ষ প্রভাবকে কোনােমতেই অস্বীকার করা যায় না। আর এই পরিবেশকে বৃহত্তর অর্থে দু-ভাগে ভাগ করা যায়—[১] সামাজিক পরিবেশ [২] প্রাকৃতিক পরিবেশ |
মানুষের জীবনে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা: মানুষের বেড়ে ওঠায় সমাজজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সুস্থ সমাজ, সুস্থ পারিবারিক ও নৈতিক পরিবেশ, সমাজ-আদর্শের স্বচ্ছ ধারণা ব্যক্তিমানুষকে যেমন সমৃদ্ধ করে তােলে, তেমনি তাকে সামাজিকতা বােধে দীক্ষা দেয়। বিকৃত সামাজিক পরিবেশের প্রভাব মানুষের মধ্যে বিশেষত শিশুদের মধ্যে সুদূরপ্রসারী। Education through experience' —যদি শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হয় তাহলে সুস্থ সামাজিক পরিবেশের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হতে পারে। ভােগবাদী আক্রোশের সামনে দাঁড়িয়ে আজকের মানবসমাজ মাথা নত করেছে | শৈশবে ব্যাগ কাঁধে নার্সারিতে ইদুর দৌড় শুরু করে যে শিশু—তার জন্য মনুষ্যত্ব বিকাশের কোনাে সুযােগ রাখতে ব্যর্থ হয় তার অভিজ্ঞ অভিভাবকেরা| ক্রমশ স্বার্থপর হয়ে ওঠা এই শিশু একসময় মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়। আর এর পরিণতি ঘটে কখনও নেশাগ্রস্ততায়, কখনও আত্মহত্যায়, কখনাে বা কোনাে অপরাধমূলক কাজকর্মে | চারপাশে বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সে দেখেছে অজস্র ভ্রষ্টাচার, আর ভােগবাদের চটুল হাতছানি। একদিন বিপ্লবের অংশীদার হত যে যৌবন, তাকে আজ দেখা গেছে স্বার্থের চোরাবালিতে ডুবে থাকতে। ব্যক্তিমানুষের এই অধঃপতনে দিশাহীন হয়েছে সমাজ| ব্যক্তিমানুষের উন্নতির জন্য প্রয়ােজন এক আদর্শ সামাজিক পরিবেশ যেখানে ।শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সহজ সংযােগ থাকবে, সমাজে থাকবে সুস্থ।রাজনৈতিক পরিবেশ ও মূল্যবােধ, থাকবে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা।মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক
পরিবেশের ভূমিকা : প্রাকৃতিক পরিবেশ। মানুষকে দু-ভাবে সাহায্য করে। প্রথমত, তার জীবনযাপনের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে সে। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীকে মানুষের বাসযােগ্য করে রাখতে সে সাহায্য করে। কিন্তু নগরসভ্যতার আগ্রাসনের সামনে এই প্রকৃতিও আজ বিপন্ন | সভ্যতার অসম বিকাশের ফলে আজ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অবলুপ্ত হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি। জীববৈচিত্র্যের এই বিনাশ প্রকৃতপক্ষে মানুষেরই সর্বনাশ ডেকে আনছে। নেমে যাচ্ছে জলস্তর, দূষপের ব্যাপকতা ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি অসুখকে মহামারির জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। মেরুপ্রান্তে বরফ গলে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং'-এর ফলে |এখান থেকে সভ্যতার গতিমুখকে ফেরাতে হবে। পরিবেশ এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (WCED) বলেছে মানবসভ্যতার বিকাশকে বিপর্যয়হীন করতে হবে | বিপর্যয়হীন বিকাশ হচ্ছে সেই ধরনের বিকাশ যা আমাদের বর্তমানের চাহিদা মেটাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটাবার ক্ষমতাকে আঘাত করবে না |
উপসংহার: পরিবেশ সুস্থ না থাকার অর্থ ব্যক্তির অপমৃত্যু, জাতির অপমৃত্যু। প্রকৃতি ও সমাজের সাহায্যে গড়ে ওঠে পূর্ণ মানুষ, যে সভ্যতাকে পরিচালনার অধিকার পায়। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারালে যা ঘটবে, তাকে কবির ভাষায় বলা যায়—“যদিও পথ আছেঃতবু কোলাহলে শূন্য আলিঙ্গনে নায়ক সাধক রাষ্ট্র সমাজ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। প্রতিটি প্রাণ অন্ধকারে নিজের আত্মবােধের দ্বীপের মতাে
কী এক বিরাট অবক্ষয়ের মানবসাগর—---জীবনানন্দ দাশ