বাড়ির কাছে আরশিনগর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর প্রশ্ন উত্তর

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বাড়ির কাছে আরশিনগর একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 11 Bengali Kobita question in bengali  pdf

বাড়ির কাছে আরশিনগর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর প্রশ্ন উত্তর


আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর প্রশ্ন উত্তর PDFclass 11 Bengali Kobita question Pdf | WB Class nine Bengali question pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।


তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class xi Bengali Kobita Question Pdf  ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।


‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।


বাড়ির কাছে আরশিনগর mcq প্রশ্ন



একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতা 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]

একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা বাড়ির কাছে আরশিনগর 1 নং প্রশ্ন উত্তর

অনধিক কুড়িটি শব্দে মীদের প্রশ্নগুলির উত্তর

প্রশ্ন ২.১ ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তাৱে’- বাউল সাধক লালন কাকে দেখেননি?

উত্তর : বাউল সাধক একদিনের জন্যও তাঁর মনের মানুষ, যার খোঁজে তাঁর সাধনা, তাঁকে দেখেননি।


প্রগ্ন২.২ ‘আমার বাড়ির কাছে আরশিনগৱ’– সেখানে কে বাস করেন?

উত্তর : সেখানে বাস করেন সাধক লালনের এক পড়শি।


প্রশ্ন 3.বলব কি সেই পড়শির কথা-পড়শিরর পৱিচায় কী?

উত্তর : পড়শির হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছু নেই, অর্থাৎনিরাকার, বিমূর্ত পড়শির আবাস্থ্যাতি সম্পর্কে সাধকের


প্রশ্ন ২.৫‘পড়শি যদি আমায় ছুঁত’—তাহলে সাধক লালনেৱ কী হত?

(উত্তর: পড়শি সাধক লালনকে ছুঁলে লালনের যম-যাতনা দূরে যেত।


প্রশ্ন ২.৬ পড়শি আৱ লালনের মধ্যে দূৱত্ব কেমন?

উত্তর: পড়শি আর লালনের মধ্যে দূরত্ব লক্ষ যােজন।


প্রশ্ন ২.৭ ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তাৱে’- এখানে ‘আমি’ কে?

উত্তর : এখানে আমি হলেন লালন ফকির।


প্রশ্ন ২,৮ ‘ও এক পড়শি বসত করে।—সাধারণ ‘পড়শি’ কে?

উত্তর : সাধারণ অর্থে পড়শি হলেন প্রতিবেশী।


প্রশ্ন) ২.৯(স অৱ লালন একখানে ব্রয়’ ‘একখানে’-এর অন্তর্নিহিত অর্থ কী?

উত্তর : একখানে-এর অন্তর্নিহিত অর্থ—দেহ ও চেতনা একত্রে থাকা।


প্রশ্ন ২.১০ লালনের ‘মনেৱ বা কী ছিল?

উত্তর : বাউল সাধক লালনের ইচ্ছা হল তাঁর কাঙ্ক্ষিত মনের মানুষকে দেখার।


প্রশ্ন ২,১১ ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তাৱে’—গানটিতে কী খুঁজে পাওয়া যায়?

উত্তর : গানটিতে খুঁজে পাওয়া যায় এক একনিষ্ঠ সাধকের কাঙ্ক্ষিত মনের মানুষকে পাওয়ার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা।


প্রশ্ন ২.১২ লালন ফকিৱেৱ জন্ম এবং মৃত্যু কবে হয়?

উত্তর : লালন ফকিরের জন্ম ১৭ অক্টোবর ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ।


প্রশ্ন ২,১৩ ‘আমি কেমনে সে গাঁয় যাই ৱে।'—কবির এরূপ সংশয়ের কারণ কী?

উত্তর: মনের মানুষকে দেখার তীব্র বাসনা ভক্ত বাউল সাধকলালনের। কিন্তু তিনি কীভাবে পরম আরাধ্যার সান্নিধ্যে যাবেন,এই অসহায়তার কারণে তাঁর মনে সংশয়।


প্রশ্ন ২.১৪) পড়শি যদি আমায় ছুঁত’–এই ছোঁয়ার তাৎপর্য কী?

উত্তর : পড়শি তথা আরাধ্য মনের মানুষের ছোঁয়ার তাৎপর্য হল ভক্ত আর ভগবানের একাত্মতা ভক্তের ভবযন্ত্রণার অবসান ঘটায়।


প্রঃ ২,১৫ ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপৱ’–এই শূন্যআসলে কী?

উত্তর : লালনের গানে ‘শূন্য আসলে নিরাকার। পড়শি যদি ‘চিৎ' বা আত্মা হন, তাহলে তাে নিরাকার বটেই।


প্রশ্ন ২.১৬) লালন কথিত পড়শির হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নেই কেন?

উত্তর : কারণ লালন কথিত পড়শির হাত-পা-কাঁধ-মাথা নেই, অর্থাৎ বিদেহী—নিরাকার। পড়শি যদি চিৎ’ বা আত্মা হন, তাহলে নিরাকার তাে বটেই।


প্রশ্ন ২.১৭ ‘আমি কেমনে সে পঁয় যাই রে।–এর প্রকৃত অর্থ কী?

উত্তর : লালনের প্রবল ইচ্ছা তাঁর মনের মানুষকে দেখার। কিন্তু তিনি কীভাবে তাঁর আস্তানায় পৌছাবেন? সেজন্য দরকার যথােপযুক্ত সাধনা।


প্রশ্ন ২.১৮‘বলব কি সেই পড়শিৱ কথা’–এই অংশেৱ সৱলাৰ্থ কী?

উত্তর : সেই পড়শির কথা লালন কী আর বলবেন। তাঁর হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছু নেই।


প্রশ্ন ২.১৯‘আমি একদিনও না দেখিলাম তাৱে’–‘তাৱে’ না দেখার কারণ কী?

উত্তর : বাউল সাধক লালন এখনও আছেন সাধনার প্রাথমিক স্তরে। তিনি মনের মানুষের খোঁজে ব্যাকুল, কিন্তু তাঁকে দর্শনের উপযােগী সাধন-মার্গে উপস্থিত হতে পারেননি বলে তিনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না।


প্রশ্ন ২.২০ গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি’—কান , প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : সাধক বাউল লালনের মনের মানুষের বাস আরশিনগরে। তাঁকে দেখতে হলে আরশিনগর পরিবেষ্টিত অগাধ জলরাশি পার হতে হবে। সেই প্রসঙ্গে উদ্ধৃতি।

১। ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় লালনের মূল বক্তব্য কী?

এই কবিতায় মিস্টিক ভাবনায় ভাবিত কবির মূল ওর বক্তব্য ‘আত্মানুসন্ধান করা।

। ২। আরশিনগর কী?

উত্তর মানবশরীরের ভেতরে যে আত্মা রয়েছে, সেই ‘আত্মা’র স্থানই হল আরশিনগর। আসলে মানুষের মনই হল আরশিনগর।

ID ৩। 'আরশিনগর' — এরূপ নাম রাখা হয়েছে কেন?

উত্তর ‘আরশি', অর্থাৎ দর্পণে যেমন বস্তু বা ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি তথা প্রতিবিম্ব দেখা যায়, তেমনি মনের ‘আরশি’ তথা দর্পণে পরমেশ্বর বা পরমাত্মাকে দেখা যায়। তাই ‘আরশিনগর' নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪। “বাড়ির কাছে আরশিনগর” – এটি মূলত কোন্ ধরনের গান?

উত্তর এটি মূলত: বাউলগান, যে গানের মূলভিত্তি হল দেহতত্ত্ব।

ID৫। “সে আর লালন একখানে রয়”—এখানে ‘সে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তর ‘সে’ বলতে এখানে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তথা পরমেশ্বর বা পরমাত্মার কথা বলা হয়েছে।

ID ৬। ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতার ‘পড়শি’ প্রকৃতপক্ষে কেমন?

উত্তর ‘পড়শি’ দেহাতীত, কারণ তাঁর ‘হস্ত-পদ-ক্কন্ধ-মাথা’ নেই, কায়-মন-বাক্যের অতীত তিনি। তাই তিন

এরকম—“অচক্ষু সর্বত্র চান, অপদ সর্বত্র গতাগতি।”

৭। “ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে”–এর তাৎপর্য কী?

উত্তর অংশটির তাৎপর্য হল—ঈশ্বর তথা পরমাত্মা সর্বভূতে, সর্বজীবে, সর্বস্থলে উপস্থিত থাকেন।

ID৮। “বাড়ির কাছে আরশিনগর”—এখানে ‘বাড়ি’ বলতে প্রকৃতপ্রস্তাবে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর এখানে ‘বাড়ি’ বলতে প্রকৃতপ্রস্তাবে মানুষের শরীরকে বোঝানো হয়েছে। এই শরীরের মধ্যে আছে ‘মন’। সেই মনে আছে আত্মা। এই স্থলটি লালন-কথিত ‘আরশিনগর'।

Iট ৯। “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে” – কবি তাঁকে দেখতে চান কেন?

উত্তর কবি ঈশ্বরসাধনায় মন-প্রাণ সঁপে দিয়েছেন, তাঁর প্রচণ্ড আত্মানুসন্ধানের ইচ্ছা। এই প্রবল বাসনা থেকেই কবি সেই পরমাত্মার দেখা পেতে চান, কারণ দেখা পেলেই তাঁর জীবাত্মা তৃপ্ত হবে।

১০। লালন ফকিরের যে-কোনো একটি গানের একটি

পক্তি লেখো।উত্তর পঙ্ক্তিটি এইরকম— “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায় ধরতে পারলে মনবেড়িখান দিতাম তাহার পায়।”

৷১১। “আমি বাঞ্ছা করি”—‘আমি কে? তিনি কী বাঞ্ছা করেন?

উত্তর এখানে ‘আমি’ হলেন স্বয়ং লালন ফকির।  তিনি ‘বাঞ্ছা’ করেন ‘পড়শি’ তথা ‘মনের মানুষ'কে একবার দেখবেন।

ID ১২। 'বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় কোন্ ধর্মসাধনার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর ‘সুফি’ ধর্মসাধনার কথা বলা হয়েছে।

।। ১৩। “ও তার নাই কিনারা”—কোন নদীর কিনারার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর এখানে ভবনদী তথা ভব-সংসারের কথা বলা হয়েছে।

৷ ১৪। “যমযাতনা যেত দূরে”—‘যমযাতনা' কী?

উত্তর মৃত্যুভয় তথা মৃত্যুযন্ত্রণা।

৷ ১৫। “আমি একদিনও না দেখিলাম তারে” – কবি কাকে দেখেননি?

উত্তর কবি ‘পড়শি’কে তথা হৃদয়েশ্বর তথা ‘মনের মানুষ’ কে দেখেননি।


বাড়ির কাছে আরশিনগর বড় প্রশ্ন উত্তর,

একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা  5 নং প্রশ্ন উত্তর

অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

৩.১‘বাড়ির কাছে অৱশিনগৱ’ বাউল গানটৱ উৎস নির্ণয় করে মর্মার্থ বিশ্লেষণ করাে। (১+8}

উত্তর : উৎস : সাধক বাউল লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশিনগর বাউল গানটি লালনশিষ্য ‘ভােলাই’-এর গানের খাতা (প্রথম পর্ব থেকে সংকলিত।

মর্মার্থ : বাউল সাধনার প্রস্তুতিস্তরে লালন তখন ভাব তন্ময়। তাঁর আরাধ্য ‘মনের মানুষ’-এর খোঁজে তিনি তখনব্যাকুল। তাঁকে একদিনও দেখতে না পাওয়ার খেদ রয়েছে তাঁর মনে। অথচ বাড়ির কাছে আরশিনগরে তাঁর বাস। সেই সূত্রেলালনের মনের মানুষ তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। প্রকৃতপক্ষে বাউল সাধক লালনের বােধবুদ্ধির মধ্যে তাঁর মনের মানুষ ‘চিৎ বা ‘আত্মা রূপে অবস্থান করছেন। এই উপলব্ধি সত্ত্বেও তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের পথে বিশাল বাধা। কূলকিনারাহীন অথই জলরাশি লালনের মনের মানুষের অধিষ্ঠিত স্থানটিকে ঘিরে আছে। এই সীমাহীন জলরাশি বাধার প্রতীক। নৌকা হল বাধা অতিক্রমের উপকরণ।সাধনার প্রস্তুতি ও ঐকান্তিকতার অভাব আছে। সাধকেরমনােবাচ্ছা তাই পূর্ণ হচ্ছে না। তার পড়শির পরিচয়ের কথা লালন কী আর বলবেন। তাঁর হাত-পা-মাথা-ঘাড় কিছু নেই। তিনি দেহহীন নিরাকার। সাধকের পড়শি ক্ষণেকের জন্য শূন্যে থাকেন, আবার ক্ষণেকের জন্য থাকেন জলে ভাসমান। মনের মানুষ ও ভক্তবাউল সাধকের মধ্যেমান-অভিমানের লুকোচুরির• ফলে এই বিভ্রান্তি। লালনের আক্ষেপ হল, পড়শি যদি তাঁকে স্পর্শ করত, তাহলে যমযন্ত্রণার কষ্ট তাঁকে পেতে হত না। অথচ পড়শি আর লালন একত্রে থাকেন। কিন্তু তাঁদের উভয়ের মধ্যে লক্ষ যােজন ব্যবধানের কারণ হল, সাধকের ভাবাধিক্যের ফলে। দেহ আর চেতনার মধ্যে গড়ে উঠেছে এই বিশাল ফারাক।‘বাড়ির কাছে আরশিনগর বাউল গানটির নামকরণের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কল্লো।

:

ভূমিকা : বাউল সাধক লালন ফকিরের গানের পদগুলি সংখ্যার দ্বারা চিহ্নিত। তিনি কোনাে পদেরই নাম

দেননি। পাঠ্য হিসেবে গৃহীত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর' পদটির নামকরণ করেছেন পাঠ্যপুস্তকের সংকলকগণ। তাঁরা গানের প্রথম স্তবকের দ্বিতীয় চরণ বা পঙক্তিটিকে নামকরণ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গানের ভাববস্তুর সঙ্গে নামকরণের সংগতি রক্ষা যথাযথ ও সার্থক হয়েছে কি না, তা বিচার্য বিষয়।

বিষয়-সংক্ষেপ : ভাবতন্ময় সাধক লালন তখন ‘মনের মানুষ’-এর খোঁজে বড়ােই ব্যাকুল। কিন্তু তাঁর মনের মানুষকে একদিনের জন্যও দেখতে না পাওয়ার খেদ ছিল তাঁর অভিমানী সাধকমনে। অথচ তাঁর মনের মানুষ তাঁর বাড়ির কাছে। আরশিনগরের বাসিন্দা। সেই অর্থে খুব কাছের পড়শি। কিন্তু তাঁর দর্শন লাভের পথে বাধা হল সীমাহীন অথই জলরাশি। তা পার হওয়ার জন্য নৌকা নেই। তাঁর আরাধ্য মনের মানুষ নিরাকার। সাধক আর তাঁর আরাধ্যের মধ্যে মান-অভিমানের লুকোচুরি চলছে বলে সাধক লালন তাঁর আরাধ্যকে কখনও শূন্যে, কখন বা জলে ভাসমান দেখছেন। তাঁর আরাধ্য পড়শি যদি তাঁকে একবার স্পর্শ করতেন, তাহলে যমযন্ত্রণা থেকে তিনি অব্যাহতি পেতেন। সাধক ও আরাধ্য উভয়ে একত্রে থাকলেও তাঁদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফারাক। নামকরণের যৌক্তিকতা : কাজেই দেখা গেল, লালনের বাড়ির কাছে আরশিনগরকে ঘিরে গানের ভাববস্তু আবর্তিতআরশিনগরের পড়শি হলেন ভাববস্তুর বীজ। কেন্দ্রীয় বিন্দু। ভাববস্তুর সঙ্গে নামকরণের সংগতি এখানেই। কাজেই কবিতার। নামকরণ শুধু যুক্তিযুক্ত নয়, যথাযথ ও সার্থক।



9.8 বাউলৱ সংক্ষিপ্ত পরিচয়সহ বাউল সাধনা ও বাউল গানের বিৈশষ্ট্য আলােচনা করাে।10+27

বাউল নামের উৎপত্তি, বাউল মতাদর্শ :বাতুল, ব্যাকুল, আউল—শব্দগুলির মধ্যে যে-কোনাে একটি থেকে

‘বাউল’ শব্দ এসেছে। সমাজের বাঁধাধরা নিয়মকানুন ও গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে বাউলরা বাঁধা থাকেন না তাঁরা প্রচলিত ধর্ম, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, জাতপাত, শ্রেণিগত ভেদাভেদ প্রভৃতি বিশ্বাস করেন না। মনের মানুষ’-এর খোঁজে এঁরা ব্যাকুল। তাঁর প্রেমে এঁরা মাতাল। সমাজসংসারের বাস্তব জীবনের বাইরে এরা উদাসীন ভক্ত। বাউল মতাদর্শ এঁদের সাধনা। সেই সাধনালব্ধ ভাবাবেশের প্রকাশ হল এঁদের বাউল গান। অনুযায়ী. মুক্ত মনের সাধক, মনের মানুষের জন্য ব্যাকুলতা : বাউলরা সহজিয়া দেহতত্ত্ববাদে বিশ্বাসী। হিন্দু, মুসলমান, শৈব,শাক্ত যে-কোনাে মতের বাউল হােন না কেন, সাধনের মূল তত্ত্বে সকলে এক। এঁদের মতাদর্শ উদার। এঁরা সকলে মুক্ত মনের সাধক। এরা মানবপ্রেমের পূজারি। এঁদের কণ্ঠে মানবতার জয়গান। মনের মানুষ’-এর জন্যে এঁদের ব্যাকুলতার শেষ নেই। একতারা বাজিয়ে এঁরা এঁদের এই ব্যাকুলতার সুর মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছিয়ে দেন। লােকসংগীতের নিদর্শন । বাউল গান বাংলার লােক-সংগীতের অন্যতম নিদর্শন। বাংলা সাহিত্যের উৎকৃষ্ট সম্পদ।এই গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দু-মুসলমানের কণ্ঠ মিশেছে, কোরাণে-পুরাণে ঝগড়া বাধেনি।


(উত্তর :

9.6‘আমি বা করি দেখব তারি/ আমি কেমনে সে গায় যাই ৱে।—উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ আলােচনা কৱে অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করাে।

উৎস : বিখ্যাত বাউল সাধক লালন ফকিরের লেখা একটি জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত গান হল বাড়ির কাছে

আরশিনগর'। উদ্ধৃতাংশটি উক্ত গানের ষষ্ঠ ও সপ্তম চরণ। প্রসঙ্গ : লালন তখন বাউল সাধনার প্রস্তুতি স্তরে ভাবতন্ময়। তাঁর আরাধ্য হলেন ‘মনের মানুষ। তাঁরই খোঁজে তিনি তখন ব্যাকুল। তাঁর মনের খেদ হল তিনি তাঁকে একদিনও দেখতে পান না। অথচ তিনি থাকেন তাঁর বাড়ির কাছে আরশিনগরে। কাজেই তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। তাঁর মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের বাধা হল কূলকিনারাহীন জলরাশি যা গ্রামখানিকে ঘিরে আছে। জলরাশি পার হওয়ার কোনাে নৌকাও নেই। সাধকের মনােবাঞ্ছ তাই পূর্ণ হচ্ছে না।

অন্তর্নিহিত অর্থ : সাধনার প্রস্তুতিস্তরে লালন দেখছেন আরাধ্য মনের মানুষের সঙ্গ লাভের পথে বিশাল বাধা। বাধার প্রতীক হল কূলকিনারাহীন বিশাল জলরাশি। এ বাধা সাধকের সাধনপথের বাধা। জলরাশি পার হওয়ার উপকরণ হল জলযান নৌকা। কিন্তু নৌকা নেই। তার অর্থ, সাধকের সিদ্ধিলাভের উপযােগী একনিষ্ঠ সাধনার প্রস্তুতি এখনও পুরােপুরি সারা হয়নি প্রকৃতপক্ষে পদটি ভক্ত বাউল সাধকের ‘প্রবর্তের প্রবর্ত' অর্থাৎ আরাধ্য ‘মনের মানুষ অনুসন্ধান বা প্রস্তুতি পর্যায়ের পদ।



0.50 ‘আমি বা কৱি দেখব তাৱি— কাকে দেখতে চাওয়াৱ বা করছেন বক্তা তাৱ দর্শন কীভাবে পাওয়া যাবে?(নমুনা প্রশ্ন, '১৪] [১+8]

বক্তা বাউল সাধক লালন ফকির তাঁর কাঙ্ক্ষিত মনের মানুষ, যিনি আরশিনগরে বসত-করা পড়শি, তাঁকে দেখতে চান।

মনের মানুষকে একদিনও দেখতে না পাওয়ার খেদ আছে।বাউল সাধক লালনের মনে। অথচ বাড়ির কাছে আরশিনগরে তাঁর বাস। সেই সূত্রে লালনের মনের মানুষ তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। প্রকৃতপক্ষে বাউল সাধক লালনের বােধবুদ্ধির মধ্যে তার মনের মানুষ ‘চিৎ’ বা ‘আত্মারূপে অবস্থান করছেন, এই

উপলব্ধি সত্ত্বেও তার দেখা পাচ্ছেন না। কারণ মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের পথে বিশাল বাধা। কূলকিনারাহীন অথই জলরাশি লালনের মনের মানুষের অধিষ্ঠিত গ্রামখানিকে ঘিরে আছে। ওই সীমাহীন জলরাশি বাধার প্রতীক। নৌকা হল বাধা অতিক্রম করে যাওয়ার উপকরণ। তার দ্বারা অর্থাৎ, সাধনা, নিষ্ঠা

ও ঐকান্তিকতার দ্বারা বাধা অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত মনের মানুষের দর্শনলাভ সম্ভব।


প্রশ্ন ৩,১65 “তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”—কাৱ সঙ্গে এই ব্যবধান? একত্র থেকেও এই ব্যবধানের তাৎপর্য কী?[ একাদশ, '১৪] {১+৪}

অথবা, “তবু লক্ষ যােজন ফঁাক ৱে”—কাদের মধ্যে লক্ষ যােজন কঁাক? একত্র থেকেও এই দূরত্বের কারণ কী? [একাদশ, '১৭] [১+৪}

উত্তর : পড়শি আর লালন উভয়ের মধ্যে লক্ষ যােজন ব্যবধান ব্যবধানের তাৎপর্য : লালনের পড়শি হলেন তাঁর মনের মানুষ'। লালন হৃদয় উজাড় করে তাঁকে ভালােবাসেন। হাসিকান্নার খেলাও চলে তাঁর সঙ্গে। কখনও বা দেখা দিয়ে ওহে রসুল ছেড়ে যেও না' বলে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন লালন। ভক্ত- ভগবানের এই যে পরস্পরের ভালােবাসা, তার মধ্য দিয়ে যে প্রেম ভাব, তাতে কবি লালন পড়শিকে দেখতে না পেলে উতলা

হয়ে বলেন, 'আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’ অথচ পড়শি বা লালনের ‘মনের মানুষ তাঁর কাছাকাছি আরশীনগরে অর্থাৎ তাঁর বােধবুদ্ধির মধ্যে চিৎ' বা আত্মারূপে বিরাজ করছেন। এভাবে পড়শি আর লালন একত্রে থাকেন। সেই অর্থে ভক্ত ও ভগবান একাত্ম। তবু তাঁদের উভয়ের মধ্যে আছে লক্ষ যােজন ব্যবধান। আসলে দেহ ও চেতনা (পড়শি) একত্রে থাকে বটে, কিন্তু দেহকে সাধনায় পৃথক দেখা যায়। যার নাম স্বরূপদর্শন। প্রকৃতপক্ষে ভাবাধিক্যে দেহ আর চেতনার মধ্যে সৃষ্টি হয় লক্ষ যােজন ব্যবধান।


প্রশ্ন ৩.১৫ ‘বলবো কী সেই পড়শিৱ কথা” –‘পড়শি’ কে? উক্তিটির আলােকে ‘পড়শি’ৱ স্বরুপ সম্পর্কে

আলােচনা করাে।[একাদশ, '১৫] [১+৪]

উত্তর : পড়শি হলেন বাউল লালনের ‘মনের মানুষ 

প্রসঙ্গ : মনের মানুষকে দেখার বাসনা ভক্তসাধক বাউল লালনের। কিন্তু কেমন করে তিনি সে গাঁয়ে যাবেন। ভক্ত নিরুপায় অসহায়তা প্রকাশিত। তবে তাঁর মনের মানুষ তাে তাঁর নিকটতম পড়শি। সেই পড়শির কথা তিনি কী আর বলবেন। তাঁর হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছুই নেই। তিনি মুহূর্তের

জন্য শূন্যে থাকেন, আবার মুহূর্তের জন্য জলে ভাসেন। ‘শূন্য’ ও ‘নীৱ’ আক্ষৱিক ও বাউলে ব্যবহূত অর্থ : ‘শূন্য’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘খালি’, ‘ফাঁকা। লালনের বাউলগানে ব্যবহৃত হয়েছে ‘আকাশ’ বা ‘গগন অর্থে। লালন তাঁর মনের মানুষকে মুহূর্তের জন্য দেখেছেন নিঃসীম শূন্যে অর্থাৎ গগনে। ‘নীর’-এর আক্ষরিক অর্থ ‘জল। লালন যে পড়শির কথা বলেছেন তিনি পঞ্চভূতে অর্থাৎ মাটি, জল, বাতাস, আগুন ও আকাশ সর্বত্র বিরাজমান। সেজন্য মুহূর্তের জন্য তাঁকে লালন দেখেন জলে ভাসমান অবস্থায়।

অন্তর্নিহিত অর্থ : সাধক লালনের পড়শিই হলেন তাঁর আরাধ্য মনের মানুষ। তিনি তাঁর কী বা ব্যাখ্যা করবেন। হাত- পা-কাঁধ-মাথা-দেহের এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়েই তাে শরীর। এসবের কিছুই তাঁর নেই। তিনি বিদেহী। নিরাকার। পড়শি যদি ‘চিৎ’ বা ‘আত্মা হন, তাহলে তাে নিরাকার বটেই। তবে মনের

মতাে পড়শিকে পেয়ে লালন তাঁর সঙ্গে খেলছেন লুকোচুরি । তারই ফাঁকে ভাবতন্ময় অবস্থায় তিনি সাধকের চোখে দৃশ্যমান হচ্ছেন চকিতে। ফলে সাধক তাঁকে কখনও দেখছেন শূন্যে,আবার কখনও দেখছেন জলে ভাসমান অবস্থায়। কিন্তু সবই ক্ষণকালের চকিত দর্শন।


প্রশ্ন ৩.১৬ “আমি বা কার দেখব তার”-বক্তা কাকে দেখতে চান? কীভাবে তাঁর দর্শন পাওয়া যাবে?

[একাদশ, ১৬, ১৮][১+8

উত্তর : উদ্ধৃত উক্তির বক্তা হলেন বাউল সাধক লালন ফকির।লালন তখন বাউল সাধনার প্রস্তুতিস্তরে ভাবতন্ময়। তাঁর আরাধ্য হলেন ‘মনের মানুষ। তাঁরই খোঁজে তিনি তখন ব্যাকুল। ] তাঁর মনের খেদ হল তিনি তাঁকে একদিনও দেখতে পান না। অথচ তিনি থাকেন তাঁর বাড়ির কাছে আরশিনগরে। কাজেই

তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিবেশী। তাঁর মনের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের বাধা হল কূলকিনারাহীন জলরাশি যা গ্রামখানিকে ঘিরে আছে। জলরাশি পার হওয়ার কোনাে নৌকাও নেই। সাধকের মনােবাঞ্ছ তাই পূর্ণ হচ্ছে না। সাধনার প্রস্তুতিস্তরে লালন দেখছেন আরাধ্য মনের মানুষের সঙ্গ লাভের পথে বিশাল বাধা। বাধার প্রতীক হল কূলকিনারাহীন বিশাল জলরাশি। এ বাধা সাধকের সাধনপথের বাধা। জলরাশি পার হওয়ার উপকরণ হল জলযান নৌকা। কিন্তু নৌকা নেই। তার অর্থ, সাধকের সিদ্ধিলাভের উপযােগী একনিষ্ঠ সাধনার প্রস্তুতি এখনও পুরােপুরি সারা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পদটি ভক্ত বাউল সাধকের ‘প্রবর্তের প্রবর্ত অর্থাৎ আরাধ্য ‘মনের মানুষ অনুসন্ধান বা প্রস্তুতি পর্যায়ের পদ।


১। “তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে”—কার সঙ্গে এই ব্যবধান? একত্র থেকেও এই ব্যবধানের তাৎপর্য কী? 

উত্তর লালন ফকির রচিত ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় যে ব্যবধানের কথা বলা হয়েছে তা কবির সঙ্গে আরশিনগরে থাকা কবির ‘পড়শি’র মধ্যেকার ব্যবধান। কবির এক ‘পড়শি' আছেন। যিনি আরশিনগরে বাস করেন, কিন্তু কবির সঙ্গে তাঁর কোনোদিন দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। কবির প্রচণ্ড মনোবাসনা থাকলেও সেই পড়শির চারধার জলবেষ্টিত হওয়ায় এবং সেই স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো সাঁকো বা নৌকা না থাকায় সেখানে পৌঁছানো কবির পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেই পড়শিও অদ্ভুত। তার হাত-পা-কাঁধ-মাথা নেই, কখনও শূন্যে, আবার কখনও জলে ভাসমান থাকেন। সেই পড়শি অত্যন্ত গুণবান। তিনি কবিকে একবার ছুঁলে কবির যমযন্ত্রণা দূর হয়ে যেত। এই সরলার্থের পেছনে রয়েছে মরমিয়া সাধক বাউলের ঈশ্বরপ্রাপ্তির গূঢ় সাধনতত্ত্ব। ভক্ত-কবির পড়শি হলেন ভগবান। আরশিনগর কোনো গ্রাম নয়, ভক্ত-কবির হৃদয়কমল, পড়শি হলেন সেই ‘কমলের’, ‘মনের মানুষ’। তিনি ক্ষিতি, অপ, মরুৎ, তেজ, ব্যোম–বিশ্বচরাচরে তাঁর অবস্থান।এই ভগবান নিরাকার, তাঁর হাত-পা-কাঁধ-মাথা কিছুই নেই, তিনি “অচক্ষু সর্ব্বত্র চান/অকর্ণ শুনিতে পান/অপদ সর্ব্বত্র গতাগতি।” এই পৃথিবীতে খুব কষ্ট করেই বেঁচে থাকতে হয়। এই ভবযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যন্ত্রণামুক্ত হতে চাইলে সেই পড়শি তথা পরমাত্মার স্পর্শ পেতে হবে। কিন্তু তা পাওয়া

সহজ নয়, রিপু দমনের মাধ্যমে অনেক কৃচ্ছ্রসাধনা ও ভগবৎ অনুশীলন করতে হবে, তবেই জীবাত্মা-পরমাত্মার মিলন ঘটবে। কিন্তু কবির ক্ষেত্রে এরকম কিছুই ঘটছে না। তাই কবি

বলেছেন : “আবার সে আর লালন একখানে রয় তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে।”


॥ ২॥ ‘যমযাতনা’ কী? তা কীভাবে দূর হবে?

উত্তর কবি লালন ফকির তাঁর ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় ‘যমযাতনা' প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন। ‘যম’ হলেন ‘মৃত্যুর দেবতা’ এবং ‘যাতনা’ শব্দটির অর্থ হল ‘যন্ত্রণা’। তাই ‘যমযাতনা’ কথাটির অর্থ হল মৃত্যুযন্ত্রণা। একে ‘ভবযন্ত্রণা’ও বলা যেতে পারে। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা এক কষ্টকর ব্যাপার। কবির জীবনে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। কবি নীলাচলে যাওয়ার পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সমীপবর্তী হয়ে পড়েন। সব আত্মীয়স্বজন তাঁকে ত্যাগ করে চলে যায়। এক মুসলমান দম্পতি ‘ফ্যারিস্তা’র মতো আবির্ভূত হয়ে কবিকে সে যাত্রা রক্ষা করেন। ঈশ্বরের অসীম, অপার করুণা ছাড়া এই ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। তাই ‘যমযাতনা’ হল মৃত্যুযন্ত্রণা বা ভবযন্ত্রণা। কবি তাঁর জীবনে ‘যমযাতনা’ ভোগ করছেন। এই যাতনা বেঁচে থাকার জন্য কষ্টকর প্রয়াস। এই ভবযন্ত্রণা মৃত্যুযন্ত্রণারই নামান্তর। আবার মৃত্যুযন্ত্রণাকে অতিক্রম করতে না পারলে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করাও অসম্ভব। বাড়ির পাশেই আরশিনগরে অর্থাৎ কবির মনে ‘পড়শি’ অর্থাৎ ‘মনের মানুষ’-এর বাস। কবিসেই পড়শিকে কোনোদিন চোখে দেখেননি। কবির খুব ইচ্ছে মনের সঙ্গে মনের মানুষের সংযোগ ঘটানো। অর্থাৎ জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন ঘটানো, কিন্তু কবি জানেন সেই মনের মানুষের ক্ষমতা কীরকম। সেই ‘মনের মানুষ’ তথা ‘পরমেশ্বর’ তথা ‘পড়শি’ কবিকে স্পর্শ করলেই কবির ‘যমযাতনা’ দূর হয়ে যাবে। তাই কবি বলেছেন :

“পড়শী যদি আমায় ছুঁত আমার যম-যাতনা যেত দূরে।”



৩। পাঠ্য লালনগীতিতে বাউলসাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে, তা সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ একটি অত্যন্ত সুন্দর লালনগীতি। অন্যান্য লালনগীতির মতো এই গীতিটিতেও বাউল সাধনার গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রথমেই জানা দরকার বাউল কী এবং বাউল কাকে বলে। 'বাউল'শব্দটি ‘বাতুল’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ আক্ষরিকভাবে হল ‘ঈশ্বরপ্রেমে পাগল'। অর্থাৎ বাউল হল পাগল বা বায়ুগ্রস্ত। ‘বায়ু’ শব্দের সঙ্গে ‘আছে’—এই অর্থযুক্ত ‘ল’ প্রত্যয় যুক্ত করায় শব্দটি হয়েছে বাউল। মরমিয়া সাধক হলেন এই বাউল সম্প্রদায়ের মানুষ। বাউলের সাধনায় বেশ কিছু গুহ্যতত্ত্ব আছে। যেমন—

(১) বাউল হলেন ঈশ্বরপ্রেমে পাগল, তাঁর অন্য কোনো কামনা বাসনা নেই, শুধুমাত্র ঈশ্বর দর্শন ও ঈশ্বর প্রাপ্তিতাঁর জীবনে মুখ্য। তাই লালন বলেন— “আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি

আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে।” (২) বাউলেরা শাস্ত্র-আচার, লোক-আচার, সমাজ-বিধি মানেন না, প্রচলিত সংসারধর্ম পালন করেন না। (৩) বাউল জাতিভেদপ্রথা মানেন না। (৪) বাউল মূর্তিপূজার বিরোধী। তাই মন্দির-মসজিদে  দেবতা আছেন বলে বাউল বিশ্বাস করেন না। (৫) বাউল সাধনার উপায় হল সহজ দেহধর্ম, তাই বাউলহলেন সহজিয়া।(৬) বাউল নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তাই পাঠ্য কবিতায় লালনকে বলতে শুনি—

“ও তার হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে।” (৭) বাউল দেহতত্ত্বের কথা বলে দেহাতীত ‘মনের মানুষ’কে খোঁজেন।(৮) বাউলের সাধনা মর্মানুসারী, তাই তাঁরা ‘মরমিয়া’।

(৯) প্রেমই এই সাধনার প্রধান বিষয়। (১০) বাউল লোকগাথা ও লোকধর্ম প্রচার করে। ড. শশিভূষণ দাশগুপ্ত বলেছেন : "In the conception of the 'Man of the Heart' of the Bauls, we find a happy mixture of the conception of the paramatman of the Upanishads, the Sahaja of the Sahajiyas and the Safistic concep-tion of the beloved."


॥ ৪। বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় ‘পড়শি’র স্বরূপ বর্ণনা করো।

কবির বাড়ির একেবারে কাছেই আরশিনগর এবং সেখানে কবি লালন ফকিরের নিকটতম প্রতিবেশী বাস করেন কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার—কবি সেই প্রতিবেশীকে কোনোদিন দেখতেই পেলেন না। আরশিনগরকে ঘিরে তথা বেষ্টন করে জল থৈ থৈ অবস্থা, তার না আছে পাড়, না সে জলে নৌকা চলে। তাই প্রচণ্ড বাসনা থাকলেও কবি আরশিনগর গ্রামে যেতে পারেন না, প্রতিবেশীর দেখা পান না। সেই প্রতিবেশীটির আবার হাত-পা-কাঁধ মাথা—কিছুই নেই। সে কখনও আকাশে ভাসে, আবার কখনও ভাসে জলে! কবির যে জীবনযন্ত্রণা, কবির যে মৃত্যুযন্ত্রণা—তা এক লহমায় দূর হয়ে যেত যদি সেই প্রতিবেশী কবিকে ছুঁত। এত কাছে কবি ও তাঁর প্রতিবেশী থাকেন, অথচ কবি তাকে দেখতেও পাননি, ছুঁতেও পাননি, এত কাছে অথচ সে কত দূরে, যেন দুজনের মধ্যে ব্যবধান লক্ষ যোজনের।  প্রশ্ন জাগে, কে এই প্রতিবেশী? তাকে দেখা যায় না কেন? সে কীভাবে শূন্যে ও জলে ভেসে থাকে? তার সেই অধীত বিদ্যাটি কী, যার সাহায্যে তিনি স্পর্শ করলেই কবির ‘যমযন্ত্রণা’ দূর হয়ে যাবে? এত কাছে থেকেও সে এত দূরে কেন? এই প্রতিবেশী আসলে কোনো সাধারণ মানুষ নন, কবির ‘দেবতা’ তথা মনের মানুষ। বাউলের সাধনা নিরাকার ব্রষ্মের সাধনা, দেহকে কেন্দ্র করে দেহাতীতে যাত্রাসীমায় থেকে অসীমকে ধরার বাসনা। ‘আরশিনগর’ বলে কিছু নেই, সেটা আসলে হল কবির হৃদয়, মনের মন্দির, সেখানে নিরাকার ‘পড়শি’র বাস। তিনি অতিরিক্ত ক্ষমতার অধিকারী, তাই শূন্যে বা জলে ভেসে থাকতে পারেন। ঈশ্বরকে সহজে ধরা বা ছোঁয়া যায় না, তার জন্য প্রচুর সাধনা করার প্রয়োজন। কবির বাঞ্ছা মনের মধ্যে মনের মানুষকে পাওয়া, কিন্তু কবি তা পাচ্ছেন না, তাই কবির মনের ‘যমযন্ত্রণা’ দূর হচ্ছে না, কবির মনের সঙ্গে তাঁর মনের মানুষের মিলন হচ্ছে না, লক্ষ যোজন দূরত্ব থেকেই যাচ্ছে।


11.বাড়ির কাছে আরশিনগর' কবিতায় ‘নামকরণ বর্ণনা করো।

বাউল সাংসারিক মানুষ নয়। আখড়া বানিয়ে সংসার-বিবিশ্ব হয়ে সাধনসঙ্গী এবং সঙ্গিনী নিয়ে বাউল ঈশ্বর ভজনা করে। এই ঈশ্বর নিরাকার ঈশ্বর। দেহতত্ত্বের গান বেঁধে মরমিয়া সাধক বাউল দেহাতীতে যাত্রা করে। তার সাধনপথ রহস্যাবৃত। বহু সাধনায় বাউল ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হয়, কেউ কেউ আবার মিলিত হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়। বাড়ির পাশেই ‘আরশিনগর'। আসলে এটা কোনো গ্রাম নয়, কবির ‘হৃদয়মন্দির’। ‘সরাসরি’ তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সাধনায় নিশ্চয়ই কোনো ত্রুটি আছে। তাই নিজের সাধনা ঠিক হচ্ছে না ভুল-তা দেখার জন্য সামনে ‘আরশি’ অর্থাৎ আয়না ধরতে হবে, তাহলে আর ভুল হবে না। সেখানে এক ‘পড়শী’ থাকে। আসলে এই পড়শী কবির ‘ঈশ্বর’ তথা তাঁর ‘মনের মানুষ’। এই ঈশ্বর চারিদিকে জলবেষ্টিত স্থানে থাকেন, সেখানে যাবার সাঁকো নেই, নৌকোও নেই। ঈশ্বরকে পাওয়া সহজ নয়, অনেক কষ্টের পথ পেরোলে তাঁকে পাওয়া যায়। এই পড়শির হাত-পা-কাঁধ-মাথা নেই, অর্থাৎ কবির ঈশ্বর নিরাকার। এই পড়শি কবিকে একবার ছুঁলেই কবি ‘যমযন্ত্রণা’ ভুলতে পারবেন। অর্থাৎ কবি তাঁর হূৎ-কমলে মনের মানুষকে বসাতে পারছেন না, পারলে “মনবেড়িখান দিতাম তাহার পায়।” তাই বিচার শেষে বলা যায়, বাউলের সাধনধারা অনুসরণে কবিতাটির রূপকাশ্রয়ী নামকরণ সার্থক এবং সংগত।



[TAG]:   একাদশ শ্রেণি বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতা pdf,বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতা mcq,বাড়ির কাছে আরশিনগর বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণি,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা 3 নং প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা  বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা 1 প্রশ্ন উত্তর,Class 11 Bengali Kobita question in bengali,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url