একটি ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা|ekati aitihasika sthane bhramanera abhijnata prabandha rcana
একটি ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
ভূমিকা: ইতিহাস সবসময়ই আমাকে টানে। ইতিহাস পড়ার সময় মনে হয় আমি যেন আমার শিকড়ের কাছে ফিরে যাচ্ছি। অতীত রাজাদের শৌর্য-, মহানুভবতা আমাকে মুগ্ধ করে। তাই বাবা যখন বলল এবার ছুটিতে আমরা রাজস্থান বেড়াতে যাচ্ছি, আমার আনন্দের আর সীমা রইল না। রাজস্থান মানে আমার কাছে রানা প্রতাপ—যার কাছে স্বাধীনতা ও জীবন ছিল সমার্থক: রানি পদ্মিনী—আত্মসম্মান বিসর্জনের চেয়ে মৃত্যুই যার কাছে শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল। কয়েকটা দিন মশগুল হয়ে রইলাম রাজস্থানের স্বপ্নে গন্তব্য রাজস্থানঃ যােধপুর এক্সপ্রেসে রাজস্থান পৌঁছােলাম। সমস্ত রাজস্থান জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য কেল্লা, অসংখ্য প্রাসাদ। কিন্তু আমি ইতিহাসকে তার নিজস্ব রূপে দেখলাম চিতােরে আসার পর। এর আগে মেহরান গড়, সােনার কেল্লা, উদয়পুর প্যালেস, জয়পুর প্যালেস দেখেছি| ইতিহাস সেখানে বর্তমানের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে উপস্থিত। কিন্তু চিতাের ইতিহাসকে বুকে নিয়ে পড়ে আছে ঠিক সেইভাবে, যেভাবে রানা। উদয়সিংহ তাকে ফেলে চলে এসেছিলেন |
ইতিহাসের চিতাের: চিতােরগড়ে এসেই মনে হল—“হে অতীত কথা কও, কেন মিছে চেয়ে রও ...” গড় ভগ্নপ্রায়। কোথাও বিলাসব্যসনের চিহ্নমাত্র নেই, শুধু মাথা গোঁজার আস্তানা ছিল এই গড়| অভিমান ঝরে পড়ছিল আমাদের গাইড উত্তম সিং-এর গলায় বলছিলেন চিতােরের রানারা কখনও আরামে জীবন কাটাবার সময় পাননি, হয় যুদ্ধ করেছেন, নয় জঙ্গলে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়িয়েছেন| আর সুযােগ খুঁজেছেন শক্তি সংগ্রহ করে আবার আক্রমণ করার৷ চিতােরগড় সর্বতােভাবে যােদ্ধার বাসস্থান নিরাভরণ৷ কোথাও কোনাে অলংকরণ নেই। এর আগে উদয়পুর প্যালেসে আমরা দেখে এসেছি চিতােরগড়ের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি| রানা প্রতাপের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, শিরস্ত্রাণ, আত্মরক্ষার জন্য লােহার বজালিকা, রানার প্রিয় ঘােড়া চেতকের প্রতিমূর্তি। চিতােরের রানি পদ্মিনীর প্রাসাদ, তাঁর গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান দেখলাম। আলাউদ্দিন খিলজির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ১০০ জন। শহরেীকে নিয়ে জহরব্রত অবলম্বন করেছিলেন পঘিনী, সেই জায়গাটিও চিতােরগড়েই। চিতােরগড় থেকে একটু দূরে তাঁদের উদ্দেশ্যে নির্মিত। হয়েছিল ৫১ ফুট উঁচু একটি স্মৃতিসৌধ | সবই আছে সেই শৌর্যময় অতীতের ধূসর সাক্ষী হয়ে।
উপসংহার: চোখ বন্ধ করে কোনাে ঐতিহাসিক স্থানের কথা ভাবতে গেলেই আমার মনে শুধু ভেসে ওঠে চিতােরের স্মৃতি। ইতিহাসের এক ফুরিয়ে মাওয়া অধ্যায় তার রিক্ততার মধ্যেও আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে আমার সত্তায়।
অনুসরণে লেখা যায়
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ॥ রাজস্থান ভ্রমণ॥ রাজভূমি রাজস্থান