একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা|ekati gacha ekati praṇa prabandha racana
একটি গাছ, একটি প্রাণ
ভূমিকা: যুগ যুগ ধরে গাছের সঙ্গে মানুষ নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ | প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে গাছপালা পৃথিবীর বুকে রচনা করেছে 'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় বৃক্ষের প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ।তাই কখনও বৃক্ষকে মানুষ বন্দনা করেছে ভক্তিভরে, কখনও তাকে গ্রহণ করেছে বধুভাবে।রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষের উদ্দেশে বলেছেন-
“অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ
উর্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলােকের প্রথম বন্দনা।”
রবীন্দ্রনাথের এই বৃক্ষবন্দনা যেন সমস্ত মানুষের পক্ষ থেকে
গাছকাটা ও তার পরিণাম: যে গাছ মানুষের জীবনের সঙ্গেঅঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সেই গাছকেই হত্যা করার জন্য মানুষ উঠে-পড়ে লেগেছে। বাসস্থান বা কলকারখানা তৈরির জন্য তাে বটেই, সেই সঙ্গে নিছক ব্যাবসায়িক স্বার্থেও মানুষ অরণ্যকে নির্বিচারে ধ্বংস করে ফেলছে।প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য, দূষিত হয়ে উঠছে বাতাস। বিধ্বংসী বন্যা ও অনাবৃষ্টির মূলেও রয়েছে গাছ কাটার প্রভাব। সভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে সর্ডে অরণ্য-বিনাশ প্রক্রিয়া চলতে থাকায় পৃথিবী ক্ৰমশ হয়ে উঠছে।ছায়াহীন মরুভূমির মতাে।
বৃক্ষরােপণের প্রয়ােজনীয়তা : বৃক্ষরােপণ করা ছাড়া পৃথিবীকে বাঁচাবার।অন্য কোনাে উপায় নেই | গাছ কাটা বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে ভূমিক্ষয়।ভূমিক্ষয় রােধ করতে বৃক্ষরােপণ একান্ত জরুরি। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির হাতথেকে রক্ষা পেতে হলে, পরিবেশদূষণ প্রতিরােধ করতে হলে বৃক্ষরােপণ ।করতেই হবে। আমরা যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়ি, গাছ তা শুষে নেয়।তার পরিবর্তে সে আমাদের দেয় অক্সিজেন| একটি গাছ তার জীবনে যে পরিমাণ অক্সিজেন দেয় তার মূল্য অপরিসীম। এইজন্যই বলা হয় একটি গাছ একটি প্রাণ’ | বৃক্ষ মানুষের যে আরও কত কাজে লাগে তা বলে শেষ করা যায়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান—এই তিনটি ক্ষেত্রেই মানুষ বৃক্ষের কাছে নানাভাবে ঋণী। মূল্যবান ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রেও বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। বিজি ঋতুতে বৃক্ষের সৌন্দর্যে মানুষের সৌন্দর্যপিপাসা মেটে। অরণ্যপ্রকৃতির শান্ত রূপ মানুষের মনে মিঃধ শান্তির ছোঁয়া এনে দেয়। তাই নিজের স্বার্থেই মানুষকে গাছ লাগাতে হবে।
বৃক্ষরােপণের উদ্যোগ: ভারতের ইতিহাস পাঠ করলে জানা যায় অশােক,হর্ষবর্ধন, আকবর প্রমুখ সম্রাট পথের দু-ধারে বৃক্ষরােপণের ব্যবস্থা করতেন। রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষরােপণের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে শান্তিনিকেতনে শুরু করেন বৃক্ষরােপণ উৎসব। ১৯৫০ সাল থেকে ভারত সরকার বনমহােৎসব বা বৃক্ষরােপণ উৎসব পালনের ব্যবস্থা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ,ভূমিক্ষয়রােধ, বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখা প্রভৃতি হল এই উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য। বর্তমানে পঢ়ায়েতের প্রচেষ্টায় গ্রামাঞ্চলের বন্ধু রাস্তার দুপাশে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানাে হয়েছে | ব্লক অফিসগুলি থেকে প্রতিবছরই সাধারণ মানুষের মধ্যে গাছের চারা বিতরণেরও ব্যবস্থা করা হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং ক্লাবের পক্ষ থেকেও বৃক্ষরোপণের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কাজেই বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যে একটা সার্বিক উৎসাহ দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।
উপসংহার: শুধু গাছ লাগানাে নয়, গাছকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় হওয়া প্রয়ােজন না হলে বৃক্ষরােপণ কেবল একটি প্রথা বা উৎসব মাত্র হয়ে থাকবে।বৃক্ষরােপণ আজ মানুষের কাছে আত্মরক্ষারই অন্য নাম। মানুষই পারে এই পৃথিবীর বুকে মরুবিজয়ের পতাকা ওড়াতে
অনুসরণে লেখা যায়
পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্য এ বৃক্ষরােপণ অভিযান