গুরু প্রশ্ন উত্তর PDF |একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ গুরু প্রশ্ন উত্তর PDF

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গুরু একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থর প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ গুরু প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 11 Bengali guru question in bengali pdf

গুরু প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ গুরু প্রশ্ন উত্তর |গুরু একাদশ শ্রেণি


আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি একাদশ শ্রেণির বাংলা গুরু প্রশ্ন উত্তর PDFclass 11 Bengali guru question Pdf | WB Class nine Bengali question pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য একাদশ শ্রেণি বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।


তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |একাদশ শ্রেণি বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ গুরু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class xi Bengali Question Pdf  ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।


‘গুরু’ একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

গুরু mcq প্রশ্ন


একাদশ শ্রেণি বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]

একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ গুরু 1 নং প্রশ্ন উত্তর

গুরু বড় প্রশ্ন উত্তর,

একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ 5 নং প্রশ্ন উত্তর

অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

প্রশ্ন ১.১ রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘গুৱ’ নাটকের উৎস নির্ণয় করাে।

উত্তর : ‘অচলায়তন' নাটকটিকে অভিনয়ের উপযােগী সহজ করার উদ্দেশ্যে নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ নাটকটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে, কিছুটা লঘুতর করে নতুন রূপ দেন। নাটকটির নাম দেন

‘গুরু'। ‘গুরু' নাটকের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ছােট্ট একটি বাক্যে লিখেছেন, “সহজে অভিনয় করিবার অভিপ্রায়ে অচলায়তন নাটকটি ‘গুরু' নামে এবং কিঞ্চিৎ রূপান্তরিত এবং লঘুতর আকারেপ্রকাশ করা হইল।” ‘অচলায়তন' নাটকটি লেখা হয়েছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মে-জুন মাসে। ওই বছরই প্রবাসীর আশ্বিন সংখ্যায় ‘অচলায়তন প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ২ আগস্ট১৯১২ খ্রিস্টাব্দে। ‘অচলায়তন প্রকাশের প্রায় পাঁচ বছর পরে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ‘অচলায়তন'-এররূপান্তরিত ও নতুন নাট্যরূপ ‘গুরু' রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। ‘অচলায়তন’-এর ছাপা একখানা বইয়ের ওপর পরিমার্জন করে ওপ্রয়ােজনে সাদা কাগজে লিখে নাট্যরূপটি গড়ে তােলা হয়। গুরুনাটকের সম্পূর্ণ অংশটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে একাদশ শ্রেণির পাঠ্য করা হয়েছে


১। ‘গুরু’ নাটকের কাহিনি সংক্ষেপে লেখো। অথবা,‘গুরু’ নাটকের ভাববস্তু বিশ্লেষণ করো।

অথবা, ‘গুরু’ নাটকের কাহিনি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর রবীন্দ্রনাথের নাট্যসাহিত্য রবীন্দ্র-রচনা-রূপ বনস্পতিরই অংশ। তাঁর রূপক-সাংকেতিক নাটক হল-

‘অচলায়তন’ (১৯১১)। এই নাটকের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ‘গুরু’ নাটকটি প্রকাশিত হয়।‘গুরু’ নাটকে চারটি দৃশ্য আছে। যেমন—প্রথম দৃশ্যটির নাম হল ‘অচলায়তন’, দ্বিতীয় দৃশ্যটির নাম হল ‘পাহাড় মাঠ', তৃতীয় দৃশ্যটির নাম হল ‘দৰ্ভকপল্লী’, চতুর্থ দৃশ্যটির নাম হল

‘অচলায়তন’। প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়, অচলায়তনে গুরুর আগমন সংবাদে বালক ছাত্রদলের মধ্যে একটা তাড়াহুড়ো দেখা যায়। অন্য বালকেরা যেখানে অচলায়তনের সমস্ত নিয়মকানুন অনুসরণ করে, পঞ্ক সেই নিয়মকানুনকে প্রতি পদে পদে অগ্রাহ্য করে।ইতিমধ্যে একটি ঘটনা ঘটে, সেটি হল সুভদ্র নামে একটি বালক অচলায়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরেটা দেখে ফেলেছে—যা আয়তনের নিয়মবিরুদ্ধ কাজ। আচার্য সুভদ্রকে রক্ষা করতে কৃতসংকল্প হন। এরপর আচার্যকে কঠোরপন্থীদের কোপে পড়তে হয়। উপাধ্যায় ও মহাপঞ্চক তাঁকে আচার্যের পদ থেকে অপসারিত করে দর্ভক পাড়ায় নির্বাসন দেন। দ্বিতীয় দৃশ্যে ‘পাহাড় মাঠ'-এ পঞ্চকের গানে যেন কার আগমন বার্তা ধ্বনিত হয়েছে।

পঞক যূনকদের সঙ্গে বিনা দ্বিধায় মেলামেশা করে। এরা শ্রমজীবী। প্রকৃতিরাজ্যে অবাধ স্বচ্ছন্দ বিচরণ। প্রথম যূনক বলে ওঠে- “আমরা চাষ করি আনন্দে। মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে।” তৃতীয় দৃশ্যে ‘দর্ভকপল্লী’-তে আমরা দেখি,নিয়মবিরুদ্ধ কাজের জন্য পঞ্চককে দর্ভকপাড়ায় নির্বাসিত করা হয়েছে।

আচার্য দর্ভকদের পাড়ায় নির্বাসিত হয়ে তাদের সঙ্গে গভীরভাবে মিশতে চান। এরপর গুরু অচলায়তনের দ্বার খুলতে চলে যান।চতুর্থ দৃশ্য ‘অচলায়তন'। এখানে যূনক ও দর্ভকরা একযোগে অচলায়তন ভাঙতে শুরু করে। মহাপঞক তখনও পর্যন্ত পুরাতন নিয়মতন্ত্র আঁকড়ে ধরে থাকতে চান এবং গুরুকে তিনি মেনে নিতে অস্বীকার করেন। গুরু তখন যোদ্ধার বেশে মহাপঞ্ককে অবনত করাতে চান। সকলেই কাল পরিবর্তনকে স্বীকার করে নেন, চারিদিক থেকে মুক্তির হাওয়া অচলায়তনে এসে প্রবেশ করে। যূনক ও দর্ভকরা একযোগে গুরুকে প্রদক্ষিণ করে গান গায়— এসেছ জ্যোতির্ময়,

তোমারি হউক জয়।”

“ভেঙেছ দুয়ার


৷ ২৷ ‘গুরু’ নাটকের নামকরণের সার্থকতা বিচারকরো।৫

উত্তর সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ, নামকরণের মধ্যে রচয়িতা তাঁর বিশেষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেন। বিষয়বস্তু অনুসারে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যকর্মের নামকরণ করা পছন্দ করতেন না। কারণ, তাঁর মতে বিষয়, চরিত্র, ভাষা, রস, সব মিলিয়ে সাহিত্য একটি অখণ্ড সৃষ্টি। ‘গুরু’ নাটকেরনামকরণের ব্যাপারে প্রথমে লক্ষ রাখতে হবে ‘গুরু’ নাটকের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ ‘অচলায়তন’। এই নাটকের নামকরণ পরিবর্তন করে তার খণ্ড অংশ তুলে ধরে ‘গুরু’ নামকরণ কতটা সার্থক হয়েছে তা দেখতে হবে। ‘গুরু’ নাটকের চারটি দৃশ্য। অচলায়তনের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা কতকগুলি অসার অন্তঃসারশূন্য মন্ত্র উচ্চারণ করে চলে আসছেন—যার কোনো বাস্তবতা বা সত্যতা নেই। প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখি অচলায়তনের ভিতরে শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধের নিষ্প্রাণ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গুরুর আগমন বার্তা এসে পৌঁছোয়। সকলে গুরুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ব্যস্তহয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখি, পঞ্চকের সঙ্গে যূনকদের কিছু কথাবার্তা। পরে দাদাঠাকুর আসেন। আসলে এই দাদাঠাকুরই ‘গুরু’। পঞ্ক তাদের সঙ্গে যেতে চাইলে দাদাঠাকুর তাঁকে বাধা দিয়ে বলেছেন—“না পঞ্চক, তোমার গুরু আসবেন, তুমি অপেক্ষা করো গে।” আসলে পঞ্চক জানেই না যে, এই দাদাঠাকুরই তাদের গুরু। নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে আচার্যের সঙ্গে দর্ভকদের কিছু কথাবার্তা হয়। এরপর দাদাঠাকুরের আগমন ঘটে। তখন সবাই বুঝতে পারে দর্ভকদের গোঁসাই, যূনকদের দাদাঠাকুর এবং

অচলায়তনের গুরু একই ব্যক্তি। পঞ্চক তাঁকে ওই তিনটি নামের মধ্যে কোন্ নামে ডাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন—“যে জানতে চায় না যে, আমি তাকে চালাচ্ছি আমি তার দাদাঠাকুর, আর যে আমার আদেশ নিয়ে চলতে চায় আমি তার গুরু।” নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে অচলায়তনের প্রাচীর ও দরজা ভেঙে মাটিতে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে যোদ্ধার বেশে দাদাঠাকুর অর্থাৎ, গুরু এলে মহাপঞক তাঁকে মানতে চাইলেন না। তখন দাদাঠাকুর বলেছেন—“ এই তো তোমার গুরুর বেশ। তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে—সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা।”নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘অচলায়তন’ নাটকের নামকরণের ক্ষেত্রে জড়তা, স্থবিরতাকে প্রধান্য দিয়েছিলেন। এই নাটকের মূল কেন্দ্রবিন্দু গুরু, নাটকের সমস্ত ঘটনা গুরুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ও বিবর্তিত হয়েছে। সেদিক থেকে এই নাটকের

নামকরণ অত্যন্ত সার্থক হয়েছে।


প্রশ্ন ১.৪৬ নাট্যকাৱ ৱবীন্দ্রনাথ ঠাকুৱেৱ ‘গুরু’ নাটক অবলম্বনে গুৱ চৱিত্ৰ আলােচনা করাে।

[অথবা, ‘গুরু’ নাটক অবলম্বনে ‘গুরু’ চরিত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণ করাে।[নমুনা প্রশ্ন, '১৪] [১+৪]

উত্তর :একাধিক রূপে প্রকাশ : ‘গুরু' নাটকে গুরুর উপস্থিতি নেপথ্যে কিংবা স্বশরীরে নাটকের শুরু থেকে শেষঅবধি। তাঁরই নামে নাটকের নামকরণ। তিনি অসীম, অনন্ত ও সর্বশক্তির আধার। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, জীর্ণ প্রাণহীন সমাজকে ধ্বংস করার কাজে তিনি খড়গহস্ত রুদ্র। জ্ঞান-কর্ম- ভক্তির সমন্বয়ে সাধনাকে সফল করে জগৎ ও জীবনকে গতিশীল করার কাজে তিনি শক্তিমান পরমসুন্দর। একাধিক রূপে তাঁর প্রকাশ। তিনি গুরু, তিনি দাদাঠাকুর, তিনিই গোঁসাই। অথচ তিনি একই। জ্ঞানমার্গের আয়তনিকদের কাছে তিনি গুরু, কর্মমার্গের শূনকদের কাছে তিনি দাদাঠাকুর, আর ভক্তিমার্গের দর্ভকদের কাছে তিনি গোঁসাই। প্রকৃতপক্ষে তিন মার্গের মানুষই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অচলায়তনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ। গুরু তিন রূপে হাজির হয়ে তিনেরই সাধনপথের বাধা সরিয়ে জ্ঞান-কর্ম-ভক্তির ত্রিবেণি সংগম ঘটিয়েছেন। তিনি জ্ঞানমার্গীদের অচলায়তনের পাষাণ

প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যােধূবেশে। দীর্ঘদিনের প্রথা ওসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলেন তিনি। বাইরের জগৎ ও জীবনের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে শুষ্ক প্রাণহীন জ্ঞানচর্চায় তিনি এনেছেন সরসতা ও জীবনের প্রাণােচ্ছাস।


১৪৭  ‘অন্ধ গোঁড়ামি’র বিরােধিতা ও নতুন ভাবনাকে স্বাগত জানানাে তাৱ লেখাৱ বৈশিষ্ট্য।”

উদ্ধৃতিটির আলােকে ‘গুরু’ নাটকের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলােচনা করাে।(নমুনা প্রশ্ন, '১৪] [৫]

উত্তর : রবীন্দ্র-ভাবনার বৈশিষ্ট্যই হল অন্ধ গোঁড়ামির বিরােধিতা এবং নবতন চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানানাে। একাধিকরবীন্দ্র-নাটকের কেন্দ্রীয় ভাববস্তু হল তাই। গুরু’ নাটকেরবীন্দ্রনাথের এই ভাবনা আরও স্পষ্টাকারে প্রকাশিত। তাঁর গুরুনাটকের বিষয়বস্তু পর্যালােচনা করলে এই সত্যতা পরিস্ফুট হয়ে উঠবে।

স্থবিরপত্তনের শিক্ষায়তনটি অচলায়তন। অচল বা স্থবিরতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটিতে আলাে ও বাতাস ঢােকার সব পথ বন্ধ। বৃহত্তর জগৎ ও জীবন থেকে পুরােপুরি বিচ্ছিন্ন। আয়তনিকরা যুক্তিহীন, প্রাণহীন অভ্যাস ও গোঁড়ামির দাস। তন্ত্রমন্ত্রের অন্ধ অনুগত।নানা বিধিনিষেধের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ। অন্ধতা, অজ্ঞানতা ও সংকীর্ণতার ঘেরাটোপে ঢাকা। নানা আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা ও পুথির চাপে তারা পিষ্ট। নিয়ম ও রীতির সামান্যতম লঙ্ঘন হলেই প্রায়শ্চিত্তের আঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়। এভাবে রক্ষণশীলতার গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে প্রাণহীন স্থবিরে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘গুরু' নাটকে এরই বিরুদ্ধে নবীন প্রাণের নব চেতনা ও নতুন ভাবনার অভিঘাতে নাটকে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি–অন্ধ গোঁড়ামির বিরুদ্ধে নতুন ভাবনার ঘােরতর সংঘাত। পঞক হল নবীন প্রাণের প্রতীক, নতুনের অগ্রদূত। সে যেন মূর্তিমান বিদ্রোহ। সে যেন মুক্ত প্রাণের স্পন্দন। গুরু-র উপস্থিতিতে অচলায়তনের আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব অন্ধত্ব ও গোঁড়ামির প্রাচীর যে ভেঙে পড়বে, পঞকই যেন তারপ্রস্তুতিপর্ব সেরে রাখে তার নতুন প্রাণের নবতন ভাবনা ও চেতনারপ্রবাহে। অন্ধত্ব গোঁড়ামির ধ্বংসস্থূপের ওপর নতুন ভাবনা ও চেতনারযে মন্দির গড়ে উঠবে, পঞকই হবে তার ঋত্বিক।


প্রশ্ন ১.৪৮ ‘গুরু’ নাটকের ঘটনাস্থলগুলি উল্লেখ করে কোন্ ঘটনাটিকে তােমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে তা লেখাে। (নমুনা প্রশ্ন, '১৪], [একাদশ, '১৮] [৫]

:উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু' নাটকের প্রথম ঘটনাস্থল অচলায়তন। এটি নাটকের প্রথম দৃশ্য। এই দৃশ্যে অনেক ঘটনা ঘটে। গুরু আসছেন সে বার্তা যেমন প্রচারিত, তেমনি তাঁর শুভ আগমন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সুভদ্র আয়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখায় সে। নাকি মহাপাপ নাকি করেছে, তার প্রায়শ্চিত্তের বিধান বড়ােই ভয়ানক ও প্রাণঘাতী। ওই ঘটনাকে ঘিরে আচার্যের অন্তরের পরিবর্তনের পরিচয়, পঞকের মুক্ত ও উদার প্রাণের প্রকাশ, মহাপক ও উপাধ্যায়ের আচার্য-বিরােধিতা, পরিশেষে পঞক ও আচার্যের দর্ভকপল্লিতে নির্বাসন, মহাপঞ্চকের আচার্যের আসনে উপবেশন ইত্যাদি ঘটনার সন্নিবেশ। দ্বিতীয় ঘটনার স্থল পাহাড়- মাঠ। যূনকদের মাঝে পঞক, দাদাঠাকুরের উপস্থিতি, যূনকদের নিয়ে দাদাঠাকুরের স্থবিরপত্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা। তৃতীয়।ঘটনার স্থল দকপল্লি। দৰ্ভকদের মাঝে আচার্য ও পঞ্চক।দাদাঠাকুর দর্ভকদের গোসাই হয়ে হাজির। অচলায়তন ভাঙারজন্য যুদ্ধযাত্রা। চতুর্থ ঘটনা স্থল অচলায়তন। অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ধূলিসাৎ। গুরুরূপী দাদাঠাকুর, শূনক ও দর্ভকদের উপস্থিতি। মহাপঞক বাদে আর সকলের তাঁকে গুরু বলে। মেনে নেওয়া।


প্রশ্ন ১.৪৮> ‘গুরু’ নাটকের ঘটনাস্থলগুলি উল্লেখ করে কোন্ ঘটনাটিকে তােমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলে মন হয়েছে তা লেখাে। (নমুনা প্রশ্ন, '১৪), একাদশ, '১৮] [৫]1

( উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু’ নাটকের প্রথম। ঘটনাস্থল অচলায়তন। এটি নাটকের প্রথম দৃশ্য। এই দৃশ্যে অনেক ঘটনা ঘটে। গুরু আসছেন সে বার্তা যেমন প্রচারিত, তেমনি তাঁর শুভ আগমন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সুভদ্র আয়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখায় সে নাকি মহাপাপ নাকি করেছে, তার প্রায়শ্চিত্তের বিধান বড়ােই ভয়ানক ও প্রাণঘাতী। ওই ঘটনাকে ঘিরে আচার্যের অন্তরের পরিবর্তনের পরিচয়, পঞকের মুক্ত ও উদার প্রাণের প্রকাশ, মহাপঞক ও উপাধ্যায়ের আচার্য-বিরােধিতা, পরিশেষে পক ও আচার্যের দর্ভকপল্লিতে নির্বাসন, মহাপঞকের আচার্যের আসনে উপবেশন ইত্যাদি ঘটনার সন্নিবেশ। দ্বিতীয় ঘটনার স্থল পাহাড়- মাঠ। যূনকদের মাঝে পঞক, দাদাঠাকুরের উপস্থিতি, শূনকদের নিয়ে দাদাঠাকুরের স্থবিরপত্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা। তৃতীয় ঘটনার স্থল দর্ভকপল্লি। দৰ্ভকদের মাঝে আচার্য ও পঞক। দাদাঠাকুর দর্ভকদের গোঁসাই হয়ে হাজির। অচলায়তন ভাঙার জন্য যুদ্ধযাত্রা। চতুর্থ ঘটনা স্থল অচলায়তন। অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে ধূলিসাৎ। গুরুরূপী দাদাঠাকুর, শূনক ও দর্ভকদের উপস্থিতি। মহাপঞক বাদে আর সকলের তাঁকে গুরু বলে। মেনে নেওয়া। এই ঘটনাগুলির মধ্যে শেষ দৃশ্যে শূনক ও দর্ভকদের নিয়ে যােদ্ধর বেশে দাদাঠাকুরের অচলায়তনে প্রবেশ ও ওই ঘটনাক্রমে = নাটকের সমাপ্তির ঘটনা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।

অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়ায় ধ্বংসস্কুপের মধ্যে অচলায়তনেরস্থবিরতার অবসান, অন্ধত্ব-গোঁড়ামি-আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব জীবনাচরণের সমাপ্তি, অপরদিকে নবীন প্রাণের নতুন ভাবনা-চেতনার প্রতিষ্ঠা, সরস মুক্তপ্রাণের জয়যাত্রা—যা নাটকের মর্মার্থ,তার প্রকাশ অপূর্ব নাটকীয়ভাবে অর্থবহ হয়েছে। এই কারণে ঘটনাটি আমার কাছে আকর্ষণীয়।


প্রশ্ন ১.৪৯) ‘গুরু’ নাটকে মােট কটি গান আছে ? নাটকটিতে সংগীতের ভূমিকা আলােচনা করাে।(নমুনা প্রশ্ন, '১৪] [১+৪]

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু’ নাটকে সাতটি গান আছে।

রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন' নাটকে তেরােটি গান আছে। অচলায়তনের রূপান্তরিত ‘গুরু' নাটকে অচলায়তনের ছটি গান নেওয়া হয়েছে। একটি নতুন গান সংযােজিত হয়েছে ‘গুরু’ নাটকের ১ শেষে। গুরু’ নাটকে নাট্যকার গানের সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন সম্ভবত নাটককে সংক্ষিপ্ত, গতিময় ও নাট্যদ্বন্দ্বকে তীক্ষতর করার উদ্দেশ্যে। ‘গুরু’ নাটকের প্রথম গানটি পঞ্চকের। গান গাইতে গাইতে পঞ্চকের প্রবেশ। গানটি আট চরণের। চারভাগে গানটি গাওয়া হয়েছে সংলাপের মাঝে মাঝে। দীর্ঘদিন পরে গুরু যে অচলায়তনে আসছেন, পঞ্চকের গানের মধ্যে তা আভাসিত। গুরুর জন্য,ব্যাকুলতা, তা প্রকাশিত আকাশে। তাঁর আগমনের বার্তা বাতাসে। এভাবে গুরুর আগমনবার্তা অচলায়তনের সর্বত্র প্রচারিত। প্রথম গানের মতাে দ্বিতীয় গানটিও পঞকের একক কণ্ঠে। অপূর্ব এক নাটকীয় পরিস্থিতিতে গানটি গেয়েছে পঞ্চক, অবশ্য আরও অন্যান্য আয়তনিকদের সঙ্গে নৃত্য সহযােগে। অচলায়তনের জীর্ণ পুথিসর্বস্ব নীরস নিষ্প্রাণ জীবন থেকে মুক্তির জন্যে আচার্য গুরুর কাছে কামনা করেছেন হৃদয়ের বাণী, প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে তােলার শক্তি। পঞকেরও একই কামনা। তাই তার নৃত্যসহ উদাত্ত কণ্ঠে গান : ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে...... তৃতীয় গানও পকের একক কণ্ঠে, অবশ্য তার পিছনে শূনকরা দলবদ্ধ হয়ে নৃত্য করেছে। পাহাড়-মাঠের মুক্ত পরিবেশে মুক্তির সন্ধানে পক। পরের গান শূনকের। তারা মনের আনন্দে চাষ করে। চাষ করাই তাদের কর্ম ও ধর্ম। পরের গানও তাদের। যার মর্মার্থ হল তাদের কাজের বাছবিচার নেই। তারা সব কাজেই হাত লাগায়। কর্মমার্গই হল তাদের সাধন পথ। দর্ভকদের গান পরের


প্রশ্ন ১.৫০ নির্দেশিত শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত। হয়েছিল আলােচনা করাে অচলায়তন’ কথার অর্থ লেখাে। গুরু।

অথবা, “শুনেছি অচলায়তনে কাৱা সব লড়াই করতে শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত হয়েছিল? সেখানে কারা লড়াই করতে এসেছিল এবং| একাদশ, '১৪] [৫] এসেছে।”কেন?

উত্তর :‘অচলায়তন’-এর অর্থ : ‘অচলায়তন' কথার অর্থ হল বাইরের প্রকৃতি ও জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন, প্রগতিবর্জিত, গোঁড়ামিতে ভরা, নিরানন্দ ও নিষ্প্রাণ জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান। গুৱৱ নির্দেশিত শিক্ষায়তনেৱ পৱিণতি : অদীনপুণ্য অচলায়তনের আচার্য। গুরু তাঁকে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষায়তনের আচার্য পদে বসিয়েছিলেন। গুরু তারপর আর ফিরে আসেননি। আচার্য গুরুর নির্দেশিত আদর্শ অনুযায়ী জ্ঞানসাধনার প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তােলেন। দুঃখের কথা, প্রতিষ্ঠান কালক্রমে তার আদর্শ থেকে সরে এসে আচার-অনুষ্ঠান, মন্ত্রতন্ত্র, জপতপ, নানা বিধিনিষেধের, হরেক প্রায়শ্চিত্তের বাঁধনে বাঁধা পড়ে প্রাণহীন, রসহীন জীর্ণ পুথিসর্বস্ব জ্ঞানচর্চার আখড়ায় পরিণত হয়। বাইরের আলাে- বাতাস থেকে পুরােপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে এক পাষাণকারায় আবদ্ধ হয়। শুষ্ক প্রাণহীন জ্ঞানচর্চায় প্রাণচাঞ্চল্যহীন আয়তনিকরা হয়ে পড়ে স্থবির। পুথিপত্র সর্বস্বতা, মন্ত্রাভ্যাস, গাথাপাঠ ইত্যাদি । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু নাটকে গুরু নির্দেশিত শিক্ষায়তনের অচলায়তনে পরিণত হওয়ার বহু দৃষ্টান্তই ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে। গুরু না থাকায় তাঁর নির্দেশিত শিক্ষায়তনেপুথিপত্রের প্রাধান্যের কথা পঞকের উক্তিতে স্পষ্ট। “আরে, গুরুযখন না থাকেন তখনই পুঁথিপত্র। প্রতিটি আয়তনিককে নির্ভুল মন্ত্রপাঠে অভ্যস্ত হতে হয়। মহাপঞক তার ভাই পঞক অমিতায়ুর্ধারিণী মন্ত্রটা নির্ভুল মুখস্থ বলতে না পারলে গুরু তাকে অচলায়তন থেকে দূর করে দেবেন বলে শাসিয়েছেন। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গাথাপাঠ করতে হত আয়তনিকদের। মহাপক সপ্তকুমারিকা গাথা পাঠের সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। আয়তনিক শিক্ষার সার্থকতা বলে ভাবা হয়আয়তনে বিধিনিষেধ এতই কঠোর ছিল যে, সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেই সেজন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে হত। পঞ্চকের কথায়।


প্রশ্ন ১.৫১ ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়াৱ পৌছায় না।”—কার সম্পর্কে, কে একথাবলেছেন? এ বক্তব্যের তাৎপর্য কী?[একাদশ, ১৪, ১৮] [১+১+৩]

উত্তর : রবীন্দ্রনাথের ‘গুরু’ নাটকের শেষ দৃশ্যে মহাপঞ্চক সম্পর্কে এ কথা বলেছেন দাদাঠাকুর।

তাৎপর্য : মহাপঞক নিষ্ঠাবান ও মহাজ্ঞানী অচলায়তনিক। তিনি শৃঙ্খলাপরায়ণ। সনাতন ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠান, মন্ত্র ও জপতপের প্রতি তিনি গভীর বিশ্বাসী। অচল, অটল ও অনড়। কঠিন জ্ঞানচর্চায় নিষ্ঠাবান তাপস। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাস এমন স্থির ও দৃঢ়

যে, তাঁর মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। সামান্যতম দোলাচল মনােভাব নেই। নিষ্ঠা, দৃঢ়তা, সংযম ও জিতেন্দ্রিয় শক্তি তাঁকে এমনই মনােবল দিয়েছে যে, তিনি বলেছেন, “আমি আমার ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রােধ করে এই যে বসলুম—যদি প্রায়ােপবেশনে মরি তবু তােমাদের হাওয়া তােমাদের আলাে লেশমাত্র আমাকে স্পর্শ করতে দেব । শূনকদের অস্ত্র যে তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না, সেই ব্যাপারে দাদাঠাকুর বলেছেন, ‘ও আজ যেখানে বসেছে সেখানে তােমাদের তলােয়ার পৌছায় না। এমনই মহাজ্ঞানী, মহাতাপস।


১.৫6“উনি (গলে তােমাদের অচলায়তনের পাথৱগুলাে সুদ্ধ নাচতে আৱম্ভ কৱবে, পুঁথিগুলাের মধ্যেবাঁশি বাজবে।”—বক্তা কে? উনি বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

[একাদশ, '১৫][১+১+৩]

উত্তর: এই উক্তির বক্তা হল প্রথম শূনক। ‘উনি বলতে দাদাঠাকুরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাদাঠাকুর উদার ও মুক্তপ্রাণের প্রতীক। তিনি সবরকম আচার- অনুষ্ঠান, মন্ত্রতন্ত্র, বিধিবিধানের আগল বা বাধা ভেঙে প্রাণের প্রবাহ বইয়ে দেন। প্রথম শূনকের কথা হল দাদাঠাকুর অচলায়তনে গেলে তাঁর স্পর্শে পাথরগুলি নাচতে শুরু করবে। পুথিগুলিতে বাঁশির সুর ধ্বনিত হবে। অর্থাৎ, তাঁর ছোঁয়ায় অচলায়তনের নিপ্রাণ পাথর ও পুথিগুলি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে। আচার-অনুষ্ঠানের আধিক্য, জপতপ, মন্ত্রতন্ত্রের পেষণ ও শুষ্ক পুথিসর্বস্বতার যে নিপ্রাণতা তা নতুন প্রাণের স্পর্শে ও শিহরণে সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে।


প্রশ্ন ১.৫৩ “একটু উৎপাত হলে যে বাচ”-কে বলেছে? কোন্ উৎপাত? সে উৎপাত চায় কেন?

[একাদশ, ১৫} [১+১+৩]

উত্তর : এ কথা বলেছে পঞ্চক। ‘উৎপাত বলতে গুরুর উপস্থিতিতে প্রবল আলােড়ন। পঞক উৎপাত চায়, কারণ পুথিসর্বস্ব শিক্ষার জগদ্দল পাথর শিক্ষার্থীদের মনের ওপর চেপে বসেছে। পুথিনির্ভর শুষ্ক নীরস

শিক্ষা জীবনের আনন্দ-উল্লাস, সরসতা ও সজীবতাকে গ্রাস করেজীবনকে জড়বৎ নিষ্প্রাণ করে তুলেছে। পদে পদে নানা বিধান ও নিয়মকানুনের শিকল আঁটোসাঁটো করে চেপে ধরে প্রাণ ওষ্ঠাগত করেছে। তাই অচলায়তনের ভিত ধরে প্রচণ্ড কম্পন বা উৎপাতের প্রয়ােজন। এই প্রচণ্ড নাড়া বা কম্পনই স্থবিরত্ব দূর করে প্রাণের স্পন্দন ফিরিয়ে আনবে। গুরুই পারেন ওই কাঙ্ক্ষিত বাসনা পূর্ণ করতে


প্রশ্ন ১.৫৬

তাৱ ৱাগটা কীৱকম সেইটা দেখার জন্যেই তাে একাজ করেছি।’-বক্তা কে? এখানে কার রাগের।কথা বলা হয়েছে? তিনি রেগে গেলে কী হয়? তাৱ ৱাগের ধৱন দেখার জন্য বক্তা কী করেছিল?[একাদশ, '১৬] [১+১+১+২]

উত্তর: এই উক্তির বক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু নাটকের অন্যতম চরিত্র পঞ্চক।

এখানে মহাময়ূরী দেবীর রাগের কথা বলা হয়েছে মহাময়ূরী দেবী রেগে গেলে যার ওপর রুষ্ট হন, তাকে তিনদিনের দিন সাপ এসে দংশন করে। মহাময়ূরী দেবীর রাগের ধরন দেখার জন্য পক ইচ্ছা করে ও মাসে শনিবারে যেদিন মহাময়ুরী দেবীর পুজোর দিন ছিল, সেদিন সে কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে, তার ওপর ।পাঁচটা শেয়ালকাঁটার পাতা আর তিনটে মাসকলাই সাজিয়ে নিজে আঠারাে বার ফু দিয়েছিল। পঞক মহাময়ূরী দেবীর রাগ দেখেনি। তিন দিনের দিন সাপ এসে কামড়ানাের কথা। সাপ এসে তাকে দংশনও করেনি।


প্রশ্ন-১.৫৯ ‘গুরু’ নাটকে মােট কটি গান আছে? শেষ গানটি কার জন্য গাওয়া হয়েছে। গানটির মর্মার্থ লেখাে।[একাদশ, '১৭] [১+১+৩]

উত্তর : ‘গুরু নাটকে মােট ৭টি গান আছে। শেষ গানটি নবযুগচেতনার স্রষ্টা, সব বন্ধন ও সংস্কারের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি দেওয়া জ্যোতির্ময় (নবচেতনার অগ্রদূত, তিনি গুরুও হতে পারেন)-এর জন্য গানটি গাওয়া হয়েছে। 

মর্মার্থ গুরু এসেছেন বীর যােদ্ধার বেশে। তিনি তাঁর অভীষ্টসাধন করে বিজয়ী হয়েছেন। যা পুরাতন, যা জীর্ণ, যা প্রাণহীন রসহীন নিয়মের শিকলে বাঁধা, যা শুষ্ক প্রথাসর্বস্ব, নিছক পুথিনির্ভর সবকিছু ছিন্ন করে, ধ্বংস করে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন। তা যেন আঁধারে ঢাকা রাতের অবসানে জ্যোতির্ময়ের।আবির্ভাব। তাঁর জয় সূচিত হয়েছে। তিনি বিজয়ী বীর,নবজীবনের সূচনায় তাঁর হাতে নবীন আশার খড়গ। তিনি তা দিয়ে জীর্ণ আবেশের বন্ধন নির্দয়ভাবে কেটে মুক্ত প্রাণের অভ্যুদয়

ঘটিয়েছেন। নব যুগচেতনার স্রষ্টা তিনি। তিনি নির্মল, তিনি নির্ভয়। তিনি প্রভাত সূর্যের মতাে রুদ্রসাজে সজ্জিত। দুঃখেরপথে তাঁর তুর্যধ্বনি নিনাদিত। তিনি হৃদয়ে হৃদয়ে বহ্নিশিখা জ্বালিয়ে কলুষমুক্ত উদারচিত্ত গড়েন। মৃত্যুরূপী জড়তাকে ধ্বংস করেন। তাঁর জয় সূচিত হােক।


প্রশ্ন ১.৬O “পঞ্চকদাদা বলেন অচলায়তনে তাকে কোথাও ধৱবে না।”-বক্তা কে? পঞকদাদা কে? তাকে’বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে? তাকে কোথাও ধৱবে’—পকদাদাৱ এরকম মনে হয়েছে কেন?| একাদশ, '১৭][১+১+১+২]

উত্তর প্রশ্নোক্ত উক্তির বক্তা ‘গুরু' নাটকের প্রথম বালকপঞ্চকদাদা হলেন অচলায়তনের মহানিষ্ঠ সাধক মহাপকভাই, যিনি অচলায়তনের অন্যতম এক তাপস বালক।‘তাঁকে’ বলতে ‘গুরুকে বােঝানাে হয়েছে।

পঞ্চকদাদাৱ মনে কৱাৱ কারণ : গুরুকে অচলায়তনের কোথাও ধরবে না, পঞকের এ কথা মনে হওয়ার কারণ হল নানা বিধিনিষেধ, আচার-অনুষ্ঠান, নানা কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাস, পুথিসর্বস্বতা ইত্যাদিতে আয়তন এমনি ভরপুর যে, তাঁর মতাে মুক্তপ্রাণ অসীম, অনন্তের স্থান হবে না। সীমিত গণ্ডির মধ্যেঅসীম অনন্ত কি ধরতে পারে!


প্রশ্ন ১.৬১) পৃথিবীতে জন্মেছি, পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”-(ক, কোন প্রসঙ্গে এই উতিকরেছে? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।|| একাদশ, ১1 | | | |

উত্তর : প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে প্রথম শূনক।প্রসঙ্গ: পঞ্চক শূনকদের ছলে তার গুরু রাগ করবেন।

কিনা প্রথম শূনক জানতে চায়। পঞ্চক সে কথা প্রসঙ্গে বলেন।যে, গুরু হয়তাে অপরাধ নিতেও পারেন। শূনকরা যে চাষ করে।এটাই বড়াে অপরাধ। তারই উত্তরে প্রথম শূনক প্রশ্নোত্ত। উক্তিটি করে।

তাৎপর্য : শূনকরা সবসময় কাজ করে। এরা কর্মমার্গের লােক। কর্মই এদের ধর্ম। এরা মনের আনন্দে মাঠে চাষ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে চাষের কাজ। এরা মনে করেপৃথিবীতে জন্মেছে কাজের জন্য। নিষ্কর্মা হয়ে থাকা এদের অভ্যাস ও স্বভাববিরুদ্ধ। কাজের মধ্যে নিমগ্ন থেকে এরা পৃথিবীতে জন্মানাের সার্থকতা পৃথিবীকে বুঝিয়ে দিতে চায়।


প্রঃ ১.৬২ আমরা প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধি, থাকি তার মাঝেই।”—এই গান কাৱা গেয়েছে? প্রাণ দিয়ে ঘর বাঁধারউদ্যম কীভাবে তাদের গানে ভাষা (পয়েছে? {একাদশ, '১৮] [১+8]

উত্তর : প্রশ্নোপ্ত গান গেয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু' নাটকের শূনকেরা।

শূনকেরা কর্মমার্গের মানুষ। কর্মই তাদের ধর্ম। কর্ম তাদের ধ্যান-জ্ঞান-তপস্যা। তারা দল বেঁধে মাঠে চাষ করে। তারা যে ঘরে বাস করে তা নিজ হাতে বানায়। জীবনযাপনের জন্যযাবতীয় কাজ তারা দলবদ্ধ হয়ে করে। তারা যা করে তা মনপ্রাণ।দিয়ে একাগ্রচিত্তে করে। এভাবে তারা কাজে উদ্যম পায়, প্রেরণায়  উজ্জীবিত হয়। কাজের সঙ্গে সঙ্গে সে প্রেরণা ও উদ্যম গানের ভাষা হয়ে তাদের কণ্ঠে উঠে আসে।

৩। ‘গুরু’ নাটকের মূল দ্বন্দ্ব আলোচনা করো।

অথবা, ‘গুরু’ নাটকের দ্বন্দ্ববস্তু কী? – আলোচনা করো। 

উত্তর রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাশ্রয়ী নাটকগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলেছে—প্রাণশক্তি বা আত্মার সঙ্গে যন্ত্র বা জড় শক্তির। ‘গুরু’ নাটকের বিষয়বস্তু ও নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি নাট্যিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি দ্বন্দ্ব উপস্থাপিত করেছে। নাট্য-সমালোচকের কথায়—"Conflict is the prime force of the drama" অর্থাৎ, দ্বন্দ্বই নাটকের প্রাণ। ‘গুরু’ নাটকের দ্বন্দ্ব নাটকের শুরুতেই পঞ্চক-মহাপঞ্চকের মানসগঠনে বীজ রূপে আভাসিত হয়েছে। সহোদর হয়েও তারা বিপরীতমুখী। দুই ভাইয়ের সংঘাতই নাটকের মূল সংঘাত- “হৃদয়কে পাখির ন্যায় আনন্দ উদ্‌বেল করিয়া রাখিতে হইবে, না, যন্ত্রের ন্যায় মন্ত্র অভ্যাস করিয়া বাহিরের পৃথিবীটাকে  ভুলিয়া থাকিতে হইবে। পুরাতনের স্থলে নূতনকে সৃষ্টি করা চাই, না, পুরাতনকে ধরিয়া রাখাতেই জীবনের সার্থকতা। নাটকের তত্ত্বও ইহারই মধ্যে নিহিত। পঞ্ক এবং মহাপঞ্চকের ভাব সংঘাতেই নাটকের দ্বন্দ্ব এবং তাহাতেই নাটকের তত্ত্ব।” ‘গুরু’ নাটকের প্রথাধর্ম ও আচারসর্বস্বতার সঙ্গে মুক্ত প্রাণের এবং স্বচ্ছ স্বাভাবিক জীবনের একটি দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়েছে। একদিকে অচলায়তনের ভিতরে শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধের নিষ্প্রাণ জীবন, অপরদিকে অচলায়তনের বাইরে মুক্তির আনন্দ—প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক উদ্ভাস—এ দুয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়েছে। সত্ত্বরজঃতমঃ গুণের আশ্রয়ে ‘গুরু’ নাটক রচিত।সত্ত্বগুণসম্পন্ন ব্যক্তি কর্ম এড়ালে পথভ্রান্ত হয়, সমগ্রকে বিস্মৃত হয়ে খণ্ডে আত্মগোপন করে, আবৃত হয় কুসংস্কারে। রজঃগুণে মানুষ জ্ঞানকে অস্বীকার করে শুধু কর্ম ও গতিকে মান্য করতে গিয়ে ধ্রুবকে হারায়। গুরুর মধ্যে নতুন ও পুরাতনকে দেখতে পায় না। জ্ঞান ও কর্ম, সত্ত্ব ও রজঃ-র মিলনে মুক্তি। কাউকে

বাদ দেওয়া হয়নি, কেন-না কারও মুক্তির পথ চিররুদ্ধ হতেপারে না। আর রুদ্ধ হলে গুরু এসে রুদ্ধদ্বার ভেঙে, প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন আলোর পথ করে দেবেন। এজন্য দুঃখের দুর্গম পথ পেরিয়ে নাটকের মূল দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটিয়ে মুক্তি জয়ভেরি বাজিয়ে আসে—‘গুরু’ নাটকে সেকথাই বলা হয়েছে।

নাটকের শেষে জয়ী হয়েছে প্রাণের স্ফূর্তি এবং সেই সঙ্গে আচার সর্বস্বতার প্রতি অবিশ্বাস।


ID৬৷ ‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক চরিত্রটি বর্ণনা করো।

উত্তর বৌদ্ধকাহিনির পঞ্চক, ‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক অচলায়তনের রুদ্রতাপস জ্ঞানমার্গের মহানিষ্ঠ সাধক মহাপঞকের ভাই হল পঞ্চক। কিন্তু ভাই হলে কী হবে, স্বভাবধর্মে সম্পূর্ণভিন্ন গোত্রের। মহাপঞ্চকের শুষ্ক, নীরস, কঠিন জ্ঞানচর্চা, তাঁরসংস্কার বিশ্বাস ও অভ্যাসের পাকচক্রে আবর্তিত হতে সে একান্ত নারাজ। পঞ্ক চরিত্রকে রবীন্দ্রনাথ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য দৃষ্টান্তরূপে উপস্থাপিত করেছেন। পঞ্চক শাস্ত্রসম্মত, প্রথাগত বিধির অসারতাকে উপেক্ষা করে মানবমনের মুক্তির জন্য প্রকৃত শিক্ষার জন্য জীবন্ত গুরুকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে চেয়ে বলেছে—“আমারই তো গুরুর দরকার বেশি, আমার যে কিছুই শেখা হয়নি।” এটি পঞ্চক চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পঞক প্রাণের মূর্ত প্রতীক। তাই প্রাণের রাজ্যেই তারআনাগোনা। তাই শিশুদের মাঝেই সে খুঁজে পায় পরম প্রশান্তি।সুভদ্রের ব্যাপারটা নিয়ে যখন আচার্যের সঙ্গে সকলের বিরোধ তুঙ্গে, তখন পঞক মনের সুখে গান গাইতে থাকে— “ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে, তারে আজ থামায় কে রে।”

আসলে পঞ্চক উন্মুক্ত জীবন তৃষ্ণার ঝরনাস্বরূপ। সে আচার্যকে জানিয়েছে—“আমি আচার অনুষ্ঠান কিছুই জানিনে, আমি আপনাকেই জানি।” আয়তনের স্থির স্থবির নিয়মের যন্ত্রবদ্ধ জীবনে পঞকের চিত্ত পীড়িত। তাই সে যূনকদের সঙ্গে মেশে। তাদের উদ্দাম চঞ্চল কর্মমুখর জীবনের সান্নিধ্যে এসে, তাদের গতিশীল জীবনের পরিচয় পেয়ে তার প্রতি


৭৷ ‘গুরু’ নাটকে আচার্য চরিত্রটির বিশ্লেষণ করো

উত্তর আচার্য অদীনপুণ্য ‘গুরু’ নাটকের একজন অন্যতম স্মরণীয় চরিত্র। তাঁর যুবক বয়সে গুরু তাঁকে এই পদে বসিয়ে দিয়ে গেছেন, আর ফিরে আসেননি। গুরুর আদর্শে অনুপ্রাণিত আচার্য জ্ঞানসাধনার প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার মহান কর্মে ব্রতী হয়েছিলেন। যে শিক্ষায়তন এক সময় ছিল প্রাণচাঞ্চল্যেভরপুর, কালে তা ভরে ওঠে অভ্যাস, কু-প্রথা ও সংস্কারের স্তূপে, পরিণত হয় আচার-বিচারের অন্ধকারায়। সেই জড়তা বৃদ্ধ আচার্যকেও শক্তিহীন করে তোলে। তিনি অনুভব করেন তাঁর সেই দীনতা।মানসিক অশান্তিতে, সব হারানোর বেদনায় কাতর হন। উপলব্ধি করেন, এতকাল তিনি শুধুই মরীচিকার পিছনে  ছুটেছেন, প্রাপ্তি ঘটেনি কিছুই। আচার্য ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেছেন তাঁদের জ্ঞানসাধনার অসার্থকতার দিকটিকে। জগতের যেখানেই ধর্মকে অভিভূত করে আচার নিজেই প্রধান হয়ে ওঠে। সেখানেই মানুষের চিত্তকে সে ছোটো করে দেয়।মননের স্বীকৃতিস্বরূপ পঞ্চকেরও ভরসাস্থল আচার্য নিয়মে বদ্ধ অচলায়তনের পঞ্ককে সমর্থন করেন। সুভদ্র আয়তনের

 উত্তরদিকের জানলা খুললে মহাপক তাকে ‘মহাতামসব্রত’ পালনের বিধান দেন। কিন্তু আচার্য মহাতামস সাধনে বাধা হয়ে দাঁড়ান এবং বলেন—“দরকার নেই—সুভদ্রকে কোনো প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না....।”স্বভাব-উদার আচার্য পাকে-চক্রে সংস্কারের অন্ধকূপে আবদ্ধ হয়ে পড়লেও অন্তরে অন্তরে অনুভব করেন, নিদারুণ অশান্তি ও মর্মস্পর্শী যন্ত্রণা। আচার-সর্বস্বতা ও মন্ত্রতন্ত্রের 5প্রাণহীন কাঠিন্য তাঁর মনে সংশয় জাগায়। কিন্তু অচলায়তনের আচার্য পদে অধিষ্ঠিত থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেবলই অন্তর্দাহে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। প্রকৃত জ্ঞানের সাধনা কীভাবে বদ্ধ ও ব্যর্থ জ্ঞানসাধনায় পরিণত হয় তারই ইতিহাস যেন আচার্য অদীনপুণ্যের জীবন। তিনি সত্যকারের জ্ঞানসাধক, যার প্রেরণাস্থল গুরু। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস সংস্কারে সে সাধনা কেন্দ্রচ্যুত হয়ে রসহীন,

বিকৃত রূপ ধরেছে। গুরু এলে অকপটে তাঁর কাছে ব্যর্থ সাধনার কথা নিবেদন করেন—“তাঁকে (মুক্তিদাতা) বাঁধছি মনে করে যতগুলো পাক দিয়েছি সব পাক কেবল নিজের চারদিকেই জড়িয়েছি।”


৮৷ ‘গুরু’ নাটকে মহাপঞ্চক চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ‘গুরু’ নাটকের অন্যতম চরিত্র হল মহাপঞ্চক। মহাপঞক ও পঞক দুই ভাই। মহাপঞ্জক অগ্রজ, পঞক অনুজ। দুই ভাই হলে কী হবে, স্বভাবধর্মে দুজন দুই ভিন্ন পথের পথিক, বিপরীত চরিত্রের মানুষ, ভিন্ন মেরুর অধিবাসী। আচারসর্বস্ব, নিয়মনিষ্ঠা, শাস্ত্রবিধিপালন, শুচিতা রক্ষার প্রশ্নে মহাপঞক আপসহীন মানসিকতার অধিকারী। তিনি যেন ক্ষমাহীন দুর্বাসা। অচলায়তনের বিধিলঙ্ঘনকারী ভাই পঞ্চক গান করলে মহাপঞক বলেছেন—“গুরু এলে তোমার জন্য লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব না।” অন্যদিকে রাজা মন্থরগুপ্ত এসে কেন দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে যূনকরা রাজ্যের প্রাচীর ভাঙছে জানতে চাইলে মহাপঞ্চক সুভদ্রর পাপ এবং একজটা দেবীর রোষ ও আচার্যের আচরণের কথা জানান। শেষপর্যন্ত মহাপক রাজার আদেশে আচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন। রাজা আচার্যকে কিছুকাল দর্ভকপাড়ায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। জয়োত্তম অন্ত্যজদের মধ্যে আচার্যকে পাঠানোর নির্দেশে বিস্ময় প্রকাশ করলে মহাপঞক নির্দ্বিধায় বলেন—“যিনি স্পর্ধাপূর্বক আচার লঙ্ঘন করেন, অনাচারীদের মধ্যে বাস করলেই তবে তাঁর চোখ ফুটবে। মনে করো না আমার ভাই বলে পঞ্চককে ক্ষমা করব—তারও সেইখানে গতি।”

মহাপঞক ভীষণ রকমের রক্ষণশীল প্রকৃতির। প্রাচীনকেধরে রাখার ব্যাপারে তিনি দৃঢ় সংকল্প। পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে নতুনকে বরণ করে নিতে তিনি একেবারেই আগ্রহী নন। একান্ত বাস্তবতাকে স্বীকার করতেও তিনি নারাজ। তাই তো দেখি চোখের সামনে অচলায়তনকে ধূলিসাৎ হতে দেখে, বাইরের

আলো-বাতাসে অচলায়তনকে ভরে যেতে দেখে, ছাত্রদলেরমধ্যে প্রাণস্পন্দন লক্ষ করেও তিনি অবিচলিত থাকেন। মহাপঞক চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য তাঁর অসীম ধৈর্যশীলতা, অটল মানসিক দৃঢ়তা, ইন্দ্রিয় সংযমে অনন্যতা। সংযম-শক্তি


●৯। 'গুরু' নাটকে ‘গুরু-দাদাঠাকুর-গোঁসাই' চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

 উত্তর রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য নাটকের (‘রাজা’, ‘ডাকঘর’, ‘মুক্তধারা’) মতোই ‘গুরু’ নাটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে, গুরু-দাদাঠাকুর- গোঁসাই চরিত্র। এই নাটকের সর্বশক্তির আধার গুরু। তিনি অনন্ত অসীম। তিনি রুদ্র ও পরমসুন্দর। তিনি

বারেবারেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, অন্যায় অবিচার দূর করার জন্যে, পৃথিবীকে সরস ও প্রাণময় করে তোলার অভিপ্রায়ে, কীটদষ্ট সমাজকে নূতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, জগৎ ও জীবনকে গীতশীল করে তুলতে জ্ঞান-কর্ম-ভক্তির ত্রিবেণি-সঙ্গম ঘটিয়ে মানুষের সাধনাকে সফল করতে। কারোকে তিনি উপেক্ষা করেন না, সকলকেই নিয়ে তাঁর কারবার। ‘গুরু’ নাটকের এই গুরুর রূপ ত্রিবিধ—গুরু-গোঁসাই- দাদাঠাকুর। তিন নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি একই। তিনি জ্ঞান-কর্ম ও ভক্তির সমন্বয়সাধক। সত্ত্বগুণসম্পন্ন স্থবিরক তথা অচলায়তনিকদের তিনি গুরুদেব, রজঃগুণের অধিকারী যূনকদের দাদাঠাকুর, তমঃগুণসম্পন্ন দর্ভকদের গোঁসাই। জ্ঞানচর্চার দ্বারা সত্যদৃষ্টি লাভ করে মানুষ কর্মের জগতে প্রবেশ করবে, জ্ঞান-কর্ম-ভক্তির সমন্বয়ে সাধনা সার্থক হবে—এই দীক্ষাই দিয়েছিলেন গুরু। কিন্তু ক্রমে ক্রমে জ্ঞান সংকীর্ণক্ষেত্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তন্ত্র-মন্ত্র ও পুথির বাঁধনে জ্ঞান বাঁধা পড়ে। মন্ত্রতন্ত্র, পুথিপত্র, আচার-অনুষ্ঠান প্রধান হয়ে ওঠে। মননের চেয়ে মন্ত্র, মানুষের চেয়ে আচার বড়ো হয়ে ওঠে।


● ১০। 'গুরু' নাটকে সুভদ্র চরিত্রটি আলোচনা করো। 


উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকের শুধু প্রধান চরিত্রগুলির ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই সঙ্গে অপ্রধান চরিত্রগুলির ভূমিকা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেক সময় প্রধান চরিত্রগুলির পূর্ণতা রূপ পায় অপ্রধান চরিত্রগুলির জন্য।এদিক থেকে অপ্রধান চরিত্রগুলি প্রশংসনীয়। ‘গুরু’ নাটকের অপ্রধান চরিত্রগুলি হল—সুভদ্র, উপাচার্য, উপাধ্যায়, যূনকদল,

দর্ভকদল। এখন সুভদ্র চরিত্রটি আমাদের আলোচ্য বিষয়। ‘গুরু’ নাটকের প্রথমেই আমরা সুভদ্রর যে  পরিচয় পাই, তা থেকে বোঝা যায়, সে ভদ্র, শান্ত। দুষ্টুমি তার মধ্যে নেই। কিন্তু হঠাৎ খেয়ালবশত সে অচলায়তনের উত্তরদিকের জানলা খুলে বাইরেটা দেখে ফেলেছে। এতে তার মনে হয়েছে সে চরম পাতকের কাজ করেছে। এই সুভদ্রর সঙ্গে পঞকের মনের মিল ছিল একটু বেশি। তাই নাটকের শুরুতেই আমরা দেখব সে প্রথম পঞককে বলেছে—“আমি পাপ করেছি।” এরপর পঞ্ক তার সব পাপ কেড়ে নিতে চায়। এখানে আমরা দেখি রামকৃষ্ণদেবের প্রভাব আছে। পরমপুরুষ রামকৃষ্ণ যেমন গিরিশচন্দ্র ঘোষের সব পাপ নিতে চেয়েছিলেন, পঞ্চক ঠিক তেমনি সুভদ্রকে অভয় দিয়ে বলেছে—“তোর সব পাপ

আমি কেড়ে নেব, তুই বল।” এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই সুভদ্র তার পাপের কথা বলে—“আমি আমাদের আয়তনের উত্তর দিকের.....বাইরেটা দেখে ফেলেছি।।” সুভদ্র তার পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিধান পঞ্চকের কাছে জানতে চায়—“কোন্ প্রায়শ্চিত্ত করলে আমার পাপ যাবে?” আয়তনের উত্তরদিকটা একজটা দেবীর। সুভদ্রর এই ব্যাপারটা  পঞ্চক যতই চাপা দিতে অর্থাৎ, গোপন রাখতে চাইছে, সুভদ্র

ততই সবাইকে বলে দিচ্ছে। সে উপাধ্যায়কেও তার পাপের কথা বলেছে—“আমি জানলা খুলে বাইরেচেয়েছিলুম।” এই উক্তি হল তার অনুতাপ করে বিদ্ধ সুকুমারমতি নিষ্পাপ মনের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ। ‘গুরু’ নাটকের শেষ দৃশ্যে আমরা দেখি, গুরুর নেতৃত্বে যূনকদল অচলায়তনের প্রাচীর ও দরজা ভেঙে মাটিতে মিশিয়েদেয়। তখনও সুভদ্র দাদাঠাকুরকে বলেছে—“আমি যে পাপ করেছি তার তো প্রায়শ্চিত্ত শেষ হল না।” এর মধ্যে তার চরিত্রের অকপটতা ও সরলতা প্রকাশ পেয়েছে।



● ১১৷ ‘গুরু’ নাটকে উপাধ্যায় চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ‘গুরু’ নাটকের অন্যতম অপ্রধান চরিত্র হল উপাধ্যায়। জ্ঞান ও শাস্ত্রকীট মহাপঞকের নীতি ও আদর্শের নিত্য অনুগামী তিনি। অচলায়তনের বাসিন্দা, অন্যতম পরিচালক। প্রত্যক্ষরূপে না হলেও বোঝা যায়, তাঁর কাজ বোধ করি আয়তনের বালকদের প্রতি লক্ষ রাখা এবং সে বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। পঞক শিশুদের সঙ্গে মেশে বলে উপাধ্যায় তাকে তিরস্কার করেন বা সাবধান করে দেন। পঞ্চক নানা বেনিয়ম করতেঅভ্যস্ত বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে আয়তনেরআচারসর্বস্ব ঘটনার কৌতুককর ছবিও আমাদেরকাছে সুস্পষ্ট হয়।সুভদ্রের পাপের নানা ব্যাখ্যা—উত্তরের জানলায় “কনুইঠেকিয়েছে”, তাহলে যজ্ঞ পাত্র সব ফেলা যাবে। তাঁরউক্তি—“সাত মাসেরবাছুরকে দিয়ে ওই জানলা না চাটাতে পারলে শোধন হবে না।” এইসব তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান, আচারনিষ্ঠা, পঞ্চকের ওপর বিরক্তিভাব স্পষ্ট করে। আয়তনের উত্তরদিকের জানলা খুললে যে পাপের কথা শাস্ত্রে বা পুথিতে লেখা আছে, সেটা সুভদ্রর ক্ষেত্রে হয়নি। তাই অনেকটা হতাশ হয়ে তিনি বলেছেন—“উত্তরের অধিষ্ঠাত্রী যে একজটা দেবী। বালকের দুই চক্ষু মুহূর্তেই পাথর হয়ে গেল না কেন তাই ভাবছি।”প্রায়শ্চিত্ত বা শাস্তির বিধানে উপাধ্যায় মহাপঞ্চকের সঙ্গী।তিনি আচার্যের বিবেকের সিদ্ধান্তের বিরোধী। আচার্যকেন অচলায়তন থেকে বিতাড়িত করাতেও মহাপকের সঙ্গে একমত। তিনি আচার্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন—“এ সহ্য করাচলবেই না। আচার্য কি শেষে আমাদের  ম্লেচ্ছের সঙ্গে সমান

করে দিতে চান?”নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে আবার আমরা উপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ পাই। যূনকরা অচলায়তনের প্রাচীর ও দরজা ভেঙে ফেলেছে শুনে উপাচার্য বলেছেন—“বেশ করেছ ভাই। আমাদের ভারী অসুবিধা হচ্ছিল। এত তালাচাবির ভাবনাও ভাবতে হত।” এরপর গুরুও সকলের সঙ্গে মিশে গেছেন। উপাধ্যায় প্রথম থেকে মহাপঞ্জকের ক্ষুদ্র সংস্করণের ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরে গুরুর আগমনে সে পথের পথিক হয়েছেন মুহূর্তে। তাঁর এই আমূল পরিবর্তনের পরিবেশ ও কারণ স্রষ্টা দেখাননি। ব্যক্তিচরিত্র হিসেবে শেষপর্যন্ত শাস্ত্রীয় বিধির পৃষ্ঠপোষক ও প্রচারকের মতোই হালকা চরিত্রবৈশিষ্ট্যতাঁর চরিত্রে স্পষ্ট রূপ পেয়েছে।


১২। ‘গুরু’ নাটকে উপাচার্য চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর উপাচার্য : ‘গুরু’ নাটকের একটি অপ্রধান চরিত্র উপাচার্য সূতসোম। আচার্যের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা। উপাচার্যনির্লোভ। কিন্তু আচার্যের প্রতি অনাস্থা বা শাস্তি তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই শেষ পর্যন্ত আচার্যের পক্ষ নিয়েছেন। অচলায়তন প্রতিষ্ঠাকালে গুরু অদীনপুণ্যকে যেমন আচার্য পদে অধিষ্ঠিত করেন, তেমনি সূতসোমকেও উপাচার্য পদে নিযুক্ত করেন। অচলায়তনের নিয়ম ব্রত শাস্ত্রজ্ঞানের বিরুদ্ধে যাবারও সাহস দেখিয়েছেন। গুরু আয়তনে আসছেন শুনে “তিনি প্রসন্ন হয়েছেন” কিনা জানতে চেয়েছেন আচার্যের কাছে। আচার্য অপরাধের আশঙ্কা করলে উপাচার্য স্থির বিশ্বাসে বলেন—“না, আচার্যদেব, এমন কথা বলবেন না। আমরা কঠোর নিয়ম সমস্তই নিঃশেষে পালন করেছি—কোনো ত্রুটি ঘটেনি।” সেসব নিয়মপালনের হিসেবও তিনি দিয়েছেন। আচার্যের উদ্ভ্রান্ত অবস্থাদেখে উপাচার্য চিন্তিত হয়েছেন। তিনি আয়তনের সমস্ত নিয়মের বাইরে নন। আচার্য পরিবর্তনের

কথা তুললে তাঁর ভাবনার অনুগামী হয়েছেন। পঞ্চকের মধ্যে তা লক্ষ করে বলেছেন—“পাথরের মধ্যে কিঘাস বেরোয়? এমন ছেলে আমাদের আয়তনে কী করে সম্ভব হল! ওই আমাদের দুর্লক্ষণ।” সুভদ্রের উত্তরের জানলা খোলার অপরাধেও তিনি বিস্মিত। প্রায়শ্চিত্তের উপায়ের জন্য উপাধ্যায়ের মতোই মহাপঞ্চকের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং বলেছেন—“তা হলে, মহাপঞক, সমস্ত ভার তোমার উপর রইল।”এরপর এই নাটকের মধ্যে আর আমরা উপাচার্যকে দেখি না। তবুও স্বল্প পরিসরে তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলিপাই, সেগুলি হল—তাঁর মধ্যে গভীর ভালোবাসা আছে, তিনি উদার মানবধর্মে দীক্ষিত, নিষ্ঠাবান, আপন কর্তব্যবোধের ওপরআস্থাশীল ইত্যাদি।


 ১৩৷ ‘গুরু’ নাটকে যূনকদল-এর পরিচয় দাও।6+6

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে তিন শ্রেণির মানুষের কথা আছে—স্থবিরক তথা অচলায়তনিক, যূনক এবং দর্ভক। তিন দলের সাধনা তিন ভিন্ন মার্গে। অচলায়তনিকরা জ্ঞানমার্গের পথিক, যূনকরা কর্মমার্গের পথিক, দর্ভকরা ভক্তি মার্গের পথিক। যূনকরা উদ্দাম, চঞল, শ্রমনিষ্ঠ জাতি। এরা প্রগতিশীল,

কর্মচঞ্চল ও বৈষয়িক উন্নতি সাধনে সচেষ্ট পাশ্চাত্য জাতির প্রতিনিধি—যাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতবর্ষের অচলায়তনিক জড় শান্তি দূরীভূত হয়। ‘গুরু’ নাটকে আমরা দেখি, যূনকরা দাদাঠাকুরের অনুগামী।নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে ‘পাহাড় মাঠ’-এ তাদের প্রথম দেখা গেছে। এই দৃশ্যে পঞক এই গানটি গায়— “এ পথ গেছে কোন্‌খানে গো কোন্‌খানে— তা কে জানে তা কে জানে।” তখন যূনকরা পঞ্চকের অজান্তেই নাচতে শুরু করে। যূনকদের নাচার ব্যাপারে পঞক জিজ্ঞাসা করলে প্রথম যূনক বলে—“আমরা নাচবার সুযোগ পেলেই নাচি, পা দুটোকে স্থির রাখতে পারিনে।” পঞ্ক তাদের কাছে জানতে চাইল যে, তারা কোন্ কোন্ ফসল জমিতে ফলায়? চাষের ব্যাপারে তারা একটি গান গায়— 


১৪। ‘গুরু’ নাটকে দর্ভকদলের পরিচয় দাও।

● দর্ভকদল : ‘গুরু’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে মদর্ভকদের সঙ্গে পঞ্চকের কথোপকথন হয়। তারা সরল প্রাণ, ব্রাত্য জাতি। তারা মূর্খ, শিক্ষাদীক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন। তারা মহিন্দু সমাজেরই অন্ত্যজ অস্পৃশ্য অংশ মএবং হিন্দু ধর্মসাধনার আনুষ্ঠানিকতাবর্জিত ভাবরসে বিভোর। তারা অবিদ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তমোগুণের প্রতীক। দর্ভকেরা শাস্ত্র জানে না, জানে নামকীর্তন করতে ; গানের অঞ্জলি দিয়েই তারা প্রেমময়ের পূজাকরে। তারা ভক্তিমার্গের সাধক, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে সমর্পিত প্রাণ। ভক্তি আর বিশ্বাসের ঐকান্তিকতায় সর্বত্রই তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করে। ঈশ্বরের ওপর নিশ্চিন্ত নির্ভরতাতেই তারা ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ভবসাগরে জীবনতরি ভাসিয়ে দেয়। দর্ভকরা অচলায়তন থেকে একেবারে ভিন্ন সংস্কৃতির নয়।

তারা সর্বদা নাম গান করে। সন্ধ্যাতেও ঘরে ফিরে ঠাকুরের গান করে। কত সহজ, সরল প্রাণে কাণ্ডারির খেয়া চড়া যায় তাদের গানে সেই সারল্য খুঁজে পান আচার্য। যেমন, একটি গান— “ও অকূলের কূল, ও অগতির গতি, ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি।” ভক্তি ও বিনয় দর্ভকদের সহজাত চরিত্রধর্ম। কিন্তুতাদেরচরিত্রের ত্রুটি অন্ধভক্তি ও বিনয়ের আতিশয্যে নিজেদেরদীনাতিদীন ভাবা, অশুচি মনে করা।  নিজেদের অপবিত্র ভাবলে যে আত্মারও পবিত্রতা নষ্ট হয়, এই বোধ তাদের নেই।


১৫। ‘গুরু’ নাটকের রসবিচার করো।

উত্তর সাহিত্যমাত্রই রসের আধার। রসহীন সাহিত্য হতে পারে না। যেমন—ভক্তিরস, দাস্যরস, সখ্যরস, বাৎসল্যরস, বীররস, রৌদ্ররস, হাস্যরস, করুণরস ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে এই রসগুলির উপস্থিতি কতখানি তা বিচার্য। ‘গুরু’ নাটকে অচলায়তনিকদের মধ্যে জ্ঞানের ধারা,

যূনকদের মধ্যে কর্মের ধারা, দর্ভকদের মধ্যে ভক্তির ধারা লক্ষকরা যায়। তৃতীয় দৃশ্য ‘দৰ্ভকপল্লী’তে দৰ্ভকদের সমবেত গানে ভক্তিরস লক্ষ করা যায়— “ও অকূলের কূল, ও অগতির গতি, ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি।” দাস্যরসের মধ্যে প্রভু ও দাসের সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। এই নাটকের একটি সংলাপে দাস্যরস ও বাৎসল্যরসেরও পরিচয় আছে—“সকলে। তুমি আমাদের গুরু? দাদাঠাকুর। হাঁ, আমি তোমাদের গুরু। সকলে। আমরা প্রণাম করি।” সখা থেকে সখ্য কথাটি এসেছে। ‘সখা’ শব্দের অর্থ মিত্রবা বন্ধু। দুই বন্ধুর মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা হল সখ্যরস। আচার্য ও উপাচার্যের মধ্যে যে কথোপকথন, তাতে অনেকটা সখ্যরসের পরিচয় আছে— “আচার্য। সূতসোম, তোমার মনে কি তুমি শান্তি পেয়েছউপাচার্য। আমার তো একমুহূর্তের জন্যে অশান্তি নেই। আচার্য। অশান্তি নেই? উপাচার্য। কিছুমাত্র না।” বৎস থেকে এসেছে বাৎসল্য। বৎস শব্দের অর্থ পুত্র। তাই পুত্র-কন্যার সঙ্গে পিতার যে সম্পর্ক তা বাৎসল্য সম্পর্ক। আচার্য সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্ত করতে না দেওয়ায় তিনি অচলায়তনিকদের কোপে পড়েন। সুভদ্র নিজে থেকে



১৬। “এই তলোয়ারের ডগা দিয়ে ওর মাথার খুলিটা ফাঁক করে দিলে ওর বুদ্ধিতে একটু হাওয়া

লাগতে পারে।” –কে কাকে এই কথা বলেছে?কখন বলেছে? কথাটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্য ‘অচলায়তন’-এ প্রথম যূনক মহাপঞককে এই  কথাটি বলেছে।

দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে যূনকরা অচলায়তনের প্রাচীর ও লোহার দরজা ভেঙে ফেলে। অচলায়তনিকরা সকলে দাদাঠাকুর অর্থাৎ, গুরুকে সম্মান জানান। ব্যতিক্রম শুধু মহাপঞক। তিনি খাদের কিনারাতে দাঁড়িয়েও ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে অটল হয়ে থাকেন। যূনকদের ম্লেচ্ছ বলে আয়তন থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। তখন প্রথম যূনক এই কথাটি বলেছে। অচলায়তনে জ্ঞানের চর্চা হয়। জ্ঞান মানুষকে অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে এই আয়তনে পুঁথির অসার মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করেন ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দ। এই মন্ত্রগুল কাল্পনিক ও মিথ্যা। মন্ত্রগুলি যে মিথ্যা তা পঞ্চক বারবার প্রমাণকরেছে। মহাপঞক মনে করতেন কেউ এই অচলায়তনের প্রাচীর ভাঙতে পারবে না। কিন্তু দেখা যায় গুরু অর্থাৎ, দাদাঠাকুর যোদ্ধার বেশে যূনকদের নিয়ে অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে দেন, অর্থাৎ, মহাপক যে বিশ্বাসের ওপর ভর করে এতদিন জ্ঞানচর্চা করতেন, তার ভিতটি টলে যায়। এরপর তিনি সকলকে অভয় দিয়ে বলেন যে, প্রাচীর ভাঙা হলেও লোহার দরজা কিন্তু কেউ ভাঙতে পারবে না। কিন্তু যখন শুনলেন যে, লোহার দরজা ভাঙা হয়ে গেছে, তখন তিনি ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করে বসলেন। অর্থাৎ, তিনি একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে যখন ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন সিদ্ধান্ত বদল করে চলেছেন। তাঁর মধ্যে পাগলামি দেখা দিয়েছে। প্রথম যূনক তাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়েছে এবং তলোয়ারের ডগা দিয়ে তাঁর মাথার খুলিটা দু-টুকরো করে তাতে প্রকৃতির হাওয়া প্রবেশ করাতে চেয়েছে। প্রথম যূনকের এই কথার মধ্যে হাস্যরসের প্রভাব আছে। প্রথম

যূনক চেয়েছে যে, তাঁকে মৃত্যুভয় দেখালে তিনি ঠিক সোজা রাস্তায় চলে আসবেন।


৷ ১৭। “একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিলা জলে ভাসে। ম্লেচ্ছরা অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দেবে।পাগল হয়েছ?”—কার উক্তি? উক্তিটি ব্যাখ্যাকরো। এই উক্তির মধ্যে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণকরো।

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের এই কথাটি বলেছেন অচলায়তনের একজন বিশিষ্ট শিক্ষকমহাপক।দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে যূনকরা অচলায়তনের প্রাচীর ফুটোকরে দেয়। এই সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।মহাপঞ্ক সকলকে অভয় দিয়ে বলছেন যে, কোনো ভয় নেই।কিন্তু মহাপঞ্চকের কথাতে সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর, জয়োত্তম প্রমুখভরসাও পাচ্ছেন না। কারণ, মহাপঞ্চক যে আশ্বাসগুলি দিচ্ছেন,সেগুলি সত্যতা লাভ করছে না। সত্যটাকেও মহাপঞ্জক অস্বীকার করতে চাইছেন। কারণ তিনি মনে করেন যে, অচলায়তনের প্রাচীর কখনও ভাঙবে না—এটা চিরন্তন সত্যকথা। সূর্য পূর্বদিকে ওঠে এবং পশ্চিমদিকে ওঠে না—এটা যেমন সত্য, অচলায়তনের প্রাচীর চিরকাল অটুট থাকবে এটাও

তেমনি সত্য। শিলা যেমন কখনও জলে ভাসে না, তেমনিম্লেচ্ছরা কোনোদিন অচলায়তনের প্রাচীর ভাঙতে পারবে না।যদিও মহাপঞ্চকের এই ধারণা ভ্রান্ত।এই উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কতকগুলি দিক ফুটেউঠেছে। তাঁর মধ্যে কিছুটা দাম্ভিকতা আছে। তিনি নিজেকেবড়ো জ্ঞানী ভাবেন। অহং বোধ তাঁরমধ্যে আছে। নিজের ওপর তাঁর বিশ্বাস অটুট। তিনি ধ্বংসের কিনারাতে দাঁড়িয়েসৃষ্টির সম্ভাবনা দেখেন। অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো হয়ে গেছে, অথচ তিনি বলেছেন যে, প্রাচীর ফুটো করে দেবে কার সাধ্য?বিশেষ করে ম্লেচ্ছরা তো কখনোই পারবে না।


● ১৯। “উনি গেলে তোমাদের আয়তনের পাথরগুলো সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথিগুলোর মধ্যে বাঁশি বাজবে।” – কে, কাকে এই কথা বলেছে?কোন্ প্রসঙ্গে বলেছে?। কথাটির মর্মার্থ ব্যাখ্যাকরো।

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের এইউক্তিটি করেছে প্রথম যূনক। সে পঞ্ককে বলেছে।পঞক অচলায়তনের মুক্ত প্রাণের প্রতীক। সে মাঝে মাঝে প্রকৃতির আলো ও বাতাস নেওয়ার জন্য আয়তনের বাইরে এসে যূনকদের সঙ্গে মেশে। এখানে এসে দাদাঠাকুরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়এবং তাঁকে তার খুব ভালো লাগে। একটু নিরালায়

সে দাদাঠাকুরের সঙ্গে আলাপ করতে চায়। কিন্তু যূনকদের কথা দেয় যে, তাঁকে অচলায়তনে সে নিয়ে যাবে না। তখন প্রথম যূনক এই কথাটি বলেছে। ‘গুরু’ নাটকে তিনটি জায়গায় তিনটি ধারা প্রবহমান।অচলায়তনে জ্ঞানের ধারা, যূনকদের মধ্যে কর্মের ধারা, দর্ভকদের মধ্যে ভক্তির ধারা। আয়তনে চার দেয়ালের মধ্যেআবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত

হওয়ার উপক্রম। শুধু তারাই বা কেন, শিক্ষকমণ্ডলীও যন্ত্রে পরিণত হয়েছেন। এদের জীবনযাত্রা গতানুগতিক, একঘেয়ে ঠিক যেন পুরোনো চটি-জুতোর মধ্যে পা গলিয়ে দেওয়া।তাঁদের মধ্যে বৈচিত্র্য নেই। “Variety is the spice of life." —এ কথাটি তাঁদের ক্ষেত্রে সত্য নয়। কিন্তু যূনকদের মধ্যেকর্মের ধারা চিরপ্রবহমান। তারা কাজপাগল মানুষ। আরদাদাঠাকুর, তিনি তো এদের Friend, Philosopher andGuide.' তাঁর স্পর্শ যে পাবে, সে নতুনভাবে রূপ লাভ করবে। তিনি প্রত্যেকের দোষত্রুটিগুলি দূর করেতাকে ভালো করার চেষ্টা করেন। তিনি যদি কোনো সময় অচলায়তনে প্রবেশ করেন, তাহলে সেখানকার মানুষ তো দূরের কথা, জড় পদার্থ অর্থাৎ, পাথরগুলা নাচতে থাকবে। অর্থাৎ, তাঁর স্পর্শপেয়ে জড়পদার্থের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হবে। এমনই তাঁর অসাধারণ মহিমা।


২৩। “আজ তিনশো পঁয়তাল্লিশ বছর ঐ জানালা কেউ খোলেনি তা জানিস।” – কার লেখা, কোন্ রচনার অংশ? কে, কাকে এই কথা বলেছে?উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর এই অংশটি রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘গুরু’ নাটক থেকেনেওয়া হয়েছে। অচলায়তনের বিশিষ্ট শিক্ষক উপাধ্যায় এই কথা বলেছেন

সুভদ্ৰকে। অচলায়তনের ছাত্র সুভদ্র উত্তরদিকের জানলা খুলে বাইরের প্রকৃতিজগৎটাকে দেখে ফেলেছিল। দেখল সেখানে পাহাড়, গোরু চরছে। এটাকে সুভদ্র ও অন্যান্য অচলায়তনিকরাপাপ বলে মনে করেন। সুভদ্র উপাধ্যায়কে বার বার বলার চেষ্টা করেছে এবং তিনবার তার কথা আটকে গেলেও চার বারে সে তার পাপের পুরো কথাটি উপাধ্যায়কে বলতে পেরেছে। ঠিক তখনই উপাধ্যায় এই মন্তব্যটি করেছেন। অচলায়তনের চারদিক পঁয়ত্রিশ হাত উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা (পরে অবশ্য প্রাচীর আশি হাত উঁচু করার জন্য লোক লাগানো হয়েছিল)। এই কারণে সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির আলো-বাতাসের কোনো স্পর্শ পেত না। কিন্তু বালকদের মধ্যেশিশুপ্রবণতা সবসময় থাকে। সেই প্রবণতা বা কৌতূহলবশতসুভদ্র আয়তনের উত্তরদিকের জানলা খুলে বাইরের জগৎটা দেখে ফেলে। অচলায়তন যেদিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ওই জানলা খোলেনি। তিনশো পঁয়তাল্লিশ বছর পরে সেই জানলা খুলে সুভদ্র বাইরেটা দেখল। ওই জানলা খোলার অর্থ সে চিরদিনের মতো অন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ, তার চোখ দুটি পাথরের মতো হয়ে যাবে। তাইউপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে অচলায়তনের উত্তরদিকের জানলাখুললে তার চরম সর্বনাশ হবে। সেই কারণে ওই জানলা কেউএর আগে খোলেনি।


ট ২৫। “তোর সব পাপ আমি কেড়ে নেব।” –কে কাকে এই কথা বলেছে? কখন বলেছে? কথাটিরতাৎপর্য লেখো।১+২+২=৫

উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক মসুভদ্রকে এই কথা বলেছে।সুভদ্র হঠাৎ কৌতূহলবশত অচলায়তনের উত্তরদিকের জানলা খুলে বাইরেটা দেখে ফেলে। এই জানলা খুলে বাইরে

দৃষ্টিপাত করা অচলায়তনের শাস্ত্রবিরুদ্ধ কাজ এবং তাতে পাপহয়। তখন সুভদ্র তার এই পাপের কাজটি সকলকে বিশেষ করে পঞ্চককে বলতে চায় এবং কান্নাকাটি করে। তখন পঞ্চক

তাকে এই কথা বলেছিল। আপদে-বিপদে যে সবসময় কারোর কাছে থাকে সে হয় প্রকৃত বন্ধু। সুভদ্রর বিপদের দিনে পঞ্ক তার পাশে থেকেছে, তাকে সাহস দিয়েছে, তাকে অভয় দান করেছে। অতিরিক্ত ভালোবাসা বা স্নেহ ছাড়া এভাবে কারোর পাশে দাঁড়ানো যায় না। পঞক নিজের জন্য কিছু না ভেবেনিঃস্বার্থভাবে সুভদ্রর


২৮। ‘গুরু’ নাটক কোন্শ্রেণির?—আলোচনা করো।

উত্তর ‘গুরু’ প্রথাগত নাটক নয়। এই নাটকে একটি বিশেষ ভাবমন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

‘গুরু’ রূপক নাটক নয়। রূপক নাটকের মতো কোনোসমান্তরাল কাহিনি এ নাটকে নেই।নাটকের চরিত্র ও তাদের নামকরণ যেন রূপকাশ্রিত। দুটিপ্রধান চরিত্র মহাপঞক ও পঞ্চক। এই দুই সহোদর ভ্রাতারবিরোধ চরম, কিন্তু এদের মিলন ছাড়া সাধনা সম্পূর্ণতা পায়না। মহাপঞক নিষ্ঠা কঠোরতার সাধক,সরসতা ও প্রাণেরসাধনা পঞ্চকের। গুরু উভয়ের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।যূনকরা দুর্দান্ত বন্য প্রকৃতির। এরা দাদাঠাকুরের নেতৃত্বে আয়তনের প্রাচীর ভেঙেছে। তাদের আক্রমণ যেন ইউরোপীয়শক্তির ভারত আক্রমণ। কিন্তু এরাও সংকীর্ণ বা বদ্ধ কর্মের প্রতীক। কর্ম যে লক্ষ্য নয়, তা উপলক্ষ্য, এরা তা জানে না। মহাপঞ্জকের মতো এরাও ভ্রান্ত। যদিও পথ আলাদা। যূনকরা সংকীর্ণ বা বদ্ধ কর্মের প্রতীক। আর দর্ভকরা ভাবসর্বস্ব দুর্বল ভক্তির প্রতীক। তারা অন্ত্যজ কিন্তু সভ্য মানুষের দাস ; ভারতের

তথাকথিত নিম্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।রবীন্দ্রনাথ বিভিন্নভাবেই বলেছেন, বিধিনিষেধ, আচার-সর্বস্বতা মানুষের মনকে নির্জীব করে, প্রাণের প্রবাহকে রুদ্ধকরে হৃদয়ের জমিকে মরুভূমিতে পরিণত করে। তবে যাঁরা সেইপ্রথা-সংস্কারকে ভেঙে ফেলেন, আচার-বিলাসীদের আঘাতহানেন, অচলকে সচল করতে প্রয়াসী হন—পঞক সে জাতীয়মানুষের প্রতীক। তার সম্পর্কে বলা যায়— “ওরে নবীন, তরে আমার কাঁচাওরেসবুজ ওরে অবুঝ



 ২৯। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। “তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানে

না। আমার মন যে কাঁদে আপন মনে কেউ তা মানে না।”

● উৎস : এই চরণ দুটি নাট্যকার রবীন্দ্রনাথঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের প্রথম দৃশ্য ‘অচলায়তন’থেকেনেওয়া হয়েছে।

● প্রসঙ্গ : আলোচ্য নাটকের প্রথম দৃশ্য ‘অচলায়তন’-এ আমরা দেখি শিক্ষায়তনের একদল বালক গুরুর আসার ব্যাপারে আলোচনা করছে। গুরু দেখতে কেমন? গুরুর এখানে জায়গা হবে না কিনা?—ইত্যাদি নানা প্রশ্ন তাদের মনে দেখা দিয়েছে? তারা চলে যাওয়ার পর পঞ্ক প্রবেশ করে এই গানটি শুরু করে।

● তাৎপর্য : নাটকের ও পঞ্চকের প্রথম এই গানটি নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। এই গানটির মধ্য দিয়েই নাটকের মর্মবাণী যেন স্পষ্ট হয়ে যায়। পঞ্চকের মনের গভীরে অসীমের ডাক এসে পৌঁছেছে। অসীমের আহ্বান অচলায়তনের অন্যান্যদের মনে নাড়া না দিলেও পঞ্ক ব্যাকুল চিত্তে গানটি গেয়েছে।  অসীমের টানে মন্ত্রতন্ত্রের নিয়মের গণ্ডি অতিক্রমের আহ্বান তাকে উদাস করে। অসীমের টান তার মনে ঝাঁকুনি দেয়। অচিনপুরের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চায় মিলনের আকাঙ্ক্ষায়—গানের দুটি চরণে তা প্রকাশিত।


ID ৩২। “আমি তোমার প্রণাম গ্রহণ করব না—আমি তোমাকে প্রণত করব।”

● উৎস : এই অংশটুকু নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’নাটকের চতুর্থ দৃশ্য ‘অচলায়তন’ থেকে

নেওয়া হয়েছে। 

● প্রসঙ্গ : চতুর্থ দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই, গুরু দাদাঠাকুরের বেশে যূনকদের নিয়ে অচলায়তনের প্রাচীর ও দরজা ভেঙে দেন। সকলে তাকে গুরু বলে মেনে নিলেও মহাপঞ্জক মেনে নেন না। বরং তিনি গুরুর সঙ্গে তর্কবিতর্ক করেন। সকলে গুরুকে প্রণাম করলে মহাপঞ্চক প্রণাম করতে না চাইলে গুরু তথা দাদাঠাকুর তাঁকে তখন এই কথা বলেছেন।

● তাৎপর্য : ‘প্রণাম’ শব্দের অর্থ হল—পায়ের ওপর আনত হয়ে অভিবাদন। যে প্রণাম করে এবং যাকে প্রণাম করা হয়—উভয়ের মধ্যে ভক্তিশ্রদ্ধা মিশিয়ে থাকে। কিন্তু ‘প্রণত’ করার মধ্যে একটা বলপ্রয়োগ বা দর্পের বহিঃপ্রকাশ আছে। যিনি গুরু, তিনি মানুষকে নত করান। অচলায়তন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অর্থাৎ, সকলকেসাধনার স্তরে উন্নীত করার জন্য অচলায়তন প্রতিষ্ঠা করা হয়।কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি; অচলায়তনিকরা যূনক এবং দর্ভকদেরসঙ্গে দীর্ঘ ব্যবধান তৈরি করেছিল। দাদাঠাকুর মহাপঞ্জকের মনে প্রেমের সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন। মনের মধ্যেপ্রেম,ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা, দয়া, করুণা, উদারতার বিস্তৃতির প্রকাশ ঘটিয়ে হৃদয়ের বন্ধ দরজা খুলতে চেয়েছেন গুরু।

[TAG]:   একাদশ শ্রেণি গুরু পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ pdf,গুরু পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ mcq,গুরু বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণি,একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ,একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ 3 নং প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ 1 প্রশ্ন উত্তর,Class 11 Bengali golpo question in bengali,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url