তােমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা|কবি জীবনানন্দ দাশ প্রবন্ধ রচনা| Your favorite poet Essay in Bengali|
তােমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা|Your favorite poet Essay in Bengali,Tomar priya kabi prabandha racana.
ভূমিকা: কবিতা আমার চিরকালের ভালােলাগার সঙ্গী৷ কোন্ কবির কবিতা সব থেকে বেশি ভালাে লাগে? এ প্রশ্ন করলে তাই বহু প্রিয় কবিতা ভিড় করে আসে চোখের সামনে। তবু যে কবিতাগুলি সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে অধিকার করে আমার সমস্ত চেতনা, সেগুলির স্রষ্টা আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রপরবর্তী বাংলা কবিতায় যিনি রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার না করে রবীন্দ্ৰবলয়েই প্রতিষ্ঠা করেছেন আপন স্বাতন্ত্র, সেই জীবনানন্দের কৃতিত্বকে সম্মান না জানিয়ে পারি না।
ব্যক্তিজীবন; ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা দেশের বরিশাল জেলায় জীবনানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন সত্যানন্দ দাশ, আর মা কুসুমকুমারী দেবী। তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব কাটে বরিশালে, শেষ পর্ব কলকাতায়। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে জীবনানন্দ প্রথমে সিটি কলেজ, পরে দিল্লির রামযশ কলেজ, বাগেরহাট কলেজ, খড়গপুর কলেজ ইত্যাদি নানা জায়গায় এবং শেষপর্যন্ত হাওড়া গার্লস কলেজে শিক্ষকতার চাকরি করেন৷ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় জীবনানন্দ প্রয়াত হন৷
কবিজীবনঃ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ—জীবনানন্দের কবিপ্রতিভার বিকাশের কাল| এই সময়ে কল্লোল, বাবাণী, কালিকলম, প্রবাসীইত্যাদি পত্রিকায় জীবনানন্দের অজস্র কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দেই প্রকাশিত হয় জীবনানন্দের প্রথম কবিতার বই ‘মরা পালক’ |এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, শ্রেষ্ঠ কবিতা, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা ইত্যাদি কবিতার বই বাংলা কবিতাপাঠক প্রত্যক্ষ করল এমন এক কবিকে যার চেতনাজগৎ সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর সমকালে তাই জীবনানন্দকে সমালােচিতও হতে হয়েছে বারেবারে—কেউ বলেছেন ‘নির্জনতার কবি, কারও মতে তিনি ‘দুর্বোধ্য কবি'। কিন্তু মৃত্যুর পরে কবির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে কবিতার বিচার হয় কালের প্রেক্ষিতে এবং জীবনানন্দ সেখানে কালজয়ী।
অন্যান্য রচনা: কবিতা ছাড়াও জীবনানন্দ কিছু গল্প ও সুতীর্থও মাল্যবান নামে দুটি উপন্যাস রচনা করেন। কবিতা পত্রিকায় তাঁর কয়েকটি সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি স্টেট্রম্যান, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড ইত্যাদি পত্রিকায় তার কিছু ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্য জীবনানন্দকে মনে রাখবে কবি হিসেবেই।
জীবনানন্দের কবিতার ভুবন: জীবনানন্দ আপাতভাবে প্রকৃতির কবি। কিন্তু সে প্রকৃতি যতটা মুধতার, তার থেকে অনেক বেশি করে জড়িয়ে অস্তিত্বের সঙে| জীবনানন্দই বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি যিনি অবচেতনের গভীরে ডুব দিয়েছিলেন, আর আধুনিক মানুষের নিঃসঙ্গতা আর বিচ্ছিন্নতার সত্যকে কবিতায় তুলে এনেছিলেন— “অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়— আরাে এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে আমাদের ক্লান্ত করে। ক্লান্ত ক্লান্ত করে।”কিন্তু মৃত্যু, বিবর্ণতা, ক্লান্তি সত্ত্বেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবক্ষয়কে তুলে ধরেও শেষপর্যন্ত আশা হারাননি তিনি। তাই তিনি লিখেছেন- “পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন/মানুষ তবুও 'ঋণী এই পৃথিবীরই কাছে।” তবুও স্বপ্ন দেখেছেন—“কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলােত্তমা হবে।” জীবনানন্দের কবিতা মানে উপমা, চিত্রকল্পের অসামান্য দ্যুতিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা এক প্রগাঢ় অনুভব| কথা দিয়ে আঁকা ছবি।
উপসংহার। জীবনানন্দ আমাকে গেছে দেন কৰিতার আশ্চর্য ভুবনে—যেখানে স্লোগান বিদ্রোহ-প্রতিবাদ পাণ্ডিত্যের বাইরে গিয়ে অJতৰে । ঋদ্ধ হওয়া যায়৷ যেখানে ইতিহাস খুঁড়ে শােনা যায় শত শত ঝরনার
জলধবনি। যেখানে এখনও—“...নদীর মানে হিধ যার জল, সূর্য মানে আলাে। আর তাই আমার অনুভবে চেতনায় অদ্বিতীয় হয়ে থাকেন জীবনানন্দ।
অনুসরণে লেখা যায়
তােমার প্রিয় কবি॥ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ ॥ কবি জীবনানন্দ দাশ