জীবন সংগঠনের স্তর প্রশ্ন উত্তর | নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF | Class 9 Life science 2nd chapter question in bengali pdf
জীবন সংগঠনের স্তর নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 9 Life science 2nd chapter question in bengali pdf
জীবন সংগঠনের স্তর |
আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় জীবন সংগঠনের স্তর প্রশ্ন উত্তর PDF। class 9 life science second chapter question Pdf in bengali | WB Class nine Life science question in bengali| WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য নবম শ্রেণি জীবন বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।
তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |নবম শ্রেণি জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় জীবন সংগঠনের স্তর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class ix Life science 2nd chapter important Question in Bengali Pdf ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf , Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
‘জীবন সংগঠনের স্তর’ নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞানের প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
জীবদেহে জলের ভূমিকা :
(i) জল উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশের প্রোটোপ্লাজমের সজীবতা বজায় রাখে। ii) উদ্ভিদের পাতায় উৎপন্ন খাদ্য জলের সাহায্যে কোশ থেকে কোশান্তরে প্রেরণ করে।
(iii) জল উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।
(iv) বীজের অঙ্কুরোদ্গম জলের সহায়তায় ঘটে।
(v) খনিজ `লবণ, হরমোন এবং বিভিন্ন অজৈব ও জৈব পদার্থ জলীয় মাধ্যমে সমগ্র জীবদেহে পরিবাহিত হয়।
(vi) প্রাণীদেহে খাদ্যবস্তু আর্দ্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাচিত হয়ে পুষ্টিতে সহায়তা করে।
vii) জল প্রাণীদেহে রক্ত ও লসিকাকে তরল রেখে খাদ্যের সারাংশ, O2, উৎসেচক, হরমোন, খনিজ লবণ ইত্যাদিকে কোশে কোশে সংবাহিত করে।
(viii) জল ঘর্মাকারে এবং মূত্রাকারে প্রাণীদেহের বিপাকজাত পদার্থগুলিকে দেহ থেকে দূরীভূত করে। মানুষের সাধারণত দৈনিক 3000ml জলের প্রয়োজন হয়। কারণ দৈনিক মূত্রের সঙ্গে 1500ml, ঘামের সঙ্গে 800-1000ml, নিশ্বাসের সঙ্গে 300ml, মলের সঙ্গে 200ml জল নির্গত হয়।
● অ্যাসিড (Acid) : এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু সমন্বিত যৌগ যা জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক (+) আধান রূপে কেবলমাত্র হাইড্রোজেন আয়ন (H+) উৎপন্ন করে এবং যার হাইড্রোজেন পরমাণু সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধাতু বা ধাতুর মতো আচরণকারী যৌগ মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে বিক্রিয়াজাত পদাৰ্থৰূপে লবণ প্রস্তুত করে, তাদের অ্যাসিড বলে।
অ্যাসিডের বৈশিষ্ট্য ঃ (i) অ্যাসিড ভিনিগারের মতো অম্লস্বাদ যুক্ত। (ii) নীল রঙের লিটমাসকে লাল রঙে পরিণত করে। (iii) অ্যাসিড ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে। HCIH + CIT; H2SO42H++SO4 আবার, HCl + NaOH - NaCl + H2O ; H2SO4 + Zn - ZnSO4 + H2 \
উৎস-এর উপর নির্ভর করে অ্যাসিড দু-প্রকার। যেমন—
A. খনিজ অ্যাসিড (Mineral acid) : যেসকল অ্যাসিড খনিজ পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয়, যেমন—হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড।
B. জৈব অ্যাসিড (Organic acid) : যেসকল অ্যাসিড জৈব পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয় এবং যাদের অন্তত একট কার্বক্সিল (-COOH) বর্গ থাকে। যেমন—ম্যালিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
জীবদেহে অ্যাসিডের ভূমিকা আবার তীব্রতার উপর নির্ভর করে অ্যাসিড দু-প্রকার। যেমন—(i) তীব্র অ্যাসিডঃ নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড। (ii) মৃদু অ্যাসিড ঃ কার্বনিক অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড। অ্যাসিড জীবদেহে রক্তমধ্যস্থ pH-র ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বিভিন্ন জৈবরাসায়নিক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। দেহে ক্ষারের মাত্রা বেড়ে গেলে অ্যাসিড বেশিমাত্রায় নিঃসৃত হয়ে ক্ষারকে প্রশমিত করে। অ্যাসিড (HCI) খাদ্যগ্রহণের পর খাদ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকায় ভেঙে হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া ক্লান্তির পর পেশিকে অক্সিজেনের জোগান দিতে, মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তি যোগাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়।
ক্ষার (Bases) : জলে দ্রবীভূত যাবতীয় ধাতব মূলকের অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইডকে ক্ষার বলে।
ক্ষারের বৈশিষ্ট্য ঃ (i) ক্ষারীয় দ্রবণ পিচ্ছিল হয়। (ii) এটি তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম। (iii) লাল রঙের লিটমাসকে নীল রঙে পরিণত করে। (iv) সর্বদাই বিয়োজিত হয়ে হাইড্রক্সিল (OH) আয়ন গঠন করে। NaOH Na + OHT| m(v) ক্ষার অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ ও জল উৎপন্ন করে। যেমন-CaO (ক্ষারক) + 2HCI (অ্যাসিড)
CaCl, (লবণ) + H2O (জল), NaOH + HNO3 - NaNO3 + H2O, Ca(OH)2 + H2SO4 - CaSO4 + 2H201
যেসকল ক্ষার অল্পমাত্রায় আয়নিত হয় তাদের মৃদু ক্ষার (weak alkali) বলে, যেমন– NH4OH। আবার, যেসকল ক্ষার অধিকমাত্রায় আয়নিত হয় তাদের তীব্র ক্ষার (strong alkali) বলে, যেমন– NaOH, KOH ইত্যাদি। জীবদেহে ক্ষারের ভূমিকা ঃ (দেহে অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ক্ষার তাকে প্রশমিত করে। এ ছাড়া ক্ষার দেহের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহে রক্ত একটি প্রাকৃতিক বাফার এবং এই বাফারকে নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্য ক্ষারের প্রয়োজন) এ ছাড়াও বিভিন্ন উৎসেচক, যেমন—ট্রিপসিন, ক্ষারীয় মাধ্যমে ভালো কাজ করে।
লবণ (Salt) কোনো অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু (H), কোনো ধাতু বা ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রতিস্থাপিত হলে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে লবণ বলে।
ক্রিয়ার ফলে জলসত যে যৌগ প্রস্তুত হয় তাই লবণ। যেমন-
লবণের প্রকারভেদ ঃ(লবণ সাধারণত তিন প্রকার। যেমন—(i) শমিত বা প্রশম লবণ ঃ যেমন—HCI থেকে উৎপন্ন NaCl একপ্রকার শমিত লবণ। (ii) আম্লিক বা বাই লবণ ঃ যেমন—H2SO4 অম্ল থেকে উৎপন্ন NaHSO4 একপ্রকার আম্লিক লবণ। (iii) ক্ষারীয় লবণঃ যেমন—ক্ষারীয় লেড নাইট্রেট, ক্ষারীয় লেড ক্লোরাইড।
জীবদেহে লবণের ভূমিকা ঃ(লবণ আমাদের দেহে বিভিন্ন তরলের বিশেষ করে রক্তের সাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই কারণে দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে গেলে আমাদের লবণ জল (ORS দ্রবণ) পান করতে হয়। (দেহে অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে লবণ তাকে প্রশমিত করে। বিভিন্ন প্রকার পেশি সঞ্চালন এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণের জন্য লবণের প্রয়োজন। কোশে গ্যাসের ভূমিকা : কোশের প্রোটোপ্লাজমে নাইট্রোজেন একটি বিশেষ উপাদান। শ্বসন ক্রিয়ার জন্য O2 গ্যাস কোশে প্রবেশ করে এবং জারণ ক্রিয়ায় অংশ নেয়। অপরপক্ষে জারণ ক্রিয়ায় উৎপন্ন CO, কোশ থেকে মুক্ত হয়। অপরপক্ষে উদ্ভিদের সবুক্ত কোশে CO, খাদ্য সংশ্লেষে ভাবে নেংগঠনে যেমন অনেক অজৈব বস্তুর প্রয়োজন হয় তেমনি নানারকম জৈববস্তুরও প্রয়োজন হয়। জৈব পদার্থগুলি সাধারণত কার্বন ও হাইড্রোজেন সহযোগে প্রস্তুত হয়। জীবিত কোশের গঠন কাঠামো তৈরি ছাড়াও শক্তি সঞ্চয়, শক্তি উৎপাদন, বৃদ্ধি, পুষ্টি, ক্ষয়পুরণ ইত্যাদি জৈবিক কার্যগুলি সম্পন্ন হয়। জৈব অণুদের দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা- (i) ক্ষুদ্র অণুসমূহ (Micro molecules)-সরল শর্করা, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড; (ii) বৃহৎ অণুসমূহ (Macro molecules)—জটিল শর্করা, প্রোটিন, লিপিড বা ফ্যাট এবং নিউক্লিক অ্যাসিড। > অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড (Essential Amino Acid): (যসকল অ্যামাইনো অ্যাসিড দেহে সংশ্লেষিত হয় না, কিন্তু দেহ গঠনের জন্য অপরিহার্য, সেইজন্য কোনো খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়, তাদের অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড বলে।
মানবদেহে অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সংখ্যা ৪টি। যেমন—লিউসিন, আইসোলিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, ফিনাইল অ্যালানিন, ট্রিপটোফ্যান, খ্রিওনিন, ভ্যালিন।
জীবদেহে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভূমিকা ঃ
(i) অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রোটিন ও উৎসেচকের প্রাথমিক উপাদান। (ii) কতিপয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে হরমোন উৎপন্ন হয়। যেমন—টাইরোসিন থেকে থাইরক্সিন এবং অ্যাড্রিনালিন হরমোন উৎপন্ন হয়।
(iii) টাইরোসিন অ্যামাইনো অ্যাসিড ত্বকের মেলানিন রঞ্জক তৈরি করে।
(iv) ট্রিপটোফ্যান অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে ভিটামিন নিকোটিনামাইড ও উদ্ভিদ হরমোন ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়।
> অ্যামাইনো অ্যাসিড পুল : খাদ্য প্রোটিন ও দেহজ প্রোটিন থেকে উৎপন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড রক্তে যে অ্যামাইনো অ্যাসিড ভাণ্ডার গড়ে তোলে তাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড পুল বলে।
ফ্যাটি অ্যাসিড (Fatty acid) : ফ্যাটি অ্যাসিড একধরনের সরল হাইড্রোকার্বন শৃঙ্খল যুক্ত জৈব অম্ল যা ফ্যাটের আর্দ্রবিশ্লেষণ থেকে পাওয়া যায়। হাইড্রোকার্বনের শৃঙ্খল দ্বি-বন্ধনবিহীন সম্পৃক্ত এবং দ্বি-বন্ধনযুক্ত অসম্পৃক্ত হতে পারে।
■ প্রকারভেদ (Types of Fatty acid) : ফ্যাটি অ্যাসিড দু-প্রকার, যথা— A. সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড এবং B. অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড।
A. সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড (Saturated Fatty Acid) : এই প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিডে দুটি কার্বন পরমাণুর মধ্যে দ্বি-বন্ধন বা ত্রিযোজী বন্ধন থাকে না। এরা অতিরিক্ত কোনো হাইড্রোজেন গ্রহণ করতে পারে না, তাই এদের সম্পৃক্ত বলা হয়। উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট বলে গৃহ উন্নতায় কঠিন থাকে। যেমন—(i) পামিটিক অ্যাসিডঃ প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ ফ্যাট। (ii) স্টিয়ারিক অ্যাসিড : প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ ফ্যাট। (ii) অ্যারাকিডিক অ্যাসিড (Arachidic acid) : বাদাম তেল।
B. অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড (Unsaturated Fatty Acid) : এই প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিডে কার্বন শৃঙ্খলের মধ্যে এক বা একাধিক দ্বিযোজী বা ত্রিযোজী বন্ধন থাকে। দ্বি-বন্ধন মাঝে মাঝে ভেঙে যায়। এরা কম গলনাঙ্কবিশিষ্ট, ফলে ঘরের তাপমাত্রায় তরল থাকে। যেমন– (i) ওলেইক অ্যাসিড, (ii) লিনোলেইক অ্যাসিড, (iii) আরাকিডোনিক অ্যাসিড। জীবদেহে ফ্যাটি অ্যাসিডের ভূমিকা : (i) কোশপর্দা গঠন করে। (ii) প্রোস্টাগ্লান্ডিন গঠনে অংশ নেয়। (iii) দেহে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
জীবন সংগঠনের স্তর mcq প্রশ্ন
নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) : নিউক্লিওটাইড পেন্টোজ শর্করা, নাইট্রোজেন বেস এবং ফসফেট সহযোগে গঠিত। A. পেন্টোজ শর্করা (Pentose Sugar) : এটি 5 কার্বন যুক্ত শর্করা। পেন্টোজ শর্করা দু-প্রকার—(i) রাইবোজ শর্করা (RNA-র ক্ষেত্রে), (ii) ডি-অক্সি রাইবোজ শর্করা (DNA-র ক্ষেত্রে)। B. নাইট্রোজেন বেস (Nitrogen base) : দু-প্রকার– (i) পিউরিন, (ii) পিরিমিডিন।
(i) পিউরিন (Purine) দু-প্রকার– (a) অ্যাডেনিন (Adenine) = A, (b) গুয়ানিন (Guanine)
(ii) পিরিমিডিন (Pyrimidine) তিন প্রকার – (a) সাইটোসিন (Cytocine) = C, (b) থাইমিন (Thymine) = T, (c) ইউরাসিল (Uracil) = U (RNA-র ক্ষেত্রে)।
C. ফসফোরিক অ্যাসিড (Phosphoric acid) : DNA অথবা RNA-র ক্ষেত্রে একই ধরনের উপাদান পাঁচ রকমের নাইট্রোজেন বেস, শর্করা এবং ফসফোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সজ্জায় পাঁচ রকমের নিউক্লিওটাইড গঠন করে। নিউক্লিক অ্যাসিডে থাইমিন (T)-এর সঙ্গে অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G)-এর সঙ্গে সাইটোসিন (C), অ্যাডেনিনের (A) সঙ্গে ইউরাসিল (U) হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা যুক্ত থাকে। উল্লেখ্য RNA-তে থাইমিন (T)-এর পরিবর্তে ইউরাসিল (U) যুক্ত থাকে। জীবদেহে নিউক্লিওটাইডের ভূমিকা ঃ নিউক্লিওটাইড দ্বারা গঠিত নিউক্লিক অ্যাসিড দু-প্রকার—DNA (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) এবং RNA (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)। DNA প্রধানত জীবদেহের বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি বংশ পরম্পরায় বহন করে বলে DNA-কে জিন (Gene) বলে। সুতরাং জিন হল DNA-এর এমন একটি অংশ যাতে অনেকগুলি নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) রৈখিক সজ্জায় শৃঙ্খলিত থেকে একটি পলিপেপটাইড তৈরি
DNA ও RNA-র পার্থক্য (Differences between DNA & RNA DNA 1. DNA প্রধানত কোশের নিউক্লিয়াসস্থিত ক্রোমোজোমে থাকে। 2. DNA-তে ডিঅক্সি রাইবোজ শর্করা থাকে। 3. DNA-এর চারটি নাইট্রোজেন বেস হল—অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C), থাইমিন (T) । 4. DNA দ্বিতন্ত্রী এবং প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো। RNA 1. RNA প্রধানত কোশের সাইটোপ্লাজমে থাকে। 2. RNA-তে রাইবোজ শর্করা থাকে। 3. RNA-এর চারটি নাইট্রোজেন বেস হল—অ্যাডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন (C) এবং ইউরাসিল (U)। 4. RNA একতন্ত্রী এবং রেখাকার। জীবদেহে শর্করার ভূমিকা : (i) দেহগঠন : দৈনিক খাদ্যে প্রায় 70-80% শর্করা থাকে যা দেহগঠনে অংশগ্রহণ করে। (ii) শক্তি সরবরাহ ঃ শর্করা দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাপশক্তি উৎপাদন করে। এক গ্রাম শর্করার জারণে 4.1 kcal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। (iii) সঞ্জয় : প্রয়োজনের অতিরিক্ত শর্করা যকৃৎ ও পেশিতে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চিত থাকে, যা ভবিষ্যতে ব্যবহৃত হয়। (iv) দ্বিশর্করা খাদ্য উপাদানরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন—মলটোজ (বার্লি), ল্যাকটোজ (দুগ্ধ শর্করা), সুক্রোজ (ইক্ষু শর্করা) ইত্যাদি। (v) পলিস্যাকারাইড বা বহু যৌগ শর্করা হল শ্বেতসার যা চাল, আলু, রুটিতে সঞ্চিত থাকে এবং পুষ্টি জোগায়। সেলুলোজ কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। জীবদেহে প্রোটিনের ভূমিকা ঃ
(i) দেহগঠনঃ জীবদেহ গঠনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। কোশের গঠনবস্তুর বেশিরভাগটাই প্রোটিন। দেহের পেশি, অস্থি, তরুণাস্থি প্রভৃতি প্রোটিন দিয়ে তৈরি। (ii) দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি ঃ দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যক উপাদান। দৈহিক বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা প্রোটিন পূরণ করে। (iii) উৎসেচক সংশ্লেষ : জীবদেহের জৈব অনুঘটক উৎসেচক প্রোটিন দিয়ে তৈরি। (iv) প্রোটিনের ক্যালোরিমূল্য : 4.2 kcal/gm
প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ : (i) সরল প্রোটিন (Simple protein) : (যেসব প্রোটিন কেবলমাত্র অ্যামাইনো অ্যাসিড সহযোগে গঠিত, অন্য কোনো পদার্থের সঙ্গে যুক্ত থাকে না, তাদের সরল প্রোটিন বলে। যেমন—অ্যালবুমিন। (ii) সংযুক্ত প্রোটিন (Conjugated protein) : সরল প্রোটিন অন্য কোনো প্রোটিনবিহীন প্রস্থেটিক গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে তাকে সংযুক্ত প্রোটিন বলে। যেমন—নিউক্লিওপ্রোটিন।
(iii) লব্ধ প্রোটিন (Derived protein) ঃ লব্ধ প্রোটিন প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, প্রোটিন অণুর আর্দ্রবিশ্লেষণের সময় এদের উদ্ভব হয়। যেমন—পেপটোন।)
ফ্যাট বা স্নেহপদার্থ (Fat) ঃ জীবদেহে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের মতো ফ্যাট বা স্নেহপদার্থও গুরুত্বপূর্ণ। সকল রকম লিপিডকে সাধারণভাবে ফ্যাট (Fat) বলে। গ্রিকশব্দ ‘Lipos’-এর অর্থ হল ফ্যাট। ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় পদার্থগুলি জলে অদ্রবণীয় কিন্তু বেঞ্জিন, ইথার, ক্লোরোফর্ম-এ দ্রবণীয়। কোলেস্টেরল কী?!
মানুষের রক্তে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেরল। প্রতি 100 ml রক্তে এর স্বাভাবিক পরিমাণ 150-250mg।
অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড: যেসকল ফ্যাটি অ্যাসিড দেহে সংশ্লেষিত হয় না কিন্তু জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য প্রয়োজন হয়।
যেমন—লিনোলেনিক অ্যাসিড, লিনোলেইক অ্যাসিড, অ্যারাকিডোনিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
জীবদেহে লিপিডের ভূমিকা ঃ (i) শক্তির উৎস ঃ প্রাণীদেহে তাপশক্তি উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এক গ্রাম ফ্যাট থেকে প্রায় 9.3 kcal শক্তি পাওয়া যায়। (ii) খাদ্যভাণ্ডার ঃ প্রাণীদেহে চর্বি বা মেদরূপে সজ্জিত থেকে খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তোলে। উপবাসকালে বা শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাব ঘটলে ফ্যাট শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। (iii) তাপ নিয়ন্ত্রণ ঃ ত্বকের নীচে সঞ্চিত ফ্যাট দেহের তাপ সংরক্ষণে সহায়তা করে। (iv) দ্রাবক হিসাবে কার্য ঃ ভিটামিন A, D, E, K ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। (v) হরমোন উৎপাদন : কোলেস্টেরল থেকে ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন ইত্যাদি হরমোন ও ভিটামিন D উৎপন্ন হয়। •
নিউক্লিক অ্যাসিড (Nucleic Acid) : প্রতিটি সজীব কোশের নিউক্লিয়াসে অম্লধর্মী যে পদার্থ জীবের নানান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায় এবং অপত্য জনুতে এইসকল বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার ঘটায় তাদের নিউক্লিক অ্যাসিড বলে। DNA এবং RNA নিউক্লিক অ্যাসিড নামে পরিচিত। প্রাণী এবং উদ্ভিদ কোশের ক্রোমাটিন তন্তুর মধ্যে DNA এবং নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমে RNA থাকে। আবার কয়েকটি সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুতে (মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাসটিড) DNA অবস্থান করে।
রাসায়নিক গঠন (Chemical structure) ঃ নিউক্লিক অ্যাসিড নিউক্লিওটাইড (Nucleotide) নামক একক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ যৌগ। অর্থাৎ নিউক্লিক অ্যাসিড DNA ও RNA-তে নিউক্লিওটাইড এককগুলি একের পর এক রৈখিক সজ্জায় সংযুক্ত হয়ে দীর্ঘ নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল তৈরি করে। নিউক্লিওটাইড হল নিউক্লিক অ্যাসিডের একক। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড একটি নাইট্রোজেনাস বেস, একটি পেন্টোজ শর্করা (রাইবোজ অথবা ডিঅক্সিরাইবোজ)
ও একটি ফসফোরিক অ্যাসিড নিয়ে গঠিত।
জীবদেহে নিউক্লিক অ্যাসিডের ভূমিকা ঃ (i) DNA প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোশের সমস্ত জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। DNA জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবহণ করে। (ii) RNA কোশের প্রোটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে। RNA রাইবোজোম গঠনে অংশ নেয়।
কোশে এনার্জি কারেন্সি হিসেবে ATP-র ভূমিকা (Role of ATP as energy currency of a cell) :(ATP-র পুরো নাম হল অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (Adenosine triphosphate)। মুখ্যত শ্বসন ক্রিয়ায় ATP উৎপন্ন হয়। ATP থেকে নির্গত শক্তি জীবদেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়। জীবদেহে একমাত্র ATP অণুর মধ্যেই শক্তি সঞ্জিত থাকতে পারে। এই কারণে ATP-কে এনার্জি কারেন্সি বলে। একটি ATP ভেঙে 7.3 kcal শক্তি নির্গত হয়।
অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (AMP) আর একটি ফসফেট সহযোগে ADP বা অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট গঠন করে। ADP-র সঙ্গে আর একটি ফসফেট সংযুক্ত হয়ে ATP গঠন করে। এক-একটি ফসফেট সংযুক্তিকরণ বন্ডে প্রচুর মাত্রায় শক্তি সঞ্চিত হয়। এই উচ্চ শক্তি সম্পন্ন বন্ড কোশ ও কলায় সঞ্চিত থাকে। যখন শক্তির প্রয়োজন হয় তখন ATP ভেঙে ADP তৈরি হয় এবং ADP ভেঙে AMP তৈরি হয়। ফলে শক্তির মুক্তি ঘটে এবং কোশ ও কলার বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। ATP ভেঙে শক্তি নির্গত হওয়ায় ATP-কে এনার্জি কারেন্সি বলে।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ (Vitamins)
» সূচনা (Introduction) : বিজ্ঞানী লুনিন (Lunin, 1881) প্রথম লক্ষ করেন যে, প্রয়োজনীয় সবরকম খাদ্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও বিশেষ এক খাদ্য উপাদানের অভাবে জীবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি হয় না। বিজ্ঞানী হপকিনস্ (Hopkins) ওই প্রকার খাদ্যোপাদানকে ‘অত্যাবশ্যক সহায়ক খাদ্যোপাদান’ রূপে অভিহিত করেন। 1912 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী কাশিমির ফাঙ্ক (Casimir Funk) এই পদার্থকে ভাইটামাইন (vitamine) নামে অভিহিত করেন।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ
যে বিশেষ খাদ্যোপাদান স্বাভাবিক খাদ্যে অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং যার অভাবে দেহে বিভিন্ন রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়, তাকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ বলে।
ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Vitamin) : ভিটামিনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (i) ভিটামিন একপ্রকারের জৈব অনুঘটক, যা বিপাক ক্রিয়ায় কো-এনজাইমরূপে কাজ করে।
(ii) ভিটামিন সাধারণ খাদ্যে খুব কম পরিমাণে থাকে।
(iii) ভিটামিন অন্যান্য খাদ্যোপাদানের তুলনায় জীবদেহে খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। (iv) ভিটামিন পরিপাক ক্রিয়ায় নষ্ট হয় না।
(v) উচ্চ তাপমাত্রায়, জারণ ক্রিয়ায়, রন্ধনকালে, তীব্র সূর্যালোকে এবং ক্ষারীয় পরিবেশে কোনো কোনো ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় বা তাদের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
(vi) দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিন দু-প্রকারের, যথা—জলে দ্রাব্য (B-complex, C) এবং স্নেহপদার্থে দ্রাব্য (A, D, E, K)।
প্রোভিটামিন ঃ যেসব জৈব যৌগ থেকে প্রাণীদেহে ভিটামিন উৎপন্ন হয় তাদের প্রোভিটামিন বলে। যেমন—বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ-র এবং আর্গোস্টেরল ভিটামিন D-র প্রোভিটামিন।
) সিউভোভিটামিন ঃ যেসব জৈব যৌগ ভিটামিনের গঠন সদৃশ, কিন্তু ভিটামিনের গুণসম্পন্ন নয় তাদের সিউডোভিটামিন বলে। যেমন—মিথাইল কোবালামিন ভিটামিন B12 এর সিউডোভিটামিন।
> অ্যান্টিভিটামিন ঃ রাসায়নিক গঠনে সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও যেসব যৌগ ভিটামিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে বা ভিটামিনের ক্রিয়ায় বাধা দেয় তাদের অ্যান্টিভিটামিন বলে। যেমন—পাইরিথায়ামিন থায়ামিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে, গ্যালাকটোফ্ল্যাভিন রাইবোফ্ল্যাভিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে।
মানবদেহে ভিটামিনের ভূমিকা (Role of vitamin in human body) :
↑ ভিটামিন A (রেটিনল বা অ্যাজেরপথল) ঃ এই ভিটামিন B-ক্যারোটিন থেকে মানবদেহে সংশ্লেষিত হয়।
মানবদেহে এই ভিটামিনের ভূমিকাগুলি হল – (i) দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। (ii) রেটিনার রড কোশ গঠনে সাহায্য করে। (iii) ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে।
(iv) রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এই ভিটামিনের অভাবে রাতকানা, অন্ধত্ব এবং ফ্রিনোডার্ম বা Toad's skin রোগটি হয়।
ভিটামিন D (ক্যালসিফেরল) : এই ভিটামিন সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকে সংশ্লেষিত হয়।
মানবদেহে এই ভিটামিনের ভূমিকাগুলি হল – (i) অস্থি ও দত্ত গঠনে সহায়তা করে। (ii) অন্ত্রে Ca ও P শোষণে সহায়তা করে। (iii) অস্থি ও রক্তে Ca-র সাম্যতা বজায় রাখে। এই ভিটামিনের অভাবে ছোটোদের রিকেট এবং বড়োদের অস্টিওম্যালেশিয়া রোগ হয়।
ভিটামিন E (টোকোফেরল) ঃ এই ভিটামিন মানবদেহের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করে এবং মাতৃস্তনে দুগ্ধ ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও গর্ভপাত প্রতিরোধ করে। এই ভিটামিনের অভাবে মায়ের দুগ্ধ ক্ষরণ হ্রাস পায় এবং বন্ধ্যাত্ব রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়।
ভিটামিন K (ফাইলোকুইনন বা ন্যাপথোকুইনন) ঃ এই ভিটামিন রক্তে প্রোথ্রম্বিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং রক্ততঞ্জনে সহায়তা করে। এই ভিটামিনের অভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না।
ভিটামিন B-কমপ্লেক্স ঃ এই ভিটামিন অনেকগুলি ভিটামিনের সমষ্টি, যেমন—B (থায়ামিন), B2 (রাইবোফ্ল্যাভিন), B3 (পেন্টাথেনিক অ্যাসিড), Bs (নিয়াসিন),
B12 (সায়ানোকোবালামিন) ইত্যাদি। এই ভিটামিন মানবদেহে রক্তকোশ গঠন, ক্ষুধা বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি, পেলেগ্রা ও বেরিবেরি প্রতিরোধ করে এবং স্নায়ুকোশ সুস্থ রাখে। এই ভিটামিনের অভাবে বেরিবেরি, স্টোমাটাইটিস, রক্তাল্পতা, পেলেগ্রা প্রভৃতি রোগ হয়।
ভিটামিন B5 (নিয়াসিন) পেলেগ্রা প্রতিরোধ করায় একে P-P ফ্যাক্টর বা পেলেগ্রা প্রিভেনটিভ ফ্যাক্টর বলে।
↑ ভিটামিন C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) ঃ এই ভিটামিন
মানবদেহে মাড়িকে সুস্থ রাখে, রক্তক্ষরণ হ্রাস করে,বেরিবেরি স্কার্ভি লোহিতকণিকা ও অণুচক্রিকা গঠন করে, স্কার্ভি প্রতিরোধ করে। এই ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি রোগ হয় এবং রক্তাল্পতা লক্ষণ প্রকাশ পায়।
খনিজ মৌল (Minerals) জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য খনিজ মৌলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। চাহিদা অনুসারে এই মৌলগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা—(a) অতিমাত্রিক মৌল বা মেজর এলিমেন্ট (Major elements) : এইসব মৌলগুলি জীবের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য অধিকমাত্রায় প্রয়োজন। যেমন— সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সালফার, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। (b) স্বল্পমাত্রিক মৌল বা মাইনর এলিমেন্ট বা ট্রেস এলিমেন্ট (Minor or Trace elements) : এইসব মৌলগুলি জীবদেহে খুব স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। যেমন-লোহা, তামা, দস্তা, বোরন, ফ্লওরিন, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট ইত্যাদি।
কোশ
থেকে দশ লক্ষ কোটি (60 × 1015) কোশ থাকে। ইংরেজ বাস্তুকার রবার্ট হুক (Robert Hooke) 1665 খ্রিস্টাব্দে নিজের তৈরি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কর্কের টুকরো থেকে প্রথম কোশ আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য, সেটি ছিল মৃত কোশ। লিউয়েনহক (Leeuwenhoek) 1674 খ্রিস্টাব্দে প্রথম জীবিত কোশ আবিষ্কার করেন। 1932 খ্রিস্টাব্দে নল ও রুস্কা
(Knoll and Ruska)-র ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে কোশ সম্পর্কে বিস্তৃত গবেষণার দ্বার উদ্ঘটিত হয়। প্রভেদক ভেদ্য আবরণী বেষ্টিত প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত স্ব-প্রজননশীল জীবদেহের গঠনমূলক ও জৈবিক ক্রিয়ামূলক একককে কোশ বলে।
কোশপ্রাচীর (Cell Wall) -
● সংজ্ঞা (Definition)
: উদ্ভিদকোশের কোশপর্দার বাইরে সেলুলোজ নির্মিত জড় পদার্থের যে একটি পুরু, দৃঢ়, ভেদ্য ও স্থিতিস্থাপক আবরণ (coat) থাকে, তাকে কোশপ্রাচীর বা কোশপ্রাকার বলে।
কৌশপ্রাচীরের গঠন (Structure of cell wall) : পরিণত উদ্ভিদকোশের কোশপ্রাচীর তিনটি স্তর দিয়ে
গঠিত, যথা— 1 মধ্যপর্দা ? মুখ্য বা প্রাথমিক প্রাচীর এবং 3 গৌণ প্রাচীর।
কোশপ্রাচীরের কাজ (Function of cell wall) : কোশপ্রাচীর নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পন্ন করে—
(i) কোশের প্রোটোপ্লাজম এবং প্লাজমাপর্দাকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। (ii) কোশপ্রাচীর কোশকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে। (iii) ভেদ্য কোশপ্রাচীর পাশাপাশি দুটি কোশের মধ্যে জল ও খনিজ পদার্থ আদানপ্রদানে সাহায্য করে।
কৌশপৰ্দা (Cell membrane)
সংজ্ঞা (Definition) : প্রতিটি সজীব কোশের প্রোটোপ্লাজম বাইরের দিক থেকে যে অতি সূক্ষ্ম স্থিতিস্থাপক, প্রভেদক ভেদ্য, লাইপোপ্রোটিন নির্মিত ত্রিস্তরীয় সজীব আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, তাকে কোশপর্দা বলে। ● কোশপর্দার গঠন (Structure of cell membrane): কোশপর্দা তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। বাইরের ও ভিতরের স্তর দুটি প্রোটিন অণুস্তর এবং মাঝের স্তরটি লিপিড অণুস্তর দিয়ে গঠিত। লিপিড স্তরটি দ্বিস্তরীয় ফসফোলিপিড অণু দিয়ে গঠিত। কোশপর্দায় 40 ভাগ লিপিড এবং 50 ভাগ প্রোটিন এবং 10 ভাগ কার্বোহাইড্রেট থাকে। রবার্টসন (1959) প্রোটিন-লিপিড-প্রোটিন (P-L-P) ত্রিস্তরীয় আবরণীকে এককপর্দা রূপে অভিহিত করেন। বিজ্ঞানী সিঙ্গার ও নিকলসন (Singer and Nicolson, 1972) কোশপর্দা গঠনের তরল মোজাইক মডেল উপস্থাপন করেন। এই মডেল অনুযায়ী কোশপর্দা ফসফোলিপিড অণুর একটি দ্বিস্তরী অর্ধতরল সংগঠন, যার মধ্যে কোশপর্দার কাজ (Function of cell প : কোশপর্দা নিম্নলিখিত কাজগুলি সম্পন্ন করে– (i) কোশমধ্যস্থ সজীব অংশকে রক্ষা করে। (ii) কোশপর্দা বা প্লাজমাপর্দার একটি প্রধান কাজ হল সজীব কোশের বহিঃ ও অন্তঃমাধ্যমের একটি অভিস্রবণীয় প্রতিবন্ধকরূপে কাজ করা। (ii) কয়েক প্রকার কোশ-অঙ্গাণু (যেমন—মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম) এবং নিউক্লিয় পর্দা সৃষ্টি করে। (iv) কোশান্তর ব্যাপন ও অভিস্রবণে সাহায্য করে।
কোশপর্দা ও কোশপ্রাচীরের পার্থক্য ঃ
কোশপর্দা 1. সব কোশেই থাকে। এটি সজীব ও অর্ধভেদ্য। 2. এটি প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে গঠিত। 3. কোশপর্দা থেকে কোশ অঙ্গাণু সৃষ্টি হয়। 4. ব্যাপন ও অভিস্রবণে অংশ নেয়। কোশপ্রাচীর 1. কেবল উদ্ভিদ কোশ ও ব্যাকটেরিয়া কোশে থাকে। এটি জড় ও ভেদ্য। 2. এটি প্রধানত সেলুলোজ দিয়ে গঠিত। 3. কোশপ্রাচীর থেকে কোশ অঙ্গাণু সৃষ্টি হয় না। 4. কোশকে দৃঢ়তা প্রদান করে এবং ব্যাপনে অংশ নেয়। সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) ) সংজ্ঞা (Definition) : প্রোটোপ্লাজমের যে অর্ধতরল স্বচ্ছ ও দানাদার পদার্থ নিউক্লিয় পর্দা ও কোশপর্দার মাঝে অবস্থান করে তাকে সাইটোপ্লাজম বলে। সাইটোপ্লাজমের কাজ (Function of Cytoplasm) : সাইটোপ্লাজম কোশ অঙ্গাণুগুলির ধাত্র হিসেবে কাজ করে। কোশের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াগুলি সাইটোপ্লাজমে সাধিত হয়।
কোশ অঙ্গাণু (Cell organelles) : আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে পর্দা বেষ্টিত বা পর্দাবিহীন যে সব অঙ্গাণু কোশের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তাদের কোশ অঙ্গাণু বা সেল অরগানেলিস বলে। কোশের তিন ধরনের কোশ অঙ্গাণু থাকে। যেমন—(i) পর্দাবিহীন রাইবোজোম,
(ii) একক পর্দাবৃত–লাইসোজোম, গলগি বডি, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম, (ii) দ্বি-একক পর্দাবৃত–নিউক্লিয়াস, প্লাসটিড, মাইটোকন্ড্রিয়া ইত্যাদি। বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণুগুলি সাইটোপ্লাজমে অবস্থান করে এবং একক পর্দা বেষ্টিত হয়ে কোশ গঠিত হয়।
নিউক্লিয়াস (Nucleus; ল্যাটিন-Nucleus = Kernel অর্থাৎ শাঁস) নিউক্লিয়াস আদর্শ কোশের সবচেয়ে বড়ো কোশ অঙ্গাণু। নিউক্লিয়াস একটি দ্বি-একক পর্দাবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমীয় অংশ যার মধ্যে সকল প্রকার বংশগত তথ্যাবলি উপস্থিত। নিউক্লিয়াস কোশের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করায় একে ‘কোশের মস্তিষ্ক’ বলা হয়। রবার্ট ব্রাউন (1831) প্রথম নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন। নিউক্লিয় পর্দা (Nuclear membrane): এটি নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে থাকা দুটি একক পর্দা দিয়ে গঠিত যা লাইপোপ্রোটিন নির্মিত। উভয় পর্দার মাঝের স্থানকে পেরিনিউক্লিয়ার সিস্টারনি (perinuclear cisternae) বলে। নিউক্লিয় পর্দায় যে অসংখ্য ছিদ্র থাকে তাদের নিউক্লিয় ছিদ্র (nuclear pores) বলে। নিউক্লিয় পর্দা নিউক্লিয়াসের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে এবং নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ অংশকে রক্ষা করে। নিউক্লিয়াসের পরাণু গঠন নিউক্লিওলাস (Nucleolus, বহুবচনে—nucleoli) : এটি নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ঘন গোলাকার অংশ বিশেষ। নিউক্লিওলাসের চারটি অংশ থাকে, যথা—(i) অনিয়তাকার অঞ্চল, (ii) দানাদার অঞ্চল, (iii) সূত্রাকার অঞ্চল এবং (iv) ক্রোমাটিন অঞ্চল। নিউক্লিওলাস রাইবোজোমাল RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষের প্রধান স্থান। অর্ধতরল
নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm) : নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের অন্তর্বর্তী স্থানে যে স্বচ্ছ, কোলয়ডীয় পদার্থ থাকে তাকে নিউক্লিওপ্লাজম বা ক্যারিওলিম্ফ বলে। এই নিউক্লিয় রসের মধ্যে ক্রোমাটিন জালক ও নিউক্লিওলাস ভাসমান অবস্থায় থাকে। নিউক্লিওপ্লাজমে DNA, RNA, ফসফো-প্রোটিন, হিস্টোন, নানাপ্রকার উৎসেচক, নানাপ্রকার খনিজ লবণ (Na, Ca, P, Mg, K) ইত্যাদি থাকে।এটি নিউক্লিয়াসের ধাত্ররূপে কাজ করে যার মধ্যে নিউক্লিয়াসের ক্রোমাটিন সূত্র ও অন্যান্য অংশ থাকে।
নিউক্লিয় জালিকা (Nuclear reticulum) ঃ নিউক্লিওপ্লাজমে অসংখ্য সূক্ষ্ম প্যাঁচানো সূত্রাকার অংশ থাকে, এদের ক্রোমাটিন সূত্র বলে। এই ক্রোমাটিন সূত্রগুলি নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA) এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত। কোশের ইন্টারফেজদশায় ক্রোমাটিন সূত্রগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জালকের আকার ধারণ করে এবং সমস্তনিউক্লিওপ্লাজমের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু বিভাজন দশায় এগুলি কুণ্ডলীকৃত হয়ে সুস্পষ্ট ক্রোমোজোমের রূপ ধারণ করে। নিউক্লিয়াসের কাজ (Functions of Nucleus) :
(i) নিউক্লিয়াস আদর্শ কোশের একটি প্রয়োজনীয় ও সংযোজক (integral) অংশ যা কোশের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। (ii) নিউক্লিয়াসের জেনেটিক পদার্থ DNA কোশ থেকে কোশে এবং জীব থেকে জীবে বংশগত বৈশিষ্ট্যাবলি বহন করে। (iii) নিউক্লিয়াস RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। (iv) নিউক্লিয়াস কোশ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondria; গ্রিক-Mitos = thread; Chondrion = granule) মাইট্রোকন্ড্রিয়া হল আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত দ্বিএকক পর্দা ঘেরা ক্ষুদ্র দণ্ডাকার বা সূত্রাকার অঙ্গাণু, যার মধ্যে শক্তি উৎপন্ন হয়। বেন্ডা (1898) প্রথম মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার করেন। shondrial : প্রতিটি মাইটোকন্ডিয়া দুটি একক পর্দা মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ (Functions of Mitochondria) : মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে কোশের শক্তি উৎপন্ন হয়; এই কারণে মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোশের শক্তিঘর বলা হয়। (i) মাইটোকন্ড্রিয়া সবাত শ্বসনে ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলি ঘটতে সাহায্য করে। (ii) অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে ATP উৎপাদন করে যা সমস্ত প্রকার জীবজ ক্রিয়ার জন্য শক্তি জোগায়। (iii) মাইটোকন্ড্রিয়ায় ফ্যাটি অ্যাসিড সংশ্লেষ এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের B-জারণ সংঘটিত হয়।
প্লাসটিড (Plastids; গ্রিক-plastikas = ছাঁচে তৈরি) প্লাস্টিড হল আদর্শ উদ্ভিদ কোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত দ্বিএকক পর্দা বেষ্টিত বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট রঞ্জক পদার্থযুক্ত বা রঞ্জকবিহীন অঙ্গাণু। হেকেল (1866) প্রথম প্লাসটিড নামকরণ করেন। প্লাসটিড প্রধানত তিন প্রকারের, যথা—ক্রোমোপ্লাস্ট বা রঙিন প্লাসটিড, ক্লোরোপ্লাস্ট বা সবুজ প্লাসটিড, লিউকোপ্লাস্ট বা বর্ণহীন প্লাসটিড। A. ক্রোমোপ্লাস্ট (Chromoplast) : উদ্ভিদকোশের সবুজ রঞ্জক পদার্থ ছাড়া অন্যান্য রঞ্জক পদার্থযুক্ত প্লাসটিডদের ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়। এরা গোলাকার, দণ্ডাকার, তারকাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির হয়। ফুলের পাপড়ি, পাকা ফলের খোসা, গাজরের মূলে এইপ্রকার প্লাসটিড থাকে। এইপ্রকার প্লাসটিড দ্বি-একক পর্দাবেষ্টিত থাকে। এদের ধাত্রে গ্রানা থাকে না। ধাত্রে ল্যামেলা, ক্যারোটিনয়েড দানা, বিভিন্ন প্রকারের রঞ্জক এবং স্নেহবস্তু ইত্যাদি থাকে।-অন্তঃপৰ্দা বহিঃপৰ্দা
ক্রোমোপ্লাস্ট ● কাজ (Functions) : ক্রোমোপ্লাসটিড উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের বর্ণ গঠন, ফুলের পরাগযোগ ও ফলের বিস্তারে সাহায্য করে। B. ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast) : সবুজ প্লাস্টিডদের ক্লোরোপ্লাস্ট বলে। আদর্শ ক্লোরোপ্লাস্ট উপবৃত্তাকার এবং দ্বিএকক পর্দা বেষ্টিত। উভয় পর্দার মাঝখানের স্থানকে পেরিপ্লাস্টিডিয়াল স্থান বলে। অন্তঃপর্দা বেষ্টিত গহ্বরে যে তরল থাকে তাকে ধাত্র বা স্ট্রোমা বলে। ধাত্রে বিভিন্ন খনিজ উপাদান (Mg, Fe, Cu, Zn, Mn), ভিটামিন, DNA, RNA এবং উৎসেচক থাকে। ধাত্রে অনেকগুলি চাকতির মতো অংশ স্তরে স্তরে সাজানো থাকে, এদের গ্রানা (Grana) বলে। ক্লোরোপ্লাস্টে 40-60টি গ্রানা থাকে। প্রতিটিগ্রানাম কতকগুলি একক পর্দা বেষ্টিত চ্যাপ্টা থলির মতো অংশ নিয়ে গঠিত তাদের থাইলাকয়েড বলে। থাইলাকয়েডের মধ্যে কোয়ান্টোজোম দানা থাকে। কোয়ান্টোজোমের মধ্যে ক্লোরোফিল রঞ্জুক থাকে। পাশাপাশি দুটি গ্রানা যে নলাকার অংশ দিয়ে যুক্ত থাকে, তাকে স্ট্রোমা ল্যামেলি বলে।
ক্লোরোপ্লাস্ট ● ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ (Functions of Chloroplasts) : (i) এর গ্রানা অঞ্চলে সালোকসংশ্লেষের আলোক বিক্রিয়া এবং স্ট্রোমা অঞ্চলে সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। (ii) ক্লোরোপ্লাস্টে অবস্থিত রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ নেয়। C. লিউকোপ্লাস্ট (Leucoplast) : বর্ণহীন প্লাসটিডদের লিউকো- প্লাস্ট বলে। লিউকোপ্লাস্ট উদ্ভিদের মূলের কোশে এবং যেসব অঙ্গের কোশে সূর্যের আলো পৌঁছায় না সেইসব কোশে থাকে। এইরকম প্লাসটিড গোলাকার, ডিম্বাকার, দণ্ডাকার হয়। এইপ্রকার প্লাসটিড দ্বি-একক পর্দা বেষ্টিত থাকে। ধাত্রে গ্রানা থাকে না। খাদ্য সঞ্জয়ের ভূমিকা অনুসারে এরা তিন রকমের হয়, যথা
(i) অ্যামাইলোপ্লাস্ট : শ্বেতসার জমা থাকে।
(ii) এলাইওপ্লাস্ট ঃ ফ্যাট জাতীয় খাদ্য জমা থাকে। (iii) প্রোটিনোপ্লাস্ট ঃ প্রোটিনজাতীয় খাদ্য জমা থাকে।
লিউকোপ্লাস্টের কাজ ঃ বিভিন্ন রকম খাদ্যবস্তু সঞ্চিত রাখা এদের কাজ।
মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের পার্থক্য :
মাইটোকন্ড্রিয়া
1. সকল আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে।
2. অন্তঃপর্দা ভাঁজ হয়ে ক্রিস্টি গঠন করে।
3. ধাত্রে কোনো রঞ্জক থাকে না।
4. শ্বসনে অংশগ্রহণ করে।
ক্লোরোপ্লাস্ট
1. কেবল উদ্ভিদের সবুজ কোশে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।
2. অন্তঃপর্দা ভাঁজ হয় না তাই ক্রিস্টি থাকে না।
3. ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানায় ক্লোরোফিল রঞ্জক থাকে।
4. সালোকসংশ্লেষে অংশ নেয়।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম (Endoplasmic Reticulum; সংক্ষেপে-ER) এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম আদর্শ কোশে অবস্থিত একক পর্দা বেষ্টিত নলাকার অঙ্গাণু, যা সাইটোপ্লাজমকে কতকগুলি অনিয়মিত প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করে। পোর্টার (Porter, 1945) প্রথম কোশে এটি পর্যবেক্ষণ করেন।
এডোপ্লাজমিক রোডকিউলাম
» এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলামের কাজ (Functions of ER): ER-এর প্রধান কাজগুলি হল—
(i) ER কোশের সাইটোপ্লাজমীয় কাঠামো গঠন করে প্রোটোপ্লাজমকে যান্ত্রিক দৃঢ়তা প্রদান করে। (ii) ER-এর পর্দা অভিস্রবণ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ER বিভিন্ন বিপাকীয় পদার্থকে পৃথক রাখে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে পৃথক রাখে। (iii) অমসৃণ ER (RER) প্রোটিন সংশ্লেষ করে। (iv) মসৃণ ER ফ্যাট সংশ্লেষ করে। (v) মসৃণ ER টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টরন ইত্যাদি কয়েকটি স্টেরয়েড হরমোন ক্ষরণ করে।
গলগি বডিস বা গলগি কমপ্লেক্স (Golgi complex)
গলগি বডিস আদর্শ কোশে সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে অবস্থিত একক পর্দা ঘেরা চ্যাপটা থলির মতো বা ক্ষুদ্র গহ্বরের মতো অঙ্গাণুবিশেষ। ক্যামিলো গলগি (1898) প্রথম গলগি বড়ি পর্যবেক্ষণ করেন।
গলগি বডির কাজ (Functions of Golgi Bodies) : গলগি বড়ির প্রধান কাজগুলি হল-
(i) গলগি বডি উৎসেচক, হরমোন, মিউকাস, নিউরোসিক্রেটরি পদার্থ ইত্যাদি ক্ষরণ করে। (ii) গলগি বড়ি কোশ-মধ্যস্থ বিভিন্ন পদার্থ, যেমন—উৎসেচক, যোগকলার ধাত্র, ক্ষরিত প্রোটিন ইত্যাদি পরিবহণে সহায়তা করে। (iii) গলগি বডি বিভিন্ন প্রকার খাদ্যবস্তুর সঞ্জয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। গলগি ভ্যাকুওলগুলি এই কাজের সঙ্গে জড়িত। (iv) গলগি বডি কোশ প্রাচীর গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। (v) গলগি বডি শুক্রাণুর অ্যাক্রোজোম গঠন করে।
লাইসোজোম (Lysosome),
লাইসোজোম আদর্শ প্রাণী কোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত একক পর্দা ঘেরা উৎসেচক পূর্ণ ক্ষুদ্র থলির মতো অঙ্গাণু। ডি ডুভে (1955) লাইসোজোম আবিষ্কার করেন। লাইসোজোমকে সুইসাইড ব্যাগ বলে।
লাইসোজোমের গঠন (Structure of Lysosome) : লাইসোজোম সাধারণত গোলাকার গহ্বর বা থলির মতো। প্রতিটি লাইসোজোম লাইপোপ্রোটিন নির্মিত একক পর্দা দিয়ে বেষ্টিত থাকে। লাইসোজোমের গহ্বরে যে অসমসত্ত্ব দানাদার পদার্থ থাকে তাকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বলে। লাইসোজোমের ধাত্রে 50 রকমের আদ্রবিশ্লেষক উৎসেচক, অপাচ্যবস্তু, দানাদার বস্তু ইত্যাদি থাকে।
লাইসোজোমের কাজ (Functions of Lysosome) : লাইসোজোমের প্রধান কাজগুলি হল—
(i) অন্তঃকোশীয় পাচন : ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায়
কোশে গৃহীত খাদ্যবস্তু লাইসোজোম নিঃসৃত উৎসেচকের সাহায্যে পাচিত হয়। (ii) বহিঃকোশীয় পাচন ঃ লাইসোজোম উৎসেচক নিক্ষেপ করে বহিঃকোশীয় পাচন ঘটায়। যেমন—শুক্রাণু উৎসেচক নিক্ষেপ করে ডিম্বাণুর প্রাচীরকে পাচিত করে শুক্রাণুর প্রবেশ পথ তৈরি করে। (iii) দেহের প্রতিরক্ষা ঃ শ্বেতকণিকার লাইসোজোম উৎসেচক নিক্ষেপ করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি ধ্বংস করে। দুটি ভিন্ন আকারের লাইসোজোম
কোশগহ্বর বা ভ্যাকুওল (Vacuole)
আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে আবরণী বেষ্টিত যে সাইটোপ্লাজম বিহীন গহ্বরের মতো অংশগুলি থাকে তাদের কোশ গহ্বর বা ভ্যাকুওল বলে। ● গঠন (Structure) : ভ্যাকুওল দেখতে অনেকটা গহ্বরের মতো। এদের নির্দিষ্ট কোনো আকার থাকে না। গহ্বরগুলি টোনোপ্লাস্ট নামক একটি সূক্ষ্ম আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। উদ্ভিদকোশের গহ্বরে একরকম জলীয় পদার্থ থাকে, একে কোশরস বা সেল-স্যাপ (cell-sap) বলে। প্রাণীকোশের ভ্যাকুওলগুলি আকারে খুব ছোটো এবং সংখ্যায় কম হয়। অনেক সময় প্রাণীকোশের ভ্যাকুওল থাকে না। পরিণত উদ্ভিদকোশে ভ্যাকুওলগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি বড়ো ভ্যাকুওল সৃষ্টি করে, ফলে নিউক্লিয়াসসহ সাইটোপ্লাজম কোশপ্রাচীরের ভিতরের দিকে পরিধি বরাবর বিন্যস্ত থাকে। ভ্যাকুওলকে বেষ্টন করে সাইটোপ্লাজমের এরকম বিন্যাসকে প্রাইমরডিয়াল ইউট্ৰিকল (primordial utricle) বলে।
» কোশগহ্বর বা ভ্যাকুওল কাজ (Function) : ভ্যাকুওলে খাদ্য, ক্ষরিত পদার্থ ইত্যাদি জমা থাকে। এছাড়া অভিস্রবণ নিয়ন্ত্রণ,
রেচন পদার্থ বা বর্জ্য পদার্থ সঞ্চয় ও দূরীকরণ প্রভৃতিতে ভ্যাকুওল সাহায্য করে। এককোশী মূলরোমের ভ্যাকুওল
অন্তঃঅভিস্রবণে সাহায্য করে।
রাইবোজোম (Ribosome)
রাইবোজোম প্রোটিন সংশ্লেষে সহায়ককারী পর্দাবিহীন ক্ষুদ্র গোলাকার বা উপবৃত্তাকার কোশ অঙ্গাণু। এরা আদি কোশের সাইটোপ্লাজমে এবং আদর্শ কোশের নিউক্লিওলাসে, নিউক্লিয় পর্দায়, ER-এর গাত্রে অবস্থান করে। প্যালাডে (1955) প্রথম রাইবোজোম নামকরণ করেন।
কাজ (Function) : রাইবোজোমের প্রধান কাজ হল প্রোটিন সংশ্লেষ করা। এই কারণে রাইবোজোমকে প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলে।
সেন্ট্রিওল (Centriole)
সেন্ট্রিওল দেখতে দুমুখ খোলা পিপের মতো। সাধারণত প্রাণী কোশের সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে সমকোণে অবস্থান করে। এরা কোশ বিভাজনের সময় বেম গঠন করে। বোভেরি (1888) সেন্ট্রিওল আবিষ্কার করেন।
কাজ (Function) : সেন্ট্রিওলের বিশেষ কাজগুলি হল – (i) প্রাণীকোশ বিভাজনকালে বেমতত্ত্ব গঠন করে। (ii) কোশ বিভাজনের শেষের দিকে ক্রোমোজোমের প্রান্তীয় গমনে সাহায্য করে। (iii) সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোশে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলার সৃষ্টি করে। (iv) শুক্রাণুর পুচ্ছ গঠন করে।
মাইক্রোটিউবিউল (Microtubules) এগুলি আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত টিউবিউলিন প্রোটিন দিয়ে গঠিত অতি ক্ষুদ্র ফাঁপা, নলাকার বিশেষ অঙ্গাণু।
কাজ (Functions) : (i) এরা কোশের চলনে সাহায্য
করে। বিশেষ করে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলার আন্দোলনে সাহায্য করে। (ii) এরা কোশ বিভাজনের সময় বেম (spindle) গঠনে এবং ক্রোমোজোমগুলিকে বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। (iii) স্পার্মিওজেনেসিসের সময় শুক্রাণু গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেন্ট্রিওল অ্যাস্টার মাইক্রোটিউবিউল মাইক্রোটিউবিউল
কোশ
বিজ্ঞানী ডাহাটি (Dougherty) 1957 খ্রিস্টাব্দে নিউক্লিয়াসের সংগঠনের ওপর ভিত্তি করে কোশকে দু-ভাগে ভাগ করেন, যথা—আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ এবং আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশ।
1. প্রোক্যারিওটিক কোশ (Prokaryotic cell) : যেসব কোশে আদর্শ এবং সংগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না, কোশে পদাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে না, ক্রোমোজোম গঠিত হয় না, তাদের আদিকোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ বলে। যেমন—ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল, মাইকোপ্লাজমা বা PPLO ইত্যাদি।
2. ইউক্যারিওটিক কোশ (Eukaryotic cell) : যেসব কোশে নিউক্লিয়াসটি সংগঠিত (নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়জালক উপস্থিত) এবং নিউক্লিয় পর্দাবেষ্টিত, ক্রোমোজোম ক্ষারীয় প্রোটিনযুক্ত, কোশে পর্দাঘেরা একাধিক কোশ অঙ্গাণু থাকে, তাদের আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশ বলে।
যেমন—উন্নত উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশ।
প্রোক্যারিওটিক কোশ ইউক্যারিওটিক কোশ পার্থক্যগুলি
- কোশপ্রাচীর থাকে, যার মুখ্য উপাদান হল-
- মিউকোপেপটাইড বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান।
- আদি নিউক্লিয়াস যা নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস এবং
- নিউক্লিয় জালকবিহীন। এটি কেবল DNA দিয়ে গঠিত। এই রকম নিউক্লিয়াসকে নিউক্লিওয়েড বলে।
- আদি কোশে পর্দাঘেরা কোনো কোশ-অঙ্গাণু (প্লাসটিড,
- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, লাইসোজোম ইত্যাদি) থাকে না।
- 70S (50S + 30S) প্রকৃতির এবং ক্ষুদ্র।
- সাইটোপ্লাজমে বা প্লাজমাপর্দার অন্তঃগাত্রে থাকে।
- সাধারণত থাকে না।
- অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে।
- সাধারণত থাকে না।
- উদ্ভিদকোশে কোশপ্রাচীর থাকে যার মুখ্য উপাদান
- সেলুলোজ, প্রাণীকোশে কোশপ্রাচীর থাকে না।
- আদর্শ নিউক্লিয়াস যা নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস,নিউক্লিয় রস এবং নিউক্লিয় জালক নিয়ে গঠিত।
- এই কোশে পর্দাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে।
- 80S (60S + 40S) প্রকৃতির এবং বড়ো।
- সাইটোপ্লাজমে এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে থাকে।
- নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে।
- মাইটোসিস এবং মিয়োসিস পদ্ধতিতে ঘটে।
- উদ্ভিদকোশে থাকে, প্রাণীকোশে সাধারণত থাকে না।
- প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্তভাবে থাকে।
উদ্ভিদকোশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল :
উদ্ভিদ কোশে সজীব কোশ পর্দার বাইরে জড়, পুরু, স্থিতিস্থাপক, সেলুলোজ নির্মিত কোশ প্রাচীর উপস্থিত। (ii) উদ্ভিদ কোশের সাইটোপ্লাজমে দ্বিএকক পর্দা বেষ্টিত প্লাসটিড থাকে। (iii) উদ্ভিদ কোশে সেন্ট্রিওল ও লাইসোজোম সাধারণত থাকে না।
● প্রাণীকোশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল : (i) প্রাণীকোশের প্রোটোপ্লাজমকে বেষ্টন করে সজীব কোশপর্দা উপস্থিত। (ii) প্রাণীকোশের নিউক্লিয়াসের নিকটে একজোড়া সেন্ট্রিওল উপস্থিত। (iii) প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে একক পর্দাবেষ্টিত লাইসোজোম উপস্থিত। (iv) প্রাণীকোশে সাধারণত প্লাসটিড থাকে না।
জীবন সংগঠনের স্তর দ্বিতীয় অধ্যায় pdf
জীবন সংগঠনের স্তর 3 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় 3 নং প্রশ্ন উত্তর
মানবদেহের প্রধান অঙ্গসমূহ ও তাদের কাজ (Major Organs of Human Body and Their Function)
অঙ্গ কী (What is an Organs)
কোশের সমষ্টিকে যেমন কলা (tissue) বলে, তেমন কলার সমষ্টিকে অঙ্গ (organ) বলে।
(Definition) : সম বা বিষম আকৃতি ও প্রকৃতি বিশিষ্ট একাধিক কলা সম্মিলিতভাবে যখন কোনো বিশেষ কার্য সম্পাদন করে, তখন ওই কলা সমষ্টিকে অঙ্গ বা অরগ্যান বলে। উদাহরণস্বরূপ, যকৃৎ,
পাকস্থলী পৌস্টিকতন্ত্রের অন্তর্গত অঙ্গ। বৃদ্ধ, গবিনী রেচনতন্ত্রের অন্তর্গত অঙ্গ।
মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা (Different Organs of Human Body and Their Important Roles)
অঙ্গ
1. ত্বক (Skin)
অবস্থান :ত্বক আমাদের দেহের বাইরে অবস্থিত এবং আচ্ছাদন গঠন করে।
কাজ:
(i) দেহের কোমল অংশকে রক্ষা করে। (ii) দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রেচন বস্তু ক্ষরণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
2. পাকস্থলী (Stomach)
অবস্থান : এটি পৌষ্টিকনালির অংশ। এটি গ্রাসনালির পরবর্তী অংশ। এটি উদরের ঊর্ধ্বপ্রান্তে মধ্যচ্ছদার নীচে অবস্থিত।
কাজ:
(i) গৃহীত খাদ্য মুখবিবর থেকে গ্রাসনালির মাধ্যমে
পাকস্থলীতে আসে এবং কিছুক্ষণের জন্য সঞ্জিত থাকে।
(ii) প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য পরিপাক করে এবং জল, স্যালাইন, গ্লুকোজ, ভিটামিন ইত্যাদি শোষণ করে।
3. অগ্ন্যাশয়(Pancreas)
অবস্থান :এটি পাকস্থলীর পিছনে ডিওডিনামের দুই বাহুর
মাঝখানে অবস্থিত
কাজ:
(i) অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্রগ্রন্থি। এর বহিঃক্ষরা কোশ থেকে নানা রকম উৎসেচক নিঃসৃত হয়, যা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট পরিপাকে অংশ নেয়। (ii) অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা কোশ থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। বিটা কোশ ইনসুলিন ও আলফা কোশ গ্লুকাগন ক্ষরণ করে। S
4. ফুসফুস(Lung)
অবস্থান :মানুষের ফুসফুস দুটি বক্ষ গহ্বরে হৃৎপিণ্ডের দুপাশে
মধ্যচ্ছদার ওপরে অবস্থিত।
কাজ:
(i) প্রশ্বাস (শ্বাস গ্রহণ) এবং নিশ্বাস (শ্বাস ত্যাগ) ক্রিয়ায়
অংশ গ্রহণ করে। (ii) দেহ থেকে CO, গ্যাস ও জলীয়
বাষ্প নির্গত করে।
5. হৃৎপিণ্ড (Heart)
অবস্থান : মানুষের হৃৎপিণ্ড বক্ষ গহ্বরে ফুসফুস দ্বয়ের মাঝে ঈষৎ
বাম দিক ঘেঁসে অবস্থিত। (প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের হৃৎপিণ্ডের ওজন 280 - 340 গ্রাম)
কাজ:
(i) হৃৎপিণ্ড অবিরাম ছান্দিক গতিতে সংকুচিত
ও প্রসারিত হয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন করে।
(ii) হৃৎপিণ্ড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
6. প্লিহা (Spleen)
অবস্থান :প্লিহা উদর গহ্বরের বাম দিকে মধ্যচ্ছদায় নীচে বাম
বৃক্কের ওপরে অবস্থিত।
(দেহের সবচেয়ে বড়ো লসিকা গ্রন্থি। প্রাপ্তবয়স্কদের
প্লিহার ওজন 150 গ্রাম)
কাজ:
(i) প্লিহায় অবস্থিত Reticulo endothelial তন্ত্রের
আগ্রাসন কোশ বা RE কোশ দেহের প্রতিরক্ষায় অংশ
গ্রহণ করে। (ii) RE কোশ জীর্ণ ও বয়স্ক রক্ত কোশকে
বিনষ্ট করে।
7. বৃক (Kidney)
মানুষের বৃক্ক দুটি উদর গহ্বরের কটি অঞ্চলের মেরুদণ্ডের
দুপাশে পেরিটোনিয়াম পর্দার নীচে অবস্থিত। (প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রতিটি বৃক্কের ওজন 150 গ্রাম এবং স্ত্রীলোকদের 135 গ্রাম)
কাজ:
(i) বৃক্ক মূত্র উৎপন্ন ও নিঃসরণ করে। (ii) বৃক্ক দেহের
লবণ ও জলের সাম্যতা বজায় রাখে। (iii) বৃক্ক রেনিন
এরিথ্রোপয়েটিন হরমোন ক্ষরণ করে।
৪. যকৃৎ (Liver)
অবস্থান : আমাদের দেহের সবচেয়ে বড়ো পৌষ্টিক গ্রন্থি যা উদর
গহ্বরের ডান দিকে মধ্যচ্ছদার নীচে অবস্থিত।
(প্রাপ্তবয়স্ক লোকের যকৃতের ওজন 1.5 kg)
কাজ:
(i) যকৃৎ পিত্তরস (bile) ক্ষরণ করে পিত্তাশয়ে
জমা করে। (ii) যকৃতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও
ফ্যাট বিপাক ঘটে। (iii) যকৃতে অবস্থিত কুফার কোশ
রোগজীবাণুদের ধ্বংস করে। (iv) যকৃতে অ্যামোনিয়া
থেকে ইউরিয়া উৎপন্ন হয় (অরনিথিন চক্র)।
9. মস্তিষ্ক (Brain)
অবস্থান : এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অংশ। এটি করোটিকার
(cranium) মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। (একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্কের ওজন 1200-1500 গ্রাম)
কাজ:
(i) গুরু মস্তিষ্ক মানুষ তথা প্রাণীদের বুদ্ধি, চিন্তা, স্মৃতি
ইত্যাদি মানসিক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। (ii) লঘু মস্তিষ্ক
প্রাণীদেহের ভারসাম্য বজায় রাখে।
10. সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal cord)
অবস্থান : পৃষ্ঠদেশে মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বরাবর নিউরাল ক্যানেলের
মধ্যে অবস্থান করে।
কাজ:
(i) প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। (ii) সুষুম্নাকাণ্ড দেহের
বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগসূত্র স্থাপন
করে।
11. শুক্রাশয় (Testis)
অবস্থান :পুরুষ মানুষের উদর গহ্বরের বাইরে স্ক্রোটাম নামক
থলির মধ্যে অবস্থিত। (প্রাপ্তবয়স্ক লোকের শুক্রাশয়ের ওজন 10-25
গ্রাম)
কাজ:
(i) শুক্রাণু উৎপন্ন করে। (ii) টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে।
12. ডিম্বাশয় (Ovary)
অবস্থান : স্ত্রী লোকের শ্রোণি গহ্বরের জরায়ুর নীচের দিকের দুপাশে অবস্থিত।
কাজ:
(i) ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। (ii) ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন
হরমোন নিঃসরণ করে।
নবম শ্রেণি জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও]
নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের 1 নং প্রশ্ন উত্তর
: 1. DNA-র পুরো নাম কী? 2. ভিটামিন ‘A’-র অভাবে কী রোগ হয়? 3. ভিটামিন 'C'-র রাসায়নিক নাম কী? 4. কোন্ খনিজের অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়? 5. একটি তীব্র অ্যাসিডের উদাহরণ দাও। 6. কার্বোহাইড্রেটে কোন্ উপাদানটি থাকে না যা প্রোটিনে থাকে?
IH. সংক্ষেপে উত্তর দাও :
1. লবণ কাকে বলে? 2. উদ্ভিদদেহে জলের দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করো। 3. ক্ষারকের সঙ্গে অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় কী কী উৎপন্ন হয় তা
সমীকরণের সাহায্যে দেখাও। 4. প্রোটিন বাঁচোয়া খাদ্য কাকে বলে? 5. অ্যাজেরপথলের অভাবে কী কী রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়?
6. রিকেট রোগ হয় কোন্ ভিটামিন ও কোন্ খনিজের অভাবে?
7.প্রোটোপ্লাজমে কী কী অজৈব ও জৈব অণু থাকে? 2. জীবদেহে জলের ভূমিকাগুলি ব্যাখ্যা করো। 3. প্রোটিনের রাসায়নিক গঠন
সংক্ষেপে বর্ণনা করো। 4. DNA ও RNA-র পার্থক্য দেখাও (s একটি জলে দ্রবণীয় ও একটি ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিনের মানবদেহে
ভূমিকা উল্লেখ করো।
নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় ২ নং প্রশ্ন উত্তর
1. পেরিমাইটোকন্ড্রিয়াল স্পেস কাকে বলে? 2. প্রাইমরডিয়াল ইউট্রিকল কাকে বলে? 3. নিউক্লিয়াসের প্রধান কাজ কী?
4. কোশপ্রাচীরের কাজগুলি সংক্ষেপে লেখো। 5. মাইটোকনড্রিয়ার ধাত্র কী? 6. কার্ট হুইল মডেল কাকে বলে?
1. প্যারেনকাইমা কলার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো। 2. জাইলেম কলার উপাদানগুলি কী কী? 3. ফ্লোয়েম কলার উপাদানগুলি লেখো?
4. আবরণী কলা কোথায় থাকে? 5. পেশি কলার দুটি কাজ লেখো।
1. ত্বকের দুটি কাজ উল্লেখ করো। 2. অগ্ন্যাশয় কোথায় থাকে? 3. শুক্রাশয় কোথায় থাকে? 4. প্লিহার দুটি কাজ লেখো।
5. বৃক্ক কোথায় থাকে? 6. মস্তিষ্কের দুটি কাজ উল্লেখ করো। 7. উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জলের দুটি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।
দ্বিতীয় অধ্যায় জীবন সংগঠনের স্তর বড় প্রশ্ন উত্তর,
নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় 5 নং প্রশ্ন উত্তর
1. প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশের পাঁচটি পার্থক্য দেখাও। 2. উদ্ভিদ কোশ ও প্রাণীকোশের পাঁচটি পার্থক্য দেখাও। ও
3. কোশপ্রাচীরের গঠন চিত্রসহ বর্ণনা করো। 4. মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করো। 5. নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন অংশের
চিহ্নিত চিত্রাঙ্কন করো। 6. কোশপর্দার গঠন ও কাজগুলি উল্লেখ করো। 7. একটি আদর্শ উদ্ভিদকোশের চিহ্নিত চিত্রাঙ্কন করো।
1. স্নায়ুকলার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 2. যোগকলার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। 3. প্যারেনকাইমা ও কোলেনকাইমা কলার বৈশিষ্ট্যগুলি
লেখো। 4. স্থায়ী কলার বৈশিষ্ট্য ও কাজগুলি লেখো।। 5. ভাজক কলার বৈশিষ্ট্য, অবস্থান ও কাজ উল্লেখ করো।
1. যকৃতের অবস্থান ও কাজগুলি উল্লেখ করো। 2. অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান ও ভূমিকা আলোচনা করো। 3. মানবদেহে হূৎপিণ্ড কোথায়
থাকে ও তার ভূমিকা কী? 4. সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান এবং ভূমিকাগুলি উল্লেখ করো। ৮. বৃক্কের চিত্রাঙ্কন করো।
[TAG]: মাধ্যমিক জীবন সংগঠনের স্তর দ্বিতীয় অধ্যায় pdf,জীবন সংগঠনের স্তর mcq,দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,নবম শ্রেণি,নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান,নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়,নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২ নং প্রশ্ন উত্তর,নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর,নবম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর,Madhyamik life science question in bengali,