কর্তার ভূত|একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |কর্তার ভূত প্রশ্ন উত্তর|class 11 Bengali golpo kortar vut question
কর্তার ভূত একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর |একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প কর্তার ভূত প্রশ্ন উত্তর PDF |Class 11 Bengali golpo question in bengali pdf
আজ আমি তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প কর্তার ভূত প্রশ্ন উত্তর PDF। class 11 Bengali golpo question Pdf | WB Class nine Bengali question pdf |WBBSE পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্পর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তোমাকে সাহায্য করবে।
তাই দেড়ি না করে এই পোস্টের নীচে দেওয়া Download লিংকে ক্লিক করে |একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্প কর্তার ভূত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর pdf download । Class xi Bengali golpo Question Pdf ডাউনলোড করো । এবং প্রতিদিন বাড়িতে বসে প্রাক্টিস করে থাকতে থাক।ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ Note ,Pdf ,Current Affairs,ও প্রতিদিন মকটেস্ট দিতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
‘কর্তার ভূত’ একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প প্রশ্ন উত্তর নিচে দেওয়া হলো।
কর্তার ভূত mcq প্রশ্ন
1.
একাদশ শ্রেণি বাংলা গল্প 1 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর [একটি বাক্যে উত্তর দাও] ,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প কর্তার ভূত 1 নং প্রশ্ন উত্তর
১। ভূত শাসনতন্ত্রের ভবিষ্যৎটা কী?
উত্তর ভূত শাসনতন্ত্রের ভবিষ্যৎটা পোষা ভেড়ার মতো
২। “বেহুঁশ যারা তারাই পবিত্র”—কথাটি কে বলেছেন?
উত্তর “বেহুঁশ যারা তারাই পবিত্র”—কথাটি বলেছেন শিরোমণি-চূড়ামণি।
৩। মানুষের তেজ বেরিয়ে গেলে কী পড়ে থাকে?
উত্তর মানুষের তেজ বেরিয়ে গেলে শান্তি পড়ে থাকে।
৪। দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হল কার কথায় ?
উত্তর দেশের লোক ভারি নিশ্চিন্ত হল দেবতার কথায়।
৫। এদেশে বর্গি কখন আসে?
উত্তর এদেশে বর্গি আসে ঠান্ডার সময়।
৬। ‘কর্তার ভূত' গল্পটি কী ধরনের গল্প?
উত্তর ‘কর্তার ভূত' গল্পটি রূপকধর্মী গল্প।
৭। কারা ভূতের কানমলা খায়?
উত্তর স্বভাবদোষে কিছু মানুষ নিজের ভাবনা নিজে ভাবতে গিয়ে ভূতের কানমলা খায়।
৮। তত্ত্বজ্ঞানীদের কথা শুনে ভূতগ্রস্ত মানুষ কী ভাবে?
উত্তর তত্ত্বজ্ঞানীদের কথা শুনে ভূতগ্রস্ত মানুষ আদিম আভিজাত্য অনুভব করেও আনন্দ পায়।
৯। বুড়ো কৰ্তা দেশের মধ্যে কীভাবে রয়েছে?
উত্তর বুড়ো কর্তা দেশের মধ্যে ভূত হয়ে রয়েছে।
১০। “যেমন করে পারি ভূত ছাড়াব” —কথাটি কার?
উত্তর “যেমন করে পারি ভূত ছাড়াব”—এই কথাটি অর্বাচীনদের।
১১।বেহুঁশদের কারা পবিত্র বললেন?
উত্তর বেহুঁশদের শিরোমণি-চূড়ামণিরা পবিত্র বললেন।
১২। কানে হাত দিয়ে সর্বনাশের কথাটা কারা বলেছিল?
উত্তর কানে হাত দিয়ে সর্বনাশের কথাটা ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি আর মাসতুতো পিসতুতোর দল বলেছিল।
১৩। শুনে নিস্তব্ধ হয়, পরে পাশ ফিরে শোয়—কারা?
উত্তর খোকারা শুনে নিস্তব্ধ হয়, পরে পাশ ফিরে শোয়।
১৪। দেশটাকে সে নাড়েও না, অথচ ছাড়েও না-কে?
উত্তর বুড়ো কর্তা দেশটাকে নাড়েও না, অথচ ছাড়েও না।
১৫। ভূতের নায়েবরা কোথাকার দারোগা?
উত্তর ভূতের নায়েবরা ভূতুড়ে জেলখানার দারোগা।
কর্তার ভূত 5 নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর,কর্তার ভূত বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 5 নং প্রশ্ন উত্তর,
১। “মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” কোন্ প্রসঙ্গে কেন এরূপ মন্তব্য করা হয়েছে? ২+৩=৫
অথবা, “তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে।” —কারা, কোন্ প্রসঙ্গে এরূপ মন্তব্য করেছিল? ১+৪=৫
উত্তর ‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘কর্তার ভূত' গল্পে কর্তার মৃত্যু আসন্ন হলে উদ্বিগ্ন দেশসুদ্ধ মানুষ এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। পরে দেবতার বিধানে ঠিক হল মৃত্যুর পর কর্তার ভূত এই মানুষজনদের শাসন করবে। কারণ, মানুষের মৃত্যু থাকলেও ভূতের কোনো মৃত্যু নেই। কর্তার প্রচণ্ড শাসনে দেশের সকলেই প্রশ্নহীনভাবে দিন অতিবাহিত করছিল। কর্তার অঙ্গুলি হেলনে চলার ফলে তারা নিজেদের মৌলিকত্বটুকু হারিয়ে ফেলেছিল। তাই কর্তার আসন্ন মৃত্যুকালে দেশসুদ্ধ মানুষ উদ্বিগ্ন হয় এই ভেবে যে, এরপর তারা কার শাসন মেনে চলবে। কর্তার অবর্তমানে তাদের এবার থেকে ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতে হবে, নিজেদের কর্তব্য নিজেকেই ঠিক করতে হবে—এটা ভেবেই তাদের চিন্তার অন্ত নাই। কর্তার রাজত্বে থাকতে থাকতে তাদের এই বোধ-বুদ্ধিটুকু হারিয়ে গেছে। কর্তার মৃত্যু হলে সব দায়িত্ব তাদের উপর এসে পড়বে বলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে এরূপ মন্তব্য করেছিল। দেশের মানুষের এরূপ উদ্বেগের কারণে দেবতা দয়া করে বিধান দিয়েছিলেন—বুড়ো কর্তার মৃত্যু হলেও তার ভূত দেশ শাসন করবে। অর্থাৎ দেশের মানুষের ঘাড়ে ভূত হয়ে চেপে থাকবে কর্তা। তাই দেশের মানুষ আগে যেমন কর্তার শাসন মেনে চলত—ঠিক তেমনভাবেই এখন কর্তার ভূতের শাসন মেনে চলতে লাগল। কাউকে স্বাধীনভাবে কিছু ভাবতে হল না, ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করতেও হবে না। এই নেই রাজার নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে নায়েব-গোমস্তা যেমন উৎপীড়ন চালাতে লাগল ঠিক তেমনি বর্গিদের মতো বাইরের শক্তিও দেশের মানুষকে শোষণ করতে লাগল। এইরূপ শাসনের কোনো শেষ নেই—কারণ কর্তার মৃত্যু হলেও তার ভূতের তো কোনো মৃত্যু নেই। তাই কর্তার ভূতের দেশে দেখা দিল বিপর্যয়।
● ২। “যারা নিজের ভাবনা নিজে ভাবতে যায় তারা খায় ভূতের কানমলা।" -কেন একথা বলা হয়েছে?'ভূতের কানমলা' খাওয়ার কারণ কী? ২+৩=৫
উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত' গল্পে প্রতীকময়তার মধ্য দিয়ে ভূতের শাসনতন্ত্রের যে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে কর্তাই মানুষের আচার-আচরণ ও দেশের শাসন ব্যবস্থার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন। তাই কর্তার মৃত্যুতে তার ভূতের দোহাই দিয়ে যে ভূতের শাসন চলতে লাগল, তার বিরোধিতা করলে যে দণ্ড দেওয়া হয়—সেই কথা বলতে গিয়ে ভূতের কানমলা খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কর্তার অধীনে থাকতে থাকতে দেশসুদ্ধ মানুষ নিজেরমৌলিক ভাবনার অভ্যাসটুকু নষ্ট করে ফেলেছে। তাদের হয়ে সমস্ত ভাবনাই ভাবে কর্তা। সেই কর্তার মৃত্যু হলে দেশ কীভাবে চলবে এটা ভেবেই দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। এরপর তারা কার শাসন মেনে চলবে? দেশের মানুষের এরূপ উদ্বেগ দূর করতে স্বয়ং দেবতা বিধান দিলেন–কর্তার মৃত্যুর পর তার ভূত দেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে থাকবে। এই কর্তার ভূতের অস্তিত্ব আসলে মানুষের মূর্খতা ও কুসংস্কারের ফল। তাই কর্তারমৃত্যুতে জনমানসের ইচ্ছাতেই নায়েবের নিজস্ব পদ্ধতিতে কর্তার ভূতের শাসন চলতে থাকে। এতদিন দেশের মানুষ যেভাবে কর্তার শাসন মেনে চলত ঠিক একইভাবে এখন কর্তার ভূতের শাসন মেনে বিবেক বুদ্ধিহীন হয়ে নিরুপদ্রব শান্তি ঘুমের দেশে শায়িত থাকে এইরূপ শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কেউ যদি বিদ্রোহ করে ব কোনো প্রশ্ন তোলে তাহলে নায়েব গোমস্তারা সেই বিপজ্জনক মানুষটিকে শাস্তি দেয়। তাদের দমন করার জন্য জেলের ঘানি টানানো হয়। সেই ঘানি টানতে টানতে তাদের তেজ বেরিয়ে যায়। এই শাস্তিকেই রবীন্দ্রনাথ ‘ভুতের কানমলা' বলেছেন। অর্থাৎ অন্যায়ের অবিচারের কোনো প্রতিবাদ না করাটাই হল ভূতশাসনতন্ত্রের রেওয়াজ। বিরুদ্ধাচারণ করলে শাস্তি অনিবার্য।
৩। “এই চোখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা।” –কারা একথা বলেছেন? তাদের একথা বলার কারণ কী? ১+৪=৫
উত্তর কর্তার শাসনাধীন দেশসুদ্ধ মানুষ প্রশ্নহীনভাবে জীবন অতিবাহিত করাটাকেই শ্রেষ্ঠ প্রশ্ন বলে মনে করেছিল। এই অন্ধভাবে চলাটাকেই দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা জগতের সবচেয়ে আদিম চলা বলে মনে করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে তত্ত্বজ্ঞানীদের এই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে। দেশের মানুষ কর্তার অনুশাসন মেনে চলতে গিয়ে নিজেদের স্বাভাবিকত্বটাই হারিয়ে ফেলেছিল। তাই তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, কর্তার মৃত্যুর পর তারা কার শাসন মেনে চলবে।দেশবাসীর উদ্বেগকে নিরসন করে দেবতা নির্দেশ দেন কর্তার ভূত কর্তার বদলে দেশ শাসন করবে। কর্তার ভূত আসলে মানুষের মূঢ়তা ও অন্ধ কুসংস্কারের ফসল। তাই কর্তা মারা গেলেও তার ভূত শাসন-পীড়ন চালাতে লাগল। আগে মানুষযেমন কর্তার শাসন মেনে চলত এখনও দ্বিধাহীনভাবে মানুষ কর্তার ভূতের শাসন মেনে চলতে লাগল। ভূতশাসনতন্ত্রেমানুষগুলি চোখ বন্ধ করে আজ্ঞা পালন করতে থাকে।এইরূপ অত্যাচার ও উৎপীড়ন সহ্য করতে করতে কখনো কখনো কেউ কেউ প্রতিবাদ করে ওঠে, তারা খাজনা দিতে অনিচ্ছুক হয়। এরূপ বিদ্রোহ ভূতশাসনতন্ত্রে একেবারেই কাম্য নয়। এইরূপ প্রশ্ন তোলা প্রতিবাদের নামান্তর। এইরূপ প্রতিবাদকে চিরতরে দূর করার জন্য প্রথমে তত্ত্বকথার আশ্রয় নেওয়া হয় । ভূততন্ত্রের তাত্ত্বিকেরা তাদের বুঝিয়ে দেয় যে চোখ বুজে চলাটাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা। প্রাণের প্রথম উদ্ভবকালে শ্যাওলা ও এককোষী প্রাণীরা ছিল চক্ষুহীন।এইভাবে চোখ বুজে চলাই হল আদিম আভিজাত্য। ভূতশাসনতন্ত্রের স্বার্থে তত্ত্বজ্ঞানীরা মানুষের মধ্যে সেকথাই প্রমাণ ও প্রচার করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৪। 'আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া।' —কার এই উক্তি? এই উক্তির আলোকে বক্তার স্বরূপটি নিরূপণ করো। ১+৪=৫
উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত' গল্পে এক দেশের সর্বময় কর্তার ও তার মৃত্যুর পর তার ভূতের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। কর্তার কর্তৃত্ব নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছিল দেশের মানুষ। ভূত হয়েও একইরকম আনুগত্য আদায় করেছিল কর্তার ভূত। দেশের দু’একজন মানুষ হাত জোড় করে কর্তার ভূতের কাছে জানতে চায় তার ছাড়ার সময় হয়েছে কি না? এর উত্তরে কর্তার ভূত জানায়—তার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, মানুষ ছাড়লেই তার ছাড়া। এইরকম কর্তার ভূত সমগ্র দেশবাসীর নিয়ন্ত্রক। তাই বেশ শক্ত হাতেই ভূতের শাসনতন্ত্র কায়েম করেছে। কর্তার ভূত দেশের মানুষের উপর চেপে বসল। ভূতের শাসনেও মানুষগুলি প্রশ্নহীন থাকে। তারা চোখ বন্ধ করে ভূতের নিয়ম মেনে চলে—এইভাবে চলাতেই তাদের শান্তি। আর এরই সুযোগ বর্গিরা আক্রমণ করে এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার করে। একদিকে আন্তর্দেশীয় শোষণ, অন্যদিকে বহিঃশক্তির পীড়ন দুয়ের মাঝে পড়ে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ বিদ্রোহী হলে তাকে ভূতের নায়েব গোমস্তারা জেলে পাঠায়। সেখানে তাকে তেজহীন করা হয়। ভূতশাসনতন্ত্রের তাত্ত্বিকেরা এই যাবতীয় শোষণ ও পীড়নের মধ্যে মানুষকে চলতে বাধ্য করে। দেশে বসবাসের জন্য দেশবাসীকে খাজনা দিতে হয়, তাই একান্ত উপায় না থাকা সত্ত্বেও মানুষ প্রশ্ন করে কেন তারা খাজনা দেবে? এই প্রতিবাদীরা একান্ত বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ—তাই তাদের মনে হয় কর্তার ভূত বলে কিছু নেই। কর্তার ভূত অলীকমাত্র যা মানসিক ভীতি। মানুষ সচেতন হলে ভূতের শাসন আর থাকবে না। সেকথাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে কর্তার ভূতের এই মন্তব্যে।
৫। “সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা এই চলা চলত।”—মতটি কাদের? এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?5+8=
উত্তর কর্তার ভূতের শাসনে থাকা দেশবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেই দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা সৃষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কীটাণুরা কীভাবে চলত—তার কথা উল্লেখ করেছে। ভূততন্ত্রের বশংবদ তত্ত্বজ্ঞানীরা মানুষজনকে বুঝিয়ে দেয় অন্ধভাবে চলাটাই পৃথিবীর আদিম চলার পদ্ধতি। ‘কর্তার ভূত’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ এক শাসনহীন শাসনতন্ত্রের কথা রূপকের মধ্যে দিয়ে আলোচনা করেছেন। কর্তার শাসনাধীন দেশবাসী অন্ধভাবে কর্তার অনুসরণেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। তার মৃত্যুর পর তার ভূত শাসক হয়ে বসল। কর্তার ভূতের হয়ে নায়েব ও গোমস্তা একইভাবে শাসন পীড়ন চালিয়ে যেতে লাগল। মানুষও অন্ধভাবে ভূতশাসনতন্ত্রের নির্দেশ মেনে চলতে লাগল। এই চোখ বুজে চলাকেই আদি ও অকৃত্রিম চলা বলে মত দিয়েছিল ভূতশাসনতন্ত্রের তত্ত্বজ্ঞানীরা। তারা মানুষকে বুঝিয়ে দেয়—এই অন্ধভাবে চলাটাই পৃথিবীর আদিম চলার পদ্ধতি। ঘাসের মধ্যে, গাছের মধ্যে আজও এই চলার আভাস প্রচলিত। প্রাণের প্রশ্ন উদ্ভবকালে জলজ শ্যাওলা ও এককোষী প্রাণীরা ছিল চক্ষুহীন। তারা কেবল সহজভাবে জীবনরক্ষার আদিম শর্তটুকু পালন করেই বেঁচে থাকত। অতএব এই চক্ষুহীন অর্থাৎ বিচারবুদ্ধিহীনভাবে চলার মধ্যে একটা আদিম আভিজাত্য আছে। ভূততন্ত্রের স্বার্থে সেকথাই তত্ত্বজ্ঞানীরা প্রচার করতে লাগল। এইভাবে জীবন কাটানোর তত্ত্ব প্রচারের মধ্যে শাসকদের স্বৈরাচারের কৌশল হয়তো ধরা পড়ে। কিন্তু মানুষ বোধবুদ্ধিহীনভাবে অর্থাৎ অন্ধভাবে চলাতেই অভ্যস্ত। তাদের একমাত্র কামনা, ভবিষ্যৎ ভাবনা যেন তাদের না ভাবতে হয়। এইভাবে পথ চলাতে আনন্দ থাকতে পারে কিন্তু মুক্তির কোনো পথ দেখা যায় না।
৬। “সেই জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না।”—কোন জেলখানার কথা বলা হয়েছে? সেই জেলখানার বর্ণনা দাও। ১+৪=৫
উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে শোষণপ্রবণ এক শাসনতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। সেখানের মানুষ প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ করে না। অন্ধভাবে জীবন অতিবাহিত করাই তাদের একমাত্র কাম্য। তবুও কেউ কেউ বিদ্রোহ বা প্রতিবাদ করে উঠলে তাকে জেলখানার ঘানি টানানো হয় ; যাতে তার তেজ বেরিয়ে গিয়ে আর প্রতিবাদ করতে না পারে। সেই জেলখানার কথা বলা হয়েছে। কর্তার ভূত তার শাসন ব্যবস্থাকে বহাল রাখতে প্রতিনিয়ত কৌশল ঠিক করে। প্রথমত তার অধীনস্থ তত্ত্বজ্ঞানীদের দিয়ে অজ্ঞানতার বাণী প্রচার করে মানুষকে চোখ বুজে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত দণ্ডদানের জন্য জেলখানা ব্যবস্থাকে সজীব রাখা। যারা কর্তার ভূতের শাসন মানতে চায় না বা প্রতিবাদ করে, তাদের নায়েব-গোমস্তারা জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। কর্তার মৃত্যুর পর সেখানকার শাসনব্যবস্থাও ভূতশাসকের হাতে থাকে। কিন্তু সেই জেলখানার কোনো দেয়াল নেই। অর্থাৎ গণতন্ত্রের প্রহসন রচনা করে জেলখানায় শাস্তিদানকে আড়াল করে রাখা হয়। আর জেলখানা দেয়ালহীন হওয়ায় সেই দেয়াল ভাঙার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে জেলখানা দণ্ডিতকে সংশোধন করে ভালো পথে ফেরানোর চেষ্টা করে দেশের উপকার করে। ফলে সেই জেলের ঘানি থেকে যে তেল বের হয়—তা দেশের উন্নতির রথচক্রকেই সচল রাখে। কিন্তু ভূতের শাসনতন্ত্রে এরূপ সংশোধনের ইতিহাস নেই।সেখানে জেলের ঘানি টানিয়ে প্রতিবাদীর কণ্ঠকে নিস্তেজ করে দেয়—দেশ আপাতভাবে শান্তিতে থাকে। এইরূপ জেলখানা তাই বিদ্রুপের যোগ্য, রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায় তাই ধরা পড়েছে।
● ৭। “নইলে ছন্দ মেলে না, ইতিহাসের পদটা খোঁড়া হয়েই থাকে।” —ব্যাখ্যা করো।
উত্তর প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশীয় শাসনব্যবস্থায় এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ক্ষমতালোভী শাসক নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমাজের সাধারণ মানুষকে এক অদৃশ্য সুতোর দ্বারা পরিচালিত করেছে। সাধারণ মানুষ এই শাসন ব্যবস্থাকেই নির্দ্বিধায় মেনে চলেছে। যার স্পষ্ট রূপ প্রতিফলিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি ‘কর্তার ভূত' গল্পের অংশ বিশেষ। সমাজের সাধারণ মানুষ নিজেদের বিবেকবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে জড় পদার্থের মতো আচরণ করে। এইরূপ সমাজব্যবস্থায় তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভুলে যায়। এই সুযোগে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী শাসক তাদের উপর নানাভাবে শাসনশোষণ চালিয়ে যায়। অপর শ্রেণি নির্বিবাদে তা মেনে নেয়—কারণ, তারা প্রতিবাদ করতে শেখেনি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—ভূত ঘাড়ে চেপে বসে থাকলেই স্বস্তি। তারা শান্ত ভদ্র হয়ে থাকবে—কখনও কোনো প্রশ্ন করার সাহস পাবে না। ভূতের রাজ্যের জনগণ জেগে ঘুমিয়ে নিরুপদ্রবে থাকতে চায়। সেখানে এই শান্তির ছন্দ নষ্ট হলে অভিভাবকেরা বলে, সেটা বর্গির দোষ না হলে শান্তিতে থাকার ছন্দ মেলে না। বর্গির আক্রমণ ঐতিহাসিক ঘটনা। বুলবুলিতে ধান খাওয়ায় খাজনা দেবার অসুবিধা দেখা দেয়। বর্গির আক্রমণ না ঘটলে ইতিহাসের পদটা অকেজো হয়ে যেত। তাই ‘বুলবুলির ঝাঁক’ আর বর্গির দল-এর উন্মত্ততায় পা না মিলিয়ে কৃষ্ণনাম জপ করা হতে থাকে। এভাবেই রবীন্দ্রনাথ স্থবির ভারতবর্ষের প্রতি আস্থাশীলতার স্বরূপটিকে রূপকের মাধ্যমে অসাধারণভাবে উপস্থাপিত করে আজকের পাঠককে সচকিত করতে চেয়েছেন।
৮। ‘কর্তার ভূত’ কি নিছক ভূতের গল্প, নাকি রাজনৈতিক, রূপক কাহিনি—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর গভীর এক বেদনাবোধ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কর্তার ভূত’ নামক ব্যঙ্গ-কাহিনিটি রচনা করেছিলেন। দেশব্যাপী নিশ্চেষ্টতা দেখে রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ ও যন্ত্রণার সঙ্গে ব্যঙ্গের শানিত কশাঘাতে আত্মনির্ভরশীলতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন এই গল্পটির মধ্য দিয়ে। কর্তার ভূত হচ্ছে অতীতকালের শাসনতন্ত্রের প্রতীক; যখন মৃত্যু হয় তখনও সে ছাড়ে না—কান মলে শাসন করতে চায়—জেলের ঘানি পিষে তেজ বার করে এবং লোকে ভয়ে ভয়ে মরে। ভারতবাসী এইরূপ ভূতের ভয়ে অস্থির। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ভূতের মাধ্যমে অন্ধ প্রাচীনতত্ত্বের অন্তঃসারশূন্যতাকে তাঁর সহজ পরিহাসপ্রিয়তার মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ‘কর্তার ভূত’ গল্পের বিষয়বস্তুতে রয়েছে এক অদ্ভুত কাহিনি। বুড়ো কর্তার মৃত্যু আসন্ন—তাই দেশবাসী চিন্তিত। কর্তার মৃত্যু হলেও তিনি ভূত হয়ে শাসনকার্য চালাবেন। আর সাধারণ মানুষ তা নির্দ্বিধায় মেনে চলবে। আসলে এই শাসন ব্যবস্থা হল আমাদের দেশের মানুষের অর্বাচীন কালের
নিয়মকানুন মেনে চলা। এই সাধারণ মানুষদের উপর কর্তৃত্ব করে একশ্রেণির ক্ষমতালোভী মানুষ। এদেশের মানুষজনের নির্বুদ্ধিতার ফলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি ভারতবর্ষে এসেছে এবং তাদের শাসন শোষণ প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। দেশের মানুষ সচেতন হলে বিদেশী শক্তি ভারতবর্ষে রাজত্ব করতে পারত না। দেশের মানুষ নিজের সম্পর্কে, নিজের দেশের সম্পর্কে সচেতন হলেই দেশের প্রগতি সম্ভব হবে। আর তার ফলেই আমাদের দেশ থেকে সমস্ত বাধা ও ভ্রান্ত ধারণা দূর হবে। যে কাহিনির বহিরঙ্গে একটি বিষয় বিকৃত হলেও অন্তরঙ্গে থাকে গভীর গূঢ় অর্থের আখ্যান এবং বাইরের সেতুর মাধ্যমেই অন্তরঙ্গ বিষয়টিতে প্রবেশ করা যায়—তাকেই রূপক কাহিনি বলা হয়। এরই নিরিখে ‘কর্তার ভূত’ গল্পটিকে ভূতের গল্প নয়—রাজনৈতিক রূপক কাহিনি বলাই যুক্তিসঙ্গত।
প্রশ্ন ৯। “যারা বেঁহুশ তারাই পবিত্র, হুঁশিয়ার যারা তারাই অশুচি...” –এই উক্তির প্রেক্ষিতে কাহিনিটি ব্যক্ত করো। ৫
উত্তর জগৎ-সংসারের নিয়মানুসারে মানুষের মৃত্যু ঘটলেও মানুষের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সামাজিক রীতি-নীতির মৃত্যু নেই। অনেকদিন ধরে চলে আসার জন্য জগতে সেগুলি যথার্থ কর্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই শাসনকর্তা বুড়ো কর্তার মৃত্যু ঘটলেও, তার প্রচলিত প্রথার দ্বারা এখনো সাধারণ মানুষ পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষ সেইরূপ প্রথার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ জানায় না, কোনো প্রশ্ন করে না। সেই সাহস বা ক্ষমতা তাদের নেই। তাই তাদের আর্থসামাজিক জীবনে কর্তা ভূতের ন্যায় চিরকাল তাদেরকে শাসন করে চলেন। কর্তা নেই—তবুও তিনি আছেন। মানুষের জীবনে তাঁর প্রভাব অদৃশ্য শক্তির ন্যায় বিরাজমান। ভূতের রাজ্যের অধিবাসীরা জেগে ঘুমিয়ে নিরুপদ্রবে জীবন কাটাতে চায়। চারিদিক হতে ‘বুলবুলি’র দল এসে দানাশস্য খেয়ে গেলেও সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়ে। হুঁশিয়ার যারা তারা প্রায়শ্চিত্তের ভয়ে আত্মগোপন করে থাকে। শিরোমণি চূড়ামণির দল এখানে বিধান দেন—যারা বেহুঁশ তারাই পবিত্র। যারা বেহুঁশ তারা পবিত্র হওয়ায় সবাই তাদের ঘাড়ে চেপে বসে এবং জোর করে ভয় দেখিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়। কিন্তু এবার কেউ কেউ হুঁশিয়ারদের মতো নিজেদেরকে শক্ত করতে চায়, যাতে কেউ তাদের উপর জোর করতে না পারে। তাই তারা লড়াই করে দেশ থেকে ভূত ছাড়াবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। আধুনিক বুলবুলি বা বর্গি বলতে বোঝানো হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীর দলকে। এই সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে অসহযোগিতা করা হবে, যাতে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে। তাহলেই কর্তার ভূত বা কর্তৃত্বকামী সনাতন প্রথার সংকীর্ণ গণ্ডি কাটিয়ে নতুন করে পথ চলার দিশা পাওয়া যাবে।
[TAG]: একাদশ শ্রেণি কর্তার ভূত গল্প pdf,কর্তার ভূত গল্প mcq,কর্তার ভূত বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণি,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 3 নং প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প বড় প্রশ্ন উত্তর,একাদশ শ্রেণির বাংলা গল্প 1 প্রশ্ন উত্তর,Class 11 Bengali golpo question in bengali,