পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা। Paribesa dusana o tar pratikara prabandha racana pdf

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা। Paribesa dusana o tar pratikara prabandha racana


পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: চারপাশের যাবতীয় জড় ও সজীব উপাদানগুলিকে নিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের পরিবেশ। পরিবেশের প্রতিটি উপাদান ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বুকে

জীবেরা বেঁচে থাকে। এর ফলে বাস্তুতন্ত্রের সুস্থিতিও বজায় থাকে। মানুষের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক খুব নিবিড়। তাই পরিবেশ যাতে কলুষিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।


পরিবেশ দূষণ : বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপন সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলিকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। ফলে পরিবেশ প্রতি মুহূর্তে দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে মানবসমাজে পরিবেশ দূষণ প্রধান সমস্যারূপে ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পরিবেশকে আমরা ‘জীবনদাত্রী’ মনে করি। শ্বাসকার্যের জন্য অক্সিজেন, বাঁচার জন্য খাদ্য এবং ওষুধ ছাড়াও জীবনের অন্যান্য কাজের প্রয়োজনীয় রসদ আমরা পরিবেশ থেকে পাই। কিন্তু গ্রাম থেকে নগর গড়তে গিয়ে বিপুল পরিমাণে গাছ কেটে ফেলা, নির্বিচারে বসতবাড়ি নির্মাণ, সড়ক তৈরি, রেললাইন পাতা, কারখানা তৈরি প্রভৃতির ফলে বদলে যাচ্ছে পরিবেশ। এর ফলস্বরূপ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বায়ুদূষণ, জলদূষণ ও শব্দদূষণের মাধ্যমে সমগ্র পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। রাস্তাঘাটে বাস, লরি, নানা ধরনের মোটরগাড়ির ধোঁয়া, শহরাঞ্চলে কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, বর্জ্যপদার্থ ইত্যাদি সর্বদা পরিবেশকে দূষিত করে মানুষের ক্ষতি করে চলেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যানসার প্রভৃতি রোগের মূল কারণ বায়ুদূষণ। সমুদ্র ও নদীগর্ভে নিক্ষিপ্ত নানান দূষিত পদার্থ নদীর জলকে ক্রমাগত দূষিত করছে। কলকারখানা ও বাড়িঘরের নানা আবর্জনাও বিভিন্ন জলাশয়ের জলকে দূষিত করছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কলকারখানা, গাড়ি, বাজি, বোমা, মিছিলের আওয়াজ, মাইকের চড়া সুর—শহরের বদ্ধ পরিবেশে প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে। যার ফলে শ্রবণজনিত বিভিন্ন সমস্যা ও স্নায়ুরোগের মতো জটিল সমস্যা বাড়ছে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও জাতীয় এবং প্রাদেশিক স্তরে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে। আমাদের সবাইকে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ প্রতিপালনের জন্য উৎসাহী হতে হবে। শুধু বনমহোৎসব কিংবা অরণ্যসপ্তাহ পালনই নয়—দূষণমুক্ত পরিবেশকে বাস্তব রূপ দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে যানবাহনের কালো বিষাক্ত ধোঁয়া এবং কারখানার দূষিত পদার্থের নিঃসরণ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মাইক, লাউডস্পিকার প্রভৃতি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। কলকারখানা এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে তা যেন শহর বা জনবসতি থেকে দূরে হয়। সকলের মধ্যেই নদী, পুকুর এবং সমগ্র পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।


উপসংহার: বর্তমান যুগে পরিবেশ দূষণের সম্পূর্ণরূপে অবসান ঘটানো সম্ভব না হলেও আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সম্ভব। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url