অদ্ভুত আতিথেয়তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর|Class 8 bengali advut atithiota question answer pdf
অদ্ভুত আতিথেয়তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হাতেকলমের সমাধান অষ্টম শ্রেণী বাংলা প্রশ্ন উত্তর
অষ্টম শ্রেণী বাংলা অদ্ভুত আতিথেয়তা হাতেকলমের সমাধান প্রশ্ন উত্তর।
১. কোন্ বিষয়ে কোনো জাতি আরবদের তুল্য নয় ?
→ আতিথেয়তা বিষয়ে কোনো জাতি আরবদের তুল্য নয়।
২. বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মধুসূদনের লেখা একটি সনেট জাতীয় কবিতার নাম লেখো। [OEQ]
→ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এবং ‘পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’— এই দুটি মধুসূদন রচিত সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা ।
৩. ‘আখ্যানমঞ্জরী’ গ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
‘আখ্যানমঞ্জরী’ গ্রন্থটি ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।-
৪. ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ কোন্ সেনাপতির প্রসঙ্গ আছে?→ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ আছে।
৫. ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গদ্যে কোন্ কোন্ জাতির বৈরিতার কথা বলা হয়েছে?
‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গদ্যে আরবজাতি ও মুরজাতির বৈরিতার কথা বলা হয়েছে।
৬. ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ জাতির আতিথেয়তার পরিচয় পাওয়া যায়?
→ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবজাতির আতিথেয়তার পরিচয় পাওয়া যায়।
৭. ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ আখ্যানটি কোন্ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ আখ্যানটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘আখ্যানমঞ্জরী’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
অদ্ভুত আতিথেয়তা হাতেকলমের সমাধান
১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন্ কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো। [OEQ]
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্রের রচিত দুটি গ্রন্থের নাম ‘আখ্যানমঞ্জরী’ ও ‘বোধোদয়’।
২ নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ কোন্ সেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে।
২.২ “তিনি, এক আরবসেনাপতির পটমণ্ডপদ্বারে উপস্থিত হইয়া, আশ্রয়-প্রার্থনা করিলেন।”—উদ্ধৃতাংশে ‘তিনি’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: : ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে ‘তিনি’ বলতে আরব শিবিরে উপস্থিত মুরসেনাপতির কথা বোঝানো হয়েছে।
২.৩ “উভয় সেনাপতির কথোপকথন হইতে লাগিল।”—উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: আলোচ্য গল্পে ‘উভয় সেনাপতি' বলতে এখানে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
২.৪ “তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা।”— প্রাণরক্ষার কোন্ উপায় বক্তা এক্ষেত্রে বলেছেন?
উত্তর: আরবসেনাপতি যে ঘোড়াটি মুরসেনাপতিকে দিয়েছেন সেই ঘোড়ায় চড়ে মুরসেনাপতি যদি দ্রুতবেগে চলে যেতে পারেন, তাহলে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতি উভয়েরই প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা আছে বলে বক্তা জানিয়েছেন।
২.৫ “আপনি সত্বর প্রস্থান করুন”—বক্তা কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘সত্বর প্রস্থান’ করার নির্দেশ দিলেন?
উত্তর: সূর্যোদয়ের পর মুরসেনাপতি আর আরবসেনাপতির অতিথি থাকবেন না, তাই তখন মুরসেনাপতির ওপর প্রতিশোধ নিতে আরবসেনাপতির আর কোনো বাধা থাকবে না—এ কারণেই আরব সেনাপতি মুরসেনাপতিকে সূর্যোদয়ের আগেই পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৩ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো।
৩.১ “তাঁহার দিক্ভ্রম জন্মিয়াছিল।”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে? দিগ্ভ্রম হওয়ার পরিণতি কী হল?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
• দিগ্রম হওয়ার পরিণতি: মুরসেনাপতিকে আরবসেনারা অনেক দূর পর্যন্ত অনুসরণ করলে তিনি প্রাণভয়ে দ্রুতবেগে পালাতে থাকেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি পথ ভুল করে বিপক্ষের শিবিরে এসে উপস্থিত হন। ক্লান্ত অবস্থায় তিনি আরবসেনাপতির তাঁবুতে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
৩.২ “আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে।”—এই বক্তব্যের সমর্থন গল্পে কীভাবে খুঁজে পেলে?
উত্তর: আরবদের আতিথেয়তার নিদর্শন: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আমরা দেখলাম যে, আরবসেনাপতি তাঁর ঘোরতর শত্রু ও পিতার হত্যাকারী মুরসেনাপতিকে সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় পেয়েও প্রতিশোধ নেননি। এর কারণ হল তিনি ওই মুরসেনাপতিকে অতিথির মর্যাদা দিয়েছিলেন। আরবদের জাতীয় ধর্মই হল প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হলেও অতিথির অনিষ্ট চিন্তা না করা। এই গল্পটি তাই আতিথেয়তা বিষয়ে আরবদের শ্রেষ্ঠত্বেরই নিদর্শন।
৩.৩ “সহসা আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল।”আরবসেনাপতির মুখ হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর: মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে শত্রুপক্ষ আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয়প্রার্থী মুরসেনাপতি জল, আহার ও বিশ্রাম গ্রহণের পর কিছুটা সুস্থ হন। তারপর উভয় সেনাপতি কথাবার্তা শুরু করেন। তাঁদের গল্পের বিষয় ছিল পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, সংগ্রাম-কৌশল ইত্যাদি। কথাবার্তার সময় আরবসেনাপতি বুঝতে পারেন যে, এই মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার কিন্তু তখনইআরবসেনাপতির পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণ সম্ভব ছিল না। কারণ, সেইহত্যাকারী। মুহূর্তে মুরসেনাপতি ছিলেন তাঁর অতিথি। এই কারণেই মনের যন্ত্রণায় আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠে।
৩.৪ “সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন।”—এখানে কার মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে? তাঁর মনের এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে মুরসেনাপতির মনের সন্দেহের কথা এখানে বলা হয়েছে।
● সন্দেহের কারণ: আরবসেনাপতির শিবিরে বিশ্রাম নিয়ে ও খাদ্যগ্রহণ করে মুরসেনাপতি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর উভয় সেনাপতি কথাবার্তা বলতে লাগলেন। তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম ও সংগ্রাম-কৌশল বিষয়ে কথা বলছিলেন। আরবসেনাপতির অদ্ভুত আচরণ: কথা বলার সময় হঠাৎই আরবসেনাপতি বিবর্ণ মুখে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি মুরসেনাপতিকে বলে পাঠালেন যে, তিনি অসুস্থ, তাই উপস্থিত থেকে অতিথির সেবা করতে পারছেন না। মুরসেনাপতির জন্য আহার ও শয্যা প্রস্তুত আছে। পরের দিন ভোরে তাঁর যাত্রার জন্য একটি তেজি ঘোড়াও প্রস্তুত থাকবে। যাওয়ার সময় আরবসেনাপতি তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। আরবসেনাপতির এরকম অদ্ভুত আচরণের কারণ বুঝতে না পেরে মুরসেনাপতির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল।
৩.৫ “...তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন...”—কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন? তাঁর অনুসরণের কারণ কী?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গদ্যে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন।
→ অনুসরণের কারণ: আরবসেনাপতি জানতে পেরেছিলেন যে, তাঁর অতিথি মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু অতিথির ক্ষতিসাধন আরবদের ধর্মবিরুদ্ধ কাজ। তাই নির্বিঘ্নে রাত কাটানোর পর মুরসেনাপতি যখন আরবসেনাপতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের শিবিরের দিকে রওনা দিলেন, তখন পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তিনি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করেছিলেন।
৪ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
৪.১ “যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদ্বিষয়ে যথোপযুক্ত আনুকূল্য করিব।”
উত্তর: প্রসঙ্গ: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে অতিথিপরায়ণ আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে এই কথাটি বলে পাঠিয়েছিলেন।
তাৎপর্য: শত্রুপক্ষের সেনাপতি হলেও বিপদগ্রস্ত, খিদে-তেষ্টায় ক্লান্ত মুরসেনাপতিকে অতিথি হিসেবে নিজের শিবিরে আশ্রয় দিয়েছিলেন আরবসেনাপতি। পারস্পরিক কথাবার্তার সময় তিনি জানতে পারেন, মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু তারপরেও তিনি তাঁর অতিথিসেবার ধর্ম থেকে সরে আসেননি। মনের রাগ-হিংসা সরিয়ে রেখে তিনি অতিথির সেবা করেছেন। এমনকি তিনি ক্লান্ত ঘোড়ার বদলে সুসজ্জিত ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ঘোড়া দিয়ে মুরসেনাপতিকে নিরাপদে নিজ শিবিরে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন।
৪.২ “এই বিপক্ষ শিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই।”
উত্তর: প্রসঙ্গ: বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে খুব ভোরে মুরসেনাপতিকে বিদায় জানানোর সময় তাঁকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে আরবসেনাপতি এই কথাটি বলেছিলেন।
তাৎপর্য: মুরসেনাপতি বিপক্ষ দলের হলেও আরবসেনাপতি একজন বিপদগ্রস্ত অতিথি হিসেবে তাঁকে নিজের শিবিরে আশ্রয় দিয়েছিলেন। কারণ, আরবজাতির কাছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হল অতিথিসেবা। কিন্তু কথাবার্তার সময় আরবসেনাপতি জানতে পারেন, এই মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তখন আরবসেনাপতি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, সূর্যোদয় হলে পিতার হত্যাকারীকে বধ করে তিনি প্রতিশোধ নেবেন। তাই তিনিবলেছিলেন যে, এই বিপক্ষ-শিবিরের মধ্যে মুরসেনাপতির সবচেয়েবড়ো শত্রু স্বয়ং আরবসেনাপতিই।
৪.৩ “আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও,অতিথির অনিষ্ট চিন্তা করি না।”
উত্তর: প্রসঙ্গ: বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি আরবজাতির অতিথিপরায়ণতার বিষয়ে এই কথাটি মুরসেনাপতিকে বলেছিলেন।
তাৎপর্য: আতিথেয়তার বিষয়ে আরবজাতিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। কেউ অতিথি রূপে আরবদের আশ্রয়প্রার্থী হলে তাঁরা সাধ্যমতো ওইব্যক্তির সেবা করেন। সে ব্যক্তি শত্রু হলেও আরবরা তার প্রতি এতটুকুও অনাদর বা বিদ্বেষ দেখান না। আলোচ্য গল্পে সেই ঐতিহ্য মেনেই আরবসেনাপতি শত্রুদলের সেনাপতিকেও অতিথিরূপে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাঁর যথাসাধ্য সেবাযত্ন করেছেন। এমনকি,মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী—এই সত্যি জেনেও তিনি অতিথিসেবার ধর্ম থেকে সরে আসেননি। মুরসেনাপতির বিদায়কালে আরবসেনাপতি নিজ জাতির আতিথেয়তা বিষয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন।
অষ্টম শ্রেণী বাংলা গল্প অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর pdf।
৫ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৫.১ গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন? তাঁর সেইআতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন?
উত্তর: বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতির আতিথেয়তার কথা রয়েছে।
● অতিথির আতিথেয়তা: আরবজাতি আতিথেয়তার বিচারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। আলোচ্য গল্পে উল্লিখিত আরবসেনাপতি সেই আরবজাতিরই একজন। তাই বিপক্ষ দলের হলেও ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও আশ্রয়প্রার্থী মুরসেনাপতিকে আরবসেনাপতি সহজেই নিজ শিবিরে জায়গা দিয়েছিলেন। তিনি মুরসেনাপতির বিশ্রাম, আহার, এমনকি নিরাপদে নিজের শিবিরে ফিরে যাওয়ার জন্য তেজস্বী ঘোড়ারও বন্দোবস্ত করেছিলেন। এইভাবেই আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির আতিথেয়তা করেছিলেন।→ ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়ার কারণ : আশ্রয়প্রার্থী মুরসেনাপতি তাঁরপিতাকে হত্যা করেছেন জেনেও আরবসেনাপতি নিজ কর্তব্যে স্থিরথেকে অতিথির সেবা করেছেন। তিনি পরম শত্রুকে হাতের কাছে পেয়েও প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়েঅতিথিসেবাকেই কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন।তাই তাঁর আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ বা আশ্চর্যজনকবলা হয়েছে।
৫.২ আরব-মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও।
[OEQ]
উত্তর: লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগররচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ আখ্যানটিইতিহাস-সমর্থিত কিনা, সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। তবে এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর
অন্যন্যতার প্রকাশ ঘটেছে। ভাষার সাবলীলতা: বিদ্যাসাগর তাঁরস্বকীয় সাবলীলতা ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাষারব্যবহারে কাহিনিটির মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্পণ করতে সফল হয়েছেন।
তৎসম শব্দের ব্যবহার: বিদ্যাসাগর এই গল্পে তৎসম শব্দের ব্যবহার করলেওসাধুভাষায় লেখা গদ্যটিকে ভারাক্রান্ত করেননি, বরং সাবলীল করে তুলেছেন। প্রাচীন ইতিহাসের পটভূমিকায় লেখা কাহিনির ক্ষেত্রে এ ভাষাযথাযথ বলেই মনে হয়েছে। রচনাশৈলী: সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ শব্দেরপ্রয়োগ নীতিকথাধর্মী কাহিনিটির আবেদন পাঠকের কাছে বহুগুণ বাড়িয়েদিয়েছে। অশ্বারোহণ, শিবিরসন্নিবেশস্থানে, বিপক্ষতাচরণ, মুখপ্রক্ষালনাদি এবং আরও বহুবিধ সংস্কৃতগন্ধী শব্দ বর্তমানে প্রায় অব্যবহার্য হয়ে পড়েছে। তবুও সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের এই ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত উপভোগ্য হয়ে উঠেছেপাঠকদের কাছে।
৫.৩ “আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনো জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে।”—গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে গৃহীত।আলোচ্য গল্পে এক মুরসেনাপতি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে গিয়ে দিক ভুলে বিপক্ষ শিবিরে অর্থাৎ আরবদের শিবিরে এসে উপস্থিতহয়েছেন। তিনি শত্রুশিবিরে আশ্রয় লাভ করেন এবং খাদ্য ও পানীয় সহযোগে বিশ্রাম করেন। তারপর মুর ও আরবসেনাপতির মধ্যেকথাবার্তার সময় স্পষ্ট হয় যে, মুরসেনাপতিই আরবসেনাপতিরপিতার হত্যাকারী। এই সত্যি জেনেও আরবসেনাপতি চুপ করেছিলেন। কারণমুরসেনাপতি ছিলেন তাঁর অতিথি। তবেআরবসেনাপতি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, পরদিন সূর্যোদয়ের পরমুরসেনাপতি শিবির থেকে বেরিয়ে গেলেই তিনি তাঁকে হত্যা করার
জন্য চেষ্টা করবেন। মুরসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যাকারী জেনেও যথাযথ অতিথিসেবায় কোনো ত্রুটিরাখেননি আরবসেনাপতি।এখানেই উদ্ধৃত মন্তব্যটির সার্থকতা।
অদ্ভুত আতিথেয়তা সমাধান প্রশ্ন উত্তর
৫.৪ “বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথোপকথন হইতে লাগিল।” কোন্ দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে? তাঁদেরকীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল? উভয়ের কথোপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর: উদ্দিষ্ট সেনাপতিদ্বয়: উদ্ধৃত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে। এখানে দুই সেনাপতি বলতে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
● সাক্ষাতের প্রেক্ষাপট: আরবসেনারা মুরসেনাপতির পিছু নিলে তিনি পালানোর সময়ে দিক ভুল করে আরবশিবিরে এসে হাজির হন। ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত মুরসেনাপতি আরবসেনাপতির কাছে আশ্রয়ভিক্ষা
চাইলে তিনি সেই প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং মুরসেনাপতিকে নিজের শিবিরে আশ্রয় দেন। এইভাবে দুই সেনাপতির সাক্ষাৎ ঘটে।
● কথোপকথনের সারমর্ম: আরবশিবিরে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ফলে মুরসেনাপতির ক্লান্তি অনেকখানি দূর হলে উভয় সেনাপতি বন্ধুর মতো গল্প করতে থাকেন। নিজেদের এবং পূর্বপুরুষদের সাহস ও লড়াইয়ের বিষয়ে তারা গল্প করতে থাকেন। সেই সময় আরবসেনাপতি জানতে পারেন যে, মুরসেনাপতিই তাঁর পিতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ কথা জানতে পেরেও আরবসেনাপতি তাঁকে আক্রমণ না করে অতিথিধর্ম পালন করেন এবং সেখান থেকে উঠে যান।
৫.৫ “তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন।”—কার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌঁছোলেন? তাঁর জীবনের এই ঘটনার পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ রচনাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটিতে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
● স্বপক্ষীয় শিবিরে পৌঁছানোর বৃত্তান্ত : আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে যে ঘোড়াটি দিয়েছিলেন, তা আরবসেনাপতির ঘোড়ার মতোই সবল এবং দ্রুতগামী ছিল। সূর্যোদয়ের কয়েক মুহূর্ত আগে মুরসেনাপতি সেই ঘোড়ায় চড়ে রওনা দিয়েছিলেন। তাই সূর্যোদয়ের পরে মুরসেনাপতির পিছু নিয়েও আরবসেনাপতি তাঁকে ধরতে পারেননি। ফলে মুরসেনাপতি নির্বিঘ্নেই নিজের শিবিরে পৌঁছেছিলেন।
● পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতা: নির্বিঘ্নে নিজের শিবিরে পৌঁছোনোর আগের রাতটা ছিল মুরসেনাপতির জীবনের এক ঘটনাবহুল এবং স্মরণীয় রাত। তাঁকে আরব সৈন্যরা অনুসরণ করলে তিনি প্রাণভয়ে পালান। কিন্তু প্রাণে বাঁচলেও তাঁর দিগ্ভ্রম ঘটে। শ্রান্ত ক্লান্ত অবস্থায় মুরসেনাপতি এসে হাজির হন বিপক্ষীয় আরব শিবিরে। তবে আরবদের আতিথেয়তার কারণেই তাঁকে বন্দি করা হয়নি। আরবসেনাপতি নিজে এসে মুরসেনাপতির সঙ্গে বন্ধুর মতো গল্প করতে থাকেন। এই কথোপকথনের সময়েই আরবসেনাপতি জানতে পারেন যে, তাঁর পিতার হত্যাকারী আসলে এই মুরসেনাপতি নিজেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি রাখেন না আরবসেনাপতি। পরদিন সূর্যোদয়ের আগে
আরবসেনাপতির কথায় মুরসেনাপতি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু আরবসেনাপতির উদারতায় শেষপর্যন্ত তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
৫.৬ “তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন...”—কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি ‘বৈরসাধন সংকল্প’ সাধন করেননি কেন?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত 'অদ্ভুত
আতিথেয়তা’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশটিতে আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
→ আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন । ক্লান্ত
● অনুসরণের কারণ: আরবসেনাপতি বিপন্ন মুরসেনাপতিকে আশ্রয় দান করেন এবং তাঁর সঙ্গে বন্ধুর মতো আলাপচারিতা করতে থাকেন। তখনই তিনি জানতে পারেন যে, মুরসেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। আরবদের আতিথেয়তার রীতি মেনে তিনি সেই মুহূর্তে তাঁর পিতৃহত্যাকারীকে আক্রমণ
করেননি। কিন্তু পরের দিন মুরসেনাপতি আরব শিবির ছেড়ে বেরোনোর পর আরবসেনাপতি পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করেন।
]● বৈরসাধন সংকল্প' সাধন না করার কারণ: শত্রু
মুরসেনাপতিকে হাতের মুঠোয় পেয়েও আরবসেনাপতি তাঁকে আক্রমণ করেননি। কারণ মুরসেনাপতি ছিলেন তাঁর অতিথি। কেউ অতিথি হিসেবে আরবদের কাছে এলে তাঁরা যথাসাধ্য তাঁর সেবা করেন। চরম শত্রুর প্রতিও তারা কোনোপ্রকার বিদ্বেষ প্রকাশ বা আক্রমণ করেন না।