বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। অষ্টম শ্রেণী বাংলা বনভোজনের ব্যাপার হাতেকলমের সমাধান প্রশ্ন উত্তর।Class 8 bengali bonovojon question answer pdf
বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর|অষ্টম শ্রেণী বাংলা বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর।
অষ্টম শ্রেণী বাংলা বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন্ বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র টেনিদার সৃষ্টিকর্তা।
১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।[OEQ]
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘লালমাটি’ ও ‘শিলালিপি’।
২ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ?
উত্তর: টেনিদা, হাবুল, প্যালারাম আর ক্যাবলার মধ্যে বনভোজনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল।
উত্তর: শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পেরিয়ে ক্যাবলার মামাবাড়ি। তার মামার বাড়ির বাগানবাড়িতেই বনভোজনের জায়গা ঠিক করা হয়েছিল।
২.৩ বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে?
উত্তর: শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চেপে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পর নামতে হবে। তারপর পায়ে হেঁটে প্রায় মাইল খানেক গেলে পৌঁছোনো যাবে ক্যাবলার মামার বাগানবাড়িতে অর্থাৎ বনভোজনের জায়গায়।
২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল?
উত্তর: গল্পের কথক প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল। তবে প্যালা রাজহাঁসের ডিমের জন্য ভন্টাকে ধরেছিল।
২.৫ বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল?
উত্তর: বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী সাবাড় করেছিল পাঁচ-ছটা বাঁদরের একটা দল।
২.৬ কোন্ খাবারের কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হল ?
উত্তর: বনভোজনের খাবারগুলি কিছু কাদায় পড়ে ও বাকি বাঁদরের হামলায় নষ্ট হলে বাধ্য হয়ে পাকা জলপাই দিয়ে বনভোজন সারতে হয়েছিল। তাই বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হল।
বনভোজনের ব্যাপার হাতেকলমের সমাধান প্রশ্ন উত্তর
৫ নীচের বাক্যগুলির প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে নিয়ে লেখো। [OEQ]
৫.১ আর সে গাঁট্টা ঠাট্টার জিনিস নয়—জুতসই লাগলে স্রেফ গালপাট্টা উড়ে যাবে।
উত্তর: এই বাক্যের বৈশিষ্ট্যটি হল ‘ট্ট’ ধ্বনিটি তিনবার ব্যবহৃত হওয়ার ফলে ‘ট’-এর অনুপ্রাস শব্দালংকারের সৃষ্টি হয়েছে। পরপর একই ধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অনুপ্রাস অলংকার বলে।
৫.২ দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা।
উত্তর: ‘দ্রাক্ষাফল’ ও ‘অতিশয়’ শব্দ দুটি তৎসম শব্দ, আবার ‘খাট্টা’ শব্দটি বিদেশি (হিন্দি) শব্দ। একটি বাক্যে দুটি তৎসম শব্দের সঙ্গে একটি বিদেশি শব্দের সহাবস্থানে যে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে সেটিই এই বাক্যের বৈশিষ্ট্য।
৫.৩ আহা-হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন?
উত্তর: পূর্ববঙ্গীয় ভাষার নিদর্শনই এর বৈশিষ্ট্য। ‘চৈইত্যা’ ও ‘যাইত্যাছ’ শব্দের ক্ষেত্রে অপিনিহিতি লক্ষ করা যায়।
৫.৪ এক চড়ে গালের বোম্বা উড়িয়ে দেব।
উত্তর: ‘বোম্বা’ শব্দের মতো সম্পূর্ণ অর্থহীন শব্দের ব্যবহার এই বাক্যের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে এরকম অর্থহীন শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শ্রোতাকে হতভম্ব করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। তা ছাড়া অন্যদের ওপর টেনিদার কর্তৃত্ব প্রকাশের জন্য শব্দটি যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৬ ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখো—বনভোজন, দলপতি, বেরসিক, দ্রাক্ষাফল, রেলগাড়ি।
উত্তর: বনভোজন—বনে ভোজন — অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস
● দলপতি—দলের পতি—সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস
● বেরসিক—নয় রসিক—না-তৎপুরুষ সমাস
● দ্রাক্ষাফল—দ্রাক্ষা নামের ফল—মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
● রেলগাড়ি—রেলের গাড়ি—সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস
বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর pdf|অষ্টম শ্রেণী বাংলা গল্প বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর
৭ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যখন টেনিদা লাফিয়ে উঠল তখন সে বাগানের দিকে ছুটল।
৭.২ চোখের পলকে বানরগুলো গাছের মাথায়। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যখন চোখের পলক পড়ল তখন বানরগুলো গাছের মাথায়।
৭.৩ দুপুরবেলায় আসিস। বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে।
(একটি সরল বাক্যে)
উত্তর: বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে দুপুরবেলায় আসিস।
৭.৪ ইচ্ছে হয় নিজে বের করে নাও।
উত্তর: যদি ইচ্ছে হয়, তবে নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)
৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে)
উত্তর: টেনিদা আর বলতে না দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।
৮ নীচের শব্দগুলির সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করো এবং তা দিয়ে বাক্য রচনা করো—চুরি, নষ্ট হওয়া, পালানো, গোলমাল করে ফেলা, লোভ দেওয়া, চুপ [OEQ]থাকা।
টীকা লেখো—কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা।[OEQ]
উত্তর: কলম্বাস: কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬ খ্রিস্টাব্দ) ইটালির জেনোয়া নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ইউরোপীয় নাবিক। কলম্বাস ভারতবর্ষ ও তার নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জের বর্ণনা পেয়ে সেই দ্বীপগুলিতে যাওয়ার সংকল্প নেন। প্যালো বন্দর থেকে সমুদ্রযাত্রা করে ভারতের পথে রওনা দেন। ভারত আবিষ্কারের পথে বেরিয়ে তিনি কিউবা, সেন্ট ডেমেঙ্গো প্রভৃতি দ্বীপে পৌঁছোন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বোঝেননি যে তিনি আসলে ভারত বা এশিয়ার কোনো দেশ নয়, উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছেছেন। পরে তাঁর দেখানো পথ ধরেই ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা ও ত্রিনিদাদ আবিষ্কৃত হয়।
→ লেডিকেনি: ১৮৫৬ থেকে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে বড়োলাট পদে থাকা লর্ড ক্যানিং-এর স্ত্রী লেডি ক্যানিং-এর নামানুসারেই লেডিকেনি নামক মিষ্টান্নটির নামকরণ করা হয়েছে। ক্ষীরের পুর দেওয়া পানতুয়া জাতীয় এই মিষ্টিটি লেডি ক্যানিং খেতে খুব পছন্দ করতেন বলেই এটির এরূপ নাম প্রচলিত হয়েছিল।
● বিরিয়ানি: ফারসি ‘বিরিয়ান’ শব্দ থেকে বিরিয়ানি শব্দটি বাংলায় এসেছে। এটি একটি সুস্বাদু খাদ্য-বিশেষ। এটি এমন এক ধরনের পোলাও, যাকে সাধারণত মাংস সহযোগে রান্না করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের লখনউ ও হায়দ্রাবাদের বিরিয়ানি জগদ্বিখ্যাত। উপাদেয় খাবার হিসেবে কলকাতাতেও এর বিপুল জনপ্রিয়তা ও চাহিদা তৈরি হয়েছে।
● ইউরেকা: 'Eureka' শব্দটি এসেছে গ্রিক heureka শব্দ থেকে, যার অর্থ হল ‘I have found it' অর্থাৎ ‘আমি খুঁজে পেয়েছি। প্রচলিত ধারণা অনুসারে 'ইউরেকা’ শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস। আর্কিমিডিস একদিন প্লবতার সূত্রসন্ধানে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। সেদিন চৌবাচ্চায় স্নান করতে নেমে তিনি দেখেন যে, পরিপূর্ণ চৌবাচ্চাটির অনেকখানি জল উপচে নীচে পড়ে গেল। তিনি বুঝলেন যে, তাঁর শরীরের আয়তনের সমপরিমাণ জল চৌবাচ্চাটি থেকে অপসারিত হয়েছে। তখনই তিনি ‘ইউরেকা’ শব্দটি উচ্চারণ করে ওঠেন।
১০ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাও।
১০.১ বনভোজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল? তা বাতিল হল কেন?
উত্তর: প্রথম তালিকায় উল্লিখিত খাবার: বনভোজনের জন্য প্রথমে যে তালিকাটি তৈরি হয়েছিল তাতে ছিল বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, দু-রকমের কাবাব ও মাছের চপ।
● বাতিল হওয়ার কারণ: প্রথম তালিকার খাবারগুলি তৈরি করতে গেলে বাবুর্চি, চাকর, একটি মোটর লরি, আর দুশো টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু চার জনে মিলে চাঁদা উঠেছিল মাত্র দশ টাকা ছ-আনা ৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রথম তালিকাটি বাদ দেওয়া হয়।
১০.২ বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল?
উত্তর: দ্বিতীয় তালিকায় উল্লিখিত খাবার: বনভোজনের জন্য প্রস্তাবিত খাবারের দ্বিতীয় তালিকায় ছিল খিচুড়ি, আলুভাজা, পোনা মাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা, লেডিকেনি এবং শেষে যুক্ত হয় রাজহাঁসের ডিমের ডালনা। উদ্দিষ্ট ব্যক্তিসমূহ ও তাদের দায়িত্ব: রাজহাঁসের ডিম জোগাড়ের দায়িত্ব পড়েছিল প্যালার উপর। ক্যাবলাকে আলুভাজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পোনামাছের কালিয়া রাঁধার দায়িত্বে ছিল প্যালা। দিদিমার ঘর থেকে হাতসাফাই করে আমের আচার নিয়ে আসার কথা ছিল হাবুলের। আর রসগোল্লা ও লেডিকেনি ধারে ম্যানেজ করা হবে—এমনটা ঠিক হয়েছিল।
১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা দাও।
উত্তর: প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়েছিল ভন্টার বাড়ি। ভন্টার বাড়িতে রাজহাঁস ছিল। কিন্তু সেই রাজহাঁস ডিম পাড়ে কি না তা জানতে দু-আনার পাঁঠার ঘুগনি আর ডজনখানেক ফুলুরি ঘুষ দিতে হল ভন্টাকে। এরপর দুপুরবেলা ভন্টার বাবা ও মেজদা অফিস চলে গেলে প্যালা গেল ভন্টাদের বাড়ি। ভন্টা তাকে নিয়ে গেল উঠোনে। উঠোনে একপাশে রাখা ছিল সার সার কাঠের বাক্স, তার ভিতরে ছিল সার সার খুপরি। দুটো রাজহাঁস সেখানে ডিমে তা দিচ্ছিল। প্যালা ডিমের জন্য বাক্সের ভিতরে হাত ঢোকাতেই একটা রাজহাঁস তার হাতে জোরসে কামড়ে দিল। যন্ত্রণায় প্যালা চিৎকার করে উঠলে ভন্টার মা সেখানে চলে আসেন। তখন হাতে রক্তের ধারা নিয়ে প্যালা কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে।
১০.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল?
উত্তর: [: কথামুখ: বনভোজনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছোনোর জন্য শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চেপে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরওচারটে স্টেশন পর প্যালাদের ট্রেন থেকে নামতে হয়েছিল। হাবুলের আছাড় খাওয়া: ট্রেন থেকে নেমে প্রায় মাইলখানেক হেঁটে গেলে ক্যাবলার মামার বাড়ি। আগের দিন রাত্রে বৃষ্টি হওয়ায় এবং রাস্তা কাঁচা এঁটেল মাটির হওয়ায় তা খুবই পিচ্ছিল ছিল। সেই পিচ্ছিল রাস্তায় প্রথমেই আছাড় খেল হাবুল। তার হাতে ছিল ডিমের পুঁটলি। ফলে সমস্ত ডিম ফেটে গিয়ে হলদে রস গড়াতে লাগল। প্যালার আছাড় খাওয়া: তারপরেই আমের আচারসমেত প্যালা আছাড় খেল। সারা গায়ে কাদা আর আমের আচার নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল। টেনিদার অবস্থা: সবশেষে এল টেনিদার পালা। টেনিদাও পড়ল আর তার সঙ্গে পড়ল রসগোল্লার হাঁড়ি। কাদায় পড়ে থাকা সাদা ধবধবে রসগোল্লার জন্য বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে চারজনে চলতে লাগল।
১০.৫ “মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল”—মাছের কালিয়া সম্পর্কে এরকম বলার কারণ কী?
উত্তর: টেনিদার আদেশে খিচুড়ি বা অন্যান্য রান্না শুরু হওয়ার আগে প্যালা মাছের কালিয়া রান্না করতে শুরু করল। ক্যাবলার মা আগেই মাছ কেটে নুন মাখিয়ে দিয়েছিলেন। প্যালা কড়াইতে তেল দিয়েই তার মধ্যে মাছ ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কড়াই-ভরতি ফেনা হয়ে মাছগুলো তালগোল পাকিয়ে গেল। কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ার ফলে মাছের কালিয়া আর হল না, হয়ে গেল মাছের হালুয়া। মাছের কালিয়ার এই অবস্থা দেখে ক্যাবলা বলে উঠেছিল, “মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল।”
১১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
১১.১ এই গল্পটির নাম 'বনভোজন'না হয়ে বনভোজনের ব্যাপার' হল কেন? [OEQ]
উত্তর: ‘নামকরণ’ অংশটি দ্যাখো।
১১.২ এই গল্পে ক-টি চরিত্রের সঙ্গে তোমার দেখা হল? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বনভোজনের ব্যাপার' গল্পে মোট পাঁচটি চরিত্রের সঙ্গে দেখা হল। এই পাঁচ জন হল—টেনিদা, প্যালা, হাবুল, ক্যাবলা আর ভন্টা।
[১] টেনিদা: টেনিদা চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি। পটলডাঙার এই ‘চারমূর্তি’র দলে টেনিদা হল দলপতি বা লিডার। সে খেতে ভালোবাসে। খাবারের নাম শুনলেই তার জিভে জল আসে, অস্থির হয়ে পড়ে। নিজে কাজে হাত না দিয়ে একটু তফাতে বসে নির্দেশ দিতে এবং মুখ চালাতেই বেশি পছন্দ করে টেনিদা। আনন্দ,রাগ, বিরক্তি, সাহস বা ভয়ের প্রকাশ—সবেতেই তার একটু বাড়াবাড়ি আছে।
[২] প্যালা: প্যালা গল্পের কথক। সে পেট খারাপের রুগি। ফলে হি েসেদ্ধ, গাঁদালপাতা আর শিঙিমাছের ঝোল প্রভৃতি মশলা ছাড়া খাবারই তার প্রধান খাদ্য। টেনিদা এ নিয়ে তাকে খোঁটা দেয় এবং তাতে সে বিব্রত বোধ করে। আড্ডার মধ্যে বোকা বোকা কথা বলতে বা কোনো কিছু ভণ্ডুল করতে প্যালার জুড়ি নেই।
[৩] হাবুল: হাবুল সেন ঢাকার বাঙাল। তার কথাবার্তায় পূর্ববঙ্গের ভাষার টান। টেনিদাকে নিয়ে সে প্রায়ই ঠাট্টা করে। হাবুল পড়াশোনায় ভালো ও বুদ্ধিমান।
[৪] ক্যাবলা: ক্যাবলাই টেনিদার দলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান সদস্য। যথেষ্ট রসবোধ আছে তার। যখন একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে চলেছে, তখন বারোটা, একটা, দুটো, তিনটে বেজে গেল বলে ঘোষণা করেছে সে। একমাত্র ক্যাবলাকেই একটু সমঝে চলে দলপতি টেনিদা
[৫] ভন্টা: এ গল্পে ভন্টা কম গুরুত্ব পাওয়া চরিত্র। অত্যন্ত ধড়িবাজ ছেলে সে। রাজহাঁসের ডিমের সন্ধান দেওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে। পাঁঠার ঘুগনি আর ফুলুরি খেয়েছিল। তবে কাজের কাজ তো সে করেইনি, বরং প্যালাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
১১.৩ এ গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখো। [OEQ]
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত টেনিদার গল্প-উপন্যাসগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল হাস্যরস। টেনিদার মুখে বকাঝকা, উপমা, তিনজনকে খোঁটা দেওয়া—সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে মজার উপাদান। হাবুলের বাঙাল ভাষা আর ক্যাবলার মুখে হিন্দি শব্দ গল্পের ভাষাকে আরও বেশি মজাদার করে তুলেছে। এ ছাড়াও গল্পের ভাষার মধ্যে নানারকম ছোটো ছোটো মজা লুকিয়ে আছে। যেমন—টেনিদা হাবুল সেনের ব্যবহার করা ‘পোলাপান’ শব্দটাকে লুফে নিয়ে বলে, “পোলাপান! এই গাড়লগুলোকে জলপান করলে তবে রাগ যায়।” এখানে ‘পোলাপান’ ও ‘জলপান’ শব্দ দুটি নিয়ে মজা তৈরি করেছেন লেখক। আবার ক্যাবলা যখন বলে, ‘খাট্টা’, তখন তার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যঙ্গের সুরে টেনিদা বলে, “খাট্টা! বেশি পাঁঠামি করবি তো চাঁটা বসিয়ে দেবো।” এ ছাড়াও পাঞ্জাব মেলের স্পিডে পালানো, আছাড় খাওয়ার বর্ণনা, একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া আর সে বিষয়ে ক্যাবলার ঘোষণা—সবমিলিয়ে শুধু ভাষা ব্যবহারের কৌশলেই এক অদ্ভুত হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।
১১.৪ শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো/গল্প লেখো।[OEQ]
উত্তর: প্রিয় শুভাশিস,এবারের শীতকালটা ভালোই কাটল, আনন্দেই কাটল। তুই তো এখন অনেক দূরে থাকিস, তাই তোকে আমাদের অনেক আড্ডাতেই পাই না। এই শীতকালে আমরা যতবার বেড়াতে বেরিয়েছি, তার মধ্যে সব থেকে সেরা ছিল আমাদের পিকনিক। তোর কথা সেদিন খুব মনে
পড়ছিল। এবারে আমরা গিয়েছিলাম রূপনারায়ণের তীরে। এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় রূপনারায়ণের রূপ ছিল অনবদ্য। সকালে একটু কুয়াশা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে একটা দিন বেরিয়ে এল। আমরা দশ জন ছিলাম। আগের রাতেই বাজার আর রান্নার বেশ কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখা ছিল। সৈকতের বাড়ির টাটা সুমো গাড়িটা নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম নদীর ধারে। জলখাবার খাওয়ার পর একটা পাথরের আড়ালে তৈরি করে নিলাম উনুন। শুকনো কাঠ আর কেরোসিন তেল দিয়ে আগুন ধরালাম। মাছভাজা আর মাংসের ঝোল হয়ে যাওয়ার পর ভাত বসিয়ে দেওয়া হল। ওদিকে রফিক ততক্ষণে ভাটিয়ালি গান ধরেছে। মাঝে মাঝে কবিতা বলছে সুমিত। আমরাও গলা মেলাচ্ছি চেনা গানে। আমাদের গান শুনে দেখি অনেকেই সেখানে জড়ো হয়ে গেছে। নানা বয়সের মানুষ ছিল সেই ভিড়ে। আমরাও উৎসাহিত হয়ে একের পর এক গান করলাম। এদিকে কারও খেয়াল ছিল না ভাতের দিকে। ভাত পুড়ে গিয়ে সে এক বিশ্রী কাণ্ড! আমাদের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়েছে। ভেবেছিলাম আমাদের তো না খেয়েই থাকতে হবে! এমন সময়ে দেখি, যে লোকগুলো আমাদের গান শুনছিল, তারাই ভাতের ব্যবস্থা করে দিল। আমরা সবাই মিলে হইহই করে খেয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। অনেক ছবিও তুলেছি এই শীতে। তুই এলে তোকে দেখাব। চিঠির উত্তর দিস। ভালো থাকিস।
শুভাশিস পাল
প্রযত্নে, দেবনাথ পাল
৫/৪ হরিনাথ বসু রোড
কলকাতা-৫৫
ডাকটিকিট
ইতি –
তোর সুজন
১১.৫ টেনিদার মতো আরও কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।[OEQ]
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে টেনিদার মতো আরও কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের আলোচ্য বিখ্যাত তিনটি দাদাচরিত্র হল ঘনাদা, ফেলুদা এবং ঋজুদা।
[১] ঘনাদা: ঘনাদা চরিত্রের স্রষ্টা প্রেমেন্দ্র মিত্র। বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসবাড়ির ছাদের ঘরে ঘনাদার বাস। বাড়ির নম্বর ৭২। ঘনাদা সেখানে বসেই গল্প বলে যান। সেসব গল্পে ঘনাদাই নায়ক। তাঁর প্রধান শ্রোতা হল শিবু, শিশির, গৌর, সুধীর। এ ছাড়া অন্যরাও অনেক সময় এই গল্পের আসরে যোগ দেয়। পৃথিবীর নানা কোণের নানারকম মানুষদের নিয়ে এসব গল্প বলেন তিনি। কল্পবিজ্ঞান থেকে ইতিহাস সবেরই ছোঁয়া আছে ঘনাদার গল্পে।
[২] ফেলুদা: সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা গল্পের প্রধান চরিত্র হলেন ফেলুদা। তাঁর সঙ্গী হলেন তোপসে ও জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলি। বাংলা গোয়েন্দা গল্পে ফেলুদা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। কলকাতা থেকে হিমালয়ের পাহাড়ে কিংবা বিদেশে— সর্বত্র ফেলুদার গতিবিধি। খুন, জখম, চুরি, কিংবা গুপ্তধনের ধাঁধা— ফেলুদা সবেতেই দক্ষ। রহস্যসমাধানের ক্ষেত্রে মগজাস্ত্র বা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিই ছিল তাঁর প্রধান হাতিয়ার। গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর রসবোধ—এই নিয়েই ফেলুদা পুরোদস্তুর বাঙালি চরিত্র আর এটাই তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ।
[৩] ঋজুদা: ঋজুদার স্রষ্টা বুদ্ধদেব গুহ। ঋজুদাকে তিনি গোয়েন্দা করেননি বা ঘনাদার মতো পৃথিবীর নানা কোণে ঘুরে ঘুরে রহস্যের সমাধান করে বেড়ানো চরিত্রও বানাননি। ঘনাদার মতো ইতিহাস বা বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে গতিবিধি নেই তার। ঋজুদার বিষয় হল জঙ্গল। ভারতে তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গলেও দেখা গেছে তাকে। জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার ও শিকার ছিল তার প্রিয় বিষয়। ঋজুদা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির অন্যতম প্রিয় চরিত্র।