বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা | vidyalaya jibon a khaludhula bhumika prabandha racana
বিদ্যালয় জীবনে খেলাধুলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা|vidyalaya jibon a khaludhula bhumika prabandha racana
“খেলা মোদের লড়াই করা, খেলা মোদের বাঁচা মরা,
খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই।”
ভূমিকা : ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যৎ গঠনের ভিত্তি। ভবিষ্যৎ মানে শুধুই আর্থিক নিশ্চয়তা নয়, সুস্থতারও নিশ্চয়তা। সুস্থ শরীর থাকলে তবেই মানুষ নিজের জীবনকে উপভোগ করতে পারে। তাই সুস্থ ও নীরোগ ভবিষ্যতের জন্য বিদ্যালয় জীবন থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার ভূমিকা অপরিহার্য।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলা : ছাত্রজীবন শরীর গঠনের সেরা সময়। এই কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের পাঠক্রমেও গৃহীত হয়েছে শরীরচর্চা ও খেলাধুলোর বিষয়টি। ড্রিল, ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, যোগব্যায়াম প্রভৃতির মাধ্যমে ছাত্রাবস্থা থেকেই স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে উৎসাহিত করে তোলা হয়। শরীরচর্চা ও খেলাধুলো কেবল স্বাস্থ্য গঠন করে না, চারিত্রিক গঠনও সুদৃঢ় করে। খেলোয়াড়সুলভ উদারতা, সুস্থ প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সহযোগিতার অভ্যাস তৈরি করে খেলাধুলা।
শিক্ষায় খেলাধুলার প্রভাব : খেলাধুলাকে বাদ দিয়ে সুস্বাস্থ্য ও দৃঢ় চরিত্রগঠন অসম্ভব। খেলার মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক স্ফূর্তি হয়। খেলাধুলা পড়াশোনাতে মন বসানোয় সহায়ক হয়ে ওঠে। এ ছাড়া পড়াশোনা করতে গিয়ে বইতে শেখা তত্ত্ব, যেমন— সৌহার্দ্য, দলগত ঐক্য, মূল্যবোধ, খেলোয়াড়সূচক মনোভাব, হাল-না- ছাড়া ইত্যাদির বাস্তব প্রয়োগ হয় খেলাধুলার মাধ্যমে। বিদ্যালয়ে খেলাধুলার বাধা: বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে খেলাধুলা অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনও পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে তার প্রয়োগে কিছু বাধা লক্ষ করা যায়। প্রথমত, মাধ্যমিক বা তার সমতুল্য পরীক্ষায় শরীরচর্চা ও খেলা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক একে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। বিদ্যালয়গুলিতে শরীরচর্চার উপযুক্ত যন্ত্রপাতি বা বিভিন্নরকম খেলাধুলার সরঞ্জাম কেনার উৎসাহ তথা অর্থ—দুই ই অপ্রতুল। এ ছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে যথেষ্ট শ্রেণিকক্ষ বা খেলার মাঠ নেই। গ্রামগঞ্জে অথবা শহরে অভিভাবকদের অশিক্ষা অনেকসময়েই মেয়েদের শরীরচর্চা ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্যের ফলে ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টিকর খাদ্য ও সুষম আহারের অভাব তাদের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে। ফলে তারা খেলাধুলায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। যদিও বর্তমানে বিদ্যালয়গুলিতে মিড-ডে-মিল প্রকল্প ছাত্রছাত্রীদের একবেলা সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে, তবুও মাত্র একবেলার আহার তাদের খেলাধুলার উপযুক্ত শক্তি দিতে অসমর্থ।
উপসংহার: বিদ্যালয় স্তরে খেলাধুলার গুরুত্ব বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দরকার হলে আবার আগের মতো মাধ্যমিক পর্যন্ত শরীরচর্চা ও খেলাধুলাকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠক্রমে রাখতে হবে। বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে অভিভাবকদের ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয় স্তর থেকে খেলাধুলায় পারদর্শী ছাত্র বা ছাত্রীকে সন্ধান করে তাকে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুঠাম স্বাস্থ্য ও নীরোগ জীবনের অধিকারী হতে পারবে।