নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা।
প্ৰবন্ধ- নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা।
ভূমিকা:
. “যদি তুমি বৃষ্টি আনার মন্ত্র ভুলে যাও
তোমার স্বদেশ তাহলে মরুভূমি।”
[বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]
সভ্যতার অভাবনীয় উন্নতির আলোকিত দৃশ্যের আড়ালে যে-কটি সামাজিক ব্যাধি সভ্যতাকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যায়, নিরক্ষরতা তাদের মধ্যে অন্যতম। দারিদ্র্য, অন্ধবিশ্বাস আর সামাজিক অনুন্নয়ন নিরক্ষরতার বড়ো কারণ। নিরক্ষরতাসৃষ্ট চেতনার অন্ধতায় মাথা খুঁড়ে মরে ব্যক্তির বিকাশ কিংবা দেশের উন্নয়ন।
নিরক্ষরতার তত্ত্বতালাশ: ২০১১-র জনগণনায় ভারতের জনসংখ্যা হয়েছে ১২৫ কোটি। যা একদশক আগের জনগণনার তুলনায় প্রায় ২৫ কোটি বেশি। কিন্তু দেশের পক্ষে অত্যন্ত আশার কথা হল জনসংখ্যার এই বৃদ্ধি সত্ত্বেও নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা উল্লেযোগ্যভাবে ৩০ কোটি ৪১ লক্ষ থেকে কমে হয়েছে ২৭ কোটি ২৯ লক্ষ। ২০০১ সালের তুলনায় ২০১১-তে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.২১ শতাংশ। এর পাশাপাশি দেশের ক্ষেত্রে আরও ইতিবাচক বিষয় হল, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে ৪৯.১০ শতাংশ হল মেয়েদের উন্নতি, ৩১.৯৮ শতাংশ পুরুষদের। ১৯৫১ সালের ১৮.৩৩ শতাংশ থেকে ২০১১ সালে সাক্ষরতার হারের ৭৪.৪ শতাংশে পৌঁছে যাওয়া নিশ্চিতভাবেই নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্তির ক্ষেত্রে দেশের সদর্থক পদক্ষেপ বলেই চিহ্নিত করা যায়।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি: রবীন্দ্রনাথ লেখাপড়া শেখাকেই জনসাধারণের পরস্পরের মধ্যে সংযোগ তৈরির এবং নিজেদের শক্তিকে উপলব্ধির একমাত্র রাস্তা বলে চিহ্নিত করেছেন। মানুষকে সাক্ষর করার প্রয়াসকে সামাজিক আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সাক্ষরতা কর্মসূচিকে সফল করার জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিকে সর্বাত্মক করে তুলতে হবে। শিক্ষার সুযোগকে সহজলভ্য করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে বইপত্র এবং শিক্ষা সহায়ক উপকরণ পৌঁছে দিতে হবে দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করা ছাত্রছাত্রীদের কাছে। বয়স্কশিক্ষা এবং স্ত্রীশিক্ষাকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সরকারি পর্যায়ে সাক্ষরতা অভিযান এবং পরবর্তীতে সর্বশিক্ষা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নিরক্ষরের সংখ্যা হ্রাস এই সব কর্মসূচির সাফল্যকে প্রমাণ করে। গরিব ছাত্রদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য ‘মিড্ ডে মিল’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশেরও বেশি আজও এদেশে নিরক্ষর। প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষকেই তাই সক্রিয় হতে হবে এই সামাজিক অভিশাপমুক্তির জন্য।
ছাত্রসমাজের দায়িত্ব: ছাত্রসমাজ দেশের শিক্ষিত মানুষের অগ্রবর্তী অংশ। তাই সাক্ষরতা নামক সামাজিক কর্মসূচিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিজেদের পড়াশোনার পরে ছাত্ররা এই কর্মসূচির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারে। প্রত্যেক ছাত্র একজন নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষর করে তুলতে পারে। আবার কয়েকজন মিলে নিজেদের এলাকায় সান্ধ্য বিদ্যালয় বা সাক্ষরতা কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গেও ভূমিকা নিতে পারে শিক্ষা বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে। মানুষকে নিজেকে যুক্ত করতে পারে। তবে ছাত্ররা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়মুখী করে তোলায় তাদের উদ্যোগ সমাজকে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করবে।
উপসংহার: শিক্ষা আনে চেতনা। এই চেতনা মানুষকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে পারে, সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভাষা জোগায়। তাই মানবমুক্তির জন্য এবং দেশকে যথার্থ প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাক্ষরতা আন্দোলনের সার্থকতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজ থাকতে পারে নেতার ভূমিকায়।।