চিঠি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত। অষ্টম শ্রেণী বাংলা চিঠি হাতেকলমের সমাধান প্রশ্ন উত্তর।।Class 8 bengali latter question answer pdf,

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

চিঠি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রশ্ন উত্তর। অষ্টম শ্রেণী বাংলা চিঠি প্রশ্ন উত্তর।Class 8 bengali latter question answer pdf,

চিঠি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত। অষ্টম শ্রেণী বাংলা চিঠি হাতেকলমের সমাধান প্রশ্ন উত্তর।।
অষ্টম শ্রেণী বাংলা চিঠি প্রশ্ন উত্তর

চিঠি -মাইকেল মধুসূদন দত্ত


১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও

১.১ মধুসূদন দত্ত কোন্ কলেজের ছাত্র ছিলেন?

উত্তর: মধুসূদন দত্ত কলকাতার হিন্দু কলেজের ছাত্র ছিলেন।

১.২ ‘পদ্মাবতী’ নাটকে তিনি কোন্ ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তর: ‘পদ্মাবতী’ নাটকে মধুসূদন দত্ত প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন।

২ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।

২.১ মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ গৌরদাস বসাককে কোথা থেকে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন? তাঁর যাত্রাপথের বিবরণ পত্রটিতে কীভাবে ধদ্ররা পড়েছে আলোচনা করো।

উত্তর:) পত্র লেখার স্থান: মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ গৌরদাস বসাককে ইংল্যান্ড যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ‘সীলোন’ নামক জাহাজ থেকে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন।

● যাত্রাপথের বিবরণ: মাইকেল মধুসূদন দত্ত গৌরদাস বসাককে চিঠিটি লেখার সময় ‘সীলোন' নামে একটি জাহাজে চড়ে ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে ভেসে চলেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, জাহাজটি যেন রূপকথার রাজ্যের এক প্রাসাদ। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ এই জাহাজের সেলুনগুলোকে যেন শুধু রাজপ্রাসাদের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। আর কেবিনগুলো যেন কেবল রাজকুমারদের জন্যই তৈরি। জাহাজটি থেকে উত্তর আফ্রিকার পর্বতময় উপকূলভূমি দেখা যাচ্ছিল। মলটা, আলেকজান্দ্রিয়া ছাড়িয়ে বেশ দ্রুতগতিতে জাহাজটি ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে চলছিল। কিন্তু এই ভ্রমণের মধ্যে লেখক একটি বিষণ্ণতা অনুভব করেছিলেন। এই চিঠিতে তিনি সেটিরও উল্লেখ করেছেন। দু-দিন পরে তিনি স্পেনের উপকূল ছাড়িয়ে চললেন জিব্রাল্টার প্রণালীর দিকে। তখন সমুদ্র অনেক শান্ত, আবহাওয়াও ছিল বেশ মনোরম। এই শান্ত জলরাশি দেখে তাঁর নিজের দেশের হুগলি নদীর কথা মনে পড়েছিল।


২.২ মধুসূদনের জীবনের উচ্চাশার স্বপ্ন কীভাবে পত্রটিতে প্রতিভাসিত হয়ে উঠেছে?

উত্তর: উচ্চাশা ও স্বপ্নের আভাস: ‘সীলোন' জাহাজে চেপে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর বন্ধু গৌরদাস বসাককে যে চিঠিটি লিখেছিলেন, তাতে লেখকের উচ্চাশা ও স্বপ্নের স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। মধুসূদন আইনশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই শিক্ষা যথাযথভাবে সম্পূর্ণ করে একটি সম্মানজনক জীবিকা অর্জনে তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। এ কথা তাঁর চিঠিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পড়াশোনায় মন দিতে গিয়ে তিনি হয়তো বন্ধুদের বেশি সময় দিতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন। বন্ধুকে তিনি আরও বলেন যে, ছোটোবেলা থেকে ইংল্যান্ড সম্পর্কে কতই না স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য এবং ইংরেজদের প্রতি মধুসূদনের গভীর আকর্ষণ ছিল। ইংল্যান্ড ছিল তাঁর স্বপ্নের দেশ। যখন তিনি সত্যিই সেই স্বপ্নের দেশের দিকে প্রতি মুহূর্তে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছেন, তখন তাঁর নিজের কাছেই তা অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। এই চিঠি থেকে জানা যায় তিনি তাঁর স্বপ্নের দেশের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছেন।


অষ্টম শ্রেণী বাংলা চিঠি হাতেকলমের সমাধান

২.৩ বিদেশে পাড়ি জমানোর সময়েও তাঁর নিজের দেশের কথা কীভাবে পত্রলেখকের মনে এসেছে?

উত্তর:

কথামুখ: ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইংল্যান্ডের পথে ভেসে চলার সময় লেখকের বারবার মনে পড়েছে স্বদেশের কথা। তিনি ‘সীলোন' জাহাজ থেকে যে চিঠিটি বন্ধু গৌরদাস বসাককে লিখেছিলেন, সেই

লেখার মধ্যে তাঁর এই মনোভাব ফুটে উঠেছে। গোষ্ঠী গঠনের ভাবনা। লেখকের মনে হয়েছে, সেই জাহাজে যদি আধ-ডজন নিজের দেশের লোক থাকত, তাহলে তাদের নিয়েই তিনি একটা গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলতেন। এ কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, দেশবাসীদের দেখার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন।


স্বজনের ভাবনা: লেখক তাঁর বাল্যবন্ধু গৌরদাস বসাকের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তিনি এখন কীভাবে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। বন্ধু হরির কথা জিজ্ঞাসা করার মধ্য দিয়ে বন্ধুদের জন্য তার উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে।

আবহাওয়ার তুলনা: মধুসূদন ভূমধ্যসাগরের প্রাকৃতিক অবস্থা ও আবহাওয়ার সঙ্গে বারবার নিজের দেশের তুলনা করেছেন। সমুদ্রের শান্ত অবস্থা দেখে তাঁর মনে পড়েছে নিজের দেশের হুগলি নদীর কথা। বিদেশের আবহাওয়া তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছে তাঁর নিজের দেশের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের আবহাওয়ার কথা।


২.৪ “... এ কথা যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”—কোন কথা? সে কথাকে বক্তার অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে কেন?

উত্তর:

উদ্দিষ্ট কথা: ‘সীলোন’ জাহাজে চড়ে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সময় লেখক তাঁর বাল্যবন্ধু গৌরদাস বসাককে একটি চিঠিতে উদ্ধৃত কথা জানিয়েছেন। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে মধুসূদন যে প্রতিটি মুহূর্তেই তাঁর স্বপ্নের দেশ ইংল্যান্ডের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছেন তা যেন তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না।

অবিশ্বাস্য মনে হওয়ার কারণ: মানুষের দীর্ঘদিনের কোনো স্বপ্ন যখন সত্যি হয়, তখন প্রথমে তা অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয়। ছেলেবেলা থেকেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্বপ্ন ছিল তাঁর প্রিয় কবি মিলটনের দেশে যাওয়ার। ভূমধ্যসাগরের ওপর দিয়ে ‘সীলোন’ জাহাজে চড়ে তিনি যখন ইংল্যান্ডের দিকে এগিয়ে চলছিলেন, তখনও তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে তাঁর এতদিনের স্বপ্ন সফল হতে চলেছে।


২.৫ প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে হৃদ্যতার ছবি পত্রটিতে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি-সহ আলোচনা করো।

উত্তর: বন্ধুর সঙ্গে হৃদ্যতা: গৌরদাস বসাক ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। সুগভীর বন্ধুত্ব: আমাদের পাঠ্য চিঠিতে কবি তাঁর বন্ধুকে ‘হে আমার প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন। এই সম্বোধন থেকেই তাঁদের সুগভীর বন্ধুত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। গৌরদাসকে ‘বস’ বলে সম্বোধন করার মধ্য দিয়ে দুজনের সহজ বন্ধুত্বের ছবি এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মধুসূদন এই চিঠিতে তাঁদের আরেক পুরোনো বন্ধু হরির খবরও নিয়েছেন—“আমাদের হরি এখন কোথায় তা তোমার কি জানা আছে?”

সহৃদয়তা: ইংল্যান্ডে পৌঁছে নিজের ঠিকানা জানাবেন বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তখন বন্ধু গৌরদাসও তাঁকে প্রাণ উজাড় করে অনবরত চিঠি লিখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। 'সীলোন' জাহাজ থেকে লেখা আলোচ্য চিঠিতে যাত্রাপথের হুবহু বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা থেকেই বোঝা যায় গৌরদাস বসাক বন্ধু হিসেবে তাঁর হৃদয়ের কত- কাছে ছিলেন—“এই জাহাজে সব ব্যাপারেই এমন অপূর্ব জাঁকজমকের ব্যবস্থা আছে যা নাকি তুমি কল্পনাই করতে পারবে না।”চিঠির প্রতিটি ছত্রে তাঁদের সেই বন্ধুত্বের স্পর্শ অনুভব করা যায়।

আন্তরিকতা: সমগ্র চিঠি জুড়ে বারবার গৌরদাসকে ‘হে আমার প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু’, ‘ধৈর্য ধরো বন্ধু’, ‘হে বন্ধু’ ইত্যাদি সম্বোধন মধুসূদনের আন্তরিকতাকেই তুলে ধরে। চিঠি শেষ করার আগে তিনি নিজেকে গৌরদাস বসাকের ‘অকৃত্রিম ও আন্তরিক ও চির স্নেহমুগ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত চিঠি প্রশ্ন উত্তর |অষ্টম শ্রেণী বাংলা গল্প চিঠি প্রশ্ন উত্তর|

২.৬ রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্রে লেখক তাঁর এই প্রিয় বন্ধুটির কাছে কোন্ আবেদন জানিয়েছেন?

উত্তর: লেখকের আবেদন: রাজনারায়ণ বসুকে লেখা মাইকেল মধুসূদন দত্তের চিঠিটি পড়লে দেখা যায়যে, কবি সে সময়ে সদ্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-র ষষ্ঠ সর্গটি লেখা সম্পূর্ণ করেছেন। এই চিঠিটিতে মধুসূদন ‘মেঘনাদবধ কাব্য' সম্বন্ধে রাজনারায়ণ বসুর অভিমত জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মধুসূদন মনে করতেন যে, হাজার হাজার মানুষের প্রশংসার চেয়েও বন্ধু রাজনারায়ণ বসুর মতামত তাঁর কাছে অনেক বেশি মূল্যবান ও নির্ভরযোগ্য। সেই কারণেই কবি রাজনারায়ণ বসুকে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ সম্বন্ধে তাঁর নিরপেক্ষ মতামত লিখে জানাতে আবেদন করেছেন।


২.৭ “এই কাব্য অদ্ভুতরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”—কোন্ কাব্যের কথা বলা হয়েছে? সে কাব্যের জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে লেখক কোন্ কোন্ প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন?

উত্তর: উদ্দিষ্ট কাব্য: রাজনারায়ণ বসুকে লেখা মাইকেল  মধুসূদন দত্তের এই চিঠিতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর কথা বলা হয়েছে।প্রসঙ্গের অবতারণা: ‘মেঘনাদবধ কাব্য' প্রকাশিত হওয়ার পর ক্রমেই সেই কাব্যগ্রন্থ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মধুসূদন দত্ত তাঁর বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে আলোচ্য চিঠিতে সে-কথা লিখে জানিয়েছেন।

● মিলটনের সঙ্গে তুলনা: এই কাব্যের সূত্র ধরেই অনেক সমালোচক ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি মিলটনের সঙ্গে মধুসূদনের তুলনা করেছিলেন। তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-কে মিলটনের রচনার থেকে উৎকৃষ্টতর বলেও কেউ কেউ মত দিয়েছিলেন।

→ অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে তুলনা: আবার অনেকে বলেছিলেন যে, এটি কালিদাসের রচনার কাছাকাছি। কোনো-কোনো সমালোচকের মত ছিল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনার মানের দিক থেকে ভার্জিল বা তাসো-র রচনার সমতুল্য।

● মধুসূদনের মত: মধুসূদন অবশ্য নিজে মনে করতেন যে, তাঁর রচনা কিছুতেই মিলটনের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না, কারণ ‘মিলটন স্বর্গীয়’। শুধু সমালোচকদের মধ্যেই নয়, বাংলার হিন্দু নারীদের কাছেও গ্রন্থটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তাঁরা বইটি পড়ে কেঁদেছেন বলেও শোনা যায়।


২.৮ প্রিয় বন্ধুর প্রতি, সর্বোপরি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের যে পরিচয় রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্রটিতে পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিদেশ থেকে তাঁর অত্যন্ত কাছের বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির ছত্রে ছত্রে তাঁর বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ: চিঠির শুরুতেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত বন্ধু রাজনারায়ণের কাছে অনুরোধ করেছেন, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ সম্পর্কে তাঁর মতামত জানানোর জন্য। রাজনারায়ণের মত যে তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও পত্রের শেষাংশে তিনি উল্লেখ করেছেন—“এরকম হাজার হাজার মানুষের জয়ধ্বনির চেয়ে তোমার অভিমত অনেক নির্ভরযোগ্য।” বন্ধুর কঠোর সমালোচনাও মধুসূদনের কাছে অন্যান্যদের প্রশংসার চেয়ে অনেক মূল্যবান। চিঠির একদম শেষে মধুসূদন তাঁর বন্ধুকে অভয়বাণী শুনিয়ে বলেছেন, তিনি আন্তরিকভাবে রাজনারায়ণের সবচেয়ে বড়ো অনুরাগী। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের প্রকাশ: মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যপ্রেম রাজনারায়ণ বসুকে লেখা চিঠির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। নিজের সৃষ্টি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রধান চরিত্র মেঘনাদের সঙ্গে নিজের একাত্মতার বর্ণনা দিয়েছেন মধুসূদন। এই কাব্যে মেঘনাদের হত্যাকাণ্ড রচনার সময়ে তিনি নিজেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে আরোগ্য লাভ করলেও মেঘনাদের মৃত্যু তাঁকে অত্যন্ত দুঃখ দিয়েছিল। আবার, মেঘনাদবধ কাব্য পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করার পর অনেকেই একে মিলটনের কাব্যের চেয়েও ভালো বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিলটনের একনিষ্ঠ ভক্ত মধুসূদন তা মেনে নিতে পারেননি। তাঁর মতে, “মিলটনের চেয়ে উৎকৃষ্টতর হতে পারে না কোনোকিছুই।” তবে ভার্জিল, কালিদাস বা তাসো-র সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হতে তাঁর আপত্তি ছিল না। তাঁর কাব্যের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য যাতে মহিলাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে, সেদিকেও দৃষ্টি ছিল মধুসূদনের।


২.১ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ৩ নভেম্বর, ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে লেখা মধুসূদনের চিঠিটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফ্রান্সের ভাসাই শহর থেকে ৩ নভেম্বর, ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে আলোচ্য চিঠিটি লেখেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনে বিদ্যাসাগরের অবদান কোনোদিক থেকেই কম ছিল না। মধুসূদন দত্ত স্বদেশে এবং বিদেশে যখনই অর্থকষ্টে তথা বিপদে পড়েছেন, তখনই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ চিঠিতে মধুসূদন কৃতজ্ঞচিত্তে বিদ্যাসাগরের সেই উপকারের কথা স্মরণ করেছেন। 

বর্ণনা: কৃতজ্ঞতা স্বীকারের ফ্রান্সের পরিবেশের আলাপচারিতার ভঙ্গিতে লেখক বিদ্যাসাগরকে সে দেশের কথা জানিয়েছেন। ফ্রান্সে তখনও শীতকাল আসেনি, শরতের রেশ রয়েছে। এরকম পরিবেশেও মধুসুদনকে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয়েছে, গায়ে দিতে হয়েছে নানান গরম জামা। বিদ্যাসাগরকে লেখা এই চিঠিতে মধুসূদন জানিয়েছেন, ভারতের শীতকালের শীতলতম দিনটির তুলনায় ফ্রান্সের সাধারণ দিনে ছয়গুণ বেশি ঠান্ডা থাক। সেই দেশের শীতের তীব্রতা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “গায়ে এমন জামাজোব্বা পরে আছি যা নাকি আমাদের দেশে ছোটোখাটো একটা মোট বিশেষ।”


 ভাষাচর্চা শিক্ষা: ভাসহিতে এসে মধুসূদন যে অলসভাবে দিন যাপন করছেন না তা-ও তিনি চিঠিতে জানাতে ভোলেননি। মধুসূদন জানিয়েছেন, মাইনে করা কোনো শিক্ষকের সহায়তা ছাড়াই তিনি ফরাসি ও ইতালীয় ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেছেন এবং মন দিয়ে জার্মান ভাষাচর্চা করছেন।


২.১০ বিদ্যাসাগরকে লেখা পত্রটিতে মধুসূদনের জীবনে তাঁর ভূমিকার যে আভাস মেলে, তা বিশদভাবে আলোচনা করো।

উত্তর: মধুসূদনের জীবনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ৩ নভেম্বর, ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ভার্সাই শহর থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে একটি চিঠি লেখেন। তখন তাঁর ঠিকানা ১২ রু দ্য শ্যাতিয়ারস। মধুসূদন যখন আর্থিক অনটন ও সাংসারিক টানাপোড়েনে বিধ্বস্ত, ঠিক তখনই তিনি বিদ্যাসাগরের সাহায্যে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠেন। সেই কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতি এই চিঠিতে জানাতে ভোলেননি মধুসূদন। এ ছাড়াও, আগে লেখা চিঠির সূত্র ধরে এই চিঠিতে একাকী লন্ডন যাওয়ার কারণের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তিনি। বিদ্যাসাগর মহাশয় যাতে তাঁর বিষয়-আশয় তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন, তারও অনুরোধ জানিয়েছেন মধুসূদন। সমূহ বিপদ থেকে বিদ্যাসাগর তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। দেশে ফিরে আবার যেন মধুসূদনকে সেই আর্থিক ও পারিবারিক বিপত্তির মুখোমুখি হতে না হয়, তা দেখার দায়িত্ব মধুসূদন বিদ্যাসাগরকে অর্পণ করেছেন। বিদ্যাসাগরকে লেখা মাইকেলের এই চিঠি পড়ে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিদ্যাসাগর শুধু তাঁর বন্ধুই ছিলেন না, ছিলেন উপদেষ্টা এবং অভিভাবকও। এই চিঠিতে সে কারণেই বিদ্যাসাগরের প্রতি মধুসূদনের নির্ভরশীলতা বারংবার প্রতিফলিত হয়েছে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url