দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা pdf|Desgathane chatrachatridera bhumika prabandha racana

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

 প্রবন্ধ-দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা:   “তোমাদের পথ যদিও কুয়াশাময়,

             উদ্দাম জয়যাত্রার পথে জেনো ও কিছুই নয়।”

                                                    [সুকান্ত ভট্টাচার্য]

স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তাকে রক্ষা করা আরও কঠিন। স্বাধীনতার পরে ছটি দশক পার করেও আজও আমাদের দেশ দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের যূপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ। তাই দেশের পুনর্গঠন আজও এক কঠিন লড়াই হয়েই রয়ে গেছে। তীব্র জ্ঞানস্পৃহা, প্রবল সাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে ছাত্রছাত্রীরা হতে পারে এই লড়াইয়ের অগ্রণী সৈন্যবাহিনী।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজ: নিরক্ষরতা আধুনিক ভারতের অভিশাপ। এখনও এ-দেশের শতকরা চল্লিশজন মানুষই নিরক্ষর। শিক্ষার আলোয় প্রদীপ্ত দেশের মানুষের অগ্রবর্তী অংশ হিসেবে ছাত্রসমাজ পারে পিছিয়ে থাকা মানুষদের শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতন করে তুলতে। এলাকাভিত্তিকভাবে ছাত্ররা কয়েকজন মিলে অবসর সময়ে সাক্ষরতা শিবির পরিচালনা করতে পারে। কিংবা সরকারি উদ্যোগে যে সাক্ষরতা আন্দোলন পরিচালিত হয়, তার সঙ্গেও নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে। জাতির প্রাথমিক ভিত্তি যে শিক্ষা, তার প্রসার ঘটিয়ে দেশ পুনর্গঠনে ছাত্রছাত্রীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞানচেতনা প্রসারে ভূমিকা : জাতির উন্নতিকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যায় মানুষের অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার। ছাত্ররাই পারে তাদের শিক্ষার আলো সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দিয়ে মানুষের চেতনার মান উন্নত করতে এবং যে-সব ভ্রান্ত ধারণা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বাসা বেঁধে আছে, সেগুলোকে দূর করে মানুষকে যুক্তিনিষ্ঠ, বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে। প্রয়োজনে ছাত্ররা এলাকায় কুসংস্কারবিরোধী পদযাত্রা, পোস্টারিং ইত্যাদি করতে পারে। বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও তারা যুক্ত হতে পারে। মানুষের মধ্যে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি পারে নেতার তা প্রচার করতে, চারপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কিংবা পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ছাত্রসমাজ পারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে।

কৃষিব্যবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা: ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। ছাত্ররাই পারে কৃষি বিষয়ে আধুনিক ধারণাকে কৃষকদের কাছেপৌঁছে দিতে। আধুনিক কৃষি-সরঞ্জাম, উন্নতমানের বীজ ও রাসায়নিক সারের খবর ছাত্ররা কৃষককে দিতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়ে তাদের অবহিত করতে পারে, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির যথাযথ জায়গার ধারণাও ছাত্রদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব। মহাজনি ব্যবস্থায় শ্রমের যথাযথ মূল্য না পাওয়া কৃষককূল এভাবে বঞ্চনা থেকে বাঁচার পথ খুঁজে পেতে পারে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ যাতে কৃষকদের কাছে পৌঁছোয়, ছাত্ররা সেদিকেও যত্নবান থাকা উচিত।

নাগরিকতাবোধ সৃষ্টিতে উদ্যোগসুষ্ঠ নাগরিক বিধি মেনে চলতে ছাত্ররা মানুষদের সচেতন করতে পারে। জল বা বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করা, এলাকাকে আবর্জনামুক্ত রাখা, ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি নানা বিষয়ে ছাত্ররা ব্যক্তিগত বা সংগঠিতভাবে প্রচার অভিযান চালাতে পারে। তারা নিজেদের যুক্ত করতে পারে বিভিন্ন প্রশাসনিক উদ্যোগের সঙ্গেও।

অন্যান্য ভূমিকা: সমাজে সুস্থ সাংস্কৃতিক চেতনাপ্রসারে ছাত্ররা নানা ভূমিকা নিতে পারে। মহাপুরুষদের জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস ইত্যাদি উদ্যাপনের ব্যবস্থা করে ছাত্রদের পক্ষে সুস্থ চেতনা তৈরিতে এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া সম্ভব। সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি যেসব ধারণাগুলি মানুষের জীবনকে তথা জাতিকে বিপন্ন করে, সম্প্রীতি আর সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলে ছাত্রছাত্রীরা তার বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে নামতে পারে। মানুষের মধ্যে তারা জাতীয়তার প্রসার ঘটাতে পারে।

উপসংহার: তপোবনের স্নিগ্ধ পরিবেশে আধ্যাত্মিক বিকাশের দিনগুলি থেকে ছাত্রজীবন এখন স্থাপিত হয়েছে সংক্ষুব্ধ সামাজিক পটভূমিতে। তাই একদিকে আত্মপ্রতিষ্ঠার দুই লড়াই, অন্যদিকে সামাজিক প্রত্যাশার চাপে আজকের ছাত্রসমাজ যেন সীমাহীন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের সজাগ  সৈনিক।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url