মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল প্রবন্ধ রচনা pdf|mobile phoner baboharer shufol o kufol prabandha racana pdf|
প্রবন্ধ ;- মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল প্রবন্ধ রচনা|mobile phoner baboharer shufol o kufol prabandha racana pdf|
ভূমিকা: বিজ্ঞানের যে কটি বিস্ময়কর আবিষ্কার আজকেরমানবসভ্যতাকে আধুনিকতর ও সমৃদ্ধতর করে তুলেছে, মোবাইলফোন তাদের অন্যতম। মোবাইল ফোন আধুনিক গতিময়পৃথিবীর আবশ্যিক অঙ্গ, জীবনের দ্রুত চলমানতার সঙ্গেমানানসই এক অতি আবশ্যিক উপকরণ।মোবাইল ফোনের ইতিহাস: ১৯৪৬ সালে আমেরিকায় যেকার মোবাইল টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল তাকেইমোবাইল ফোনের আদিরূপ বলা হয়। বেল্ সিস্টেম মোবাইল টেলিফোন সার্ভিস নামে প্রচলিত এই সংযোগ ব্যবস্থাব্যয়বাহুল্যের কারণে জনপ্রিয় হয়নি। এরপর কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ১৯৭৩ সালে ড. মার্টিন কুপার আধুনিক মোবাইলফোনকে পৃথিবীর মানুষের কাছে হাজির করেন। সেই আদি মোবাইলটির ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম। ১৯৭৯ সালে জাপানপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করে।১৯৯০ সালে সমগ্র পৃথিবীতে ১ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষ মোবাইলব্যবহার করতেন। কিন্তু অতি দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায়৪৬ কোটি। ভারতে ১৯৯৫ সালে মোবাইল ফোনের পরিসেবাবাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়। ২০১৪ সালে এই ব্যবহারকারীর সংখ্যাহয়েছে ৪.৫৫ বিলিয়ন। ভারতের মতো দেশের ক্রমবর্ধিতবাজারের কথা মাথায় রেখে দেশীয় এবং বহুজাতিক অনেকসংস্থাই যেমন, বি. এস. এন. এল., ভোডাফোন, এয়ারটেল,এয়ারসেল, টাটা, আইডিয়া সেলুলার প্রভৃতি এদেশে মোবাইলপরিসেবা দিতে উদ্যোগী হয়েছে।
মোবাইলফোনের উপযোগিতা: মোবাইল ফোন এমন একটিবৈদ্যুতিন উপকরণ যার উপযোগিতা আধুনিক জীবনে সর্বাত্মক।চিঠি লেখার ও পাওয়ার অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তাকে দূর করেমোবাইল নিয়ে এসেছে এসএমএস পরিসেবা। সংযোগকে আরওপ্রাণবন্ত করেছে এই ব্যবস্থা। কম্পিউটারের দুনিয়াকেওঅনেকটাই হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে মোবাইল ফোন। ই-মেল,ইন্টারনেট—সবই সহজলভ্য মোবাইল ফোনে। ব্লুটুথ বাই ইনফ্রারেডপ্রযুক্তি সংযোগব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।স্থির এবং চলমান ফোটোগ্রাফিও অনায়াসে সম্ভব এই মোবাইলফোনের সাহায্যে। মোবাইলে রয়েছে বিনোদনের অজস্র ব্যবস্থা।রেডিয়ো, এমপিথ্রি, গেমিং, এমনকি টিভির অনুষ্ঠানও মোবাইলের সাহায্যে উপভোগ করা সম্ভব। মোবাইলে প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশই উন্নত হচ্ছে। মোবাইল ব্যবস্থা এখন চতুর্থ প্রজন্মে প্রবেশ করেছে। মোবাইলের মাধ্যমে নেট-ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে যেমন কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি আগামী দিনে এটি ক্রেডিট কার্ডের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হতে চলেছে।এইভাবে মোবাইল ফোন এই একটিমাত্র যন্ত্র একের আধারে যেন আলাদিনের মায়ার প্রদীপের মতো জাদুকরি শক্তির অধিকারী।
মোবাইলের খারাপ দিক: বিজ্ঞানের যে-কোনো আবিষ্কারের মতোই মোবাইলেরও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। কিশোরমনে মোবাইল ফোনের প্রতি যে আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে তা এক নেতিবাচক সামাজিক চাহিদার জন্ম দিচ্ছে। মোবাইলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে,আবার মনঃসংযোগেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নানারকম সামাজিক দূষণও এর মাধ্যমে ঘটছে। নাগরিক জীবনে মোবাইলের অসতর্ক ব্যবহার, গাড়ি চালানোর সময় কিংবা রাস্তা পারাপার বা লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়ে দুর্ঘটনা ডেকে আনছে। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার শ্রবণেন্দ্রিয় ও হার্টের সমস্যা তৈরি করতে পারে এরকম কথাও অনেকে বলেন, কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও এমন ধারণাকে সমর্থন করেনি। সব মিলিয়ে মোবাইল ফোনের যথাযথ ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিদ্যালয় স্তরে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
উপসংহার: বিজ্ঞানের যে-কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কারের মতোই মোবাইলের সার্থকতা নির্ভর করছে তার ব্যবহারের উপর । নাগরিক সচেতনতা এই আধুনিক উপকরণটির প্রয়োগকে সার্থক করে তুলতে পারে। গতিশীল আধুনিক মানুষের ট্রেডমার্ক মোবাইল ফোনকে বাদ দিয়ে একুশ শতককে ভাবা অসম্ভব।