পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা pdf | Paribesa dusan o tara pratikar prabandha racana pdf
প্ৰবন্ধ - পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার |প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক|উচ্চমাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা:. “এই নদী, এই মাটি বড়ো প্রিয় ছিল এই মেঘ, এই রৌদ্র, এই বাতাসের উপভোগ
আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, কে কোথায় আছি?”
[সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]
একুশ শতকের পৃথিবী যে বিপদের সঙ্গে সহবাস প্রতিদিন সর্বনাশের প্রহর গুণছে তার নাম পরিবেশ দূষণ। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে গতিময় সভ্যতা দূষণের আক্রমণে মৃত্যুর হিমশীতলতাকে অনুভব করছে প্রতিমুহূর্তে। প্রতিটি সচেতন মানুষের দুশ্চিন্তা, বিজ্ঞানীর গবেষণা আর বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রশাসনের কর্মব্যবস্তার কেন্দ্রে রয়েছে এই দূষণ।
পরিবেশ কী?: যে পরিমণ্ডলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীজগত বেঁচে থাকে ও বিকাশলাভ করে তাকেই তার পরিবেশ বলে। সমস্ত প্রাণীজগৎ এবং প্রকৃতিজগতের সমন্বয়ে এই পরিবেশ গঠিত হয়। চারপাশের গাছপালা, নদীনালা, অরণ্য, পাহাড় কিংবা মরু অঞ্চল মিলে তৈরি হয় মানুষের পরিবেশ। অধ্যাপক সি. সি. পার্ক বলেছেন—“কোনো বিশেষ সময়ে ও বিশেষ স্থানে মানুষের চারপাশে ঘিরে থাকা সামগ্রিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।”
পরিবেশের দূষণ: পরিবেশ যখন নানা নেতিবাচক কারণে প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন ঘটে। প্রাকৃতিক দূষণের ক্ষেত্র অনুসারে পরিবেশ দূষণকে বায়ুদূষণ,জলদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ, শব্দদূষণ ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করা যায় ।
দূষণের কারণ : কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি ক্রমাগত বায়ুকে দূষিত করে চলেছে। শিল্পজাত ও কৃষিজাত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালীর আবর্জনা ইত্যাদি জলদূষণ ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, শিল্পের বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি মাটিতে মিশে গিয়ে মৃত্তিকাদূষণ ঘটাচ্ছে। যানবাহনের শব্দ, শব্দবাজির ব্যবহার, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি শব্দদূষণের কারণ। সেম্পল মানুষকে
দূষণের ফলাফল: পরিবেশবিজ্ঞানী বলেছিলেন 'ভূপৃষ্ঠের ফসল' এবং ‘প্রকৃতির সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশের বিপর্যয় মানবজীবনকে প্রভাবিত করে দারুণভাবেই। সৃষ্টি হয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের নানা অসুখ। জল ও মৃত্তিকাদূষণ কলেরা, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড এরকম নানা অসুখকে নিশ্চিত করে। শিল্পসভ্যতার আনিয়ন্ত্রিত উন্নতির ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে, যা কিনা বিশ্ব উস্নায়নের জন্ম দিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রে জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে আসছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ শ্রেণির অরণ্য চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় দিন গুনছে। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, তোসমানিয়ান টাইগার, কোয়াগ্গা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, টেকোপা পাপ-এর মতো মাছ।
প্রতিকারের পথ: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দূষণের কারণগুলিকে খুঁজে নিয়ে সেগুলি প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া। যেমন, যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে বায়ুদূষণ ঠেকানো যায়। জৈব সারের ব্যবহার মৃত্তিকা দূষণ কমাতে পারে। তবে দূষণ প্রতিরোধে সবথেকে কার্যকরী হতে পারে নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা এবং সামাজিক বৃক্ষরোপণ। নাগরিক সচেতনতা, প্রশাসনিক সক্রিয়তা—এই দুয়ে মিলে পরিবেশকে কলুষমুক্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সাহায্যে মানুষকে তারা পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারে।
উপসংহার: একুশ শতকের সভ্যতার কাছে চাঁদে পৌঁছে যাওয়া যতটা গুরুত্বের বিষয় তার থেকেও পৃথিবীকে রক্ষা করা অনেক য বেশি প্রয়োজনের। অনেকগুলো শীর্ষ সম্মেলন পার করেও ■, পৃথিবীর রাষ্ট্রনায়কেরা কোনো নিশ্চিত আশার বাণী শোনাতে পারেন নি। শঙ্কার এই দিনযাপনই হয়তো সভ্যতার নিয়তি।