একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা pdf|akti siter sokal prabandha racana pdf|
প্রবন্ধ-একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা: বাংলাদেশের ঋতুরঙ্গশালায় শীত আসে তার নিজস্ব স্বভাববৈশিষ্ট্য নিয়ে। শীতের সকালেও থাকে সেই স্বাতন্ত্র্যের ছোঁয়া। মানুষের রোজকার জীবনযাপনকে আলস্য আর উপভোগের চাদরে মুড়ে রাখে শীতের সকাল। গরমের অস্বস্তি আর বর্ষার আশঙ্কার বাইরে শীতের সকাল মানে এক অন্যরকম জেগে ওঠা।
শীতের স্বাতন্ত্র্য: শীত আমাদের বর্ষার মেঘমল্লার শোনায় না, কাল বৈশাখির প্রলয়তাণ্ডবে নিয়ে আসে না নটরাজের প্রলয়নৃত্যের মূৰ্চ্ছনাও। শীত অনেক বেশি সমাহিত, আত্মমগ্ন।শীত মানে বাজারে নতুন সবজি, আপেল আর কমলালেবুর সমারোহ। শীত মানে নলেন গুড়ের পিঠে, পায়েস, জয়নগরের মোয়া। শীত মানে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার ফুটে ওঠা। শীত এলেইগলির ক্রিকেট, বড়দিনের কেক আর দেশের সীমানা ভুলে নিউ ইয়ারের হুল্লোড়। শীত মানেই পিকনিকে যাওয়ার হুড়োহুড়ি, সারারাত ধরে গানের আসর আর বইমেলা, চলচ্চিত্র উৎসব। শীতকাল মানে দিনকে ছোটো করে দিয়ে সূর্যের হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, শীত মানেই বন্ধ ঘরে উন্নতার খোঁজ।
একটি শীতের সকাল : শীতের সকাল মানেই কম্বলমুড়ি দিয়ে অলস শুয়ে থাকা, বিছানাত্যাগে ঘোরতর অনিচ্ছা। মায়ের বারবার ডাকাডাকিতে উঠে পড়তে হয় বটে, কিন্তু মন হয়ে থাকে জবুথবু। সোয়েটার, মাফলারে নিজেকে মুড়ে শুরু হয় দিনের চলা। উয়তার খোঁজে হরলিকসে গলা ভেজানো। জানলা দিয়ে বিছানায় এসে পড়া রোদ্দুরকে তখন বড়ো প্রিয় মনে হয়। কুয়াশার চাদর সরিয়ে তার আসাও সহজ নয়। মনে হয় শীতের সকাল তাকেও অলস করে দিয়েছে। জানালার সামনে বসে দেখি আশেপাশের কয়েকটি বাড়ির লোকজন একটা গাড়িতে উঠছে। তার মধ্যে নীল, সোনাই- রাও আছে। ওরা আমার বন্ধু । মনে পড়ল ওরা আজ পিকনিকে যাচ্ছে। সামনে পরীক্ষা না থাকলে আমরাও যেতাম। শীতের মজাই তো পিকনিক। যেতে না পারায় আবার মন খারাপ। মন খারাপ কাটল মা যখন কড়াইশুঁটির কচুরি আর জয়নগরের মোয়া নিয়ে এলেন। বাবা এলেন বাজার থেকে। ব্যাগে উঁকি দিচ্ছে ফুলকপি, পিঁয়াজকলি। আজ রবিবার। বাবা বাজার থেকে এনেছেন কমলালেবু, নলেনগুড়ের রসগোল্লা। শীতকে ধন্যবাদ। আমাদের জন্য এই বিপুল আয়োজন করে দিয়েছে সে। ইতিমধ্যে চারপাশের কুয়াশা প্রায় সরে গেছে। ঝলমল করছে রোদ্দুর। রাস্তায় একজন হেঁকে যাচ্ছে “চাই নলেন গুড়, পাটালি”। কে জানে কোন্ সকালে কোথা থেকে কত শিশির গায়ে মেখে এই মানুষটা তার যাত্রা শুরু করেছেন। চলার পথের ধারে পড়েছিল কত সোনালি ফুলের সর্ষের ক্ষেত, গোলাভরা ধানের কত জনপদ। আমার জানতে ইচ্ছা হল ওর বাড়িতেও আমার মতো কোনো ছেলে আছে কি না। মনে হল হয়তো তার কোনো সোয়েটার নেই। ঠান্ডাকে দূরে রাখতে সে তার মার সঙ্গে হয়তো আগুনে হাত সেঁকছে। আমার মনে পড়লো সুকান্তের সেই কবিতাটা—“হে সূর্য! তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে / উত্তাপ আর আলো দিও, / আর উত্তাপ দিও / রাস্তার ধারের ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে।” এভাবেই শীতের সকাল আমার ভাবনাতরঙ্গে তৈরি করে দেয় অজস্র অভিঘাত। সেই উপলব্ধি আনন্দের, উপভোগের আবার বিষণ্নতারও।
উপসংহার: শীতের সকাল এক অলস জাগরণ, সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা। শীতের সকাল মানেই বৈচিত্র্যের বিপুল সমারোহ। পড়াশোনা এবং প্রাত্যহিকতাকে একটুও দূরে না সরিয়ে তা নিয়ে আসে নতুন কিছুকে পাওয়ার শিহরণ। শীতের সকাল তাই আমার অভিজ্ঞতায়, বছরজুড়ে জেগে থাকা এক উন্মুখ প্রত্যাশা।