একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা pdf|akti vromoner avigata prabandha racana pdf|

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্ৰৱন্ধ-একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা|

ভূমিকা:।      

 “কান পেতেছি, চোখ মেলেছি, ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,

             জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,

            বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।”

                                                  [রবীন্দ্রনাথ]

 কবি লিখেছিলেন—“বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি”। তাই মানুষের মনে থাকে অনন্ত আগ্রহ, অচেনাকে চেনার আর অজানাকে জানার জন্য। তাই সামান্য অবসরেই বেরিয়ে পড়া— কখনও পাহাড়, কখনও অরণ্য, কখনও সমুদ্রের টানে। বাবার হাত ধরে এরকমই ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে একাধিকবার। তারমধ্যে ব্যতিক্রমী অনুভবের মুখোমুখি হয়েছি আমি আমার লাদাখ ভ্রমণে, গত গরমের ছুটিতে।

ভ্রমণের সূচনা : বেশ কয়েক মাস ধরেই বাবা-মা পরিকল্পনাটা করছিলেন। যত শুনছিলাম, ততই আমার মনের মধ্যে একটা শিহরণ খেলে যাচ্ছিল। কাশ্মীরের অন্তর্গত অথচ জীবনধারা- সংস্কৃতিতে একদম আলাদা, একইসঙ্গে বরফঢাকা পাহাড় আর মরুভূমি পাশাপাশি—– এরকম একটা জায়গা দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলাম। দিনটা ছিল ২১ মে, ২০১৩। আমরা পূর্বা এক্সপ্রেসে দিল্লি পৌঁছলাম। পরদিন ভোরবেলা এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে চললাম লে-র উদ্দেশ্যে। মনের মধ্যে প্রবল উন্মাদনা। শ্রীনগর বা মানালি দিয়ে সড়কপথেও লে আসা যায়। কিন্তু সেই পথ অতি দুর্গম এবং সময়সাপেক্ষ। প্লেনে চলতে চলতেই বিস্ময়ের শুরু। হিমালয়কে অতিক্রম করে প্লেন চলেছে। বরফঢাকা হিমালয়, বিস্ফারিত হচ্ছে আমাদের চোখ। ঠিক দু- ঘণ্টা পরে প্লেন নামল কুসক বাকুলা রিংপোচে বিমানবন্দরে।

ছোটো বিমানবন্দর; মূলত সামরিকবাহিনীর জন্য ব্যবহৃত হয়। গোটা লে এবং লাদাখই সামরিকবাহিনী নিয়ন্ত্রিত। বিমানবন্দরের বাইরেই অপেক্ষা করছিল গাড়ি। আমরা চড়ে বসলাম তাতে।

লে-শহরে: আমরা উঠেছিলাম হোটেল গোয়ালিং ইন্টারন্যাশানালে। এটি লে-র একটি অভিজাত হোটেল। সামনে সবুজ লন, আপেল আর ফুলের গাছ। কাঠের কারুকাজ দেখার মতো। হোটেলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই লাদাখের রীতিতে আমাদের “জু-লে” (লে তে স্বাগত) বলে ‘খাদা’ পরিয়ে দেওয়া হল। সেদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিলাম আমরা। হোটেল থেকেই  বলে দেওয়া হয়েছিল আমরা খুব বেশি হাঁটাচলা যেন না করি। অনেকেরই দেখছিলাম শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরদিন আমরা ঘুরলাম লে-র বিখ্যাত হেমিস, থিক্‌সে গুম্ফা, শ্যে প্যালেস ইত্যাদি দ্রষ্টব্য  স্থান। দেখলাম সিন্ধু নদ। সিন্ধুর স্রোত ধরে কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন মন চলে গেল সভ্যতার এক বহু প্রাচীন অধ্যায়ে।

সীমানা ছাড়িয়ে: লে থেকে তৃতীয় দিন আমরা গিয়েছিলাম সো মোরিরি লেকে। নুব্রা ভ্যালির রাস্তা বন্ধ থাকার জন্যই লে থেকে ২৩৯ কিমি দূরে সো মোরিরিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এখানকার পাহাড়গুলো বিবর্ণ, রুক্ষ কিন্তু তাদের আকৃতি এতটাই অদ্ভুত, যেন মনে হয় কেউ সচেতনভাবে সেখানে কারুকাজ করে দিয়েছে। পথে থাজাং কারু নামে এক স্বপ্নের সরোবর, জল বরফ হয়ে গেছে। আরও খানিকটা গিয়ে সো মোরিরি। তীরের দিকে ফেনার মতো জল বরফ হয়ে আছে। গভীরে নীল-সবুজ রঙের জল, তাতে হাঁসেরা খেলা করছে। চারপাশে পাহাড়, কোথাও ঘন বরফ, কোথাও কিছু নেই। শেষ দিন আমরা গেলাম পেঙ্গং  লেক। যাওয়ার সময় ১৭৮০০ ফুট উচ্চতায় চাং লা পাস। চারপাশ বরফে ঢাকা। কোনোরকমে গাড়ি যাচ্ছে। পেঙ্গং-এর নীল জলে যেন স্বপ্নের ইশারা।

যা মনে থাকবে: গোটা লে শহর এবং লাদাখের জনগণ পরিবেশ সচেতন। প্লাস্টিক সেখানে নিষিদ্ধ। যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা যায় না। জনবসতি লে-তে থাকলেও অন্যত্র খুবই কম। মাঝে মধ্যে পাহাড়ি গ্রাম, সাজানো-গোছানো। মানুষজন মূলত বৌদ্ধ। সহজ সরল তাদের জীবন। এখানকার বৌদ্ধরা আবার তান্ত্রিক বৌদ্ধমতে বিশ্বাসী। সামরিকবাহিনী নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এবং সীমান্তশহর হওয়ায় নানা জায়গা যেতে সেনাবাহিনীর অনুমতি লাগে।

শেষের কথা: ২৬ মে আমরা আবার দিল্লির প্লেন ধরলাম। খুব মন খারাপ করছিল হোটেলের ৪০৬ নম্বর ঘরটার জন্য, মন খারাপ করছিল আমাদের ড্রাইভার কর্মা আঙ্কেলের জন্য। প্লেনে বসে বসে ভাবছিলাম হোটেলের লনে সফেদ গাছটা আজও দোল খাচ্ছে— নতুন কোনো অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য। সুন্দরী নিঃসঙ্গ লে বড়ো অনন্য, হয়তো বিষণ্নও।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url