বাংলার লোকসঙ্গীত প্রবন্ধ রচনাpdf|banglarloko sangit prabandha racana

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্রবন্ধ-  বাংলার লোকসঙ্গীত প্রবন্ধ রচনা| বাংলার লোকসঙ্গীত প্রবন্ধ রচনা|banglarloko sangit prabandha racana

   ভূমিকা:              “হাওয়াতে হাওয়া মিশায়ে

                      যাওরে মন উজান বেয়ে

                         জলের বাড়ি লাগবে না রে।

                          যদি গুরুর দয়া হয়।।”

                                                            [লালন]

বাংলাদেশের জল-হাওয়ায় গানের সহজ বিকাশ। অতুলপ্রসাদ রজনীকান্তের গানের ভক্তিধারায় অবগাহন করেছে বাঙালি, নজরুলের গানের মধ্যে খুঁজে নিয়েছে বিদ্রোহের উন্মাদনা, রবি ঠাকুরের হাত ধরে ছুঁয়ে এসেছে সংগীতের দশ দিগন্ত। কিন্তু বাংলার এই গানের উৎস সময়ের স্রোত ধরে আরও বহু দূরে।

মধুমাখা হরিনাম বলো রে: মধ্যযুগে বাংলাদেশে কীর্তনগানের প্রসার। কীর্তন ছিল দু-ধরনের। একটি হল নামকীর্তন। এখানে বিভিন্ন রাগ-রাগিনী ও তালে ঈশ্বরের নাম কীর্তন করা হত। দ্বিতীয় ভাগ লীলাকীর্তন। এখানে রাধাকৃয়ের লীলাকে অবলম্বন করে গান গাওয়া হত। কীর্তন সমবেত গান। একজন মূল গায়েনকে দোহাররা সঙ্গ দিয়ে থাকেন। রাধারাণী দাসী, নন্দকুমার দাস, গোপাল দাস বাবাজি, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমাই ভারতী, কমলা ঝরিয়া প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে কীর্তন গানকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ডুব দে রে মন কালি বলে: প্রায় আড়াইশো বছর আগে থেকে রামপ্রসাদী সুরে বাঙালি আজও মোহিত হয়ে আছে। শক্তির দেবীকে নিয়ে শুধু রামপ্রসাদ নয়, কমলাকান্ত, দাশরথি রায়, ঈশ্বর গুপ্ত এবং আরও অনেকে পদ লিখেছেন। দেবীকে মাতৃরূপে কল্পনা করে কবিদের হৃদয়ের নিবেদন এই গানগুলোকে আন্তরিক করে তুলেছে।

কবিগান: মূলত আঠেরো শতকের রচনা এই গানগুলি ধর্মকে ভিত্তি করে শুরু হত। থাকত দেব ও গুরুজন বন্দনা। এখানে কবিয়ালদের লড়াই হত। যদিও শেষপর্যায়ে গিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যেত। বিজয়ী পেতেন অর্থ ও অন্য সম্মাননা। ভোলা ময়রা, অ্যান্টনি কবিয়াল, গোঁজলা গুই প্রমুখ ছিলেন বিখ্যাত কবিয়াল। 

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি: বাংলা লোকগানের ধারায় এক শক্তিশালী ধারা বাউলসংগীত। বাউলসাধকরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাচরণে বিশ্বাস করেন না। তাঁরা মানুষের মনের ভিতরেই ‘মনের মানুষ’ বা ঈশ্বরকে খুঁজে পান। বাউলসাধনা হল মানুষের নিজেকে জানার সাধনা। বাউল সাধনার সূচনা করেছিলেন লালন ফকির। পরবর্তীকালে ফকির পঞ্চশাহ, যাদুবিন্দ, গোঁসাই গোপাল, পাগলা কানাই বাউলসংগীতের প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। বাংলাদেশের মেঠো পথে বাউলের গান আজও বাংলার সহজিয়া সুরকে প্রকাশ করে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url