খেলাধুলায় বাঙালি প্রবন্ধ রচনা pdf|Kheladhulaya bangali prabandha racana pdf
প্রবন্ধ- খেলাধুলায় বাঙালি প্রবন্ধ রচনা|Kheladhulaya bangali prabandha racana pdf
ভূমিকা: বাঙালির সংস্কৃতিতে যেমন গান আছে, কবিতা আছে, তেমনি খেলাধুলাও তার জীবনচর্চার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। দেশের মধ্যে তো বটেই, আন্তর্জাাতিক ক্ষেত্রেও বাঙালি নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বারেবারে। দলগত এবং ব্যক্তিগত দু- ধরনের ক্রীড়াক্ষেত্রেই বাঙালির সাফল্যের অজস্র নিদর্শন জাতির ইতিহাসকে বর্ণময় করেছে।
ফুটবলে বাঙালি: ফুটবলের সঙ্গে বাঙালির যোগ রক্তের। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে বাঙালির যে উন্মাদনা তা পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের ফুটবল দর্শকদের আবেগকে ছুঁয়ে যেতে পারে। প্রিয় দল পরাজিত হলে এখানে উমাকান্ত পালধির মতো সমর্থক আত্মহত্যা করেন। পরাজিত দলের খেলোয়াড়কে আত্মগোপন করতে হয়। ফুটবল-উন্মাদ এই জাতির ঐতিহাসিক গর্বের মুহূর্ত ১৯১১ সালে ইস্ট ইয়র্ক রেজিমেন্টকে হারিয়ে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়। স্বাধীনতার আগে সেদিন আরেক স্বাধীনতার আনন্দই যেন বাঙালি উপলব্ধি করেছিল। ২০০৩ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আসিয়ান কাপ জয় করেছিল। ভারত থেকে এশিয়ান ক্লাব পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সব থেকে বেশিবার প্রতিনিধিত্ব করেছে ইস্টবেঙ্গলই। জাতীয় স্তরের রাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতা সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা ৩১ বার । শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করে এই সাফল্য অর্জন চাম্পিয়ন হয়েছে। গোষ্ঠ পাল, শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, প্রদীপ ব্যানার্জী থেকে সুব্রত ভট্টাচার্য, কৃশাণু দে, কিংবা সুব্রত পাল—সেকাল-একাল মিলিয়ে অজস্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক | ক্ষেত্রে সফল ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে এই বাংলা।
বাঙালির ক্রিকেট: একথা ঠিক যে ক্রিকেটে ফুটবলের মতো আধিপত্য বাঙালি কোনোদিনই দেখাতে পারেনি। রাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফিতে ১৯৩৮-৩৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বাংলাকে পরেরবারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অর্ধশতকেরও বেশি। কিন্তু পঙ্কজ রায়, সুঁটে ব্যানার্জি থেকে উৎপল চ্যাটার্জি—নানা সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছেন। তবে বাংলার ক্রিকেটকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন দেশের সর্বকালের সফল অধিনায়কদের অন্যতম সৌরভ গাঙ্গুলি। ক্রিকেটের প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া আইসিসি-র চেয়াম্যান হিসেবে এই বাংলা থেকেই বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করে গেছেন। করেছিলেন মাসুদুর রহমান বৈদ্যও। মেয়েদের মধ্যে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন 'আরতি সাহা, বুলা চৌধুরি। টেবিল টেনিসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু বিখ্যাত প্রতিভার জন্ম দিয়েছে বাংলা। একসময়ের অরূপ বসাক, অর্জুন দত্ত থেকেএখনকার মান্ডু ঘোষ, পৌলমি ঘটক, মৌমা দাস – তালিকাটা দীর্ঘ হতে বাধ্য। লন টেনিসে ভারতের চিরকালীন শ্রেষ্ঠ প্রতিভা লিয়েন্ডার পেজ বাঙালি না হলেও বাংলার। দাবায় এই বাংলা উপহার দিয়েছে দিব্যেন্দু বড়ুয়া, সূর্যশেখর গাঙ্গুলি, সন্দীপন দাস এবং আরও অনেক গ্র্যাণ্ডমাস্টারকে। অ্যাথলেটিক্সে এশিয়ান গেমস্ থেকে দেশকে পদক এনে দিয়েছেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার, সুস্মিতা সিংহরায়। তীরন্দাজিতে ২০০৭-এ দোলা ব্যানার্জি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
অন্যান্য খেলাধুলায় বাঙালি : ভারতীয় কুস্তিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন যতীন্দ্রচরণ (গোবর) গুহ। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়েছিলেন মিহির সেন।
উপসংহার: একদিকে নগরায়ণের চাপে খেলার মাঠগুলি চুরি হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পড়াশোনার চাপে হারিয়ে যাচ্ছে খেলাধুলার সময়। তার ফলে বাঙালির নতুন প্রজন্ম এখন খেলাবিমুখ, শরীরচর্চায় অনাগ্রহী। তাই জাতির সামগ্রিক উন্নতির জন্য, পুরোনো অহংকারকে পুনরুদ্ধারের জন্য এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।