প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ প্রবন্ধ রচনা

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্ৰবন্ধ ৩- প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ প্রবন্ধ রচনা 

ভূমিকা: বিদ্যুৎ  আধুনিক সভ্যতায় আলাদিনের আশ্চর্যপ্রদীপ, যার ছোঁয়ায় অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই আদিমতার অন্ধকার কাটিয়ে মানবসভ্যতা প্রবেশ করেছে প্রগতির আলোকিত রাজপথে।

বিদ্যুতের আবিষ্কার: ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বিজ্ঞানী উইলিয়াম গিলবার্ট প্রথম বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্বের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে আনেন। এখান থেকেই ল্যাটিন ভাষায় তিনি একটা নতুন শব্দ সংযোজন করেন— ইলেকট্রিকাস'। অষ্টাদশ শতাব্দীতে অটো ভন গ্যারিক, স্টিফেন গ্রে, রবার্ট বয়েল প্রমুখ বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন। এরপর ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের তড়িৎ শক্তির আবিষ্কার মানবসভ্যতাকে কয়েক কদম এগিয়ে দেয়। ঊনিশ শতকের শেষে এডিসন, জেডিক, জর্জ ওয়েস্টিংহাউস প্রমুখের হাত ধরে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা উন্নত পর্যায়ে প্রবেশ করে। একসময়ে কুসংস্কারের কারণে পাশ্চাত্যের কোনো কোনো দেশে যে বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োগ নিষিদ্ধ ছিল কালক্রমে তাই হয়ে উঠেছে সভ্যতার প্রবীণতম চালিকাশক্তি।

প্রতিদিনের জীবনে বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ হল শক্তির নমনীয় স্বরূপ। একে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল আলো জ্বালানোর কাজে। বিদ্যুৎ শক্তি মূলত দু-ভাবে প্রযুক্ত হয়— উত্তপ্তকরণ এবং শীতলীকরণ। এই দুটি বিশেষত্বকে প্রয়োগ করে মানুষ তার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের অজস্র জিনিস আবিষ্কার করছে। মাথার উপরে পাখা ঘুরছে, রান্নাঘরে চলছে মাইক্রো ওভেন কিংবা মিক্সি। গিজারে পাওয়া যাচ্ছে গরম জল। পরিশ্রম বাঁচাতে আর অপচয় ঠেকাতে রয়েছে রেফ্রিজারেটর। গরমকে ভুলিয়ে দিচ্ছে এয়ার কন্ডিশনার। রেডিয়ো কিংবা টেলিভিশন, ডিভিডি কিংবা গান শোনার নানা যন্ত্র — বিনোদনের দুনিয়ায় মানুষকে সম্পন্ন করে তুলেছে বিদ্যুৎ। চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ : লক্ষণ-নির্ভর রোগনির্ণয় ও চিকিৎসাপদ্ধতি থেকে চিকিৎসাকে সর্ব অর্থে বিজ্ঞান করে তুলেছে বিদ্যুৎ। জটিল নানা রোগনির্ণয় পদ্ধতি থেকে অস্ত্রোপচার এমনকি কৃত্রিম শ্বাস সঞ্চালন ব্যবস্থা সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে বিদ্যুতের সাহায্যে। আধুনিক ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থায় উন্নত দেশগুলির চিকিৎসা-সহায়তা পাওয়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তারও মূলে আছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের আবিষ্কার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা করে। অন্যদিকে পরিবহন ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ এনেছে গতিময়তা। ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎশক্তি কিংবা প্যান্টোগ্রাফের মাধ্যমে সরাসরি আহরিত বিদ্যুৎ ট্রেন, ট্রাম বা অন্যান্য যানবাহন চলাচলে সাহায্য করে। প্রথম শিল্পবিপ্লবে বিদ্যুতের অবদান ছিল না। কিন্তু বিদ্যুতই দিয়েছে শিল্পসমৃদ্ধি। বিদ্যুৎ ছাড়া কল-কারখানার টারবাইন অচল। যে পাম্প মাটি থেকে জল তুলে কৃষিতে সাহায্য করে নীলর জোগান দেয় তার চালিকাশক্তিও বিদ্যুৎ। কিংবা পানীয়ের জোগান দেয় যে কম্পিউটার মানববিশ্বকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসেছে আঙুলের ছোঁয়ায়, তাকেও চালায় বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎই মানববিশ্বকে দিয়েছে গতি এবং শক্তি। বিজ্ঞানের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আবষ্কিারই বিদ্যুৎচালিত।

উপসংহার: বিদ্যুৎ এবং তার অনুষঙ্গে প্রযুক্তি সভ্যতা- পরিচালনার বৃহত্তর ক্ষেত্রে যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, = ঠিক তেমনি আমাদের রোজকার জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নির্ধারণেও এই দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুতের অবদান ও অস্তিত্ব এক অর্থে অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url