আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চা উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি
আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চা উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য, প্রাচীন সাহিত্য, বিদেশি বিবরণ প্রভৃতির যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। কিন্তু আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় এসব উপাদানের পরিবর্তে [1] সরকারি নথিপত্র, [2] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, [3] চিঠিপত্র, [4] সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র প্রভৃতির গুরুত্ব সর্বাধিক।
[1] সরকারি নথিপত্র: (ক) বিভিন্ন সরকারি কমিটি ও কমিশনের প্রতিবেদন, (খ) পুলিশ-গোয়েন্দা সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট , (গ) পদস্থ সরকারি আধিকারিক বা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিবরণ, (ঘ) সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন চিঠিপত্র প্রভৃতি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপাদান।
[2] আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা : বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রমুখের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান | বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবন স্মৃতি’, সরলাদেবী চৌধুরানির ‘জীবনের ঝরাপাতা' প্রভৃতি ছাড়াও মহাত্মা গান্ধি, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, মুজাফফর আহমেদ, মণিকুন্তলা সেন প্রমুখের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি থেকেও আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
[3] চিঠিপত্র : বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা ব্যক্তিগত চিঠিপত্র থেকেও আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্ পাওয়া যায় | স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিপ্লবীদের নানা চিঠিপত্র ইতিহাসের অমূল্য উপাদান | কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা পিতা জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্রগুলি ছাড়াও টিপু সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, প্রমথ চৌধুরী প্রমুখের লেখা চিঠিপত্র থেকে ভারত ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
[4] সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র: ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে প্রচলিত বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলিতে সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শাসননীতি প্রভৃতি নানা বিষয় সম্পর্কে লেখালেখি হত। এসব পত্রপত্রিকার লেখালেখি থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের নানা তথ্য সংগ্রহ করা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন' এবং দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’ ছাড়াও ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘সন্ধ্যা’, ‘সঞ্জীবনী’, ‘বন্দেমাতরম' প্রভৃতি পত্রপত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য সরবরাহ করে থাকে।