1.পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাব আলোচনা করো।
পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাবসমূহ : বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতায় ওজোন (03) গ্যাসের একটি ঘনস্তর বলয়রূপে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, যাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয়। পরিবেশের ওপর এই ওজোনস্তরটির প্রভাব সীমাহীন | যেমন—
প্রাকৃতিক সৌরপর্দা: সূর্য থেকে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মি
(আলট্রাভায়োলেট—বি এবং সি) পৃথিবীর জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজোনস্তর এই দুই অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ তথা প্রতিহত করে। তাই এই দুই রশ্মি ওজোনস্তর অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে পারে না। এভাবে ওজোনস্তর পর্দা বা ছাতার মতো জীবজগৎ তথা পরিবেশকে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলে।
প্রাণীকূলের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা না থাকে তাহলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে জীবজন্তুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং জলজ প্রাণী, যথা চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও প্ল্যাংকটনের বিশেষ ক্ষতি হবে। ফলে জলের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে।
উদ্ভিদজগতের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর যদি অতিবেগুনি রশ্মিক প্রতিহত না করত তাহলে উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সালোকসংশ্লেষ বাধাপ্রাপ্ত হত, ফলে উদ্ভিদ শুকিয়ে যেত।
মানুষের ওপর প্রভাব: ওজোনস্তর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় বলেই দুরারোগ্য ত্বকের ক্যানসার থেকে মানুষ রক্ষা পায় এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট থাকে। এ ছাড়া অসময়ে চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা থেকেও এটি মানুষকে রক্ষা করে।
অন্যান্য প্রভাব: ওজোনস্তরে অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় বলে
বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তাপমাত্রা কম থাকে এবং তার ফলে ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষে বলা যায়, বায়ুমণ্ডলের যে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর বহুরকমভাবে আমাদের সুরক্ষা প্রদান করেছে, সেই স্তরটির অস্তিত্বই বহুলাংশে এই ওজোনস্তরের ওপর নির্ভরশীল।
2. ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উন্নতার তারতম্যের কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, বায়ুমণ্ডলে উন্নতার তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো। [মাধ্যমিক '17]
অথবা, বায়ুমণ্ডলের উন্নতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলে উন্নতার তারতম্যের কারণ ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উম্নতায় অনেক পার্থক্য দেখা যায় | বায়ুর উন্নতার এই তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হল—
অক্ষাংশ : অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির
পতনকোণের তারতম্য ঘটে, ফলে উম্নতারও ‘পার্থক্য হয় | নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে | লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় | কারণ—[i] তির্যক রশ্মিকে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে তুলনামূলকভাবে অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় এবং [ii] তির্যক রশ্মি ভূপৃষ্ঠে বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং, নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে তাপমাত্রাও ক্রমশ কমতে থাকে।
উদাহরণ—34°05’ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত শ্রীনগরের তুলনায় নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী তিরুবনন্তপুরম (8°30' উঃ অক্ষাংশ) অনেক বেশি উন্ন| আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অক্ষাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলেই অক্ষাংশের ভিত্তিতে ভূপৃষ্ঠে তিনটি প্রধান তাপমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে।
উচ্চতা : সাধারণভাবে দেখা যায় প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় প্রায় 6.5 °সে হারে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয়। উদাহরণ— উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা (0°20′ উত্তর, উচ্চতা 1192 মি) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (0°11' দক্ষিণ, উচ্চতা 2850 ) মোটামুটি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতার পার্থক্যের জন্য কাম্পালার (গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 21.5 °সে) তুলনায় কুইটোর তাপমাত্রা (গড়ে 14 °সে) অনেক কম।
পর্বতের অবস্থান : উম্ন বা শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত থাকলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণিতে বাধা
পায়। ফলে পর্বতশ্রেণির দু-দিকের উন্নতার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়| উদাহরণ— শীতকালে শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু
মধ্য-এশিয়ার বরফাবৃত অঞ্চলের ওপর দিয়ে এসে ভারতে প্রবেশ করারমুখে হিমালয় পর্বতশ্রেণিতে বাধা পায় বলে উত্তর ভারত তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পায় |
স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ
দিনেরবেলা তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়। একইভাবে গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উম্ন হয়, পার্শ্ববর্তী জলভাগ ততটা হয় না, বা শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয় সংলগ্ন জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এজন্য সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরে জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির হয়। কিন্তু সমুদ্র-সংলগ্ন স্থানে সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য উন্নতা কখনোই খুব বেশি বা কম হয় না। জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। উদাহরণ—সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত বলে মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির। আবার, সামুদ্রি প্রভাবের জন্য দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জলবায়ু সমভাবাপন্ন |
দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য : দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উন্নতার তারতম্য হয়। কারণ, যদি দিন বড়ো ও রাত ছোটো হয়, তাহলে দিনেরবেলায় ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত তাপের সবটাই ছোটো রাতে বিকিরিত হতে পারে না, কিছুটা সঞ্চিত থেকে যায়। কিছুদিন এক জায়গায় এরকম চললে জায়গাটি স্বাভাবিকভাবেই উম্ন হয়ে যায়| আবার, দিন ছোটো এবং রাত বড়ো হলে দিনেরবেলায় সঞ্চিত তাপের সবটাই বড়ো রাতে বিকিরিত হয়ে যায়, ফলে ওই জায়গায় উন্নতা কম হয়।
ভূমির ঢাল : ভূমির যে ঢালের ওপর সূর্যালোক বেশি খাড়াভাবে পড়ে সেই ঢালে উম্নতা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এর বিপরীত ঢালে সূর্যালোক তির্যকভাবে পড়ে ও উম্নতা তুলনামূলকভাবে কম হয় । উদাহরণ—উত্তর গোলার্ধে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি পর্বতশ্রেণির উত্তর ঢালের তুলনায় দক্ষিণ ঢালের তাপমাত্রা বেশি। আবার দক্ষিণ গোলার্ধের পর্বতশ্রেণি- সমূহের উত্তর ঢাল দক্ষিণ ঢালের তুলনায় বেশি
সমুদ্রস্রোত: সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত যে-কোনো দুটি স্থান একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও একটির পাশ দিয়ে যদি উম্ন স্রোত এবং
অপরটির পাশ দিয়ে যদি শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়, তাহলে প্রথম
স্থানটির আবহাওয়া উম্ন এবং দ্বিতীয় স্থানটির আবহাওয়া শীতল হয়।
উদাহরণ—প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত গ্রেট ব্রিটেনের গ্লাসগো শহরের পাশ দিয়ে উম্ন উত্তর আটলান্টিক স্রোত এবং কানাডার নৈন শহরের পাশ দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয়। এর ফলে শীতকালে গ্লাসগোর গড় তাপমাত্রা যখন 4.3°সে-এর নীচে নামে না, তখন নৈন-এর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে – 18.5°সে পর্যন্ত নেমে যায়।
বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মতো বায়ুপ্রবাহের জন্যও তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। শীতকালে সুমেরুর ঠান্ডা বাতাস উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে বহুদূর পর্যন্ত চলে আসে। এজন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগে শীতকালে তীব্র শীত পড়ে এবং তুষারপাত হয়। আবার উন্ন চিনুক বায়ুর প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের বরফ গলে যায়।
2. বিশ্ব উষ্বায়নের কয়েকটি প্রভাব লেখো।
অথবা, বিশ্ব উষ্বায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। [মাধ্যমিক ´17]
• উত্তর : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য প্রকৃতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে অথবা ভবিষ্যতে পড়বে | সেগুলি হল
মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন : উন্নতা বেড়ে যাওয়ার জন্য হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী হিমবাহ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব উস্নায়নের ফলে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর, দক্ষিণমেরুর হিমবাহও গলে যাচ্ছে।
সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলতল বেড়ে যাচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 0.9 °সে বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রজলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বেড়ে গেছে। এর জন্য সমুদ্র উপকূলের নীচু অংশগুলিজলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি পরিবর্তন : বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পীভবনের হার ও বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বেড়ে যাবে। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির তীব্রতা বাড়বে। অধঃক্ষেপণের বণ্টনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বন্যা এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলিতে খরা দেখা দেবে।
শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি : কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব উন্নায়নের জন্য প্রধান খাদ্যশস্যগুলির উৎপাদন 10 থেকে 70 শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। ধান, ওট, তামাক, তুলো, পাটের উৎপাদন কমে গেলেও আখ, জোয়ার, বাজরার উৎপাদন বাড়তে পারে। দেখা গেছে হিমাচলের কুলু উপত্যকায় আপেল চাষের সাথে পেয়াজ, রসুনের চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন : বিশ্ব উম্নায়ন কৃষিপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাবে। এখনকার সেচসেবিত কৃষি অঞ্চলগুলি চারণভূমিতে পরিণত হবে। ধান, পাট, তুলো ক্রান্তীয় অঞ্চলের পরিবর্তে নাতিশীতোয় অঞ্চলে চাষ হবে| অন্যদিকে, উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলিতে কৃষিপদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
এল নিনো ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব : দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূল বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরে হঠাৎ করে দক্ষিণমুখী একধরনের উম্নস্রোত সৃষ্টি হয় | এই সমুদ্রস্রোতের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঘটনাকে এল নিনো বলে | এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উন্নতা 1.5 - 2.5 °সে বেড়ে যায়। এর প্রভাবে পেরু, ইকুয়েডরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় | ভারতে খরার জন্য এল নিনো দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন | বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, বিশ্ব উষ্বায়নের জন্য ভবিষ্যতে এল নিনোর মতো ঘটনা অনেক বেড়ে যাবে।
3. কালবৈশাখী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, কালবৈশাখীকে ‘নরওয়েস্টার’ বলা হয় কেন?
• উত্তর : কালবৈশাখীর অবস্থান ও সময় কাল : গ্রীষ্মকালের অপরাহ্ণে পূর্ব-ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত ক্রান্তীয় ঝড়ের প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়-বৃষ্টিপাত ও কোনো কোনো সময় শিলাবৃষ্টিও হয় | একে বলা হয় কালবৈশাখী | এটি একটি আকস্মিক বায়ু।
সৃষ্টির কারণ : সকাল থেকে প্রখর সূর্যতাপে ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের পাথুরে ভূমি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে অপরাহ্ণের দিকে ওই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তারই প্রভাবে এই ক্রান্তীয় ঝড়ের উৎপত্তি হয়। সাধারণত এই বজ্রঝড় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ছুটে আসে বলে একে ইংরেজিতে Nor’wester (নরওয়েস্টার) বলা হয়।
আবহাওয়াতে প্রভাব : কালবৈশাখীর মাধ্যমে বৃষ্টিপাত কম হলেও গ্রীষ্মের উত্তাপ কিছুটা হ্রাস পায় এবং তা কৃষিকাজের পক্ষে বিশেষ সহায়ক হয়।
4. বায়ুমণ্ডলে বায়ুর চাপের তারতম্যের কারণগুলি কী কী?
বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ
বায়ুর চাপের তারতম্য যে কারণগুলির জন্য ঘটে, সেগুলি হল—
বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ উন্নতার প্রভাব বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাব
উন্নতার প্রভাব : [i] বায়ু উম্ন হলে প্রসারিত হয় | ফলে তার ঘনত্ব কমে যায় অর্থাৎ চাপ হ্রাস পায়। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম হয়। [ii] উন্নতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয়, ফলে তার ঘনত্ব বাড়ে। সুতরাং, চাপও বৃদ্ধি পায়। উভয় মেরু অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য বায়ুর চাপ বেশি হয়।
বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ: জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু শুষ্ক বায়ুর
তুলনায় হালকা হয় বলে এর চাপও কম হয়। এজন্য যেসব অঞ্চলের (বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে সেখানে বায়ুর চাপ কম হয়।
উচ্চতার প্রভাব: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরের দিকে ওঠা যায়, বায়ুস্তরের গভীরতা বা বায়ুমণ্ডলীয় ভর ক্রমশ কমে যায় এবং এর ফলে বায়ুর চাপও হ্রাস পায়। এজন্য দুটি স্থানের মধ্যে যেটির উচ্চতা বেশি সেখানে বায়ুর চাপও অপেক্ষাকৃত কম হয়। যেমন—অসমের শিবসাগর ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও বেশি উচ্চতার জন্য দার্জিলিং-এ বায়ুর চাপ শিবসাগরেরতুলনায় অনেক কম থাকে।
পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাব: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যও বায়ুচাপের তারতম্য হয়। যেমন—পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরুর তুলনায় মেরুবৃত্ত প্রদেশে বেশি বলে মেরুবৃত্ত প্রদেশের বায়ু বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয় | এর ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে গিয়ে মেরুবৃত্ত প্রদেশে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন: স্থলভাগ ও জলভাগের বিপরীতধর্মী চরিত্রের প্রভাবেও বায়ুর চাপের তারতম্য হয়। দিনেরবেলা জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয় | এর ফলে ভূপৃষ্ঠের বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। তেমনি রাতেরবেলায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়ে এবং উচ্চচ্চাপ ক্ষেত্র তৈরি করে। এইভাবে স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টনের জন্য চাপের তারতম্য ঘটে।
6. মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর সম্পর্ক কীরূপ?
অথবা, মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক আলোচনা করো।
• উত্তর : মৌসুমি বায়ুর সাথে জেট বায়ুর সম্পর্ক
আবহবিদেরা মনে করেন ভারতের জলবায়ুর সাথে জেট বায়ুর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে | ভারতের ওপর উপক্রান্তীয় জেট বায়ু এবং ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ুর প্রভাব খুব ভালোভাবেই পড়ে।
বর্ষাকাল : ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু মাসে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় এই বায়ুস্রোত চিনের দক্ষিণ উপকূল থেকে
আরম্ভ করে (12° থেকে 15° উত্তর অক্ষাংশ বরাবর) থাইল্যান্ড ও ভারতীয় উপদ্বীপ পেরিয়ে আফ্রিকার পূর্বদিকে সুদান হয়ে প্রায় সাহারায় গিয়ে শেষ হয়। এর মধ্যে পূর্বে মালয়েশিয়া থেকে পশ্চিমে ভারত পর্যন্ত এর গতিবেগ খুব বেশি (ঘণ্টায় 100-200 কিমি) থাকে এবং ক্রমশ পশ্চিমে তা হ্রাস পায় | প্রকৃতপক্ষে ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঠিক সময়ে আগমন ও সক্রিয়তা বহুলাংশে এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। যদি এটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তরে সরে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহে ছেদ (Break of Monsoon) ঘটে। এ ছাড়া, বর্ষাকালে
ভারতের ওপর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি এবং সেগুলির তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, এই ক্রান্তীয় পুবালি জেটের গতিপ্রকৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
শীতকাল : উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ অর্থাৎ, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার সময় থেকেই ভারতের ওপর আবির্ভূত হয় এবং তখন থেকে প্রায় মে মাস পর্যন্ত এ দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয় | এই বায়ুস্রোতটি শীতকালে যতই দক্ষিণে সরে আসে, jun ভারতে শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি সর্বাধিক দক্ষিণে আসে এবং তারপর ধীরে ধীরে উত্তরে সরে গিয়ে মে মাসে অন্তর্হিত হয়। শীতকালে ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হওয়ার সময় এই বায়ুস্রোতটি হিমালয়ে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। একটি শাখা হিমালয়ের উত্তর এবং অপরটি দক্ষিণদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে আরও পূর্বে গিয়ে মিলিত হয়| হিমালয়ের দক্ষিণের শাখাটি যত শক্তিশালী হয়, ততই উত্তর ভারতে শীত তীব্র হয়, শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাব
সীমাহীন। ভারতীয় ঋতুর স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত,
ঋতুপরিবর্তন প্রভৃতি এই জেট বায়ুর অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির ওপর
নির্ভরশীল।