মহাকাশ গবেষণায় ভারত প্রবন্ধ রচনা pdf download | ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রবন্ধ রচনা pdf
মহাকাশ গবেষণায় ভারত প্রবন্ধ রচনা pdf | Mahakasa gabesonai bharata prabandha racana pdf download
“মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মানে আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে''... রবীন্দ্রনাথ
ভূমিকা: মানুষের বিস্ময়ভরা চোখ যুগ যুগ ধরে তাকিয়েছে মাথার ওপরের উদার, বিস্তৃত আকাশের দিকে। সে আকাশে কখনও ফিদা হুসেনের তুলির নীল রঙের পোঁচ, কখনও চাঁদ-তারার ঝিকমিকে আলাে, কখনও বিদ্যুতের ঝলসে ওঠা তলােয়ার, কখনও সূর্যের আলােয় ঘুম ভাঙানাের সংকল্প| আবার কখনও মেঘলা মুখে মন খারাপের বিষণ্ণতা | আর বিস্মিত মানুষ ঘর ও বাহির-এর শিশু রবীন্দ্রনাথের মতাে সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছে, তারপরে... তারপরে.... নিজের মেধা আর মননকে নির্ভর করে সে নিজেই সচেষ্ট হয়েছে এই রহস্য উদ্ঘাটনে। তৈরি হয়েছে। মহাকাশবিজ্ঞানের গর্বিত অধ্যায় মানবসভ্যতার অনন্য বিজয়গাথা। আর সেই মহাকাব্যে আর্যভট্টের দেশ ভারতও রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে।
প্রাচীন ভারতে মহাকাশচর্চা: ভারতবর্ষে গুপ্ত যুগে মহাকাশচর্চার বিকাশ ঘটে। আর্যভট্টের মহাকাশ সম্পর্কিত ভাবনার প্রকাশ ঘটে পঞ্চম শতকে তাঁর লেখা গ্রন্থ আর্যভট্টীয়তে। ষষ্ঠ শতকে বরাহমিহির রচনা করেন পঞ্চসিদ্ধান্তিকা| দ্বাদশ শতকে ভাস্কর রচনা করেন গণিতাধ্যায়, গােলাধ্যায়ইত্যাদি গ্রন্থ। এইভাবে প্রাচীন ভারতেই মহাকাশচর্চার এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায় সূচিত হয়েছিল।
আধুনিক ভারতে মহাকাশ গবেষণার গােড়ার কথা: ১৯৫৭ সালে রাশিয়ার স্পুটনিক উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত । মহাকাশ গবেষণার প্রয়ােজনীয়তা উপলদ্ধি করে। ভারতে মহাকাশ গবেষণার পথিকৃৎ ড. বিক্রম সারাভাইয়ের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল ।নেহরু ১৯৬১ সালে মহাকাশ গবেষণাকে পারমাণবিক শক্তি দফতরের। অধীনে নিয়ে আসেন। ১৯৬২ সালে উ, সারাভাইকে চেয়ারম্যান করে তৈরি। হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ | ১৯৬৯-এর ১৫ আগস্ট গঠিত হয় ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন' (ISRO) ভারতের। মহাকাশ গবেষণাকে সুনির্দিষ্ট গতি দেয়। ১৯৭২-এ ‘মহাকাশ বিভাগ- প্রতিষ্ঠা ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের সাংগঠনিক পর্বকে সম্পূর্ণ করে।
সাফল্যের পথে ভারত : ১৯৭৫ সালে সােভিয়েত রাশিয়ার কসন্যেদ্বোম থেকে সােভিয়েত মহাকাশযান কসমসের সাহায্যে মহাকাণে প্রেরিত হয় ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্ট। ১৯৭৯ সালে মস্কো থেকে মহাকাশে গাড়ি দেয় ভাস্কর-১| এই বছরটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বছরই ভারতের প্রথম মহাকাশ উৎক্ষেপণন এস এল ভি তৈরি হয়। প্রাথমিক ব্যর্থতার পরে এর মাধ্যমেই ১৯৮০ সালে মহাকাণে সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হয় রােহিণী-১। এস এল ভির সাফল্যে উৎসাহিত বিজ্ঞানীরা এরপর তৈরি করেন উন্নততর পি এস এল ভি উৎক্ষেপণযান |নয়ের দশকে ভারত মহাকাশে প্রেরণ করে অনেক ইনস্যাট উপগ্রহ—ইনস্যাট ২এ, ইনস্যাট ২বি, ইনস্যাট ২সি এবং ইনস্যাট ২ডি। ভারতের এই ইনস্যাট উপগ্রহগুলি প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল বেতার যােগাযােগ, কম্পিউটার যােগাযােগ,দূরদর্শন, গ্রামীণ সার ব্যবস্থার উন্নতিসাধন এবং আবহাওয়া, জরুরিকালীন বিপর্যয়ের ঘটনা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়ােজনীয় তথ্যসংগ্রহ |
শিষ্য ছোঁয়ার অপেক্ষায়: ভারতের মহাকাশ গবেষণা এখন এস এন ভি থেকে। এস এম ভি পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্যে আতের দৃণকে মহাকাশে pari দিয়েছেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। তবে সাম্প্রতিক আগস্ট চন্দ্রযান-১ এই নামে চাদে অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং| ২০০৮এর ২২ অক্টোবর শ্রীহরিকোটা থেকে পি এস এল ভি রকেটের| সাহায্যে প্রযানের সকল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এই পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ।হয়েছে। একশােজন বিজ্ঞানীর নিরন্তর সাধনায় প্রেরিত ১৩৮০ কিলােগ্রাম ওজনের এই চন্দ্রযানের উদ্দেশ্য হল চাঁদের মাটির ত্রিমাত্রিক মানচিত্র বানানোর। জন্য প্রয়ােজনীয় তথ্যসংগ্রহ | ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর শ্রীহরিকোটার সতীণ। ধাওয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ভারতের প্রথম লেযান | যা মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে ২০১৪-র ২১ সেপ্টেম্বর। ইসরাে পৃথিবীর চতুর্থ মহাকাশ সংস্থা যারা মঙল অভিযানে সফল হয়েছে। ২০১৭র ১৪ ফেব্রুয়ারি মহাকাশ গবেষণায় ভারত এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে| পি এস এল ভিসি ৩৭ এই একটি মাত্র রকেটের সাহায্যে ১০৪ টি উপগ্রহকে সে মহাকাশে প্রেরণ করে। ২০১৭-র ৫ জুন ভারত মহাকাশে পাঠিয়েছে জিস্যাট-১৯ যােগাযােগ স্থাপনকারী উপগ্রহ |
উপসংহার: ভারতে মহাকাশ গবেষণার খাতে ২০১৭-১৮ সালে সরকারের বাজেট ৯০৯৪ কোটি টাকা। এই তথ্য মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অঙ্গীকারের ইঙ্গিতবহ। প্রথম দিন থেকেই ভারতের মহাকাশ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে একে পরিচালনা করা। এভাবেই ভারতের চিরন্তন জীবনাদর্শের সঙ্গে মিশে গেছে ভারতের মহাকাশ সবেষণাও | আর কোথাও হয়তাে এর মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্যের উন্নাসিক সভ্যতার কাছে এ বার্তাও পৌঁছে যায়—আমরাও পারি।