অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা | দশম শ্রেণীর বাংলা কবিতা অসুখী একজন
আজ আমি আপনাদের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণীর বাংলা কবিতা: অসুখী একজন, কবি পাবলো নেরুদার লেখা কবিতাটি শেয়ার করছি। কবিতাটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন| Asukhi ekajana pablo neruda
অসুখী একজন - পাবলো নেরুদা |
অসুখী একজন
পাবলো নেরুদা
আমি তাকে ছেড়ে দিলাম
অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়
আমি চলে গেলাম দূর... দূরে।
সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।
একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার এক নান
একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।
বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ
ঘাস জন্মালো রাস্তায়
আর একটার পর একটা, পাথরের মতো
পর পর পাথরের মতো, বছরগুলো
নেমে এল তার মাথার ওপর।
তারপর যুদ্ধ এল
রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।
শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।
সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।
সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন
শান্ত হলুদ দেবতারা
যারা হাজার বছর ধরে
ডুবে ছিল ধ্যানে
উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে
তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
সেই মিষ্টি বাড়ি, সেই বারান্দা
যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম,
গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা
চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ
সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।
যেখানে ছিল শহর
সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা
দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা
রক্তের একটা কালো দাগ।
আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়
কবি পরিচিতি
পাবলো নেরুদা (১৯০৪/১৯৭৩) : প্রখ্যাত কবি, কূটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা চিলির সীমান্ত শহর পারলেতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম নেকতালি রিকার্দো রেয়েন্স বাসোয়ালতো) ‘পাবলো নেরুদা’ নামটির উৎসচেক লেখক জাঁ নেরুদা এবং পাবলো নামটির সম্ভাব্য উৎস পাবলো পিকাসো। মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে তিনি যেমন কবিতা লিখেছেন, তেমনই লিখেছেন ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহার। ১৯২৭ সালে চিলির সরকার তাঁকে রাষ্ট্রদূত করে রেঙ্গুনে পাঠায়। এ পদে থেকে তিনি চিন, জাপান, কলম্বোসহ ভারতেও আসেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। চিলিতে অগাস্তো পিনোচেতের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানের সময় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হন নেরুদা। তিনদিন পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে— - ‘কুড়িটা প্রেমের কবিতা এবং একটি হতাশার গান’, ‘এ পৃথিবীর আবাসভূমি’, ‘প্রাণের স্পেন’, ‘বিশ্বসংগীত’, ‘চিলির পাথর’, ‘হোয়াকিন মুরিয়েতার গরিমা ও মৃত্যু’, ‘ক্যাপ্টেনের কবিতা', ‘শীতের বাগিচা’ ইত্যাদি।