সরকারি নথিপত্র কি ও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব
আজ আমরা এই আর্টিকেল বা পোষ্টের মাধ্যমে দশম শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারণা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল সরকারি নথিপত্র কি ও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য আলোচনা করব। তুমি যদি একজন দশম শ্রেণীর বা মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রী হও তাহলে আজকের এই তথ্যটি তোমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি নথিপত্র কি? ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব
সরকারি নথিপত্র থেকে কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায়? প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কমবেশি প্রতি বছর পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি এসে থাকে তোমরা যদি সরকারি নথিপত্র বলতে কি বোঝায় ও গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো প্রশ্নটি উত্তর কোথাও খুঁজে না পাও ওই জন্য আমরা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্র প্রশ্নটির তথ্য তোমাদের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেয়ার করছি। তোমরা এখান থেকে প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে প্রতিটি প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারবে।
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব কী?
আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব লেখো।
সরকারি নথিপত্র বলতে কি বোঝায় সংক্ষেপে আলোচনা করো।
সরকারি নথিপত্র বলতে কি বোঝায় সংক্ষেপে আলোচনা: Sarakāri nathipatra
উত্তর : সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝায় ?
বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী, সেনাপতি, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্যাদি লিখে গিয়েছেন সেসব সরকারি নথিপত্রের বিবরণ নামে পরিচিত।
সরকারি নথিপত্রের বিবরণ থেকে প্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক তথ্যের উদাহরণ হল সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রি.) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফরেস্ট তাঁর ‘হিস্ট্রি অব দি ইন্ডিয়ান মিউটিনি' গ্রন্থটি লিখেছেন যা থেকে সিপাহি বিদ্রোহের নানা তথ্য পাওয়া যায়।
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় যেসব উপাদান পাওয়া যায় সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল সরকারি নথিপত্র। দিল্লির জাতীয় মহাফেজখানা ছাড়াও কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বই প্রভৃতি শহরের লেখ্যাগারগুলিতে এরুপ বহু নথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ প্রশাসনের জন্য নথির ব্যবহার অপরিহার্য। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সরকারি নথিপত্র হল –
[i] বিভিন্ন সরকারি কমিশনের প্রতিবেদন,
[ii] পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারি আধিকারিক প্রমুখের বিভিন্ন প্রতিবেদন,
[iii] বিবরণ,
[iv] চিঠিপত্র প্রভৃতি।
কমিশনের প্রতিবেদন: ব্রিটিশ শাসনকালে সরকার অর্থ, শিক্ষা, আন্দোলন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি কমিশন নিয়োগ করে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নীল কমিশন (১৮৬০ খ্রি.), দাক্ষিণাত্য বিদ্রোহ কমিশন (১৮৭৬ খ্রি.), হান্টার কমিশন (১৮৮২ খ্রি.), সাইমন কমিশন (১৯২৭ খ্রি.) প্রভৃতি। এসব কমিশনের প্রতিবেদন বা রিপোর্ট থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার বহু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
অন্যান্য প্রতিবেদন: ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ, গোয়েন্দা ও বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকগণ ব্রিটিশ-বিরোধী গণবিদ্রোহ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বিপ্লবী আন্দোলন, গুপ্ত সমিতিগুলির কাজকর্ম প্রভৃতি বিষয়ে সরকার নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাত যার ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করত। এসব প্রতিবেদন আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় যথেষ্ট সহায়তা করে।
বিবরণ: সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মচারী, সেনাপতি, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি প্রমুখ বিভিন্ন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরবর্তীকালে সেইসব ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এরূপ বেশকিছু বিবরণ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে বা সরকারি দপ্তরে সংরক্ষিত আছে। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিবরণ হল ফরেস্ট রচিত ‘হিস্ট্রি অব দি ইন্ডিয়ান মিউটিনি', স্যার সৈয়দ আহমদ খান রচিত ‘দি কজেস অব ইন্ডিয়ান রিভোল্ট’, কার্জনের স্বরাষ্ট্রসচিব রিজলে রচিত দিনলিপির বিবরণ, কে লেপেল গ্রিফিনের বিবরণ প্রভৃতি।
চিঠিপত্র : সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে যেসব চিঠিপত্রের আদানপ্রদান করত সেগুলি থেকে বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্রগুলি হল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিঠিপত্র, লর্ড মেকলের চিঠিপত্র, লর্ড ডাফরিনের চিঠিপত্র, ব্রিটিশ সরকারকে দেওয়া গান্ধিজির বিভিন্ন চিঠিপত্র প্রভৃতি।
ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব
ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকারি নথিপত্র, যেমনসরকারি প্রতিবেদন, পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারি আধিকারিক প্রমুখের প্রতিবেদন, বিভিন্ন বিবরণ, চিঠিপত্র প্রভৃতি উপাদানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—
বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড: ব্রিটিশ সরকার যে বিভিন্ন বিপ্লবী ও বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গোপনে নজরদারি চালাত সে বিষয়ে সমকালীন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র থেকে বর্তমানে জানা সম্ভব হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্ট: সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট থেকে সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেমন—নীল কমিশনের (১৮৬০ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে বাংলা চাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচার, হান্টার কমিশনের (১৮৮২ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
আন্দোলন দমনের নীতি: ব্রিটিশ সরকার কীভাবে ভারতীয়দের রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দুর্বল বা দমনকরার চেষ্টা চালাত সে বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র, বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকদের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়। যেমন—সরকার গোপনে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছিল, বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন প্রভৃতি তথ্যাদি সরকারি চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।
ভারতীয়দের সংস্কার: সমকালীন ভারতীয়দের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলির প্রতি সরকারের মনোভাব মোটেই ভালো ছিল না—তা জানার জন্য সরকারি নথিপত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ পাশ্চাত্যকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনকে সরকার সুনজরে দেখেনি।
একমাত্র নির্ভরযোগ্যতা: কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি নথিপত্র ভারত-ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন—বর্তমান তথ্যাদির সহায়তায় নেতাজি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকে একমাত্র সরকারি নথিপত্র প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।