বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র প্রবন্ধ রচনা | বিজ্ঞানাচার্য আচার্য জগদীশচন্দ্র প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা • জন্ম ও শিক্ষা ও অধ্যাপনা ও বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা ও গবেষণা ও আফিফার ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে যােগাযােগ • উপসংহার
প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র | প্রবন্ধ রচনা বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র
ভূমিকাঃ "বিজ্ঞানলক্ষ্মীর খ্রিয় পশ্চিম-মদিনে দূর সতীরে
হে বস্তু গিয়েছ তুমি ; জয়মাল্যখনি সেথা হতে আনি দীনহীনা জননীর লজানত শিরে পরায়েছ ধীরে/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলি যে বাঙালি বিজ্ঞানীর উদ্দেশে রচিত তিনি শুধু বাঙালি হিসেবে নন, চিরকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবেও পরিচিত। তিনি জগদীশচন্দ্র বসু।
জন্ম ও শিক্ষা : ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহে এই বাঙালি বিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ভগবানচন্দ্র বসু,মাতার নাম বামাসুন্দরী দেবী। ফরিদপুরে জগদীশচন্দ্রের বাল্যশিক্ষার সূচনা হয়। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এবং ওই বছরেই ইংল্যান্ড যাত্রা করেন | তিনি কেম্ব্রিজ থেকে বিজ্ঞানে অনার্স-সহ বিএ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসৃসি পাস করেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি উপাধি লাভ করেন। অধ্যাপনা ও বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা: ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যােগ দেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এমেরিটাস অধ্যাপকরূপে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বসু বিজ্ঞান মন্দির'।
গবেষণা ও আবিষ্কার : জগদীশচন্দ্র বসুর বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথম পর্যায় : অতি ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মধ্যেও যে দৃশ্য-আলােকের সকল ধর্ম বর্তমান তা নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন। এই পর্যায়েই তিনি বিনা তারে বার্তা প্রেরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন |
দ্বিতীয় পর্যায়। তার এই পর্যায়ের গবেষণার অন্যতম বিষয় ছিল ‘জৈব ও অজৈব পদার্থে উত্তেজনার ফলে সাড়ার সমতা' | তিনি প্রথম মানুষের স্মৃতিশক্তির অজৈব মডেল বা যান্ত্রিক নমুনা তৈরি করেন। এই আবিষ্কার পরবর্তীকালের রেডার, ইলেকট্রনিক হিসাব্য প্রভৃতি আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়। এই পর্যায়ে জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদের ওপর প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উত্তেজনার ফলাফল সম্বন্ধে গবেষণা করেন। উদ্ভিদের জলশােষণ বা সালােকসংশ্লেষ সম্পর্কেও তাঁর গবেষণা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি গবেষণার প্রয়ােজনে ক্রেস্কোগ্রাফ, স্ফিগমােগ্রাফ, পােটোমিটার প্রভৃতি যন্ত্রও আবিষ্কার করেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে যােগাযােগ : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী। সেইসঙ্গে তিনি ছিলেন একজন সাহিত্যরসিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যােগ ছিল | রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,“বিজ্ঞান ও রসসাহিত্যের প্রকোষ্ঠ সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন মহলে, কিন্তু তাদের মধ্যে যাওয়া-আসার দেনা-পাওনার পথ আছে | জগদীশ ছিলেন সেই পথের পথিক।'' জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞানের বিষয়কে যেভাবে সহজ বাংলায়। লিখেছিলেন তাতে বােঝা যায় তার মধ্যে একটি সাহিত্যিক সত্তাও ছিল | তাঁর অব্যক্ত নামে গ্রন্থটি তাঁর সাহিত্যিক সত্তার পরিচয় বহন করে।
উপসংহার: জগদীশচন্দ্র তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে-বিদেশে প্রচুর সম্মান লাভ করেছেন। তবে দেশবাসীর পক্ষ থেকে পাওয়া আন্তরিক প্রধা ও ভালােবাসাই তাঁর জীবনের সেরা স্বীকৃতি। তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েও মর্মে মর্মে ছিলেন একজন খাটি বাঙালি। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর এই বিজ্ঞানসাধকের জীবনাবসান হয়।
অনুসরণে সেথা যায়:
বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র ॥ বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র