বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণ | বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো
বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
◆ অক্ষাংশঃ
অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতন কোণে তারতম্য ঘটে। ফলে উষ্ণতার পার্থক্যও হয়। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ বেশি এবং তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে, ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপমাত্রা কম হয়।
◆ দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যঃ
দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উষ্ণতার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হলে দিনের সময় শোষিত তাপের সবটাই রাত্রে বিকিরিত হতে পারে না, ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার দিন ছোট ও রাত্রি বড় হলে দিনের সময় বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণ তাপ শোষণ করে রাত্রে তার চেয়ে বেশি তাপ বিকিরিত হয়, ফলে বায়ুমণ্ডল শীতল হয়ে পড়ে।
◆ ভূমির উচ্চতাঃ
সমুদ্রতল থেকে যতই ওপরে ঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ, ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পায়। এই কারণে যে স্থানটি সমুদ্র সমতল থেকে যত উঁচুতে অবস্থিত তার উষ্ণতা তত কম হয় এবং সমুদ্র সমতল থেকে কম উচ্চতায় অবস্থিত স্থানের উষ্ণতা বেশি হয়।
◆ সমুদ্র থেকে দূরত্বঃ
জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ বা দ্রুত শীতল হয়। গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উষ্ণ হয়, জলভাগ ততটা উষ্ণ হয় না। আবার শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয়, জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এই কারণে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে গ্রীষ্মকাল অধিক উষ্ণ এবং শীতকাল অধিক শীতল হয়।
◆ বায়ুপ্রবাহঃ
যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়। বায়ুপ্রবাহের উপর কোনো অঞ্চলের বায়ুর উষ্ণতা অনেকাংশে নির্ভর করে।
◆ সমুদ্রস্রোতঃ
সমুদ্রস্রোত বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। সমুদ্রের যে উপকূল অঞ্চল বরাবর উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
◆ পর্বতের অবস্থানঃ
উষ্ণ বায়ু এবং শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বতশ্রেণী অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণীতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে পর্বতের উভয়দিকে উষ্ণতার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।
◆ মেঘাচ্ছন্নতাঃ
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা ঘন মেঘের আবরণ দিনের বেলা সূর্যরশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধা দেয়, আবার রাত্রের সময় ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। ফলে বিকিরিত তাপ মেঘ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই কারণে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। এইভাবে মেঘাচ্ছন্নতা বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যে প্রভাব বিস্তার করে।