পৌরবসতি | পৌর বসতির শ্রেণীবিভাগ করো | Geography Honours Notes in Bengali

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা কলেজে পড়াশোনা করে তাদের জন্য ভূগোলের উপর একটি সুন্দর নোট শেয়ার করছি যা পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী

পৌরবসতি | পৌর বসতির শ্রেণীবিভাগ করো | Geography Honours Notes in Bengali

পৌরবসতি | পৌর বসতির শ্রেণীবিভাগ করো | Geography Honours Notes in Bengali

(1.) কার্যাবলীর ভিত্তিতে পৌর বসতির শ্রেণীবিভাগ করো। 

উঃ- 1943 খ্রিস্টাব্দে চ্যান্সি ডি. হ্যারিস (Chauncy D. Harris) শহরের যে শ্রেণিবিভাগ করেছেন তার ভিত্তি হল যুক্তরাষ্ট্রের 1930 সালের লোকগণনা (Census)। তিনি 10,000-র বেশি জনসংখ্যার 948টি শহরের নিয়োগ কাঠামো (employment structure) নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তিনি একটা মানদণ্ড ঠিক করেছেন, যা শহরের প্রধান কর্মধারা নিয়ে করার পক্ষে এক সন্তোষজনক পদক্ষেপ। নীচে তা আলোচনা করা হল।


1. শিল্প নগর (Manufacturing City) : এসব নগরের কম করে 45 শতাংশ কর্মী যন্ত্রশিল্পে নিয়োজিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় 45 শতাংশ শহর এই শ্রেণিতে পড়ে। 1930 সালে এসব শহরের অধিকাংশই দেশের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত ছিল।


2. খুচরা ব্যাবসাকেন্দ্রিক শহর (Retail City) : Harris খুচরা ব্যাবসাভিত্তিক নগর বলতে সেইসব নগরকে বুঝিয়েছেন যাদের খুচরা ব্যাবসায়ে নিয়োজিত কর্মী সংখ্যা নির্মাণশিল্প, খুচরা ও পাইকারি ব্যাবসাতে নিযুক্ত সমষ্টি কর্মী সংখ্যার কম করে 50 শতাংশ, আর একমাত্র পাইকারি ব্যাবসাতে লিপ্ত কর্মী সংখ্যার অন্ততপক্ষে 2.2 গুণ।


3. পাইকারি ব্যাবসাভিত্তিক নগর (Wholeselling City) : হ্যারিস-এর মতে, পাইকারি ব্যাবসাভিত্তিক নগর হতে গেলে, এই ব্যাবসায়ে নিযুক্ত কর্মী সংখ্যা নির্মাণশিল্প, খুচরা ও পাইকারী ব্যাবসাতে নিয়োজিত মোট কর্মীর অন্তত 20 শতাংশ ও একমাত্র খুচরা ব্যাবসাতে নিয়োজিত কর্মীর 45 শতাংশ হতে হবে। হ্যারিস দেখেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে এসব নগরের  সংখ্যা মোট নগরের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।হ্যারিস আরও লক্ষ করেছিলেন যে, এসব নগর দেশের মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি বৃহত্তম নগরের মধ্যে 4 টি এর অন্তর্গত যথা—নিউইয়র্ক (New York), শিকাগো (Chicago),বোস্টন (Boston) ও লস এঞ্জেলস (Los Angles)। 


 4. পরিবহণ শহর (Transportation Town) : হ্যারিস-এর মতে মোট কর্মীর শতকরা 11 ভাগ কর্মী পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। 1930-এর লোকগণনায় 18টি রেলপথকেন্দ্র ও 14টি বন্দর এর অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু অধিকাংশ বন্দরকে পাইকারি ব্যাবসার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হত।


5. খনি শহর (Mining Town) : খনি শহর হতে গেলে সেখানকার মোট উপার্জনশীল কর্মীর 15 শতাংশেরও বেশি খনি খননের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। Harris লক্ষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেবলমাত্র 14টি শহর এর অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে 10টি কয়লাখনি শহর, 3টি লোহাখনিভিত্তিক শহর।


6. বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্রিক শহর (University and other educational Centres): 

এই ধরনের শহর হিসেবে গণ্য হতে গেলে মোট জনসংখ্যার কম পক্ষে এক-চতুর্থাংশকে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। 1930 খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের 17টি ছোটো শহর এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের অধিকাংশ হল রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক (State University Centre)। দেশের মধ্য-পশ্চিম অংশে এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শহরগুলো অবস্থিত।


7. স্বাস্থ্যনিবাস বা অবসরকালীন শহর (Resort or Retirement town) : হ্যারিস এই ধরনের শহরের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে যথার্থ পরিসংখ্যান খুঁজে পাননি। তা সত্ত্বেও তিনি 22-টি শহরকে এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধানত গ্রীষ্মকালীন স্বাস্থ্যনিবাস, কোনোটি শীতকালীন স্বাস্থনিবাস। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে এসব শহর ছড়িয়ে রয়েছে। 1930 সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসব শহরের জনসংখ্যার একটা বড়ো অংশ গৃহস্থালি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে লিপ্ত ছিল।


৪. অন্যান্য শহর (Other towns) : পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে শ্রেণিহীন এসব শহরের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার কেন্দ্র, কাঠ কাটার কেন্দ্র (Logging Camp), কৃষি শহর (Farming town), আঞ্চলিক রাজধানী, সামরিক শহর (Garrison town), নৌঘাঁটি (Naval base), বৃত্তিমূলক কেন্দ্র (Professional Centre) ও আর্থিক কেন্দ্র (FinancialCentre) প্রভৃতি। 1930 খ্রিস্টাব্দের নিয়োগ কাঠামোর (Employment Structure) মাপকাঠিতে (Scale) যুক্তরাষ্ট্রে আলাদা কোনো গির্জা, ধর্মীয় কেন্দ্র বা দুর্গ শহর ছিল না।  ওপরের শ্রেণিবিভাগ থেকে এটা লক্ষ করবার মতো যে স্বাস্থ্যনিবাস বা অবসরকালীন শহর সম্পর্কে হ্যারিস কোনো‌ জোরালো পরিসংখ্যান দিতে পারেন নি, তেমনিভাবে অন্যান্য শহরের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে হ্যারিস পরিসংখ্যানের সাহায্য নেননি। 


এছাড়া তীর্থকেন্দ্র, গির্জা বা দুর্গকে কেন্দ্র করে যেসব শহর আত্মপ্রকাশ করে, সে সম্পর্কে হ্যারিস কোনো আলোচনা করেন নি। হ্যাসিক কৃত শহরের শ্রেণিবিভাগের অপর একটি ত্রুটি হল যে তিনি শহরের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিকটির ওপর কোথাও বেশি গুরুত্ব দেননি। একথা ঠিক যে এসব কাজে শহর বা নগরের খুব সামান্য সংখ্যক জনতা যুক্ত থাকে। যদিও হ্যারিস-এর শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী মোট 17-টি বিশ্ববিদ্যালয় শহর, তবুও এসব শহর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বের দিক দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শহর।


Stage বা বয়স অনুসারে পৌরবসতির শ্রেণীবিভাগ করো।

প্যাট্রিক গেডেসের ধারণাকে পরিমার্জন করে লুইস মামফোর্ড 1938 খ্রিস্টাব্দে সমস্ত ধরনের পৌরক্ষেত্রকে বয়সের ভত্তিতে মোট 6 টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল—


1. ইয়োপলিস (Eeopolis) : মামফোর্ডের মতে, কোনোও পৌরবসতি বা শহর বা নগর গড়ে ওঠার আদিপর্ব হল ইয়োপলিস। এই পর্যায়ে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার ভাঙন শুরুর মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বল্প জনসংখ্যা ও সীমিত যোগাযোগ সম্পন্ন নগর সমাজ গড়ে ওঠে।


2. নগর (Polis) : পলিস আসলে একটি আধানগর সভ্যতা। এখানে বাজার এলাকা, আধা- অসমবিভাজন রীতি,হস্তশিল্প, বিজ্ঞান, ধর্মীয় উপাচার প্রভৃতি বিশেষভাবে আত্মপ্রকাশ করে। পলিস অঞ্চলের একাধিক কার্যাবলিকে

কেন্দ্র করে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিথষ্ক্রিয়া প্রসারিত হয়। ফলে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। যেমন—মিশরের‌ আলেকজান্দ্রিয়া, গ্রিসের এথেন্স প্রভৃতি ।


3. মহানগর (Metropolis) : মামফোর্ডের মতে, নগর সভ্যতার পরিপূর্ণ তথা চূড়ান্ত বিকাশ এখানে দেখা যায়। তা ছাড়া এই স্থানগুলি একাধিক উপাদান দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যেমন—

(i) শ্রমবিভাজন,

(ii) প্রতীক সম্বলিত অর্থনৈতিক গঠন,

(iii) আহার্য যোগানের নিরাপত্তা,

(iv) অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন,

(v) বহু মানসিকতা সম্পন্ন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত জনসংখ্যা,

(vi) কৃষ্টিশীলতা,

(vii) সাংস্কৃতিক বিনিময়,

(viii) কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা,

(ix) ব্যক্তিগত অস্তিত্বের প্রভাব,

(x) উদ্বাস্তুগত দিক প্রভৃতি।


4. মহানগরপুঞ্জ (Megalopolis) : কোনোও বিশালায়তন মহানগরের বিস্ফোরিত রূপকেই মামফোর্ড মেগালোপলিস বলেছেন। সাধারণত পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক শহর বা নগর সংযুক্ত হয়ে মেগালোপলিস গঠন করে। এখানকার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(i)এখানে অঞ্চলের সীমানাগত বিস্তৃতি অনেক বেশি।

(ii) নগর সম্প্রসারণের নীতি এখানে যথেষ্ট প্রাধান্য পায়।

(iii) সামরিক বা অর্থনৈতিক বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে এই জাতীয় পৌর এলাকা তার অস্তিত্ব রক্ষা করে।

(iv) ছোটো ছোটো প্রচুর সংখ্যক শহরাঞ্চল এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

(v) আমলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।

(vi) আমোদ-প্রমোদ, শিল্পকলা, চারুকলা, স্থাপত্যকলা, শিক্ষা এবং একাধিক উচ্চস্তরের অর্থনীতির বিকাশ এখানে ঘটে।


5. টাইর‍্যানোপলিস (Tyranopolis) : নগরায়ণ প্রক্রিয়াটি যখন সমগ্র দেশটিকে গ্রাস করে, তাকেই মামফোর্ড টাইর্যানোপলিস বলেছেন। বস্তুত, এটি নগর বিকাশের চরমতম পর্যায় হলেও একে নগর অবনমনের সূচনা পর্বও বলা হয়। এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(i) চূড়ান্ত পর্যায়ের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এখানে দেখা যায়।

(ii) করপ্রথা, বাজেট প্রভৃতি এখানকার অর্থনৈতিক পদ্ধতির মুখ্য প্রতীক।

(iii) অর্থনৈতিক শোষণ বা “White colour crime” এখানে লক্ষ করা যায়।

(iv) রাজনৈতিক পরিসর অর্থনীতিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

(v) দূষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

(vi) এখান থেকে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা, ছোটো ছোটো শহরের দিকে পরিব্রাজন করে। সমগ্র জার্মানি বা যুক্তরাজ্য টাইর‍্যানোপলিসের অন্তর্গত।


6. ভৌতিক নগর (Necropolis) : নগর বিবর্তনের ধারায় সর্বশেষ পর্যায় হল নেক্রোপলিস বা ভৌতিক নগর; মামফোর্ডের মতে, এই অবস্থায় কোনোও নগর যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের দ্বারা ক্রমশ পরিসেবাহীন হয়ে পড়লে তার অতীতের যাবতীয় ঐতিহ্য হারায়। এই কারণে এটি মুখ গ্রামীণ সমাজের পুনরুত্থান পর্যায় (দাশগুপ্ত, 1983)। ব্যাবিলন, হরপ্পা, মহেন-দো-দারো বা মিশরের গিজা -ধরনের নেক্রোপলিসের অন্তর্গত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url