গ্রামীণ বাসগৃহের ধরন | Rural houses type in Bengali | Geography Honours Notes
যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা কলেজে পড়াশোনা করে তাদের জন্য ভূগোলের উপর একটি সুন্দর নোট শেয়ার করছি যা পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী
গ্রামীণ বাসগৃহের ধরন | Rural houses type in Bengali | Geography Honours Notes
স্থায়িত্ব অনুসারে গ্রামীণ বাসগৃহের ধরন (Rural house type according to permanency) :
স্থায়িত্ব অনুসারে ভারতীয়, গ্রামীণ বাসগৃহগুলি মূলত তিন প্রকার। যথা—
(1) স্বল্পস্থায়ী বাসগৃহ (Temporary houses) : ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষজন তাদের স্থানান্তর জীবিকাকে কেন্দ্র করে যে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলে, তাকে স্বল্পস্থায়ী বাসগৃহ বলা হয়। এই ধরনের বাসগৃহগুলি পশুপালন, কাষ্ঠ আহরণ, স্থানান্তর কৃষিকাজ প্রভৃতির কারণে গড়ে ওঠে। এখানে বসতি নির্মাণে গাছের ডালপালা, লতাপাতা, বাঁশ, খড়, কাঠ প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
উদারহণ : হিমালয়ের কুমায়ুন অঞ্চলে এই ধরনের বাসগৃহ দেখতে পাওয়া যায়।
2.সাময়িক স্থায়ী বাসগৃহ (Semi permanent house) : ভারতবর্ষের কিছু উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে যাদের বাসগৃহগুলি ঋতুকালীন তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই এরা বছরের প্রথম 6 মাস আপনগৃহে বসবাস করলেও পরবর্তী 6 মাস জীবিকার সন্ধানে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলে।
উদাহরণ : হিমালয়ের গাড়োয়াল অঞ্চলে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে।
3.স্থায়ী বাসগৃহ (Permanent houses) : ভারতের স্থায়ী বাসগৃহগুলি মূলত স্থায়ী কৃষিকাজ, স্থায়ী শিল্প বা অন্যান্য পরিসেবাভিত্তিক কাজকর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এই ধরনের বাসগৃহ কাঁচা বা পাকা উভয় প্রকৃতির হতে পারে।
উদাহরণ : ভারতের বিস্তীর্ণ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে স্থায়ী বাসগৃহ গড়ে উঠেছে।
আকৃতি অনুসারে গ্রামীণ বাসগৃহের ধরন (Rural houses type according to shape):
Anthropological Survey of India-তে, “Peasant life in India” নামক প্রকাশনায় N. K. Bose আকৃতি অনুযায়ী গবতীয় গ্রামীণ বাসগৃহ তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল—
(1) অনুভূমিক ছাদ এবং আয়তাকার মেঝেযুক্ত বাসগৃহ। (Horizontal roof and rectangular ground plan house ) : ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বছরে গড়ে 60 সেমি. বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে সমতল বা অনুভূমিক ছাদবিশিষ্ট এবং আয়তাকার মেঝেযুক্ত বাসগৃহ গড়ে ওঠে।
এই ধরনের বাসগৃহের সামনে একটি উঠোন থাকে। বাড়ির ভিত খুব একটা গভীর হয় না। গৃহের সমতল ছাদগুলিতে ধোঁয়া নির্গমণের জন্য চিমনি লাগানো থাকে এবং গৃহে পর্দার ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
উদাহরণ : মধ্য ভারত, পশ্চিম রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্র প্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই ধরনের বাসগৃহ গড়ে উঠেছে।
(2) তির্যক ছাদবিশিষ্ট আয়তাকার বাসগৃহ (Sloping roof with rectangular ground plan house) : ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে তির্যক ছাদবিশিষ্ট আয়তাকার বাসগৃহ গড়ে ওঠে। এখানে ঢালু ছাদের জন্য বৃষ্টির জল দ্রুত গড়িয়ে যায়, ফলে ছাদটি সুরক্ষিত থাকে। এই ধরনের গৃহের দেওয়ালগুলি মাটি, পাথর বা ইঁট দ্বারা নির্মিত হয়, ছাদে বাঁশ ও কাঠের ওপর টালি বা পাথরের ছাউনি বা কংক্রিট দ্বারা নির্মিত হয়। প্রতিটি দেওয়ালে চুন বা বালির প্রলেপ লক্ষ করা যায়।
উদাহরণ : এই ধরনের বাসগৃহ উত্তর-পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালার উপকূলবর্তী অঞ্চলে লক্ষ করা যায়।
(3) শঙ্কু আকৃতির ছাদবিশিষ্ট বৃত্তাকার বাসগৃহ (Conical roof with circular ground plan): ভারতের বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায় কিংবা আদিবাসী গোষ্ঠীদের দ্বারা গড়ে ওঠা গ্রামগুলিতে শঙ্কু আকৃতির ছাদবিশিষ্ট বৃত্তাকার বাসগৃহ লক্ষ করা যায়। এই ধরনের বাসগৃহের ছাদ সূচালো এবং মেঝেটিকে বৃত্তাকারে গড়ে তোলা হয়। এখানে প্রতি গৃহে একটিমাত্র বড়ো কক্ষ থাকে, এবং সেখানেই শোবার ঘর, শস্য রাখার পাত্র, উনান প্রভৃতি স্থাপন করা হয়। এই ধরনের কুড়ে ঘরে একটি মাত্র ছোটো দরজা লাগানো থাকে। সমগ্র গৃহের দেওয়াল তৈরিতে কখনও মাটি, বাঁশ, লতাপাতা বা পাথরকে ব্যবহার করা হয়। গৃহের ছাদে তালপাতা, খড় বা বুনো ঘাসের আচ্ছাদন পরিলক্ষিত হয়।
উদাহরণ : ছোটোনাগপুরের বীরহোরদের 'ভুলুয়া’” নামক যাযাবর শ্রেণি, গুজরাটের সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ জেলায় ‘ওয়াগরী’, ‘রাবাবী’ প্রভৃতি উপজাতিদের বাসগৃহ এই প্রকৃতির।
• এ ছাড়াও আরও কয়েক ধরনের গ্রামীণ বাসগৃহ লক্ষ করা যায়, এগুলি হল— 'T’আকৃতির বাসগৃহ, '' আকৃতির বাসগৃহ, গম্বুজাকার বাসগৃহ, বর্গাকার বাসগৃহ প্রভৃতি।