দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে? দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি | Binomial Nomenclature

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে? দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি | Binomial Nomenclature 

দ্বিপদ নামকরণ (Binomial Nomenclature): প্রত্যেক জীবের বিজ্ঞানসম্মত নামে সাধারণত দুটি পদ থাকে। প্রথমটি গণের নাম (Generic name) এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতির নাম (Species name)। জীবদের গণ ও প্রজাতি নামক দুটি পদের সমন্বয়ে গঠিত নামকরণকে দ্বিপদ নামকরণ বা বাইনোমিয়াল নোমেনক্লেচার (Binomial nomenclature) বলে।

বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus  Linnaeus) সর্বপ্রথম দ্বিপদ নামকরণ প্রবর্তন করেন। তিনি 1753 খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রণীত গ্রন্থ স্পিসিস প্ল্যান্টারাম-এ (Species Plantarum) প্রথম দ্বিপদ নামকরণ প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীকালে সিস্টেমা ন্যাচুরি (Systema Naturae, 1758)-তেও এর উল্লেখ করেন।


দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলি (Rules of Binomial Nomenclature) :

বিজ্ঞানী লিনিয়াস (Linnaeus) প্রবর্তিত নিয়মাবলি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উদ্ভিদ-বিজ্ঞানীরা জীবের নামকরণ সম্পর্কিত

কতকগুলি আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক উদ্ভিদবিজ্ঞান মহাসভা (International Botanical Congress) 1930 খ্রিস্টাব্দে উদ্ভিদের নামকরণের আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি (International Code of Botanical Nomenclature; সংক্ষেপে ICBN) ঠিক করে। ICBN-এর সুপারিশ অনুযায়ী উদ্ভিদের নামকরণের সংশোধিত নিয়মাবলি 1966 খ্রিস্টাব্দের অধিবেশনে গৃহীত হয়। বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি অনুসরণ না করলে কোনো নতুন নামই বিজ্ঞানীমহলে গৃহীত হয় না।


উদ্ভিদবিজ্ঞানে দ্বিপদ নামকরণের নিয়মাবলির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নীচে উল্লেখ করা হল—

(i) উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যার বিষয়বস্তু আলাদা হওয়ায় কোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর গণের নাম একই হতে পারে। তবে এই প্রথা যতদূর সম্ভব বর্জন করাই শ্রেয়।

(ii) বিজ্ঞানী লিনিয়াসের স্পিসিস প্ল্যান্টারাম (Species Plantarum)-এর প্রকাশকাল অর্থাৎ, 1753 খ্রিস্টাব্দের আগের কোনো উদ্ভিদের নাম গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে নতুন নামকরণ করার নির্দেশ আছে।

(iii) কোনো গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একাধিক গণ বা একই গণের অন্তর্ভুক্ত একাধিক প্রজাতির নাম ভিন্ন হবে।

(iv) কেবলমাত্র ল্যাটিন ভাষায় নামকরণ করতে হবে। অন্য কোনো ভাষায় নামকরণ সিদ্ধ নয়

(x) কোনো একটি প্রজাতির নাম দ্বিপদ যুক্ত হবে এবং উপপ্রজাতির নাম ত্রিপদযুক্ত হবে।

(xi) গণের নামের প্রথম অক্ষর বড়ো হরফে এবং প্রজাতির নাম ছোটো হরফে লিখতে হবে। প্রয়োজনে নামের শেষে বিজ্ঞানীর নাম দিতে হবে। যেমন— Panthera leo Linn (Linn = Linnaeus)।

(vii) বিজ্ঞানসম্মত নাম সবসময় বাঁকা হরফে অর্থাৎ, Italics-এ ছাপা হবে এবং লেখার সময় নামটি নিম্নরেখিত (underlined) করতে হবে। যেমন—বাঘের বিজ্ঞানসম্মত নাম - Panthera tigris

(viii) যদি কোনো উদ্ভিদের একাধিক নাম থেকে থাকে বা একাধিক উদ্ভিদের নাম একই হয়ে থাকে তবে সর্বপ্রথম দেওয়া সিদ্ধ নামটি গৃহীত হবে। একে অগ্রাধিকার আইন (Law of priority) বলে। এক্ষেত্রে 1753 খ্রিস্টাব্দের আগের দেওয়া নাম গ্রাহ্য হবে না।

(ix) কোনো বিশিষ্ট বিজ্ঞান পত্রিকায় জীবের প্রথম বর্ণনা ও নামকরণ প্রকাশ করতে হবে যাতে বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল জীবটি সম্বন্ধে জানতে পারেন।

(x) সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদের নমুনা পরিচিতি অনুমিত সংস্থায় সংরক্ষিত রাখতে হবে। সংরক্ষিত অংশ টাইপ স্পেসিমেন (type specimen) নামে পরিচিত।

(xi) কোনো প্রজাতির নামের পরিবর্তন বা সংশোধন করা হলে প্রথম আবিষ্কর্তার নাম ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হবে এবং নতুন বিজ্ঞানীর নাম ব্র্যাকেটের পর থাকবে। যথা— Albizzia lebbeck (Linn.) Benth

(xii) গোত্র বা উপগোত্রের নামকরণ সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ নাম অনুসারে হয়ে থাকে, যথা—গণ Aster থেকে Asteraceae |


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url